খাসিয়া পুঞ্জি-মনিপুরি পল্লীতে বেড়ানো।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:২৪:১৪ সকাল
পরিকুন্ড ঝর্ণা ট্রেকিং শেষ করে আমরা পরবর্তী গন্তব্য খাসিয়া পুঞ্জির উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম। পুঞ্জি মানে গ্রাম। খাসিয়া পুঞ্জিতে প্রবেশ করতে হলে খাসিয়াদের মন্ত্রীর অনুমতি নিতে হয়। সেখানে আমাদের মতো জন সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। রানা ভাই বার বার মন্ত্রীর মোবাইলে ট্রাই করছিলেন, কিন্তু মন্ত্রীজী রিসিভ করছেন না! হয়তো কোন মিটিং এ আছেন!
এই পথেই গ্রামে প্রবেশ করতে হয়।
কিন্তু আমাদেরও ইচ্ছা খাসিয়া পুঞ্জি না দেখে যাব না।আমরা নিচে নেমে মাধব কুন্ডের ভাটির দিকের ঝিরি পার হয়ে ওপারে গেলাম। গ্রামের দিকে হাটছি দুজনে। রানা ভাই খাসিয়া গ্রামের বিভিন্ন জনের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। বুঝলাম সব খানে তার পরিচিতি একেবারে মন্দ না।
খাসিয়াদের চাষ করা পান গাছ।
ধীরে ধীরে উপরে উঠে পাহাড়ের উপর খাসিয়াদের গ্রামে প্রবেশ করলাম। রানা ভাই সোজা চলে গেলেন মন্ত্রীর বাড়ীতে। গিয়ে জানতে পরলাম মন্ত্রী মিটিং এ আছেন। এখন দেখা হবে না। আমরা অনুমতি ছাড়াই আরো উপরের দিকে উঠতে থাকলাম।
মন্ত্রীর বাড়ীর সামনে।
পথে দেখা হল বিল ক্লিনটনের সাথে। না ইনি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন না। খাসিয়া যুবক ক্লিনটন। সে নাকি খুব ভাল ফুটবল প্লেয়ার। তার সাথে কুশল বিনিময় করে আরো উপরের দিকে উঠে আমরা চলে এলাম পাহাড়ের উপর পান বাগানে।
খাসিয়া গ্রামের বাড়িগুলোর উপর দিয়ে তাকালে ওপাশের পাহাড়গুলো দেখা যায়।
পান গাছ দেখে কিছু সময় কাটিয়ে আবার নিচের দিকে নামতে থাকলাম। পাহাড়ের মাঝামাঝিতে খাসিয়া মন্ত্রীর বাসা। টিনসেড বিল্ডিং। সামনে ফুল গাছ লাগানো।
রানাভাই নামছেন গ্রাম থেকে।
এবার মন্ত্রীকে পাওয়া গেল। তবে আমি যেরকম চিন্তা করেছিলাম সেরকম মন্ত্রীকে দেখলাম না। প্রায় যুবক বয়সী এক লোক ভি-শেপ এর একটা টি-শার্ট আর জিন্স পরে বের হয়ে এলেন।হাসি-খুশি সরল মনে হল। তার সাথে কুশল বিনিময় করে খাসিয়া পল্লী থেকে বের হওয়ার পথ ধরলাম।
ইনি হলেন খাসিয়াদের মন্ত্রী।
এবার অন্যপথে আমরা চা বাগান ঘুরে চলে এলাম ইকোপার্ক এর গেটের বাহিরে। সেখানে আরেক ভ্রমণ পাগল চা দোকানীর সাথে কথা বলে তার পীড়াপীড়িতে চা খেয়ে(যদিও আমি চা খাই না) রওয়ানা করলাম। একটা সিএনজিতে উঠে বসে ফিরতি পথে মাঝ রাস্তায় নেমে গেলাম।
এই পথেই বের হয়ে এলাম খাসিয়া গ্রাম থেকে।
রানা ভাই নেমেই বামের কাঁচা রাস্তা ধরে হাটা দিলেন। আমি পিছে পিছে চলছি। উদ্দেশ্য মনিপুরি পাড়া দেখা। আর তাদের তাঁতবস্ত্র তৈরী দেখা। অনেকটা পথ হেটে আমরা মনিপুরি পল্লীতে প্রবেশ করলাম।
মনিপুরি তাঁত বস্ত্র শিল্প।
এখানেও রানা ভাইয়ের পরিচিতি দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না! কয়েকটি বাড়ী মিলে একটি পাড়া বা গ্রাম বলা যায় একে। প্রায় প্রতি বাড়ীর উঠোনে বা বারান্দায় কাঠ-বাঁশের তৈরী তাঁত বসানো। তাতে অর্ধ বুনন কাপড় দেখা যাচ্ছে।
সবগুলোই প্রায় একই রকম।
অন্য পাড়ায় প্রবেশ করতেই দেখি মেয়েরা কাপড় তৈরী করছে।আমরা তাঁতের ছবি তোলার অনুমতি চাইলাম। মেয়েরা ভিতরে চলে গেল। আমরা বারান্দায় প্রবেশ করে তাঁতের কয়েকটি ছবি তুললাম। তাতের পাশে রাখা হাত পাখা আর মোবাইল রাখা।
মনিপুরি পল্লী।
মোবাইল দিয়ে দৌড়ে আসছেন রানা ভাই।
এখান থেকে বিদায় নিয়ে আমরা চলতে থাকলাম সোজা পশ্চিমে। উদ্দেশ্য রানা ভাইয়ের বলা কঁচুকাটা মোকাম! কড়া রোদে আমি ছাতা মাথায় আর রানা ভাই গামছা মাথায় হাটছি। হঠাৎ আমার মোবাইল বেজে উঠল! কিন্তু বের করে দেখি আমার মোবাইলে কোন কল আসে নাই! মোবাইল বাজছে রানা ভাইয়ের পকেটে! তিনি মোবাইল বের করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মোবাইল কি না? আমি বললাম ভাই এই মোবাইল তো আমি তাঁত মেশিনের উপর দেখেছি। রানা ভাই ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে দৌড় দিলেন মনিপুরি পল্লীর দিকে!!
দূরে দেখা যাচ্ছে পাথারিয়ার সবুজ পাহাড়। ওখানেই কোথাও আছে ডিমাই ঝর্ণা।
রানা ভাই গ্রামের দিকে গেলে আমি আশ-পাশ দেখতে থাকলাম। অনেক সুন্দর এই গ্রাম চারিদিকে সবুজের সমারোহ। উত্তরে দেখা যায় পাথারিয়ার সবুজ পাহাড় যেন নীল আকাশের সাথে মিশে গেছে। আমি কয়েকটি ছবি তুলে রাখলাম।
এমন পথেই যেতে হয় কচুঁকাটা মোকাম।
সুন্দর এই রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে আমরা এক সময় চলে এলাম কঁচুকাটা মোকাম। আসলে এটা একটা মাজার! কোন মাজারের প্রতি আমার ন্যুনতম আকর্ষণ নাই। যেহেতু এটার পাশ দিয়েই যেতে হবে তাই যাওয়া।
এটা পেরোলেই কচুকাটা মোকাম।
মাজারের পাশ দিয়ে আমরা সামনে গিয়ে একটা সিএনজি পেলাম তাতে উঠে বসে সোজা বড়লেখা। পরবর্তী গন্তব্য আতর তৈরীর কারখানা, আগর বাগান দেখা এবং হাকালুকি হাওরে যাওয়া!
এটা সেই কচুকাটা মোকাম, মানে এক পীরের মাজার!
বিষয়: বিবিধ
১৯২৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন