আকর্ষণ হারাইছে মাধবকুন্ড কিন্তু পরিকুন্ড!!!

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:৪৭:৫৮ বিকাল



দড়ি দিয়ে বাঁধা মাধবকুন্ড।

প্লান অনেক দিনের কিন্তু যাওয়া হুট করে! হ্যাভেন ট্যুরিজম ক্লাবের প্রেসিডেন্ট রানা ভাই মাঝে মাঝে বলেন হুট করে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হয়ে ওঠে না। এবারও যাওয়ার কথা আনিস ভাই সহ কিন্তু আনিস ভাই ট্রেনের টিকেট করে আবার ফেরত দিলেন।



মাধবকুন্ড ইকোপার্ক।

হঠাৎ রানা ভাইয়ের বোনের স্বশুরের মৃত্যুতে আমিও বাদ দিতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন চলে আসুন।ব্যাস এবার ঈদের পর শুক্রবার আর একদিন ছুটি নিয়ে দিলাম ছুট।



মাধবকুন্ড যেতে এরকম ঝিরির দেখা পাবেন।

রাত ১১ টার এনা গাড়ীতে উঠে বড় লেখা নামলাম গিয়ে ভোর ৪.২০ মিনিটে। ওখানে আগে থেকেই হোটেল আমিরাত এ রুম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন রানা ভাই। হোটেল নাম্বারে ফোন করে গেট খুলে নিয়ে হোটেলে ঢুকতেই ফজরের আজান হল। ফ্রেশ হয়ে ফজরের সালাত আদায় করে এসে দিলাম ঘুম।



দূর থেকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়!

সকাল আটটার দিকে এলেন রানা ভাই। নাস্তা করে বের হইলাম আমাদের প্রথম টার্গেট মাধবকুন্ড ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। পথে যেতে দেখতে পাবেন কিছু চা বাগান। সুন্দর সুন্দর সবুজ ঘাসে-গাছে ঢাকা টিলা(ছোট পাহাড়)।



এরকম সিরামিক ইটে বাঁধানো পথে নামতে হয় ঝর্ণায়।

এর আগে কখনও মাধব কুন্ড ঝর্ণায় আমার যাওয়া হয়নি তাই এটা ছিল আমার বিশেষ আকর্ষণ। গেট এ টিকেট নিতে হয়। কিন্তু রানা ভাইয়ের পরিচিতির কারণে আমাদের টিকেট লাগল না।



এখানেই লোকজন গড়াগড়ি করে মনের হাউস মেটাইতাছে!

ঝর্ণার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমি শুরুতেই আকর্ষণ হারালাম। সিরামিকের ইটে বাঁধানো রাস্তা, আশপাশে টাইলস বসানো কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ এর মূল আকর্ষণ নষ্ট করে দিয়েছে!



ক্লান্তি দূর করতে আমিও মুখটা ভিজিয়ে নিলাম।

একটু কাছাকাছি গিয়ে দেখি লম্বা দড়ি টেনে লাল কাপড়ের বিপদ সংকেত ঝুলানো! মানে ঝর্ণার নিকটে যাওয়া যাবে না। দড়ির এপার থেকে দেখেই আশ মিটিয়ে আসতে হবে।এটা করার পিছনে যুক্তি সংগত কারণও আছে। কিছু অতি উৎসাহী পর্যটকের পাগলামীর কারণে। যার কারণে জীবন গেছে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন পর্যটকের।



উপর থেকে দেখা বয়ে চলা ঝিরিপথ।

ঝর্ণার বয়ে যাওয়া পানিতে কৃত্রিম বাধ দিয়ে সেখানে আলাদা স্রোতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে মানুষ গড়াগড়ি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে কৃত্রিম আনন্দ নেওয়ার চেষ্টা করছে! মানে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি!



হ্যাভেন ট্যুরিজম এর সভাপতি রানা ভাইয়ের সাথে।

সেখানে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে ভাল লাগল না। তাই অল্প কিছু সময় কাটিয়ে চলে এলাম। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য পরিকুন্ডের পথে। মাধবকুন্ডের ঝিরিপথ পার হয়ে হাতের ডানে আধো অন্ধকার মতো ছায়া ঢাকা একটা ট্রেইল চলে পরিকুন্ড ঝর্ণার দিকে। সেটা ধরেই যেতে হয়।



মাধবকুন্ড ঝর্ণায় যাওয়ার পথে।

সেই ঝিরিপথে ঢুকতে কিছু পশু-পাখির মূর্তি বানানো আছে। সেটাকে নাম দিয়েছে ইকোপার্ক। সেই পার্কে ঢুকতে দশ টাকা টিকেট। এবারও রানা ভাইয়ের কারণে টিকেট দরকার হল না। আমরা ঢুকে গেলাম পার্কে সেটা পার হয়ে ঝিরিপথে নেমে ওপারে গেলাম।



মাধবকুন্ড ঝিরিপথ হতে ডানের এই পথেই ঢুকতে হবে পরিকুন্ড।

যখন আমরা পরিকুন্ডের সেই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে যাচ্ছি পেছন থেকে ট্যুরিষ্ট পুলিশ চিল্লাচিল্লি করে ডাকাডাকি শুরু করল! ওই পথে যাওয়া যাবে না! পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা ওটা!!



আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি।

তারা ভয় দেখাল ভয়ংকর পিচ্ছিল পথ! অন্ধকার জমে আছে! আছে বিশাল বিশাল সাপ! আরো অনেক বিপদের ভয় আছে। ওদিকে কেউ যায় না অনেক দিন!! তাই কিছুতেই আমাদের যেতে দিবে না!



ছায়া ঢাকা নিরিবিলি এই পথে যেতে মনের অজান্তে গা-টা ছম ছম করতেই পারে!

আমি হতাশ হইলাম! অনেক কষ্ট করে ঢাকা থেকে এসেছি, আর পরিকুন্ড ঝর্ণা ট্রেকিং না করে চলে যাব, তা কি করে হয়! রানা ভাই ইউ এন ও সাহেবকে ফোন দিলেন। তিনি আমাদের অনুমতি দিলেন পুলিশকে বলে। তাছাড়া রানা ভাই পুলিশকে বুঝালেন অনেক কথা! ঢাকা থেকে এসেছি। আমাদের পাহাড়ে ট্রেকিং করে অভ্যাস আছে! পর্যটন নিয়ে লেখালেখি করি!! ইত্যাদি ইত্যাদি!!!



পথের সৌন্দর্য সত্যই অবাক করার মতো বটে!

যাই হোক অবশেষে অনুমতি মেলায় আমরা মহা খুশি‍! কিন্তু লিখিত দিতে হল, কোন বিপদ হলে কেউ দায়ী নয়।



ব্যাপক শ্যাওলা ধরা পথে হাটতে হয় সাবধানে।

মহাখুশিতে আমরা ঝিরিপথ ধরে হাটতে থাকলাম।ট্যুরিষ্ট পুলিশের কথা একেবারে মিথ্যা নয়। পথটা পুরিপুরি পাথুরে। এবং ছায়া ঢাকা হওয়ার কারণে মারাত্বক পিচ্ছিল পথ। একটু অসাবধান হলেই খবর আছে।



কি পরিমাণ পিচ্ছিল না গেলে বুঝানো যাবে না।

খুব সাবধানে আমরা এগিয়ে চলছি। আমি সামনে রানা ভাই পিছনে। পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় এই পথে মাকড়সার ঝুল জমে গেছে। হাত দিয়ে পরিস্কার করে করে এগুতো হাচ্ছে। রানা ভাই একটা গাছের শুকনা ডাল ভেঙ্গে আমার হাতে দিলেন, যেন ঝুল পরিস্কার করে হাটতে পারি।



আলহামদুলিল্লাহ। সফলভাবে উঠতে পেরেছি।

অতিরিক্ত পিচ্ছিল হওয়ার কারণে দুই এক জায়গায় হালকা পা পিছলে গেল। এই ঝর্ণা পথে দেখা মিলে চিংড়ির। আমি একটা ধরেও ফেললাম। বেশি সময়ের ট্রেইল নয় এটা। পনের থেকে বিশ মিনিট হাটলেই পৌছা যায় মূল ঝর্ণায়।



মাকড়সার ঝুলে ঢাকা তাই পরিস্কার করে পথ চলতে হয়।

ঝর্ণার পানি পড়ার একটানা শব্দ। আর নিঝুম এই পরিবেশে আমরা দুজন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে সময় কাটালাম। লোকজন না আসায় অন্যরকম এক ভৌতিক পরিবেশ ঝর্ণাটার। দেখে বোঝা যায় এখান কদাচিৎ মানুষের পা পড়ে।



অবশেষে আল্লাহর রহমতে মূল পরিকুন্ড ঝর্ণায়।

এক সময় উঠে ফিরতি পথ ধরলাম। যেতে হবে আরো অনেক জায়গায়। দুই দিনের পরিকল্পনা আমার। অনেক কিছু দেখতে হবে।



ফেরার আগে কিছু সময় বিশ্রাম।



বিশ্রাম নিচ্ছেন রানা ভাই।

বিষয়: বিবিধ

২০৯৯ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377678
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমি প্রথম মাধবকুন্ড যাই ২০০৪ সালে। তখন সাগরনাল চা বাগান থেকে মাধবকুন্ড এর রাস্তা অনেকটাই থৈয়াছড়ার মতই ছিল।এরপর যাই ২০০৯ সালে। তখন সিড়ি এবং বাধান পথ তৈরি হয়েছে কিন্তু ঝর্নার সেীন্দর্য অক্ষুন্ন ছিল। কিন্তু এখন ছবি দেখে মনে হচ্ছে সুন্দর করতে গিয়ে জঘন্য করে ফেলেছে!
পরি কুন্ড এমন থাকলেই ভাল। নাহলে মাধবকুন্ড এর মত নষ্ট করে ফেলবে। গত শুক্রবার আমরাও গেলাম খৈয়াছড়াতে। প্রচুর মানুষ হয়েছিল। কর্দমাক্ত রাস্তায় ৫-৬ বার আছাড় ও খেলাম! প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখেই এখানে পর্যটক দের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু আমাদের প্রশাসন এর মাথায় সেীন্দর্য বৃদ্ধির নামের ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু আসেনা।
ধন্যবাদ ছবিগুলির জন্য।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:১৭
313037
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমাদের দেশের এই এক সমস্যা ভাই। কিভাবে মূল মানে প্রকৃত পরিবেশ বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা ধরে রেখে আরো সুন্দর করা যায় সেটা বোঝে না। বা ইচ্ছে করেই করে না। আরো বেশি নষ্ট করে ফেলে। এখন এই ঝর্ণার মূল আকর্ষণ আর নাই। আসল সৌন্দর্য দেখতে যদি হাজার বার আছার খেতে হয় তবুও ভাল। কিন্ত সেই পরিবেশটা যেন বজায় থাকে। তবে পরিকুন্ড ঝর্ণায় পর্যটক না যাওয়ার কারণে এর আসল সৌন্দর্য এখনও অক্ষুন্ন আছে। মানে সেখানে প্লাষ্টিক প্যাকেট ময়লা আবর্জনা এখনও জমেনি।
377684
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
বাকপ্রবাস লিখেছেন : Good Luck Rose
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:১৮
313038
নেহায়েৎ লিখেছেন : ফুল নেবে না হাসি নেবে বন্ধু! Happy
377687
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : এখন এখানে আছি। ফোন নম্বর ফেলে এসেছি। সামনের মাসে ঢাকা আসব ইন শা আল্লাহ।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:১৯
313039
নেহায়েৎ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ ভাই আপনি এখন ঢাকায়!কিন্তু আপনাকে কিভাবে নাম্বার দেই? ব্লগে দেওয়া যাবে না। আপনিতো ফেসবুকেও নাই! তাহলে এখন উপায়? আপনাকে নিয়ে একটা ট্রাভেল করার ইচ্ছা ছিল। দেখেন কোন উপায় পান কি না নাম্বার দেওয়ার।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫
313075
শেখের পোলা লিখেছেন : ই মেইল আছে। ধন্যবাদ।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০০
313078
নেহায়েৎ লিখেছেন : মেইল করেছি ভাই। কল দিয়েন।
377703
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:২০
হতভাগা লিখেছেন :



হ্যাভেন ট্যুরিজম এর সভাপতি রানা ভাইয়ের বয়স কত ? ৫০ বছর হয়েছে ?

(নীল টি-শার্ট পড়া ও গায়ে গামছা ঝুলানো লোকটা যে আপনি তা জানি)
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
313041
নেহায়েৎ লিখেছেন : ভাই বয়স দিয়ে কি করবনে? উনার বয়স কতো জানি না। তবে দেখতে ছোটখাট মানুষ হলেও উনার এলাকায় বেশ ভাল পরিচিতি বা প্রভাব আছে আল্লাহর রহমতে।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৭
313055
হতভাগা লিখেছেন : দেখে তো মনে হয় ১৩/১৪ বছর হবে। এই বয়সেই এত প্রভাব পরিচিতি Surprised Surprised
377711
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০৮
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : নেহায়েৎ ঘোড়া ঘুড়ী একটি স্বাস্থকর বিষয় ও বটে।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:৪৯
313065
নেহায়েৎ লিখেছেন : ভাইজান বড় বিপদে আছি। কেউ কেউ কইতাছে এমনে খালি খালি ঘোরন গুনাহের কাম! কন তো কি করি?
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৩৯
313076
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : যারা বলছে তারা কি কোরাআনের আয়াত পড়েনি! জমিনে বিচরন করে দেখার আয়াত!!

আমার পীরসাহেব ও ঘুড়ে দেখতে বলেছেন। আপনি আরামছে ঘুরুন। তবে বাড়িতে বউএর খেয়াল রাখার ব্যাবস্থা করে তার পর, অথবা তাকে সাথে নেয়ে।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৫৪
313077
নেহায়েৎ লিখেছেন : Happy Happy Happy বউ নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরি ভাই। তবে এসব ঘুরা হল একদিনের বা সর্বোচ্চ দুইদিনের। সেটাও বউয়ের অনুমতি নিয়ে। সেখানে কোন সমস্যা নাই। অনেক ধন্যবাদ বাদ জ্ঞানী ভাই। জাঝাকাল্লাহু খাইরান ফিদদুনিয়া ওয়াল আখিরাহ। সাপোর্ট দেয়ার জন্য। Love Struck Love Struck Love Struck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File