তাহিরপুর সুনামগঞ্জ অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৫৮:০১ দুপুর
অফিসের কাজে লম্বা কিছুদিন তাহিরপুর ছিলাম। কাজ করেছি আর ঘুরে বেড়িয়েছি প্রাণ খুলে। আলহামদুলিল্লাহ।মাঝে মাঝে কাজ করতে হতো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। আর যেদিন কাজ থাকত না সেদিন স্বাধীন মুক্ত পাখির মতো ঘুরে দেখেছি তাহিরপুরের হাওড়-নদী-পাহাড়-বালি-পাথর-মাটি-পানি।
বারেক এর টিলার পূর্ব পাশের ছবি।
ঘুরবেন দেশে মনে হবে বিদেশ! এটাই তাহিরপুরের বৈশিষ্ট্য। ছবির মতো সুন্দর একটা জায়গা যদি থাকে সেটা বারেক টিলা, আর যাদুকাটা নদী। সেই সাথে আছে ভরা বর্ষায় হাওরের উত্তাল যৌবন।
বারেক এর টিলার পাশেই যাদুকাটা নদীর শুরু।
ওপারের মেঘালয় পাহাড় হতে নেমে এসেছে যাদুকাটা নদী। আমি ছিলাম মূলত তাহিরপুর উপজেলার একটা ইউনিয়ন বাধাঘাট। ওরা বলে বাদাঘাট। বাদাঘাট বাজারের নিকটেই বারেক এর টিলা। সামান্য উত্তরে মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেষে।
যাদু কাটা নদীতে বারমাস চলে পাথর বোঝাই নৌকা।
আমাদের কাজ ছিল হাওরের মাঝের গ্রাম গুলোতে।গ্রামগুলো বর্ষায় দেখতে যেন এক একটা দ্বীপ। যেদিন কাজ থাকত না বা ছুটির দিন, সেই দিনগুলোতে মটরবাইক নিয়ে সোজা বারেক টিলায় গিয়ে পাহাড়ের নরম ঘাসের উপর গা এলিয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম, দেখতাম মেঘালয় পাহাড়ের সৌন্দর্য, দেখতাম যাদুকাটা নদীর স্বচ্ছ পানি,পাথর, বালি। আর ভাবতাম এখানে যদি আমার একটা বাড়ী থাকত!
কখনও কখনও চলে যেতাম বাদাঘাট বাজারের উত্তর পাশের রাস্তা ধরে সোজা পূর্ব দিকে। যে রাস্তা সোজা গিয়ে খাড়া যাদুকাটা নদীর কিনারে খাড়াভাবে শেষ হয়েছে সেই রাস্তার মাথায় নদীর উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকতাম। আর দেখতাম ওপারের ভারতে সুন্দর সবুজ পাহাড়গুলো। নিচে আমাদের দেশের সীমানায় হাজার হাজার শ্রমিক ছোট ছোট নৌকায় করে পাথর তুলছে বিক্রির জন্য।এদেরকে বলে বারকি শ্রমিক।
বাংলাদেশ সীমানায় যাদুকাটা নদীতে পাথর উত্তোলন করছে শ্রমিকরা।
এমন সৌন্দর্য এদেশে লুকিয়ে আছে,অথচ তুলে ধরার মতো বা দেখার মতো চোখ যেন আমাদের নাই! আমরা শুধু টাকা খরচ করে বিদেশ দেখি! আমারতো মনে হতো পুরো জীবনটাই এখানে কাটিয়ে দেই। আপনি যদি এপারের টিলার উপর(ছোট পাহাড়) দাড়িয়ে সোজা উত্তরের দিকে তাকিয়ে থাকেন দেখতে পাবেন মেঘালয় পাহাড় হতে ঝরণা নেমে আসছে চঞ্চল গতিতে। সেই সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করে দিবে কোন সন্দেহ নাই।
মেঘালয় পহাড়ের ঝরণা পরিস্কার দেখা যায় বাংলাদেশ হতে।
ছুটির দিন সারাদিন এদিক-ওদিক বেড়িয়ে সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরতাম। তবু মন যেন চাইত না এই যাদুকাটা নদী, এই পাহাড়-পাথর-বালুর চর ফেলে ঘরে ফিরে যাই। যে নদী আমি পার হয়েছি ভরা বর্ষায় ছোট নৌকায় কত ভয় নিয়ে আবার সেই নদী পার হয়েছি কখনও বা হাটুপানি ভেঙ্গে(শুকনো সময়ে কিছু অংশ)।
আমার স্মৃতি বিজরিত প্রিয় যাদুকাটা নদী।
একদিকে দেখেছি পাহাড়-নদী অপরদিকে হাওড়। শুকনো সময়ে হেটে হাওড় পারি দিয়েছি বাইক না পেয়ে, আবার ভরা বর্ষায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায়। মাঝে মাঝে গ্রামগুলোকে মনে হতো সাগরের মাঝে এক একটা দ্বীপ যেন জেগে আছে মাথা তুলে। বর্ষায় এদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম যেতে নৌকা একমাত্র বাহন।
শনির হাওড় হতে দেখবেন মেঘালয় পাহাড়।
কখনও দূরের কোন গ্রামে কাজে গেলে ফিরতে রাত হয়ে যেত, তখন অন্ধকার তারাজ্বলা রাতে বিশাল হাওড় পাড়ি দিতে জাগত এক অদ্ভুত অনুভূতি! কখনওবা চাঁদনী রাতে দিতে হতো হাওড় পারি। চাঁদের আলোর স্নিগ্ধ ঝলকানি হাওড়ের পানিকে করে তুলত অনেক রহস্যময় সুন্দর।
হাওড়তো নয় এক একটা সাগর যেন।
যতোটা সৌন্দর্য আছে তাহিরপুরের তা আমার ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। গিয়ে একবার দেখে আসুন। যেভাবে যাবেন। প্রথমে আপনাকে যেতে হবে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ। ভোরে সুনামগঞ্জ শহরে নেমে। নাস্তা সেরে রিক্সায় সোজা সাহেববাড়ী ঘাট। ঘাট থেকে ট্রলারে করে বাদাঘাট বা তাহিরপুর গিয়ে নামতে পারেন।
থাকার তেমন ভাল কোন ব্যবস্থা সে সময় ছিল না। আমরা ছিলাম এক কলেজ শিক্ষকের বাড়িতে। বাদাঘাট বাজারে একটা টিনের হোটেল আছে বাথরুমের অবস্থা ভয়াবহ। ওখানে খাবারের মান তেমন ভাল না। রান্না পছন্দ হবে না। তবে ওরা খায় আতপ চালের ভাত। তবে পাবেন হাওড়ের ফ্রেশ মাছ।
শীতকালে হোটেলগুলোতে চাইলে পাবেন শীতের অতিথি পাখির গোশত। এগুলো গোপনে বিক্রি করে এরা। যদিও অতিথি পাখি শিকার নিষেধ।
চাইলে দুদিনে বেড়িয়ে আসতে পারেন। আর বেশি সময় হাতে থাকলে দেখতে পাবেন চুনাপাথর পাহাড়। ভারত থেকে আসলে কয়লা যে সীমান্ত দিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
(আমার কাছে ছবিগুলো নাই। তাই ধার করতে হল।)
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশকে আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য দেশের চেয়ে সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন বলেই আমার মনে হয় - আল'হামদুলিল্লাহ ।
এরকম পরিবেশ বাইরের দেশে পাওয়া গেলেও সেটা কৃত্রিম ।
যেহেতু অফিসের কাজে সেখানে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছে সেহেতু বোঝাই যায় যে এলাকাটা দূর্গম (কারণ কিভাবে যাওয়া যাবে ঢাকা হতে সেটার বর্ণনা চোখে পড়লো না)। দূর্গম বলেই এখনও প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোরম আছে । সুগম্য হলে তছনছকারীরা সেখানে তছনছ চালাতে চলে যাবে।
এটা কি ধর্মপাশার কাছালাছি এলাকা ? যদিও কখনও যাই নি সেখানে । শুনেছি সেখানে যেতে নাকি অনেক কাহিনী করতে হয় । ৫/৬ ঘন্টা ট্রলারে হাওড় জার্নি + গরুর গাড়িতে বেশ কিছুদূর ....
মন্তব্য করতে লগইন করুন