ঢাকার পাশে তিন কেল্লা একদিনে দেখে আসুন।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:২২:২৫ দুপুর
ইদ্রাকপুর কেল্লা, মুন্সিগঞ্জ।
ঢাকার শহরের এই যান্ত্রিক জীবনে অনেকেই এক ঘেয়েমিতে ভোগেন। একটু সময়-সুযোগ-ফুরসৎ পেলেও। না জানা না চেনার কারণে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন না একদিনের ট্যুরে। একই জায়গা বার বার দেখতে দেখতে অনেকেই বিরক্ত। কিন্তু একটু খোঁজ করলেই জানতে পারবেন আপনার ঢাকা শহরের আশ-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক দেখার জায়গা। অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে পারেন একদিনের সাপ্তাহিক ট্যুরে।
হাজীগঞ্জ জলদূর্গের উপর তিন বন্ধু।
এবার আমরা ভ্রমণ করলাম ঢাকা শহরের পাশেই দুইটি দূর্গ। একটি হাজীগঞ্জ জলদূর্গ অপরটি ইদ্রাকপুর কেল্লা। আয়োজনে ছিল ঢাক ট্যুরিষ্ট ক্লাব। নিধারিত দিনে(২৫.০৮.১৬) আমরা সকাল বেলা ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের অফিসে হাজির হই দলবল সহ। একটু পর আসেন ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান। এসেই স্বভাব সুলভ হাসি মাখা মুখে সবাইকে স্বাগত জানান।
ভ্রমণ দলের হাজীগঞ্জ জলদূর্গের ভিতর ঘুরাঘুরি।
সকাল আটটার দিকে নাস্তা সেরে সবাই যার যার নির্ধারিত আসনে বসে রওয়ানা করি আমরা। গুলিস্থানে কিছু জ্যামে পড়ে সময় কাটে এর পর আছে ট্রাফিক পুলিশের ঝামেলা। সব শেষ করে আমরা নারায়ণগঞ্জ পৌছে গাড়িতে ফুয়েল নিয়ে। একেবারে চলে যাই হাজীগঞ্জ জলদূর্গে।
জলদূর্গের সিড়িতে।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া হয়ে ঈসা খান রোড দিয়ে হাজীগঞ্জের পথে ঢুকেই বাম দিকে হাজীগঞ্জ দূর্গ। ভিতরে হাজীগঞ্জ দূর্গের এরিয়াটা গোলাকার।কর্তৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলায় হাজীগঞ্জ দূর্গটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, হাজীগঞ্জ দূর্গের একটা নামের সাইনবোর্ড আছে কিন্তু সেটার চামড়া খোসা সহ মরে গেছে। সাইন বোর্ডের লেখা বোঝা যায় না!
শুধুই ঘুরাঘুরি।
হাজীগঞ্জ দূর্গ হতে বের হয়ে আমরা গাড়ীতে উঠে একটু সামনে গিয়ে হাতের ডানে মরিয়ম বিবির মাজার দেখতে যাই।এটি বাংলার মুঘল সম্রাট সুবেদার শায়েস্তা খাঁন কতৃক নির্মিত। মসজিদের নিকট সমাহিত তার কন্যা বিবি মরিয়মের নামেই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছ। প্রাচীর বেষ্টিত একটি চতুস্কোণ প্রঙ্গনের মধ্যস্থলে উঁচু ভিতের উপর সৌধটি নির্মিত। সমাধি সৌধের চারপাশের বারান্দায় কয়েকটি সাধারন কবর রয়েছে।
মরিয়ম বিবির মাজার।
মরিয়ম বিবির মাজার দর্শন শেষ করে আমরা পুণরায় গাড়িতে ফিরে আসি এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। শহরের সুগন্ধা হোটেলে কাচ্চি দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে আ্মাদের পরবর্তী গন্তব্য মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর কেল্লার উদ্দেশ্যে গাড়ী ছেড়ে দেয়।
হোটেলের খানাপিনা।
ইদ্রকাপুর পৌছে আমাদের সবার মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেল্লার গেট তালা দেয়। অনেক ডেকেও কাউকে পাচ্ছিলাম না! কিছু অপেক্ষার পর অবশেষে চাবি ওয়ালা এলেন।তাকে দেখে সবার মন ভাল হয়ে গেল। এতদূর থেকে প্রচন্ড গরমে এক কষ্ট করে এসে যদি না দেখতে পেতাম কেমন লাগত তখন!
ইদ্রাকপুর কেল্লা।
কেল্লার গেট।
এখানে সবার ইচ্ছে মতো ঘুরাঘুরি আর বিশ্রাম পুকুর পড়ে বসে থাকা আড্ডা আর চলে সমানতালে ছবি তোলা। গভীর নল কূপের ঠান্ডা পানি পেয়ে সবার ভেতরে আবার সতেজতা ফিরে আসে। এক সময় আমরা এখানে পুকুরের পানিতে অজু করে জোহরের এবং আসরের কসর সালাত আদায় করে। আবার গাড়ীতে গিয়ে বসি।
ট্যুরিষ্ট ক্লাবের সভাপতি মোস্তফিজ ভাইয়ের সাথে।
আমাদের নিয়ে গাড়ী এবার চলতে থাকে রামপালের উদ্দেশ্যে রাজা বলরাম সিংয়ের বাড়ী দেখব আর তার পুকুর। কিন্তু আমাদের এবারও হতাশ হতে হয়! বলরাম সিংয়ের কোন চিহ্ন এই এলাকায় নেই! তার পুকুর দেখতে গিয়ে দেখি সেখানে এখন ধইঞ্চার খেত!!
দূর্গের ভিতরের দৃশ্য।
কুচ পরোয়া নেহি। আমরা এবার চলতে থাকি ধলেশ্বরী নদীর দিকে। উদ্দেশ্য নদীতে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। পা ভেজানো। আর গোসল করা।
ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে আমরা।
আমি বলি তাওহীদের কথা।
বিশ্রাম।
ইদ্রাকপুর কেল্লার গেট।
নদীতে নেমে কেউ বা গোসল করল। কেউ নদীর শীতল জলে মুখ-হাত ধুয়েই সন্তষ্ট। এর পর নৌকা নিয়ে ধলেশ্বরীর বুকে ভেসে চলা। ভেসে ভেসে মুক্তারপুর ব্রীজের নিজে দিয়ে ঘুরে আবার এসে গাড়ীতে উঠে সোজা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। পথে মাগরিবের সালাতের বিরতি।
হাজীগঞ্জ জলদূর্গ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিচ্ছেন ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের সম্মানিত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান।
দূর্গের দেয়লের উপর।
জল দূর্গের গেট।
মুঘল শাসনামলে বিখ্যাত বারোভূঁইয়ারা বাংলারবিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে দেশ শাসন করতেন। বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন বিক্রমপুরের চাঁদ রায়, কেদার রায়। চাঁদ রায়-কেদার রায়দের শায়েস্তা করার লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর নামক স্থানে মুঘল ফৌজদার একটি কেল্লা নির্মাণ করেন।
কেল্লার নিচের দিরেক সিড়ি।ইদ্রাকপুর।
ধলেশ্বরী-ইছামতির সংগমস্থলে চাঁদ রায় ১৬১১খ্রি. ডাকচেরা ও যাত্রাপুর দূর্গ হারিয়ে পরাজিত হন। ফলে সমগ্র বিক্রমপুর মুঘলদের শাসনে চলে আসে। বিশাল বিক্রমপুরে মুঘলদের করতলে রাখতে এবং বিদেশি সৈন্যদের হাত থেকে সুবে-বাংলার রাজধানী ঢাকাকে রক্ষার জন্য মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর নামকস্থানে মুঘল সুবেদার মীর জুলমা ১৬৬০ খ্রি. একটি দূর্গ বা কেল্লা নির্মাণ করেন।এটিই বর্তমানে ইদ্রকাপুর কেল্লা নামে পরিচিত।
হাজীগঞ্জ দূর্গের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
আমি সর্বদাই সাক্ষ্য দেই তাওহীদের।
এর পর কোন একদিন সময় পেলে সোনাকান্দা জল দূর্গে যাত্রা করতে হবে। পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার আগেই এসব দেখে শেষ করতে হবে। বলাতো যায় না, যেভাবে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে কোন দিন শেষ হয়ে যায় পুরোপুরি!!
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জ বাস আছে। বাসে চাষাড়া নেমে রিক্সায় হাজীগঞ্জ দূর্গ। হাজীগঞ্জ দূর্গের আগেই হাতের বামে মরিয়ম বিবির মাজার। নদীর ওপারে নৌকায় গেলে সোনাকান্দা দূর্গ। এসব দেখা শেষ করে পূনরায় চাষাড়া গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে মুন্সিগঞ্জ মুক্তারপুর ব্রীজ পার হয়ে হাতের বাম দিকে শহরের পর ডিসি অফিসের পাশে ইদ্রাকপুর কেল্লা।
থাকার জন্য নারায়ণগঞ্জ শহর এবং মুন্সিগঞ্জে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে খাবার ভাল হোটেল সুগন্ধা।
বিষয়: বিবিধ
২০২০ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনিও রসমালাই কম খাচ্ছেন না!
সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বছর হিসেবে গন্য করলেও তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না । যেটুকু দেখা যায় সবই বেসরকারী খাতে ।
আমরা বেড়াতে যাবার কথা শুনলে দেশের ভেতর কক্সবাজার রাঙ্গামাটিই বুঝি । এই ৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ২ লাখ পর্যটক গিয়েছে ।
এটা কি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারে না সরকার ?
আপনাদের যাদের এরকম হবি আছে তারা সুন্দরভাবেই বর্ণনা করেন ছবি সহকারে , এটা ভালই লাগে । সাথে কেমনে কি - সেটাও বললে আমাদের মত আলসেদের তাগাদা তৈরি হবে।
উভয় দুর্গেই গিয়েছি ১০-১১ বছর আগে শেষ। হাজিগঞ্জ দুর্গের সীমানার লাগোয়া একটা বিল্ডিং এর উপর যে মোবাইল ফোন টাওয়ার আছে সেই সাইট টা আমার কমিশন করা। সে সময় দুর্গটি বেশ ভাল করে দেখেছি। অযত্ন সত্বেয় এখনও মনে হয় যথেষ্ট ভাল আছে। ইদ্রাকপুর দুর্গও দেখেছি একবার। সোনাকান্দাও একই ডিজাইন এর দুর্গ। হাজিগঞ্জ দুর্গ সম্পর্কে অনেকে বলেন এটি ঈসা খান এর নির্মিত। যদিও তা ঠিক নয়। এটা মোগল সুবেদার মীর জুমলার সময় নির্মিত। তবে তার আগে এখানে ঈসা খান এর একটি ছাউনি ছিল। এই তিনটি দুর্গই মূলত নির্মান করা হয়েছিল বার্মার অধিবাসি মগ এবং তাদের সহযোগি পর্তুগিজ হার্মাদ জলদস্যু দের হাত থেকে ঢাকা কে রক্ষা করতে। পরবর্তিতে বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রশাসক সুবেদার শায়েস্তা খান এদের সমূলে উচ্ছেদ করেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন