একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, গাজীপুর।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:২৯:৩৮ সকাল
আমার বাৎসরিক একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকে।আল্লাহ চাইলে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী চেষ্টা করি ঘুরে দেখার। আর এরই অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বরে ঘুরে এলাম বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক।
অফিস ছুটির নির্ধারিত দিনে সকাল বেলা ফজরের সালাত আদায় করে দুইজনে মিলে বের হইলাম বাসা।ইচ্ছে আছে রাস্তায় কোথাও সকালের নাস্তা সেরে নিব। প্রথমে বাসে করে বাড্ডা থেকে এয়ারপোর্ট। উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহের বাস ধরব। এয়ারপোর্ট এসে ময়মনসিংহের গাড়ীতে করে নামলাম এসে বাঘের বাজার। নামার সাথে সাথেই একজন রিক্সওয়ালা এগিয়ে এলেন। আমরা বললাম নাস্তা সেরে পরে যাব। কিন্তু রিক্সাওয়ালা নাছড়বান্দা! পরে গ্রামের মধ্যে মাঝ রাস্তায় একখান ঘরোয়া হোটেলে সে রিক্সা থামাল। সেখানে ডিম, ডাল আর রুটি দিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম।
এরপর সোজা সাফারী পার্ক এর গেট। একটু দূরেই রিক্সা থেকে নামতে হয়। গেটের কাছে যেতে দেয় না। তারপর হেঁটে গেটে গিয়ে ৫০ টাকা করে দুইটা টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে ঢুকেই ডান দিকে পুরো পার্কের মানচিত্র দেওয়া আছে। আমরা সামনে গিয়ে ট্যুরিষ্ট বাসের টিকে নিতে চাইলাম। আমাদের জানানো হল দশটার পর টিকেট দেয়া হবে!
ভেতরে আছে জীবজন্ত দর্শনের জন্য ট্যুরিষ্ট বাস।
অগত্য আমরা আরো সামনের দিকে গিয়ে পাখির ঘরের টিকেট করে পাখি দেখা শুরু করলাম। কিন্তু আমার কাছে একটা ব্যাপক প্রতারণা মনে হল। ৫০টাকা টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে আবার সবকিছু দেখার জন্য আলাদা আলাদা টিকেটের ব্যবস্থা দেখে। প্রত্যেক খাচায় সামান্য কটা করে পাখি দেখার জন্য দশ-বিশ টাকা টিকেট!
বিশ্বের বড় জাতের ম্যাকাউ পাখি এখানে আছে। আর আছে কয়েক জাতের ম্যাকাউ। বড় ম্যাকাউটার এক কেজির বেশি গোশত হবে কোন সন্দেহ নাই। আর এটার ভূনা যে স্বাদ লাগবে যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে। এটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। পাখিগুলো মানুষ দেখে ভয় পায় না। ইচ্ছে করলে ছুঁয়ে দেখা যায়।
এখানে আসলে বিভিন্ন ধরণের শালার দেখা পাবেন। এই শালা সেই শালা।তবে সব শালাই গরীব! কোন শালার মধ্যে বেশি কিছু নাই! অযথা এইসব শালা দেখতে টিকেট কাটা।
এসব দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ভাবলাম প্রজাপতি দেখব। এটা ভেবে প্রজাপতি শালার টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। ভিতরে গিয়ে প্রজাপতি খুঁজতে থাকলাম দীর্ঘ সময় তন্ন তন্ন করে প্রজাপতি খুঁজে একটাও না পেয়ে ওখানকার একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই দশ টাকা টিকেট করে ভেতরে ঢুকে একটাও প্রজাপতি দেখলা্ম না!?! উনি বললেন, কাল বিকেলেইতো কতগুলো প্রজাপতি ছাড়লাম! দেখেন খুঁজলে পেতে পারেন!
প্রজাপতি না পেয়ে হতাশ হয়ে ভাবলাম দেখি মিউজিয়ামে কি আছে! টিকেট করে ভেতরে ঢুকে অবাক! কয়েকটা আন্ডা! আন্ডা দেখে বের হয়ে ভাবলাম দশটাতো পার হল দেখি ট্যুরিষ্ট বাসের টিকেট ছাড়ল কি না!
এসে দেখি ওমা একি! এক মাইল লম্বা লাইন! এতো মানুষ কোথা থেকে আইল! কি আর করা সবার পিছনে দাড়ালাম। টিকেটের জন্য। আমাদের সামনে এক পরিবার ইন্ডিয়া থেকে এসেচেন সাফারি পার্ক দেখতে। তাদের সাথে কিছু সময় ইংরেজীতে বাতচিত হল। তার সামনে দাড়াইছে আর এক পরিবার। সাথে আছে মেয়ে আর মেয়ের জামাই। কি সুন্দর হাত ধরে ঘুরাঘুরি করছে টোনাটুনির মতো। আর মা-বাবা দাড়াইছে টিকেট এর লাইনে। এই টোনাটুনি বড়ই রোমান্টিক জুটি! ব্যাপক আহ্লাদ করে কথা কয়!
লাইন খুব ধীর গতিতে এগুতে থাকল। এক সময় রোদ থেকে আমরা ছাউনির নিচে ঠাই পেলাম। লাইনে ব্যাপক গল্প-গুজব চলছে। কে কোথায় বেড়াইছে, কে কি দেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে এভাবে এগুতে এগুতে এক সময় আমরা গেটের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হইলাম। একটু পর টিকেট হাতে পেলাম।
সবার কথা শুনে সময় কাটাচ্ছি। জানি না কখন বাসে উঠতে পারব আর বাঘ-সিংহ-ভালুক দেখব। কথা কথা শুনতে শুনতে এক সময় ব্যাপক অবাক হইলাম। এতক্ষণ যাদের আমরা নব দম্পতি ভাবছি, তারা আসলে বন্ধু। ছেলেটি বিবাহিত। পুরুষ লোকটি(মেয়ের বাবা) ছেলেটিকে বলছে, তুমি যে আমার মেয়ের সাথে এভাবে বেড়াচ্ছ তোমার স্ত্রী জানতে পারলে রাগ করবে না?!?
আসলে ভালভাবে না জেনে কোন বিষয়ে ধারণা করতে নেই। আজ আবার শিক্ষা হল। যাই এক সময় বাসের লোক চিৎকার করে ডাকতে লাগল দুইজন কেউ আছেন? দুইজন? এই বাসে দুইটা সীট খালি আছে। শুধু মাত্র যারা দুইজন তারা যেতে পারবেন। আমি হাত তুলে দিলাম দৌড় বললাম আমি আমার বউ আছি, দুইজন।
গিয়ে উঠলাম বাসে। ভাবতে থাকলাম সামনে কি না জানি কি আছে। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি। সাফারি পার্কে উম্মুক্ত জীব-জানোয়ার দেখব বাসে বসে বসে। চারিদিকে সব জীব জন্তু ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বাস চলতে থাকল। আমরা চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছি কোথায় কোন জন্তু ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে বসে আছে। কিন্তু না তেমন কিছু না! যাওয়ার পথে একটু পর ড্রাইভার বলল ওই দেখেন জিরাফ! হ্যা দেখলাম দুইটা জিরাফ।
আসলে উম্মক্ত বলতে তেমন কিছু না। কিছু জায়গায় দেয়াল ঘেরা করে আলাদা আলাদা করে বাঘ-সিংহ-ভালুক রাখা আছে শুধু তার ভিতরে বাস যায় আর যাত্রীরা বাসে বসে বসে দেখে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আগের জায়গায় বাস এনে নামিয়ে দিল।
সেই জায়গা থেকে বের হয়ে ভাবলাম ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ঢুকে এত তাড়াতাড়ি বের হব! আর একটু ভিতরের দিকে যাই। গেলাম পশ্চিম দিকে। ওদিকে আছে লেক শিশুপার্ক। লেকের পানিতে চলে একটা নৌকা এক চক্কর ১০০ টাকা। চিন্তা করলাম খেয়ে কাম নাই! আর টাকা গচ্চা দিমু না। লেকের পশ্চিম পাশ দিয়ে অডিটোরিয়াম ঘুরে ঝুলন্ত ব্রীজ দেখে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আবার বাম দিকে এসে এক জায়গায় দেখলাম মাছ পানিতে কিলবিল করছে। বসে বসে সেটা কিছু সময় দেখে। বের হয়ে আসলাম।
একেবারে গেটের বাহিরে এসে। আল সামিয়ানা হোটেলে পেট ভরে ডাল-ভর্তা-মুরগি দিয়ে ভাত খেয়ে। আবার রিক্সা নিয়ে সোজা বাঘের বাজার। এর ফিরতি পথে ঢাকা।
যেভাবে যাবেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের গাড়ীতে করে বাঘের বাজার নামতে হবে, ভাড়া ১০০টাকা। তারপর রিক্সায় সোজা পশ্চিম দিকে সাফারী পার্ক, ভাড়া নিবে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। মেইন রোডের সাথে বিশাল সাইনবোর্ডে সাফারী পার্কের পথ নির্দেশ করা আছে। এছাড়া ঢাকা থেকে সিটি সার্ভিস বাসে গাজীপুর চৌরাস্তা নেমে সামান্য উত্তরদিকের ওখান লেগুনাতে করে বাঘের বাজার নেমে রিক্সায়। এভাবে গেলে খরচ কম।
(বিঃ দ্রঃ- এখানে ঘুরতে গেলে আপনাকে জোহরের আগেই দেখে শেষ করতে হবে। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য ভিতরে বা বাহিরে গেটের আশ-পাশে সালাত আদায় করার জন্য কোন মসজিদ বা সালাতরে জায়গা বরাদ্দ নাই!)
বিষয়: বিবিধ
৩২৬৩ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা একটা পয়সা ধরার ট্র্যাপ। ছোট ছোট ড্যারার মতো করে রেখেছে এক একটি আইটেমের জন্য আর তার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইজারাদাররা রাস্তায় বেন্স বসিয়ে গরুর হাটে ক্রেতাদের কাছ থেকে যেভাবে স্লিপ দিয়ে পয়সা উঠায়, তেমনভাবে চলে পয়সা ধরার কার্যক্রম।
বাইরের দেশের মত খোলা জীপ হলে ভাল ।
টাইগার রেস্টুরেন্ট আর লায়ন রেস্টুরেন্ত টি চমৎকার।
তবে ওইসব জায়গায় বেড়ানো খুব বিরক্তিকর, শীত হোক আর গরম হোক, সবসময়ই রোদ থাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন