দেখতে গিয়েছিলাম দিনাজপুরের রামসাগর।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৭ মে, ২০১৬, ১১:৫৬:০৫ সকাল
আমার বন্ধু মতি। মতিউর রহমান সিফাত। আমরা ডাকি মতি। ওর বাড়ি ঠাকুরগাও। নানাবাড়ী দিনাজপুর। মামা বাড়ী দিনাজপুর। স্বশুরবাড়ী দিনাজপুর। একদিন বলল চল দিনাজপুর-ঠাকুরগাও থেকে ঘুরে আসি। আমিও দীর্ঘদিন থেকে এমন সুযোগ খুঁজছিলাম। বেশ রাজী হয়ে গেলাম। দুজনে নির্ধারিত দিনে ট্রেনে উঠে বসলাম। সোজা দিনাজপুর।দিনাজপুরে প্রবেশেই চোখে পরে সড়কের দুদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য লিচু গাছ।
রাম সাগর।
দিনাজপুরের পূর্বনাম ছিল ঘোড়াঘাট। জানা যায় জনৈক দিনাজ বা দিনাজরাজ নামক ব্যক্তি দিনাজপুরে রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর নামানুসারে জেলার নামকরণ হয়েছে দিনাজপুর।ব্রিটিশ শাসনামলে দিনাজপুর জেলা সৃষ্টি হয় ১৭৮৬ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও দিনাজপুরের আওতাধীন ছিল।
রামসাগর চিড়িয়াখানা।
সকাল বেলা প্রথমে গেলাম। মতির খালার বাড়ি। সেখানে নাস্তা সেরে ওর স্বশুরবাড়ি।মতির স্বশুরবাড়িটা খুব সুন্দর একটা জায়গায়। বাড়ীর পশ্চিমপাশে বিশাল একটা লিচু বাগান। অনেক বড় বড় লিচুগাছ। বাগানের পশ্চিম পাশ দিয়ে সুন্দর ছোট্ট একটা নদী। এলাকার নাম মনে নাই। এটা সম্ভবত লালবাগ এলাকার পশ্চিমে।যাই হোক, কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বের হইলাম। মতি বউ-শালী নিয়ে আর আমি একা! শহর থেকে রিক্সা নিয়ে সোজা রাম সাগর।
রামসাগর পুকুরপাড়ে অসাধারণ সুন্দর বাধানো পথ।
শহর থেকে রিক্সা নিয়ে যেতে সময় লেগেছিল সে সময় সম্ভবত আধা ঘন্টার মতো বা তার কিছু বেশি। পরে এত বড় আমি জীবনে দুই একটা দেখেছি তার মধ্যে একটা হল বরিশালের দূর্গাসাগর। তবে একটা ব্যাপার হল প্রায় সব বড় পুকুরের নামের সাথে সাগর নামটা যুক্ত আছে।
পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে প্রতি ফলিত হয় নীল আকাশের সাদা মেঘ।
গেটের কাছে গিয়ে টিকেট কেটে পুকুরে প্রবেশ করলাম। তখন জীবনে প্রথম এত বড় পুকুর দেখে আমি অভিভূত! এপার থেকে ওপার পরিস্কার দেখা যায় না! ভাবতাছি রোজা রেখে কিভাবে এত বড় পুকুর হেটে দেখা শেষ করব। কিছু সময় হাটতে হাটতে জানতে পারলাম রামসাগর পুকুর চারপাশ ঘুরে দেখার জন্য ভ্যান ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা একটা ভ্যান ঠিক করলাম।
মতি আর তার বউ মানে আমদের ভাবী গোঁ ধরল তারা হেঁটে পুরোটা দেখবে! ভ্যানে উঠবে না। আমি ভ্যানে চড়ে ঘুরব সেটা কেমন দেখা যায়। আমি কেন যেন ভ্যান ওয়ালাকে বললাম, ভ্যান ভাড়া করেছি ঠিক আছে কিন্তু আপনি ভ্যান চালাতে পারবেন না। আমি ভ্যান চালিয়ে পুকুরের চারপাশ ঘুরে এসে আপনাকে এখানে ভ্যান বুঝিয়ে দিব!
ভ্যান ওয়ালাকে বসিয়ে রেখে আমি ভ্যান চালিয়ে চললাম পুকুর দেখতে। মতির শালী এত দূর হাটতে পারবে না বলে দৌড়ে এসে ভ্যানে উঠে বসল! যাক একজন যাত্রীও পেলাম বিনা ভাড়ায়।
পুকুরের পশ্চিম পাশ দিয়ে ভ্যান চালিয়ে আমি পুকুর দেখতে দেখতে চলছি। সোবহান আল্লাহ! সত্যিই অসাধারণ সুন্দর। বিশাল পাহাড়ের মতো পাড়। বাধানো ঘাট, বিশ্রামের জন্য রেষ্ট হাউস, চিড়িয়খানা, শিশুপার্ক। চিত্ত বিনোদনের জন্য মোটামুটি বেশ ভাল ব্যবস্থা করেছে এরা। সুন্দর করে লাগানো গাছ-পালার অপূর্ব সবুজ সৌন্দর্যে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না।
মাঝে মাঝে ভ্যান ব্রেক করে এসব দেখছি আর চলছি। এভাবে দেখতে দেখতে দক্ষিণপাশ দিয়ে ঘুরে পুর্ব পাশে চলে এলাম। এক জায়গায় দেখি নিচু একটা দেয়াল পুকুরের পানি সমান্তরাল চলে গেছে মাঝের দিকে। নেমে সেই দেওয়ালের উপর হাটতে হাটতে চলে গেলাম মাঝের দিকে। হঠাত মনে পড়ল এই পুকুর নিয়ে কতো মিথ কতো গল্পকথা চালু আছে। হঠাত যদি এক হাত উঠে এসে আমার পা ধরে টান দিয়ে পুকুরের পানির নিচে নিয়ে যায়! অথবা স্বর্ণের শিকল আমার পা বেঁধে টান দিয়ে নিয়ে যায়! উদ্ভট এইসব কল্পনা করে আমার শরীর-হাত-পা কাঁপতে লাগল! ফিরে ব্যাক করে কোন পাড়ে এসে যেন হাঁপ ছেড়ে বাচলাম!
এরপর আবার ভ্যান নিয়ে চলতে থাকলাম সোজা উত্তর পাড়ের দিকে। এক জায়গায় দেখলাম লোকজন বরশি দিয়ে মাছ ধরছে। এখানে কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে মাছ ধরার ব্যবস্থা রেখেছে কর্তৃপক্ষ। মাছ শীকারীরা গভীর মনোযোগ দিয়ে বরশির দিকে তাকিয়ে আছে।
রামসাগরে মাছ শিকার।
উত্তরপাড় ঘুরে আবার পশ্চিম পাড় কর্ণারে এসে দেখি ভ্যান ওয়ালা বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাকে ভ্যান এবং নির্ধারিত ভ্যানভাড়া বুঝিয়ে দিয়ে এবার আশ-পাশ হেটে দেখা শুরু করলাম। কিছু সময় সবুজ গাছ-পালার ভিতর দিয়ে হাটলাম। একা একা গাছের ফাঁকে যেন লুকোচুরি খেললাম। দেখলাম অনেক কিছু আর রেষ্ট হাউস।
রামসাগর পুকুরপাড়ে রেষ্ট হাউস।
ইনশা আল্লাহ ইচ্ছে আছে এক সময় পূর্ণিমা রাতে এখানে এসে এই রেষ্ট হাউসে রাত কাটাব। চাঁদের জোস্নায় দেখব পুকুরের সৌন্দর্য। দেখব পুকুরের টলমলে পানিতে চাঁদের আলোর খেলা।
যেভাবে যাবেন-সড়ক ও রেলপথে ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়া যায়। এ পথের বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। নাবিল পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার টাকা।
এছাড়া নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি নন এসি বাসের ভাড়া ৫শত থেকে ৬শত টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস সপ্তাহের বুধবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে।
আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে সকাল ১০টায়।
ভাড়া শোভন সিট ৩৩৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৩০, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ৫৭০, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৮৫৫, এসি চেয়ার ৭১৫, এসি বার্থ ১,২৮৫ টাকা।
দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে দ্রুতযান এক্সপ্রেস বুধবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে। আর একতা এক্সপ্রেস সোমবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে রাত ৯টা ২০ মিনিটে।
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (০৫৩১-৬৪৭১৮)। এসি রুমের ভাড়া ১৭শত থেকে ২২শত টাকার মধ্যে। এছাড়া দিনাজপুরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ২৫০ থেকে থেকে ১২০০ টাকায় রাত কাটানোর ব্যবস্থা আছে।
আর হ্যা এখন গেলে দিনাজপুরের বিখ্যাত লাল মিষ্টি লিচু খেয়ে আসতে ভুলবেন না যেন।
ও হ্যা সাথে আমরা দেখেছিলাম দিনাজপুর রাজবাড়ী আর কান্তজিউর মন্দির। সে কথা অন্যদিন।
বিষয়: বিবিধ
২৭৪০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অফটপিকঃ
শুক্রবারের জুমার সালাত কোথায় আদায় করেন এখন? উত্তরায়?
একদিন আপনার বাসায় যাব। আন্টির কাছ থেকে দু'আ নিয়ে আসব।
জি আচ্ছা, জানাবো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন