ঘুরে আসুন বরিশাল দূর্গা সাগর।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০৯:৫১ দুপুর



দূর্গা সাগর দীঘির গেট।

সেন্টু মিয়ার মসজিদ দেখে বরিশাল শহরে ফেরার পথে মেইন রাস্তার সাথেই দূর্গা সাগর দীঘি। শিউলি আপা বললেন, আবার কবে আসিস বরিশাল তার ঠিক নাই দেখে যা। আমরা বাস থেকে নেমে এক চায়ের দোকানে হালকা চা-নাস্তা করে টকেট কেটে দীঘি দর্শনে প্রবেশ করলাম।



দূর্গা সাগর দীঘি।

বিশাল দীঘির পাড়ে দাড়িয়ে চোখ ছানাবড়া! এপার-ওপার হাটতে গেলে অনেক সময় দরকার! তবুও এসেছি যখন আমি পুরোটা এক চক্কর না দিয়ে যাব বলে মনে মনে সিন্ধান্ত নিলাম। হাটা শুরু করলাম পশ্চিম পাড় ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে। হাটছি আর দেখছি। প্রচুর গাছ-পালা লাগানো বিশাল পাড় দিয়ে। গাছের মধ্যে আছে নারিকেল ,সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি।দর্শনার্থী নেহায়েৎ কম না। মানুষের যাওয়ার জায়গা কমে যাচ্ছে শহর-নগর বৃদ্ধির কারণে। যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে মানুষ একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা খুজছে।



দীঘির মাঝে দ্বীপ।

গাছ-পালার ছায়ায় হাটার সময় চারদিকে যখন দেখবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। দ্বীপেরন মাঝখানে আছে একটা দ্বীপ। সেখানেও সবুজ গাছ-পালায় ভরা। সুন্দর স্বচ্ছ পানি। শীতকালে এই দীঘি পরিযায়ীর পাখির কল-কাকলীতে মূখর হয়ে ওঠে।সরাইল ও বালিহাঁস সহ নানান প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানে দ্বীপে আশ্রয় নেয় । পুকুরে গোসলের জন্য আছে বাঁধানো ঘাট। স্থানীয়রা অনেকেই সেখানে গোসল করেন।চারটি ঘাট থাকলেও বর্তমানে টিকে আছে দুটি। বাকী দুটির অস্তিত্ব নাই!



বাঁধানো গোসলের ঘাট।

ইতিহাসে জানা যায় চন্দ্রদ্বীপের পনেরতম রাজা ছিলেন শিব নারায়ণ রায়। বাংলার বরো ভূইয়াদের একজন ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী রানী দূর্গাবতীর প্রতি ভালবাসার অবদান স্বরূপ তিনি এই দীঘি খনন করেন। কথিত আছে রানী দূর্গাবতী বিশ্রাম ছাড়া যতদূর জায়গা হেটে ঘুরে আসতে পেরেছিলেন ততখানি জায়গা নিয়ে রাজা দীঘি খনন করে দেন। এবং রানীর নামেই দীঘির নাম করণ করা হয় দূর্গা সাগর।



অতিথি পাখির ঝাঁক দেখা যায় শীতকালে।

সরকারী হিসাব অনুযায়ী দীঘিটি ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। এর ২৭ একর ৩৮ শতাংশ জলাশয় এবং ১৮ একর ৪শতাংশ দীঘির পাড় । পাড়টি উওর- দক্ষিনে লম্বা ১৪৯০ফুট এবং প্রশস্ত পূর্ব পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট। ৪০০ বছরের প্রাচীন দীঘিটি তার আগের সেই যৌবন ধরে রাখতে পারে নাই। দেখলেই বুঝা যায় দীঘি বুড়িয়ে গেছে!



মাছ ধরার মাচান।

বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে টিকেটের বিনিময়ে এখানে মাছ শিকারের ব্যবস্থা আছে। সৌখিন মৎস শিকারীরা এখানে যান শখের মাছ ধরতে। পশ্চিম পাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদেও ডাক বাংলো । ইচ্ছা করলে ভ্রমনকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন ।



উপর থেকে দেখতে এমন দূর্গা সাগর দীঘি।

মহা প্রলংকারী ঘূর্নিঝড় সিডরের সময় এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।তবে দক্ষিনাঞ্চাল বাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে দূর্গাসাগরের পুরনো শুনাম, ঐতিহ্য ও প্রকৃতির রুপ এখনও কিছুটা ধরে রেখেছে দূর্গাসাগর দীঘি। আমার কাছে সেসময় ক্যামেরা না থাকায় ছবি তুলতে পারিনি।



গাছের ছায়ায় দাড়িয়ে দেখা দূর্গাসাগর।

-

যেভাবে যাবেন : বরিশাল পর্যন্ত বাস বা লঞ্চ এ।গাবতলি থেকে সাকুরা, হানিফ, সৌদিয়া এসব পরিবহনের বাস যায় প্রতি ঘন্টা পরপর।ভাড়া ৫০০ টাকা।এছাড়া প্রতিদিন রাত ৮ টা থেকে ৯ টায় ৪-৫ টি লঞ্চ ছেড়ে যায় বরিশালের উদ্দেশ্যে। কেবিন ভাড়া ৯০০ টাকা (সিংগেল) ১৭০০ টাকা (ডাবল)।

-

(ছবি গুগল থেকে নেয়া)

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375306
২৬ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪
হতভাগা লিখেছেন :
তার স্ত্রী রানী দূর্গাবতীর প্রতি ভালবাসার অবদান স্বরূপ তিনি এই দীঘি খনন করেন।


০ এরকম আরেকটা আছে - তাজ মহল ।

এরকম আর কি কি আছে বাংলাদেশে/উপমহাদেশে / পৃথিবীতে ?
২৭ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৯:৫৯
311221
নেহায়েৎ লিখেছেন : হয়তো আরো আছে ইতিহাস ঘাটলেই পেতে পারেন। আমার জানা নাই। আমি মাঝে মাঝে সময়-সুযোগ পেলেই ঘুরি-ফিরি দেখি।
375314
২৬ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:১৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দেখা হয় নাই। দেখার ইচ্ছে রইল।
২৭ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:০১
311222
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমি সময়-সুযোগ পেলেই ঘুরে দেখি। ভাল লাগে। আল্লাহ তা'আলা কত সুন্দর করে বানইছেন এই দুনিয়া!
375315
২৬ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:১৩
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। আমি বাংলাদেশ ব্যাংক (বরিশাল শাখা) অডিট করার সুবাদে ২০০৪ সালে এ স্থানে গিয়েছিলাম। বরিশাল শহর হতে অনতিদূরেই সুন্দর এ দিঘীটির অবস্থান।
২৭ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:১০
311224
নেহায়েৎ লিখেছেন : ভাই আপনি অনেক আগেই দেখেছেন। আমি দেখেছি আপনার অনেক পরে। সময় পেলে এর কাছেই সেন্টু মিয়ার মসজিদটা দেখে আসবে।খুব সুন্দর মসজিদ।
-
http://www.desh-bd.net/blog/blogdetail/detail/2120/abdulmazed/75949#.V5
375329
২৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনি শুধুই আমার ভ্রমনেচ্ছা বাড়িয়ে চলেছেন। আমরা বিদেশ ঘুরতে যাই, অথচ আমাদের চার পাশে কতকিছু সুন্দর রয়েছে আমরা তার খবর রাখিনা। ধন্যবাদ।
২৭ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:০৩
311223
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমার ঘুরে দেখতে ভাল লাগে। আগে বেড়াতাম শেয়ার করতাম না। কিন্তু এখন শেয়ার করি সবার সাথে। তাতে যে যেতে পারেন নাই তারও দেখা হয়ে যায়। ইনশা আল্লাহ এ মাসেই আবার কোথাও থেকে ঘুরে আসছি। দেখা হবে হয়তো এ ব্লগেই।
375338
২৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:৫৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশাআল্লাহ খুবই ভালো লাগলো হিসাব অনুযায়ী দীঘিটি ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। এর ২৭ একর ৩৮ শতাংশ জলাশয় এবং ১৮ একর ৪শতাংশ দীঘির পাড় । পাড়টি উওর- দক্ষিনে লম্বা ১৪৯০ফুট এবং প্রশস্ত পূর্ব পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট। ৪০০ বছরের প্রাচীন দীঘিটি। অনেক অনেক ধন্যবাদ
২৭ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:১১
311225
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। এসব প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য ভাই। দেখলে বোঝা আগের দিনের কৃর্তি।
৩১ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:২৩
311411
কুয়েত থেকে লিখেছেন : مرحبا بكم بارك الله فيك وجزاك الله خيرا وشكرا Good Luck
৩১ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:২৩
311412
কুয়েত থেকে লিখেছেন : مرحبا بكم بارك الله فيك وجزاك الله خيرا وشكرا Good Luck
375367
২৭ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৫১
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : এ দূর্গাদিঘীটি স্থানীয়ভাবে রামসাগর নামেও পরিচিত।
৩০ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬
311358
নেহায়েৎ লিখেছেন : ভাই দূর্গাসাগর এটা না দূর্গাসাগর দিনাজপুর।
-
http://www.desh-bd.net/blog/blogdetail/detail/2120/abdulmazed/76526#.V5xMqPl97IU
৩০ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮
311359
নেহায়েৎ লিখেছেন : সরি লিখতে ভুল হয়েছে। এটা
দূর্গাসাগর আর রামসাগর দিনাজপুর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File