মৈনট ঘাট ঢাকার পাশের কক্সবাজার।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২০ আগস্ট, ২০১৬, ০৪:০৬:০০ বিকাল
যাদের বেড়ানোর খুব ইচ্ছে কিন্তু সময় করতে পারেন না। বা অল্প সময়ে কোথায় যাবেন বুঝতে পারেন না।কেউ কেউ নিরাপত্তার কারণেও অনেক জায়গায় বেড়াতে যেতে চায় না ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। তাদের জন্য ঢাকার আশপাশে আছে অসাধারণ কিছু জায়গা। যেখানে আপনি এক দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে অনায়াসে বেড়িয়ে আসতে পারেন পরিবার সহ বা বন্ধবান্ধব নিয়ে। ঢাকার খুব কাছেই পদ্মা নদীর উত্তাল ঢেউ দেখতে আর নৌকা ভ্রমণে যেতে পারেন নবাবগঞ্জের পাশেই দোহার উপজেলার মৈনট ঘাটে।
ক্যাম্পিং এর কন্য খারাপ না জায়গাটা।
আমার প্লান ছিল একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসব মৈনট ঘাট। সুযোগ মতো গত ১৯শে আগষ্ট(শুক্রবার) ভোরে ফজরের সালাত আদায় করে বাসা থেকে বের হইলাম। আগেই খোঁজ খবর নিয়ে রেখেছিলাম। তাই বাসে উঠে সোজা গুলিস্থান। গোলাপ শাহ মাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে এন মল্লিক পরিবহনে উঠে। ডাইরেক্ট গিয়ে নামলাম মাঝির কান্দা।
বিকল্প কক্সবাজার কাছের মানুষদের।
এর পর সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে সোজা মৈনট ঘাট। দূর থেকেই চিনতে পারলাম এই সেই মৈনট ঘাট। যাকে দেখার জন্য এতো দূর থেকে আসা। সকাল ৮.২০ মিনিটে গিয়ে পৌছালাম। সকালের নাস্তা করা হয় নি। সেখানে অস্থায়ী এক হোটেলে নাস্তার অর্ডার দিলাম।সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম কলা, আপেল, চকোলেট। পরোটার সাইজ দেখেই তো চোখ ছানাবড়া! বিশাল সাইজের একটা পরোটা কলা দিয়ে খেয়ে ক্ষুধা সামাল দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘুরাঘুরি।
একবার ভাবলাম নদীর ওপার ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন থেকে ঘুরে আসি। আমাদের এক আত্মীয় আছে হাজীগঞ্জ বাজারে। কিন্তু রিজার্ভ ভাড়া শুনে চিন্তা বাদ দিলাম। যারা ঢাকা থেকে ক্যাম্পিং এ গেছেন তাদের সাথে আড্ডা দিয়ে ছবি তুলে কিছ সময় কাটালাম। ক্যাম্পিং এর লোকজনের দুপুরের খাবারের মেনু শুনলাম বাইলা মাছ আর বাইন মাছ।
আরে ভাই এখানে এসে তাজা ইলিশের বার-বি-কিউ না করলে হয়!!
সাঁতার না জানলে বেশি দূরে যাবেন না! পদ্মার স্রোত খুব ভয়ংকর! যেখানে ভয়ংকর সেখানেই সুন্দর এটা ওহিদ ভাইয়ের কথা। আমার না।
যদিও কক্সবাজার গেছি অনেক বার তবুও এখানে একটু কক্সবাজারের স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
যারা কখনও কক্সবাজার যান নাই তারা এখানে আসলে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন পদ্মার অপরূপ জলরাশির দিকে। হারিয়ে যাবেন কোন সুদূর নীলিমায়! যখানে আকাশ আর পানি মিশে গেছে এক হয়ে! দিগন্ত বিস্তৃত ঢেউ দোলানো জলরাশি আর নদীর বুকে জেলেদের সারি সারি নৌকা দেখলে আপনার কাছে মনে হতে পারে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিতে দাড়িয়ে আছেন। হয়তো বা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবেন কোন এক পাল তোলা নৌকার দিকে!
ছুটির দিনে ভিড় জমে বেশ!
মৈনট ঘাট এখনও তেমন পরিচিতি লাভ করে নি।তাই অনেক ভ্রমণ পিপাসু ভাই-বোন বঞ্চিত হচ্ছে এই সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে। যদি নিজের গাড়ী নিয়ে খুব ভোরবেলা আসতে পারেন তবে সারারাত জেলেদের ধরা ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বাজার দেখতে পাবেন ঘাটে। চাইলে মাছ কিনতেও পারবেন তাজা ইলিশ সহ হরেক পদের ছোট-বড় মাছ।
অনেকেই ঢাকা থেক আসনে ক্যাম্পিং এ।
ঘুরাঘুরি শেষ করে জুম্মার সালাতের কথা মাথায় এল। আজ শুক্রবার। বেশি দেরী না করে একটি রিক্সা নিয়ে একটু ঘুরে বেড়িয়ে আসলাম মাঝির কান্দা। সেখানে অপেক্ষা করছেন খান ভাই। মাঝির কান্দা এসে খান ভাই ভাবীর সাথে হালকা নাস্তা করে। বিদায় নিয়ে উঠলাম একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায়। সোজা ঢাকা কদমতলী। এর পর গুলিস্থান। এসে জুম্মার সালাত আদায় করে বাসায়।
মৈনট ঘাটের সুর্যাস্ত। এই ছবি সংগৃহীত।
মৈনট ঘাটের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করার উত্তম সময় বর্ষাকাল। বর্ষায় চারিদিকে থাকে থৈ থৈ পানির খেলা। অপূর্ব সুন্দর ঢেউ। অনেক নৌকা আর ব্যাপক মাছ ধরার দৃশ্য। আর যদি চান তবে পদ্মার চরে বালির উপর বসে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন একাকী নিরিবিল। একাকী বিকেলে হাঁটতে পারেন বেলাভূমি ধরে।
কেউ আপনাকে বিরক্ত করার নেই।
তবে ইদানিং ছুটির দিনে আশেপাশের স্থানীয় সৌখিন ভ্রমণ পিপাসু লোকজন পদ্মার বুকে স্পীডবোট আর ট্রলার ভাড়া করে ঘুরে বেড়ায়। ওপারে ঝাপসা মতো দেখা যায় ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন। ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও কিছু কিছু লোক বর্তমানে আসেন বেড়াতে। যেমন গিয়েছিলাম আমরা।
সময়টা খারাপ কাটে না।
এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই এখান বেড়াতে এসে মৈনটের পাশাপাশি দেখতে পারেন নবাবগঞ্জের জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আনসার ক্যাম্প, আরও কিছু দর্শনীয় স্থান।
সময় পেলে এদিক ওদিক ঢুঁ মারতে ভুলবেন না।
পাবেন পাখি আর বেদে নৌকার দেখা।
কিভাবে যাবেন-
ঢাকা থেকে মৈনট ঘাট আসার উপায় হল বাস। যদি আপনার নিজের গাড়ী না থাকে। গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা যমুনা পরিবহনে বাস, ভাড়া ৯০ টাকা আর দুই ঘন্টা থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাট। এছাড়া এন মল্লিক পরিবহনে উঠে মাঝির কান্দা নেমে সিএনজি বা ব্যাটারি চালিত অটো নিয়ে যেতে পারেন আরামে।
খাওয়ার জন্য আছে অস্থায়ী কয়েকটি হোটেল। সেখানে পাবেন বিশাল বিশাল সাইজ পরোটা। অথবা নিজে সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন শুকনো খাবার।
থাকার কোন ব্যবস্থা নাই। চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারেন। আর একটি টয়লেট আছে ভয়াবহ অবস্থা! সমস্থ বর্জ গিয়ে মিশছে নদীর পানিতে! দেখার কেউ নাই!!!
বিষয়: বিবিধ
২৭৮৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে-
ঐ যে দিগন্তে ছাড়িয়ে সীমানা
হংসমিথুন যেথা মেলেছে ডানা...
তবে জায়গাটা সুন্দর লাগল এখন। ১০-১১ বছর আগে অবশ্য ওই দিকে গিয়েছিলাম কাজে এটা ঠিক সেই জায়গা কিনা মনে পড়ছে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন