হাতির ঝিল রাজধানীর মাঝে সুন্দর বেড়ানোর জায়গা।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৮ মে, ২০১৬, ১১:৫৭:২১ সকাল



হাতির ঝিল প্রকল্প শুরুর পর থেকে কয়েকবার বেড়ালাম। ঢাকার বাহির থেকে পরিচিত কেউ আসলেই নিয়ে যাই হাতির ঝিল। হেটে বেড়াই বাদাম খাই অথবা আইসক্রম অথবা চটপটি। একবার অফিসের গাড়ি নিয়ে পরিবার সহ চক্কর দিলাম কয়েকটা। ঘুরলাম ইচ্ছে মতো।



তখনও হাতির ঝিল প্রকল্পে ট্যুরিষ্টবাস চালু হয় নি। ঘুরেছি পায়ে হেটেই। কিন্তু বিশাল এলাকা হওয়ার কারণে পুরোটা হেঁটে দেখা কষ্টকর। একবার মগবাজার চৌরাস্তা হতে ভাবলাম হেটে হাতির ঝিল দিয়ে বাসায় ফিরি কিন্তু হাটতে হাটতে রাস্তা আর শেষ হয় না! মনে হয় এই মোড় ঘুরলেই মেরুল। কিন্তু মোড় ঘোরার পর দেখা যায় দূরত্ব আরো বেড়ে গেছে! মেরুল বহুদূর! তবে এখন আর এসব ঝামেলা নাই। হাতির ঝিল প্রকল্পে চালু হয়েছে ট্যুরিস্ট বাস।



হাতির ঝিলের ট্যুরিস্ট বাস।

এখন আপনি যেকোন পাশ থেকে বাসে উঠে পুরো হাতির ঝিল চক্কর দিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। পুরোটা চক্কর দিতে টিকেট ৩০ টাকা। আর যদি এমাথা থেকে উঠে ওমাথায় নেমে যান তবে টিকেট ১৫ টাকা।



পর্যটকদের সেবা দিতে হাতির ঝিলে এখন আছে এক ঝাঁক আরাম দায়ক ট্যুরিস্ট বাস।

তবে যা ভেবেছিলাম মূলত ব্যাপার তা নয়! এগুলো ট্যুরিস্ট বাস হিসেবে নামানো হলেও ব্যবহৃত হচ্ছে সিটি সার্ভিস এর মতোই! লোকজন মেরুল থেকে উঠে মধুবাগ নামে অথবা কাওরান বাজার যাওয়ার জন্য এফডিসির মোড়ে নামে। অথবা এফসিডির মোড় থেকে উঠে মেরুল বা রামপুরা যাওয়ার জন্য রামপুরা নামে। আমিও একদিন এই বাসে চড়ে বাজার করে এনেছিলাম কাওরান বাজার থেকে।



ট্যুরিস্ট বাসে চড়ে যাইতেছি কাওরান বাজার!

তবে আপনি যদি হাতির ঝিল ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে এই বাসে চড়ে দেখেন, খারাপ লাগবে না নিশ্চিত থাকুন। আর দিনটা যদি হয় ঝুম বৃষ্টির দিন তাহলে কথাই নেই! আর সেই বৃষ্টির মূহুর্তটা যদি হয় সন্ধ্যার পর তবে হাতির ঝিল আপনাকে নিয়ে স্বপ্নের জগতে! এর লাল-নীল-সবুজ-হলুদ বাতির ঝিলিক বৃষ্টির উপর পতিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অন্য জগত!



হাতির ঝিলের রূপ দিনে এক রকম রাতে আরেক রকম। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায় এর রূপ-সৌন্দর্য। সেইভাবেই একে সাজানো হয়েছে রঙ্গিন বাতি দিয়ে।



বারে বারে পাল্টায়তাছে এর রূপ।

হাতির ঝিলে কেউ যায় ঘুরতে আবার কেউ যায় আত্মহত্যা করতে! হাতির ঝিল চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক জোড়া জুটি আত্মহত্যা করতে গেছে। কেউ সফল হয়েছে কেউ সফল হয় নি। রোমান্টিক জুটির জন্য এর চেয়ে সুন্দর আত্মহত্যার জায়গা ঢাকা শহরে আর দ্বিতীয়টি নাই! আল্লাহ এদের হেদায়াত দান করুন। এরা বুঝে না আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়।



এসব গেল হাতির ঝিলের বাহ্যিক রূপ। এই হাতির ঝিলের একটা গোপন রূপ আছে। যেটা মাঝে মাঝে পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। দিনে রাতে এখানে হয় ব্যাপক ছিনতাই! বলতে পারেন ঢাকা শহরে হাতির ঝিল এখন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য।রাস্তা-ঘাট ফাঁকা থাকে বলে ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে সহজে সটকে পড়তে পারে!



তবে হাতির ঝিলে নেই আগের মতো বিকট দূর্গন্ধ। বুক ভরে নিতে পারেন তাজা ফ্রেশ বাতাস। যেমন আমি নিচ্ছি।



হাতির ঝিলের দিন-রাতের আলাদা আলাদা রূপ-সৌন্দর্য দেখার জন্য আপনাকে যেতে হবে বিকেল বেলা। আসরের পর চলে যান হাতির ঝিল দিনের রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করে সেখানকার মসজিদে মাগরিবের সালাত আদায় করে উপভোগ করুন রাতের রঙ্গিন রূপ।



রাতের আলোকচ্ছটা।

সন্ধ্যার পর যখন বাতিগুলো জ্বলে উঠতে থাকে। তখন পাল্টাতে থাকে এর রূপ। পুরো পাল্টে যায় হাতির ঝিলের চেহারা। দিনের হাতির ঝিল আর রাতের হাতির ঝিলকে আলাদ করে চেনা মুশকিল।



দিনের বেলা এমন সাদামাটা বর্ণহীন গন্ধহীন!

আর একটি কথা মাথায় রাখবেন হাতির ঝিল ঘুরতে গেলে, অবশ্যই দল বেঁধে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। একা গেলেও অনেক সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষকরে মোবাইলে কথা বলার সময়! কারণ আপনি কথা বলার সময় নিমেষেই হাত-কান থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে আপনার শখের সেল ফোনটা!



রাতের রহস্যময় আলো ঝলমলে হাতির ঝিল।

রাতের আলো ঝলমলে হাতির ঝিলে যখন এর রূপ আপনি প্রত্যক্ষ করবেন তখন মনেই হবে না আপনি দেশের কোন শহরে আছেন। এর ঝলমালানি আপনাকে এতোটা চমকে দিবে! মনে থাইল্যান্ডের কোন শহরে আপনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন! অর্থাৎ দুধের স্বাদ আপনি ঘোলে মেটাতে পারেন।





হাতির ঝিলের এই সব সময় সব দিন এরকম থাকে না। এটা একটি বিশেষ দিনের হাতির ঝিল। তবে ভাববেন না আপনি ঠকছেন বেড়াতে গিয়ে।



এই ছবির মতো স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রতি রাতে হর-হামেশাই পাবেন। আসলে আপনি সৌন্দর্যকে কিভাবে উপভোগ করেন তার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। আপনি যদি সাদামাটা রসকসহীন মনের অধিকারী হন তবে আপনার হাতির না যাওয়াই ভাল।



তখন হাতির ঝিল আপনার কাছে লাগবে এমন সাদামাটা। তখন হাতির ঝিলে কোন সৌন্দর্য আপনি খুঁজে পাবেন না! শুধু আমাকে গালি-গালাজ করবেন।



তবে হতাশ হবেন না নিতান্ত এতটুকু সৌন্দর্য আপনি আপনার চোখে ধরতে পারবেন।



তো আর দেরী কেন! যান বৃষ্টিঝরা যে কোন এক বিকেলে। ঘুরে-দেখে বৃষ্টিস্নাত হয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসুন হাতির ঝিল।



বৃষ্টিস্নাত হাতির ঝিল।

বিষয়: বিবিধ

৩৯২৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370294
২৮ মে ২০১৬ দুপুর ০১:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হাতির ঝিলে হাতির পিঠে চড়ে ভ্রমন এর ব্যাবস্থা নাই???
২৯ মে ২০১৬ সকাল ০৯:৪৯
307351
নেহায়েৎ লিখেছেন : হাতি আগে নাকি ছিল ভাই। এই কারেণে নাম হাতির ঝিল। এখন নাই।
370404
২৯ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৮
হতভাগা লিখেছেন : এটা বানানো হয়েছে গুলশান বনানী বনশ্রীর বড় লোকদের চাপে তাদের মনোরন্জনের জন্য । ব্যক্তিগত বাহন না থাকলে এখানে যাওয়া খুব একটা সহজ না । এখানে যেতে ও আসতে মহাজ্যাম পার হতে হয় ( চারদিকেই জ্যাম)। এতে ভ্রমনের মজা পানসে হয়ে গিয়ে মেজাজ চরমে উঠে যায়।
৩০ মে ২০১৬ সকাল ১০:০৩
307404
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি এর আশ-পাশে মাঝে মাঝে জ্যাম পড়ে। তবে এটা বানানোতে খারাপ হয় নি। হাতির ঝিলের পানির দূর্গন্ধে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ হতো। এখন পরিবেশটা সুন্দর।
৩০ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪১
307429
হতভাগা লিখেছেন : কিভাবে পানির ফ্লো তারা মেইনটেইন করছে ?
০৪ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:৩০
307794
নেহায়েৎ লিখেছেন : রামপুরা স্লুইসগেট দিয়ে বের করে দেয় পানি।
০৫ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:০১
307877
হতভাগা লিখেছেন : পানি বের করে দিয়ে কোথায় ফেলে , কোথা থেকেই বা পানি লেকে আনে ?
০৫ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:০৭
307880
নেহায়েৎ লিখেছেন : লেকে কোথা থেকে আনে সেটা জানি না। তবে পানি এখন পরিস্কার, গন্ধ নাই।
370457
৩০ মে ২০১৬ রাত ০৩:৪৩
ধ্রুব নীল লিখেছেন : ওয়াও। আপনার তোলা ছবিগুলো তো চমৎকার হয়। আগের ফোন দিয়ে তোলা নাকি চেঞ্জ করেছেন?
৩০ মে ২০১৬ সকাল ১০:০১
307402
নেহায়েৎ লিখেছেন : কিছু আমার তোলা কিছু বাধন ভাইয়ের তোলা কিছু সংগ্রহ করা নীল। মানে সব আমার তোলা না।Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File