খুতবা মনিটরিং ও আমার ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১১ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৪৮:০০ দুপুর
আমরা জানতে পারলাম যে, এখন থেকে নাকি সরকার প্রতি জুমু'আহর খুতবা মনিটরিং করবে। খতীব সাহেবগণ ইসলামের সঠিক অনুশাসনের কথা বলেন কিনা তা দেখা হবে। ভালো কথা। তবে আমার মনে কয়েকটি বিষয় জাগলো তাই শেয়ার করলাম।
০১. আমাদের দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মসজিদে আরবীতে খুতবা পড়া হয়। গ্রামাঞ্চলের এখনো বারো চান্দের খুতবা দেখে দেখে পড়ার রেওয়াজ চালু আছে। আর আমাদের দেশের ৯৯%+ মানুষ আরবী বোঝে না। তাহলে ব্যাপারটি কী দাড়ালো, সরকার এমন খুতবা মনিটরিং করবে যে খুতবা ৯৯%+ মানুষ বোঝে না। আর গতকাল শিল্পমন্ত্রী বললেন, সরকার দলীয় কর্মীরা ও গোয়েন্দা বাহিনী এই নজরদারী করবে। তাহলে তো তাদেরকে আরবী শিখতে হবে নতুবা খতীবগণকে বাংলায় খুতবা দিতে হবে। কোনটি করবে সরকার? উল্লেখ্য যে, এদেশের অধিকাংশ মসজিদের খতীবগণ বাংলায় খুতবা প্রদান জায়েয মনে করেন না। তারা খুতবার পূর্বে যে বয়ান বাংলায় বসে বসে করেন তাকে তারা খুতবা বলেন না।
০২. এ দেশের কিছু মসজিদে বাংলা-আরবী মিশিয়ে খুতবা প্রদান করা হয়। যা বাংলাভাষী জনগণের জন্য অনেকটা বোধগম্য। তারা বারো চান্দের কোন লিখিত খুতবা পড়েন না। তারা সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন যুগোপযোগী বিষয়ে বাংলা ভাষায় খুতবা প্রদান করেন। তাদের খুতবা মনিটরিং করা একেবারেই সহজ। যা সবাইই করতে পারবে। আর তাদের খুতবার প্রভাব আরবীতে পড়া খুতবার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। তাই এই ধরনের খতীবদের খুতবা আগে থেকেই জনগণ মনিটরিং করছে। এতো দিনেও তারা কোন সমস্যা খুঁজে পাননি। বরং যাদের খুতবা ভালো লাগে তাদের খুতবা শুনতে অনেক দূর থেকেও মুসল্লিরা বিভিন্ন মসজিদে যান। উল্লেখ্য, এরা মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান জায়েয ও জরুরি মনে করেন। তবে আয়াত হাদীস আরবীতে পাঠ করা উচিত বলে তারা মনে করেন। অতএব এদের খুতবা নতুন করে মনিটরিং এর দরকার আছে বলে মনে হয় না।
০৩. তাহলে আরবী খুতবা মনিটরিং আপাতত সম্ভব নয় বা দরকার নাই। কারণ যারা আরবী ভাষা জানেন না তারা মনিটরিং করতে পারবেন না। আর যারা মনিটরিং করবে তাদের সবাইকে আরবী ভাষা শেখানোও স্বল্পসময়ে সম্ভব নয়। আরবীতে খুতবা দিলে যেহেতু তেমন কেউই তা বোঝে না সেহেতু তা মনিটরিং এরও দরকার নাই। অপরদিকে যারা বাংলায় খুতবা দেন তাদের খুতবা আগে থেকেই যেহেতু সবাই বোঝে এবং গোয়েন্দা নজরদারীতে আছে সেহেতু তাদের খুতবা নতুন করে নজরদারী দরকার নাই।
অতএব, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে, দেশের সকল মসজিদে বাংলায় খুতবা চালু করতে হবে নতুবা সবাইকে আরবী শুদ্ধ শিখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যেটাই করেন সেটাই উম্মাহর জন্য ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ্। তবে প্রথম কাজটি করা সবচেয়ে সহজ। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, আপনাদের সিদ্ধান্ত সহজে বাস্তবায়ন করতে দেশের সকল মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা চালু করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক।
বি. দ্র. কেউ জ্ঞাতসারে খুতবাকে বাংলা বয়ানের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। কারণ যারা খুতবা আরবীতে খুতবা পড়া আবশ্যক মনে করেন তারা খুতবার আগে বয়ান করেন। আর বয়ান মনিটরিং এর কোন সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি।
(কপি শাহাদাত ফয়সাল ভাই হতে)
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন