একদিন ঘুরে দেখতে পারেন বনানী কবরস্থান।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৪ মে, ২০১৬, ১০:২৯:১৬ সকাল



বনানী কবরস্থান। আমার তোলা ছবি।

আমি মাঝে মাঝে সময়-সযোগ পেলে বনানী কবরস্থান দেখতে যাই। বনানী কবরস্থান খুব সুন্দর একটা জায়গা। এখানে আছে দেশের নাম করা আর্কিটিক্ট এর ডিজাইন করা বাহারী রকমের সব কবর। ইউরোপ থেকে আমদানী করা দামী দামী সব মার্বেল পাথরের বাঁধাই করা কবর। আর আছে দেশের বিখ্যাত সব কোম্পানীর হরেক রংয়ের টাইলসে বাঁধানো কবর। এমন নয়নাভিরাম, সৌন্দর্যমন্ডিত, কারুকার্য খচিত কবর দেখে আপনি ব্যাপক বিনোদিত হবেন কোন সন্দেহ নাই।



বনানী কবরস্থানে আমার তোলা ছবি।

একটা ব্যাপার হল এই কবরস্থানে প্রথমে প্রবেশ করলে আপনার বুঝতে কষ্ট হবে, এটা কি মুসলিমদের কবরস্থান, নাকি অন্য কোন ধর্মের লোকদের এখানে কবর দেয়া হয়! একটু ঘুরে দেখলেই বুঝতে পারবেন এখানে মুসলিমদের কবর দেয়া হয়। এটা মুসলিমদের কবরস্থান। এখানে গেলে কবর দেখলেই বুঝতে পারবেন দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে কার কতো টাকা ছিল। কে কতোটা সৌখিন ছিল। বুঝতে পারবেন একেকজন কবরবাসীর সাথে অপরজন পাল্লা দিয়ে যেন কবরের ডিজাইন করিয়েছে! তারা দুনিয়াতে থাকতে যেরকম বিলাসী জীবন কাটিয়েছে মৃত্যুর পরও সেরকম বিলাসী কবরে তারা শুয়ে আছেন।



কবরের যে কতো রকম ডিজাইন হতে পারে সেটা বনানী করবস্থানে না গেলে আপনি বুঝতে পারবেন না। অনেক মেধা, শ্রম ও অর্থ ব্যয়ের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে এসব অভিজাত কবর। কবর দেখলে আপনি অনুমান করতে পারবেন দুনিয়াতে কার কতো টাকা ছিল, কে কেমন বিলাসী জীবন কাটিয়েছেন। তবে অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তির চেয়ে কিছু অবিখ্যাত অপরিচিত টাকা ওয়ালা ব্যাক্তিরও অনেক সুন্দর ডিজাইন করা কবর এখানে আছে।



আপনি পুরো কবরস্থান ঘুরে দেখলে বুঝতে পারবেন বিখ্যাত ব্যাক্তির কবরের পাশাপাশি কিছু সাধারণ কবর এখানে আছে। যেখানে এরকম বাহারী ডিজাইন নাই। ডিজাইন ছাড়া এসব কবরগুলো শুধুমাত্র বাঁশের বেড়া দেওয়া। নাই কোন মার্বেল পাথরের চাকচিক্য নাই দামী টাইলসের ছোঁয়া। যে যতোটা প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটাইতে পারছে সে ততো সুন্দর ডিাজইন করেছে ততো বেশি খরচ করেছে। কবর দেখলে এসব ব্যাক্তির দুনিয়াবী জীবনের প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে একটা ধারণা আপনি পেতে পারেন।



আমার মোবাইলে তোলা ছবি।

আপনি হয়তো ভাবছেন কবরস্থান আবার দেখার কি আছে! তবে আপনি যদি একবার বনানী কবরস্থানে যান আপনার সে ভুল ভেঙ্গে যাবে। আপনি অনেক টাকা খরচ করে ওয়ার সেমিটারী দেখতে কুমিল্লা বা চট্টগ্রাম যান। কিন্তু আপনার বাড়ীর কাছেই এমন সুন্দর সুন্দর কবর আপনি দেখেন নি। এটা কথা! তবে বনানী কবরস্থান ছাড়াও ঢাকা শহরের অন্যান্য কবরস্থান আপনি ঘুরে দেখতে পারেন। সেসব জায়গায় কিছু কিছু কবর দেখে আপনার মন খারাপ হয়ে যাবে।



সাগর-রুনির এই কবর দেখে আপনার মন খারাপ হয়ে যাবে।

সময়-সুযোগ পেলে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন আজমপুর কবরস্থান, মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থান, শাহজাহানপুর কবরস্থান, উত্তরা কবরস্থান। এছাড়া আরো অন্যান্য কবরস্থান।



দরুদে হাজারী লেখা কবর!(আমার তোলা ছবি)

দুনিয়াতে থাকতে যে যেমন আমলই করুক না কেন, মৃত্যুর পর নাজাত পাওয়ার জন্য আছে তাদের নানান চেষ্টা। এ কারণে তারা কবরে বিভিন্ন রকমের দোয়া এবং দরুদে হাজারী-লাখী লিখে রেখেছে! এই ধরণের দরুদ তারা ইসলামের মধ্যে কোথায় পেল সেটা আমার বোধগম্য নয়! যে বা যারা এই ধরণের দরুদে হাজারী বা দরুদে লাখী তৈরী করেছে তাদের কি ফায়দা সেটা বুঝাও দুষ্কর।



আরাফাত রহমান কোকোর জন্য খোড়া হচ্ছে যে কবর। আমার তোলা ছবি।

যেদিন আরাফাত রহমান কোকোকে কবর দেয়া হয় সেদিনও আমি বনানী কবরস্থানে গিয়েছিলাম। যদিও কবর দেয়া পর্যন্ত থাকতে পারিনি। শুধুমাত্র তার কবর খোড়ার ছবি তুলে চলে এসেছি। দুনিয়াতে আমরা যেখানে থাকি না কেন, মৃত্যুর পর আমাদের ঠিকানা একটাই এই কবর। কারো কবর অনেক দামী কারো বা শুধুমাত্র মাটি ঢাকা। কিন্তু এটাই আসল বিষয় নয়। আমি-আপনি কেমন আমল সাথে নিয়ে গেলাম এটাই আসল ব্যাপার।

এসব কবর ঘুরে দেখলে দেখবেন আপনার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি আপনি অনুভব করবেন।

বিষয়: বিবিধ

৩৭৩০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368988
১৪ মে ২০১৬ সকাল ১১:২৬
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : নয়নাভিরাম কবর, নান্দনিক, শিল্পমণ্ডিত ও কারুকাযর্ খচিত। যাক, ভিতরের অবস্থা শান্তিময় হলেই হয়........
১৪ মে ২০১৬ সকাল ১১:৩২
306268
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি ভাইয়া অনেক নয়নাভিরাম কবর এখানে আছে। খুবই নান্দনিক। মানুষের কতো টাকা কিন্তু খরচ করার মতো জায়গা তারা পায় না! তাই কবরের উপর খরচ করেছে। কারণ টাকা নিয়ে তো আর কবরে যাওয়া যায় না।
368995
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৪০
আবু জান্নাত লিখেছেন : হাদীসে কবর যিয়ারাতের অনুমতি এসেছে, যেন মানুষ কবর দেখে পরকাল স্মরণ করে, কিন্তু এদের কবর দেখলে তো বিলাসিতার স্মরণ হবে।

ধন্যবাদ

১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০১:৪৩
306272
নেহায়েৎ লিখেছেন : বিলাসিতার কথা স্মরণ হবে না ভাই। স্মরণ হবে এদের মূর্খতার কথা। কারণ মানুষ কতখানি উম্মাদ হলে এভাবে কবর বাঁধাই করে।
368997
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০১:৩৭
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার তোলা উপরের দুটি ছবি আমার একটি পোষ্টের জন্য দরকার, যদি অনুমতি দেন তাহলে ব্যবহার করতে পারি। মূল ফাইলটি যদি মেইলের মাধ্যমে পাই তাহলে আরো বেশী উপকৃত হব। ধন্যবাদ
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০১:৪৩
306274
নেহায়েৎ লিখেছেন : ইনশা আল্লাহ নিতে পারেন ভাইয়া কোন সমস্যা নাই। আপনার মেইলিং এড্রেসটা দিন। ইনশা আল্লাহ আমি মেইল করে দিব।
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০২:৩৫
306277
নেহায়েৎ লিখেছেন : ভাইয়া পেয়েছেন কিনা জানান। আপনার মেইলিং এড্রেস ডিলেট করেছি।
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৩৪
306278
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : পেয়েছি, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
369007
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : এতো কবরস্থান নয় যেন কোন এক অন্যস্থান। যাক ভালোই দেখালেন ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে অনেক ফটো তুলেছেন ভালো লাগলো এই কবরস্থান দেখে পৃথিবীর কেউকি বলবে বাংলাদেশ কোন গরিব দেশ। কিন্তু সাধারন জনগনের বাড়ি ঘর দেখলে সকলেই বলবে আহারে বাংলাদেশ কতযে গরিব..!
১৪ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৫
306297
নেহায়েৎ লিখেছেন : কবরস্থানে প্রবেশ করলে প্রথমে আপনার বুঝতে কষ্ট হবে এটা মুসলিমদের কবরস্থান নাকি অন্য কোন ধর্মের! একটু ঘুরে দেখার পর বুঝতে পারবেন এখানে মুসলিমদের কবরস্থান। শুধু টাকার অপচয় এখানে।
369013
১৪ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩২
মায়িশাহ মুনাওয়ারাহ লিখেছেন : কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম।বুঝতে পারছিনা কি বলব।আল্লাহ আমাদের আমল গুলো ভালো করে দিন।
১৪ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৬
306298
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমি প্রথমে ঢুকে টাস্কি খেয়েছিলাম। এটা কি মুসলিমদের কবরস্থান!
369029
১৪ মে ২০১৬ রাত ০৮:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এটা কবরস্থান না মার্বেল পার্ক!!!
দ্বিতিয় ছবির তিনকোনা স্তম্ভ কে বলে অবিলিস্ক। ইউরোপিয় খৃষ্টান দের মধ্যেই প্রচলিত। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা উভয় ওয়ার সিমেট্রিতে গেছি। শুধু একটা পাথরে নাম ঠিকানা লিখা আছে। এখানে কবর এর বাইরেটাই সুন্দর। ভিতরে কি অবস্থা আল্লাহই জানেন!!!
১৫ মে ২০১৬ সকাল ০৯:৪৬
306348
নেহায়েৎ লিখেছেন : এটা যে একটা দর্শনীয় স্থান এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। তবে তাদের কবরের সাথে মুসলিমদের কবরের মিল খুব কম। আপনি ঠিকই ধরেছেন। এদরে কবরের সাথে খ্রিষ্টানদের কবরের সাথে অনেক মিলে যায়। এত সুন্দর ডিজাইন করা কবর!
377301
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:২২
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আমার অফিসের নিকটে আছে খৃস্টান কবরস্থান। ওয়ারীতে অবস্থিত। অনেকের কবরে নামের আগে মাইকেল লেখা। যেমন-মাইকেল রায় চৌধুরী, মাইকেল মোদী রায়----মানে এরা কনভার্টেড খৃস্টান।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৭:৫৪
312764
নেহায়েৎ লিখেছেন : আল্লাহ ভাল জানেন, এরা হয়তো খৃষ্টান হয়েছিলেন বৃটিশদের সময়।
377302
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:২৮
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : এক কিসিমের লোক আছে স্বজনের মৃত্যুর পর অনেক ধর্মকর্ম করেন যেটি আসলে ধান্ধাবাজ আলেমদের বানানো নিয়মকানুন যেগুলির সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই।
এসব নিয়মগুলির মধ্যে রয়েছে- দামী হুজুর ডেকে মোটা অংকের টাকা পয়সা দেয়া মৃতের জন্য কবরে গিয়ে দোয়া করার জন্য, দামী পাথর দিয়ে কবর বাঁধাই করা, চল্লিশা খাবারের আয়োজন করা।

এমনকি অনেকে নাকি পয়সা দিয়ে ছিঁচকাঁদুনী জোগাড় করে। তারা মৃতের বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করে আসে। স্বজনদের চোখে পানি আসে না বলে। Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৭:৫৬
312765
নেহায়েৎ লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন ভাই। আমি নজরুল ইসলাম টিপু ভাইয়ের এক লেখায় পড়েছি যে তার কোন আত্মীয় মারা গেলে কবরের ডিজাইন করার জন্য নামী আর্কিটেকট কে ডেকে আনা হয়েছিল! বুঝেন ঠেলা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File