মাধবপুর লেক।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৬ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:০২:০১ দুপুর
মাধবপুর লেক।
বধ্যভূমি আর BTRI দর্শন শেষ করে আমরা পুণরায় বাইকে উঠে রওয়ানা করলাম মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে। লাউয়াছড়া জঙ্গলের সোজা রাস্তা ছেড়ে হাতের ডানে একটা এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা ধরলাম। দুপাশে পাহাড়ে ঘন জঙ্গল। জানতে পারলাম এটাও লাউয়াছড়া জঙ্গলের অংশ। সাড়ে নয়টার মতো বাজে। আকাশে উজ্জল রোদ। ঘাসের উপর পড়ে থাকা রাতে শিশির এখনও শুকায়নি। দুপাশে জঙ্গলে ঢাকা পাহাড় হতে অনেক রকম পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে।জঙ্গলের ভিতরটা কেমন অন্ধকার দেখা যায় বাহির হতে। জায়গাটা শরীর-মনে অজানা এক শিহরণ জাগায়। ঘন জঙ্গল কমে আসলে শুরু আনারস বাগান এরপর চা বাগান।
পথের চা-বাগান।সংগৃহীত।
আমি মোটর বাইকের পিছনে বসে বসে চারপাশ দেখছি আর সৌন্দর্যগুলো মনের মধ্যে গেঁথে রাখছি। বাইক চালাচ্ছেন শাহেদ ভাই। তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিচ্ছি। তিনি এখানকার স্থানীয় মানুষ।তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আমি আসব জেনে ইনবক্সে নাম্বার দিয়েছিলেন। তাকে পেয়ে আমার ব্যাপক সুবিধা হয়েছে। উনি ভাইয়ের মতোই কাজ করছেন। আসলে ভাইয়ের মতো না আমরা দ্বীনি ভাই।
চা-বাগান।সংগৃহীত।
জঙ্গল পেরিয়ে আমরা টিলা, গাছপালা পরিবেষ্টিত চা বাগানের ভিতরের রাস্তায় চলে এলাম। চারিদিকে এই পাগল করা সবুজ সুন্দর দেখে কিছু সময় এখানে থামতে ইচ্ছে করছিল! কিন্তু শাহেদ ভাইকে বলতে পারছিলাম না। তবে বৃষ্টি সেই ব্যবস্থা করে দিল! উজ্জল রোদের মধ্যেই হঠাৎ শুরু হল বৃষ্টি। একটু একটু করে ঝুম বৃষ্টি পড়তে থাকল। ভিজতে ভিজতেই পেয়ে গেলাম চা-শ্রমিকদের একটা ছাউনি। সেখানে আমরা বাইকে থামিয়ে আশ্রয় নিলাম।রোদ-বৃষ্টির মিশেল এই খেলা পরিবেশটাকে মোহময়ী মায়ায় আছন্ন করে রাখল আমাদের!
চা-শ্রমিকদের খুপরিতে আশ্রয়। আমি আর শাহেদ ভাই।
নিমিষেই পরিবেশটা যেন বদলে গেল! বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চারপাশের সবুজ আরো উজ্জল হয়ে উঠল। প্রাকৃতিক বিউটি পার্লার যেন ঘসে-মেজে ফেসিয়াল করে দিয়ে গেল। সেই সবুজের উপর রোদের কিরণটাও যেন আলাদাভাবে আলো ছড়াতে লাগল। এই পরিবেশে মন কারণ ছাড়াই খুশিতে ঝলমল করতে থাকে। বিনা কারণে মুখে হাসি ফোটে। এটা তেমনি পরিবেশ। আমি বলি সোবহান আল্লাহ! তোমার সৃষ্টি কত সুন্দর! কতো বিচিত্র। এখানে না এলে জানা হতো না! এখানে এই পরিবেশে আপনি তাকিয়ে তাকিয়ে সময় পার করতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা! আপনার এক ঘেয়েমি আসবে না আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এটা সেই জগত।
মাধবপুর লেক।
আমার ভাল একটা ক্যামেরা না থাকায় খুব আফসোস হতে থাকল। ফহিন্নি একখান মোবাইল দিয়ে কি আর এই ছবি তোলা যায়! আবার আসতে হবে ক্যামেরা কিনে।এক সময় বৃষিট কমে এল। আমরা আবার বাইকে উঠলাম। রাস্তায় কয়েকবার বাইকের চাকা হালকা পিছলে গেল। আঁকা-বাঁকা উচুনিচু পাহাড়ী রাস্তা ধরে আমরা চলতে থাকলাম। গাছের পাতায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি বাতাসের ঝাপটায় মাঝে মাঝে আমাদের উপর ঝিটিয়ে দিচ্ছিল! বৃষ্টি ধোঁয়া ফুরফুরে হাওয়া আর গাছের পাতায় পিছলে আসা ঝকঝকে সবুজ রোদ আমাদের মনের উপর কেমন প্রভাব ফেলছিল সে কথা আপনি কখনই অনুমান করতে পারবেন না!
পিছনে ঐ দূরে কোথাও আছে নাকি এক আলাদা জগত।
চা-শ্রমিকেরা তাদের ঝুড়ি পিছনে বেধে চা পাতা উঠানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। গাছের ডালে ডালে ছোট ছোট পুটলিতে বাঁধা তাদের দুপুরের খাবার। শাহেদ ভাইয়ের কাছে শুনলাম তাদের লাইফ ষ্ট্রাগলের করুণ কাহিনী। বৃটিশরা এমন একটি সিষ্টেম করে দিয়ে গেছে যেই লাইফ ষ্টাইলের ঘুর্ণি চক্র থেকে তারা আর বের হতে পারছে না। তাদের জীবন-যাত্রার মান উন্নত হলে এত সস্তা শ্রমিক আর পাবে না তারা। এই কারণে বলা যায় তাদের এক ধরণের সমাজ প্রতিবন্ধী করে রাখা! আল্লাহ ভাল জানেন।
লেকের পাশে জিড়িয়ে নেয়া।
কাহিনী শুনতে শুনতে আমরা প্রায় সমতলভুমির চা-বাগানে এসে পড়লাম। চারদিক বিস্তৃত সবুজের গালিচা। মাঝ দিয়ে এবার শুরু হল মাটির রাস্তা। বাইকের চাকা পিছলে পিছলে অনেক কসরত করে আমরা পৌছে গেলাম মাবধবপুর লেকের গেটে। স্লিপ নিয়ে বাইক রেখে হেটে গিয়ে উঠলাম লেক পাড়ে। পাড় না বলে পাহাড় বলাই ভাল। চারিদিকে পাহাড় মাঝে লেকের স্বচ্ছ পানি। ফুটে আছে লাল শাপলা পদ্ম সহ আরো নাম না জানা নানান উদ্ভিদ।
এমন রাস্তার ধার দিয়েই আপনাকে যেতে হবে। সংগৃহীত।
গেট বরাবর শুরুতেই সান বাধানো ঘাট। কিন্তু গোসল করা নিষেধ। বাম পাশ দিয়ে আমরা হাটতে থাকলাম। আরো উপরে পাহাড়ের উপরদিকে উঠতে থাকলাম। শাহেদ ভাই আমার পিছন দিকে দূরে একটি টাওয়ার দেখিয়ে বললেন ওটা ইন্ডিয়ায়। রোদ্দুর উজ্জল দিনেও ঝাপসা মতো দেখা যায় ইন্ডিয়ার পাহাড় সারি। শাহেদ ভাই বললেন, সময় করে এলে একদিন ওদিকে নিয়ে যাবেন কি একটা জায়গা আছে অনেক দূরে সেটা নাকি মোহময় সুন্দর!! আমি মনে মনে স্বপ্ন বুনি ওখানে যাওয়ার। কি আছে ঐ পাহাড়ের পরে আরো অনেক পাহাড় পরে!!!
লেকটা আমার কাছে খুব আহামরি সুন্দর লাগে নাই।
হেটে হেটে ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে একটু জিড়িয়ে নিলাম। এক পাশে দেখলাম কিছু পর্যটক লুকিয়ে লুকিয়ে গোসল করছে। আমার ইচ্ছে করলেও নামলাম না পানিতে। বেশি সময় এখানে নষ্ট করব না। সত্য বলতে অনেক বেশি সুন্দর দেখে এসে এই জায়াগাটা আমার তেমন পছন্দ হয়নি! আমার ইচ্ছা এখান থেকে বের হয়ে আবার ঐ আগের রাস্তা ধরে একটু মন জুড়াই। দেখতে দেখতে চলে যাব লাউয়া ছড়া জঙ্গলের ভিতর।
চা-বাগানে ছিটানো হয় কীটনাশক।সংগৃহীত।
মোবাইলে কিছু ছবি-টবি তুলে আমরা বের হয়ে পড়লাম মাধবপুর লেক হতে। আবার সেই মন জুড়ানো চারদিক সবুজ গালিচা বিছানো রাস্তা! আমি পিছনে বসে বসে দেখছি আর গিলছি, গিলছি আর দেখছি। এভাবে এক সময় এসে পড়লাম লাউয়াছড়ার জঙ্গলের অংশে। এবার শহরমুখো না হয়ে জঙ্গলমুখো হয়ে চলতে থাকলাম। আজ জঙ্গলের ভিতর ফানাফিল্লাহ হয়ে যাব ভাবছি!!!
বিষয়: বিবিধ
১৫১৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক্সচেললেনট
চা শ্রমিকদের দুর্ভাগ্যর কাহিনি আমিও শুনেছি। এখনও দেশের মধ্যে থেকেও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত রয়ে গেছে তারা।
ঘুড়ী
-
এটা শুধু ঘোরা-ঘুরি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন