নাপিত্তাছড়া অভিযান।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৫২:০২ দুপুর



আমাদরে খৈয়াছড়া এডভেঞ্চার শেষ করে দশটায় ফখরুল ভাইয়ের দোকানে লাঞ্চ সেরে ব্যাগি গুছিয়ে বিদায় নিয়ে রাস্তায় উঠলাম।কাঁদা রাস্তায় কিছুদূর গিয়ে আমাদের গাইড তারেক একটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া করল।একটু পর পর অটোরিক্সার চাকা দেবে যায় আর আমদের নামতে হয়!



নাপিত্তছড়ার উদ্দেশ্যে পথের শুরু।

এভাবে এক সময় মেইন রোডে এসে অটোরিক্সা ছেড়ে দিলাম। এর পর মেইন রোড ধরে হেটে বড়তাকিয়া বাজারে গিয়ে আমার ছেঁড়া স্যান্ডেল সেলাই করে সেখান থেকে লেগুনাতে উঠে নয় দূয়ার গেলাম।



সমতল হতে পাহাড়ের পানে একটু একটু করে।

প্রচন্ড রোদ আর গরমে সবার কষ্ট হচ্ছিল আমরা কেউ কেউ ছাতা ব্যবহার করছিলাম। পথে কয়েকটি টিমের সাথে দেখা হল। কেউ যাচ্ছেন কেউ ফিরে আসছেন। মাঝে মাঝে আমরা একে ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম ভাই আর কতো দূর? কেউ জবাব দিচ্চিল আর এক ঘন্টা হাঁটেন! কেউবা বলছি কাছেই! কেউ ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল যাওয়ার দরকার নাই ফিরে যান! জানডা হাতে করে যেতে হয় নাপিত্তা ছড়ায়!



প্রকৃতির ডাক নয়, বিশ্রাম এটা।

আঁকাবাঁকা বেশ কিছু রাস্তা ক্ষেত পেরিয়ে একটা পাহাড়ী ছড়ার দেখা পেলাম। ছড়ায় নেমে কিছুদূর হেটে পার হয়ে আবার সমতল ধরে গেলেই পড়বে পাথুরে ঝর্ণাধারর ছড়া। সেটাই মূল ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা। টলমলে স্বচ্ছ পানি পাথুরে পথ সবুজের ছায়া পাখির ডাকতো আছেই। দেখা পাবেন প্রচুর বকের। আর দেখবেন উপজাতি মহিলাদের ক্ষেত নিড়ানো। এসব ফেলে আপনি চলতে থাকবেন আপনার টার্গেট পানে।



পথটা একটু দূর্গম।বিশেষ করে ওহিদ ভাইয়ের জন্য।

এখানে থেকে মূল ঝর্ণায় যাওয়া পর্যন্ত পুরোটা পথ পাথুরে ছড়া। আর দুপাশ থেকে নেমে এসেছে পাতায় ছাওয়া গাছের ডাল। অসংখ্য ছোট-বড় পাথর আপনাকে পাড়ি দিতে হবে। কিছু পাথর একটু বেশিই বড়! আর শ্যাওলা ধরা পিচ্ছিল। পথের এরই অংশটুকু আপনাকে পারি দিতে পুরাটাই পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে। অতি সাবধানে চলতে হবে। পা একবার পিছলে গেলে ভাঙ্গা-মচকা কঠিন কিছু না!



পথের সৌন্দর্য এমনই!

একটা কথা মনে রাখা দরকার কষ্টের পরেই আছে স্বস্তি। যেখানে ভয় সেখানে আছে সুন্দর কিছু। যেখানে বিপদ সেখানে আছে ভাল কিছু। কাঁদা আর কাঁটার ভয় পেলে যেমন পদ্মফুল তোলা সম্ভব না তেমনি পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে একটু কষ্ট করেই পথ পারি দিতে হবে।



খৈয়াছড়ায় ব্যাথা পাওয়ায় ভিজতে চাননা ওহিদ ভাই।

যতো কাছে যেতে থাকবেন ততোই এর সৌন্দর্য বাড়তে থাকবে। পথে পথে তুলবেন কিছু অসাধারণ সুন্দর দৃশ্যের ছবি।প্রতিটি ঝর্ণার যেমন আলাদা সৌন্দর্য আছে এর চলার পথেরও আছে তেমনি আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সৌন্দর্য। আপনি যতোই দেখবেন ততোই অভিভূত না হয়ে পারবেন না।



একেবারে নিচের ঝর্ণা এটা। এখানেও পানি গভীর। সাতার না জানলে নামবেন না!

নাপিত্তাছড়া প্রথমটিতেই আছে ছোটবড় কয়েকটি ধাপ। শেষের দিকে আছে গুহার মতো একটা জায়গা। যেখানে পানি অনেক গভীর। পর্যটকেরা মনের আনন্দে সেখানে সাঁতার কাটছে। একেবারে নিচের যেটা সেটা একটু বড়।ঝর্ণাটির সামনের পানির অংশটি কিছুটা গভীর। তাই একেবারে ঝর্ণার সামনে যেতে হলে আপনাকে সাঁতার কেটে যেতে হবে। তারপর প্রথমটা শেষ ধাপে পানি বেশি পড়ে। প্রথমটার বামদিক দিয়ে সাবধানে উঠতে হয় উপরে। এর পর পাবেন গুহার মতো ঝর্ণা।



প্রথমটার উপরের ধাপ।

এই ঝর্ণার পরের আরো নাকি দুইটা ধাপ আছে শুনলাম ঝর্ণা তিনটার নাম হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। অনেক দূরে দূরে এই ঝর্ণাগুলো। আমাদের হাতে সময় কম, আজই ঢাকা ফিরতে হবে তাই অন্য দু্ইটি ঝর্ণা দেখার স্বাধ মনের মধ্যে পুষে রেখে। একটা দেখেই সন্তষ্ট থাকতে হল। এখানেই উল্টে-পাল্টে ঝাপাঝাপি করে সাঁতরে বসে-শুয়ে-দাড়িয়ে মনের সাধ মিটিয়ে দেখলাম।



পানি ধাক্কা দিয়ে আপনাকে নিচে নিতে চাইবে!

এরপর ফেরার পালা। গাড়ী ধরতে হবে ঢাকার। আগামীকাল অফিস করতে হবে যে!



প্রথম ধাপের উপরে গুহার মতো জায়গা। এখানেও পানি বেশ গভীর।

কিভাবে যাবেন-

পরে বলছি।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376408
১৭ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০২:৫৫
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ঝর্ণাটির নাম আসলে কুপিকাটাকুম। নাপিত্তাছড়া হচ্ছে অঞ্চলটি বা ঝর্ণার ঝিরিপথটির নাম।

আমি ব্যথার ভয়ে পানিতে নামি নাই- এটি ভাই ১০০% ভুল কথা। আমি প্রচন্ড অসুস্থ ছিলাম যেটি সবাইকে বুঝতে দিই নি। রওনা দেয়ার আগেও ১০২ ডিগ্রী জ্বর আর তীব্র কাশি ছিল। তীব্র মাত্রার এন্টিবায়োটিক আর পেইনকিলার সেবন করে রওনা দিয়েছিলাম ট্যুরে। যেহেতু আগে কথা দিয়ে ফেলেছি।
১৭ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:২২
312075
নেহায়েৎ লিখেছেন : আসলে আপনি অসুস্থতার জন্যই নামেন নাই এটা লিখতে গিয়ে ওটা লিখেছি।বাই মিসটেক।

http://bangla.sharebazarbd24.com/news/details/Traveling/4980
376413
১৭ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:২৪
376414
১৭ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:২৬
নেহায়েৎ লিখেছেন : একটা ঝর্ণার বিভিন্ন নাম হয় ভাই।পত্রপত্রিকায় এটাকে নাপিত্তাছড়া লেখে।

376416
১৭ আগস্ট ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পানিতে এভাবে নামা মারাত্মক ভুল হয়েছে। আপাত শান্ত এই পানির নিচে অত্যন্ত শক্তিশালি লুকান স্রোত থাকে। আর এই স্রোতের টানে একবার পড়লে পাথরে বাড়ি খেয়ে শরির এক্কেবারে কিমা হয়ে যায়!!
ঝর্নাটা এমন থাকলেই ভাল বেশি পর্যটক আকর্ষন করতে গেলে মাধবকুন্ডর অবস্থা হবে!!
১৮ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:১০
312091
নেহায়েৎ লিখেছেন : বেড়াতে গেলে পর্যটকদের সাবধান হতে হবে। তাহলে অনেক দূর্ঘটনা থেকে বাঁচা যাবে।
376421
১৭ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
১৮ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:১০
312092
নেহায়েৎ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
376434
১৮ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:০৩
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৮ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:১০
312093
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File