একদিনেই ঘুরে দেখাতে পারেন আমাদের মহাস্থানগড়।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০২ মে, ২০১৬, ১০:৫৯:০১ সকাল
কইত্তা লদীর পাড়ের কাছে হামাকেরে ঘর,
বগুড়ার উত্তরে গেলে মাস্তানেরই গড়!
জাদুঘরের পাশে গড়ে উঠার সিড়ি।
মহাস্থান গড়(আমাদের স্থানীয়ভাবে বলে মাস্তান)। আমাদের জেলায় তাই অনেকবার দেখা। কিন্তু আমার বউ দেখেনি। তাই তাকে নিয়ে এবার গেলাম মহাস্থানগড় দেখাতে। সেজ আপার বান্ধবী একটা এসি মাইক্রো ম্যানেজ করলেন। তাতে আরো পোয়াবারো! ভাল মতোই ঘুরে দেখা হল আলহামদুলিল্লাহ।
বেহুলার বাসরঘর বলে এটাকে।
ঢাকা বাসে থেকে সোজা নিজের গ্রামের বাড়ীতে। পরদিন সকালে সাবই মিলে মাইক্রো নিয়ে সোজা মহাস্থান। প্রথমে গেলাম জাদুঘর দেখতে। একেবারে মহাস্থান গড়ের উত্তরপাশে। টিকেট কেটে জাদুঘর দেখে মন ভরে না দিন দিন জাুদঘর গরীব হয়ে যাচ্ছে! জিনিপত্র নাকি চুরি যায়! আছে কয়েকটি মাটির পুতুল।
মহাস্থান জাদুঘর।
জাদুঘর থেকে বের হয়ে তার সামনেই গোবিন্দভিটাতে প্রবেশ করলাম। আগে এসব জায়গায় প্রবেশ করতে টিকিট লাগত না। এখান টিকিট কাটতে হয়। কিন্তু ভিটা ছাড়া দেখার মতো তেমন কিছু নাই!
আশপাশ কিছু সময় ঘুরেফিরে করতোয় নদী দেখে। সিদ্ধান্ত হল গাড়ীতে না গিয়ে গড়ের উপর দিয়ে হেটে জিয়ৎকুন্ড দেখে জাদুঘরের দিকে যাব। তাতে লম্বা একটা রাস্তা হাটতে হবে।
শীতকাল বলে হাটতে খুব একটা কষ্ট হয়নি কারো। হাটতে হাটতে এক সময় কেউ অনেক এগিয়ে গেল, কেউ বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়ল। রাস্তা যেন শেষ হয় না। লোকজন দেখলাম গড়ের উপর বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করছে। ক্ষেতে পানি সেচ দিচ্ছে।
হেটে চলছি তো চলছি!
হাটতে হাটতে এক সময় পৌছে গেলাম এক গ্রামের পাশে। সেখানে আছে জিয়ৎ কুন্ড নামে এক কূপ। কথিত আছে রাজা পরশুরাম এই পানি যুদ্ধে আহত-নিহত সৈনিকদের জন্য ব্যবহার করতেন।
সেই জিয়ৎকুন্ড।
জিয়ৎকুন্ড দেখার সময় সবাই আবার একসাথে মিলিত হতে পারলাম। আশ-পাশ ঘুরে দেখে আবার হাটা সোজা দক্ষিণে মাজারের উদ্দেশ্যে। হাটিতে হাটিতে সবার অবস্থা কাহিল। তখন সামনে দেখলাম বিরাট একটা পাথর। লোকজন বোতলে ভরে দুধ এনে সেই পাথরের উপর দুধ ঢালছে! এই পাথর নাকি দুধ খায়!!! যেই দুধের অভাবে কতো গরীব বাচ্চা না খেয়ে আছে। মানুষের কান্ডজ্ঞান কবে হবে! আমি দেখলাম দুধ চারিদিকে গড়িয়ে পরে যাচ্ছে। পাথর দুধ খাচ্ছে না! সম্ভবত পেট ভরে গেছে!
দুধ খাওয়া পাথর!
এসব দেখে কেমন যেন শরীর ঘিন ঘিন করা শুরু করল! সামনে এগিয়ে চললাম। চলে এলাম প্রায় মাজরের কাছাকাছি। সেখানে দেখি অনেক লোকজন হাস-মুরগী-গরু-ছাগল মাজারে মানতের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছে।
মানতের মুরগী।
এসব রান্না করে কারা খাবে কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন। তবে ইসলাম ধর্ম মতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে(কোন পীর, মূর্তি, যেকোন কিছুর) জবাই করা জন্তু খাওয়া হারাম। এই মুসলিম নামধারী অজ্ঞ লোকগুলোকে দেখলেই বোঝা যায় এদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না। কিন্তু কষ্ট করে মৃত পীরের জন্য নিয়ে এসেছে গরু-ছাগল।
মাজারে ছাগল জবাই হচ্ছে।
এসব দেখে মূল মাজারের উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম। কিন্তু মাজারে প্রবেশ করতে হলে জুতা খুলে হাতে নিতে হবে। অগত্য হাতে নিয়েই দেখতে গেলাম।
দেখলাম কিছু লোক মাজারের চারদিকে বসে ইবাদত করছে। কিন্তু ইবাদতের জন্য পাশেই মসজিদ আছে। সেখানে লোকজন নাই। মাজার ঘুরেফিরে দেখে। বের হয়ে আশ-পাশ দেখতে থাকলাম।
সারাদিন সময় হাতে সাথে গাড়ী আছে প্রাণ খুলে দেখতে সমস্যা কোথায়! তাই আবার হাটতে থাকলাম উদ্দেশ্যহীন আর ছবি তুলতে থাকলাম।
মহাস্থানের গড়ের আসল সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে অনেক হাটতে হবে। বিশেষ করে জাদুঘর হতে হেটে গড়ের উপর দিয়ে মাজরের দিকে আসতে হবে। তাহলে দেখতে পাবেন অনেক কিছু।
এখানে দেখা শেষ করে মাজরের নিচে এসে। বাহির থেকে কিনলাম মহাস্থানের বিখ্যাত কটকটি। যার স্বাদ আসলেই মনে রাখার মতো। তবে কেউ নকলটা কিনে পরে গালি দিবেন না।
মহাস্থানের বিখ্যাত কটকটি।
কিছু কেনাকাটা করে আবার গাড়িতে উঠে চললাম গোকুলের উদ্দেশ্যে। সেখানে আছে বেহুলার বাসরঘর। যদিও অন্যের বাসরঘরে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু এটা পরিত্যাক্ত বাসরঘর তাই যে কেউ এখানে আসতে পারে টিকেট কেটে।
আমরা টিকেট কেটে বাসরঘরে ঢুকলাম। উচু টিলার উপর বাসরঘর। কথিত আছে এই বাসরঘরেই লখিন্দরকে সাপে কেটেছিল। বাসরঘরের ছবি উপরে দিয়েছি তাই আর দ্বিতীয়বার দিলাম না।আগেকার দিনে বাসরঘরে স্বামীকে পান খাওয়ানো হতো। সেই ঐতিহ্য অনুযায়ী এখনও এখানে পাবেন বাহারী রকমের পান। দাম পাঁচ টাকা থেকে একশ টাকা পর্যন্ত।
পান খান বা না খান দেখে আসতে দোষ কি। আমরাও দেখে আসলাম। জানি এতো দামী পারেন স্বাদ কেমন।
মোটামুটি দেখা শেষ করে সবাই আবার গাড়িতে উঠে। সোজা বগুড়া শহরে। সেখানে দৈনিক ইত্তেফাকের বগুড়া সংবাদ দাতা সজল ভাইদের বাসায়। বিকেল বেলা দুপুরের খাবার খেয়ে। আমাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে চললাম। কারণ পরদিন ঢাকায় ফিরতে হবে।
আমগো গেরাম। আহ কি শান্তি। আল্লাহু আকবার।
(যেভাবে যাবেন ঢাকা হতে মহাখালী, কল্যাণপুর, উত্তরা হতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাড়ী যায় বগুড়া। শহরে ফোরষ্টার হতে সাধারণ মানের অনেক হোটেল আছে। আগের দিন বিকেল বেলা রওয়ানা করে রাতে হোটেলে থেকে। পরদিন সকাল থেকে সারাদিন ঘুরে দেখে বিকেলের গাড়ীতে ঢাকায় ফিরতে পারেন। খরচ হতে পারে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা)
বিষয়: বিবিধ
৩০৯৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খানভাই সর্বদা রাজী। তিনি রেডি আছেন। ঘুরতে বা বেড়াতে। আমাকেও নিতে পারেন।
আরেকটু ডিটেইল বিবরন দিলে ভাল হয়। চাঁদ সওদাগর এর বাড়ি তো চট্টগ্রাম কিন্তু বেহুলার বাসর কেন বগুড়া?? আবার শুনি সুন্দরবনের দিকেও বেহুলার বাড়ি আছে!!
বাহ! চমৎকার বর্ণনা। ধন্যবাদ জানবেন ভাইজান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন