অনিন্দ্য সুন্দর গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৫১:৪১ সকাল



বায়তুল আমান জামে মসজিদ।

আমরা চারজনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র আর আমি সরকারী তিতুমীর কলেজ এর ছাত্র। সবাই ছাত্র টাকা-পয়সা কম। তাই লঞ্চের ডেকই যুতসই। মারুফ একটু আগে আগে গিয়ে চাদর বিছিয়ে শুয়ে থাকল লঞ্চের ডেকে। আমরা গেলাম লঞ্চ ছাড়ার একটু পূর্বে। গন্তব্য বরিশাল।



সন্ধ্যনদী বরিশাল।

কাজ পেয়েছি মজার! একটা সার্ভে কাজ। ঘুরব-বেড়াব-দেখব-শিখব-জানব।তখন এখনকার মতো প্রাকটিসিং মুসলিম ছিলাম না। নির্ধারিত সময়ের একটু পরে লঞ্চ ছাড়ল। টিভিতে ছাড়ল বাংলা ছিঃনেমা। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখি লঞ্চে কোন লোকজন নাই! শুধু আমরা চারজন ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে আছি! চারপাশ ফাঁকা! ওদেরকে ডেকে তুলে। ব্যাগ হাতে নিয়ে নেমে এলাম লঞ্চ থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্যারের পরিচয়ে এনজিওর একটা রেষ্ট হাউসে আমাদের ঠাই হল। রেষ্ট হাউসে সাজানো-গোছানো ছিম-ছাম সুন্দর রুমে উঠে আমরা মহা আনন্দিত। গোসল ছেড়ে নাস্তা জন্য বের হইলাম।



প্রতিদিন বিকেল বেলা এখানে আমরা আড্ডা দিয়েছি।

দুইজন করে দু্ই দলে ভাগ হয়ে আমরা কাজে বের হইলাম। সারাদিন সার্ভে কাজ করে বিকেল বেলা আমরা শহরের রেষ্ট হাউজে ফিরে আসি। সারাদিন কত কিছু দেখা হয়ে যায়। গ্রামে কাজে গিয়ে দুপুরের খাবার খাই কোন ইউপি মেম্বারের বাড়িতে। বিশেষ করে মহিলা মেম্বারদের বাড়িতে তারা না খেয়ে আসতে দেন না। আর আমাদের জন্য সেটা পোয়াবারো! যেহেতু আমরা কাজ করছিলাম ওমেন ইন লোকাল গভমেন্ট এর উপর। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমাদের কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ। বাকী কাজটা একটু রেষ্ট নিয়ে করব ভেবে থামলাম। আর চিন্তা করলাম এই ফাঁকে একটু ঘুরে নিই। এখানকার এনজিও কর্মকর্তা শিউলি আপা প্রতিদিন এসে কাজের খোঁজ খবর নিয়ে যান। একদিন তিনি বললেন মাজেদ তোর কাজ কতদূর? আমি তার মুখে তুই-তোকরি শুনে স্তম্ভিত! শিউলি আপা বললেন, আমি তোর অনেক সিনিয়র তোকে তো তুই করেই বলব। আমিও সম্মতি দিলাম।শিউলি আপা জানালেন, আর তোকে নিয়ে কাল সকালে ঘুরতে যাব। তোকে দেখাব বরিশালের বিখ্যাত দূর্গাসাগর আর বিখ্যাত সেন্টুমিয়ার মসজিদ (দূর্গাসাগর নিয়ে অন্যদিন লেখা যাবে)। আমি তোর গাইড। আমিও ফ্রিতে এমন গাইড পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।



সেই মসজিদ।

পরদিন সকাল বেলা নথুল্লাবাদ বাসষ্ট্যান্ড হতে গাড়ীতে উঠে চললাম গুঠিয়ার উদ্দেশ্যে। প্রথমে গেলাম। মসজিদ দেখতে। গ্রামের মধ্যে রাস্তার ধারে নির্জন এলাকায় এমন অবাক করা সুন্দর একটা মসজিদ। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশাল বাগান, পুকুর, কবরস্থান, মাদ্রাসা, রেষ্ট হাউজ কি নেই সেখানে।



আমাদের দেশে এমন দৃষ্টি নন্দন মসজিদ এর আগে আমি দেখিনি। যে ব্যাক্তি এই মসজিদ গড়েছেন তাকে এলাকার সবাই সেন্টু মিয়া নামে ডাকে। তিনি বড় ব্যবসায়ী। তিনি তার জন্য এখানে নির্ধারিত করে রেখেছেন কবরের জায়গা। সেখানে সাইনবোর্ড দিয়ে রেখেছেন।



সেন্টু মিয়ার কবরের জায়গা।

তিনি মক্কা-মাদিনা সহ বিভিন্নস্থানের মাটি সংগ্রহ করে এনে এই মসজিদ তৈরী করেছেন। তার কি ফজিলত আল্লাহ ভাল জানেন। তবে এমন নির্মানশৈলী দেখে তার রুচির তারিফ করতে হয়। আমার বাকী তিনজন কলিগ এই মসজিদ দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন। আসতে না চেয়ে।



সূউচ্চ মিনার।

চারদিক থেকে দেখলে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।



এর রাতের সৌন্দর্য এক রকম দিনের সৌন্দর্য আরেক রকম।



আপনি চাইলেই খুব সহজেই গিয়ে দেখে আসতে পারেন বরিশালের এই মসজিদ। এর নাম গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ। এখানকার লোকজন বলে সেন্টু মিয়ার মসজিদ।



মসজিদের সামনের বাগানে পুরের আশ-পাশে লাগানো হয়েছে অনেক নারিকেল গাছ। আছে সানবাঁধানো ঘাট অজুর জন্য।



অজুর ঘাট।

এখানে অতিথিদের থাকার জন্য আছে রেষ্ট হাউজ।



মসজিদের পাশেই বাগানের মাঝে দৃষ্টিনন্দন রেষ্ট হাউজ।

অনেক ঘুরে-ফিরে দেখে। খায়েশ মিটিয়ে আবার আসার বাসনা নিয়ে বিদায় নিলাম সেন্টু মিয়ার মসজিদ প্রাঙ্গণ হতে।



বিদায় সেন্টু মিয়ার মসজিদ। ইনশা আল্লাহ আবার দেখা হবে।

এর পর বাসে উঠে পরের গন্তব্য যাওয়ার পথে রাস্তার ধারেই দূর্গাসাগর দিঘী। সে গল্প অন্যদিন। একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়নি! গুঠিয়ার বিখ্যাত সন্দেশ না খেয়ে আসবেন না যেন।

(তখন ক্যামেরা ছিল না কাছে তাই ছবি গুলো ধার নিলাম, নেভার মাইন্ড)

বিষয়: বিবিধ

২৪৩০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366104
১৮ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৪:০২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : মসজিদ যেমন সুন্দর তেমন বর্ণনা ভঙ্গি একে আরো সুন্দর করে তুলেছে তবে আমরা আড্ডা দিছি খাইছি এই টাইপ শব্দগুলো এডিট করে দিয়েছি খেয়েছি এভাবে লিখুন লেখাটা আরো দৃষ্টিনন্দন হবে।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৪:১১
303730
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাঝাকাল্লাহু খাইরান। দিলাম এডিট করে। ভুল সংশোধন করে দেয়ার জন্য আবার অনেক ধন্যবাদ। আপনিই সম্ভবত প্রথম পাঠক। তাই অভিনন্দন।Happy Good Luck
366115
১৮ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩২
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : এত সুন্দর মসজিদ দেখলে ভয় লাগে।
আমার পীরসাহেব বলেছেন।
আপনার পীরসাহেব কি কিছু বলেছেন?
১৯ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৯:১৮
303793
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি যখন পীরসাহেব এর কথা মনে পড়ে তখন ভয় জাগে। এছাড়া সুন্দর মসজিদ দেখলে ভাল লাগে যদি সেখানে শিরক-বিদাত কোন কাজ না হয় আর মুসুল্লিতে ভরা থাকে মসজিদ।
২০ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
303952
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ছাউনি মসজিদে শির্ক বেদআত না হলে এবং মুসল্লিতে ভরা থাকলে কি সুন্দর লাগবে না?
২০ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:১৬
303981
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি স্যার
366169
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১১:১৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সুন্দর বর্ণনা, ভালো লেগেছে। সময় হলে কখনো দেখতে যাবো ইনশা আল্লাহ।
১৯ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৯:১৯
303794
নেহায়েৎ লিখেছেন : ওয়াআলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইনশা আল্লাহ দেখতে যাবেন। অনেক সুন্দর একটা মসজিদ।
366190
১৯ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার ভ্রমনটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের দেশে মসজিদগুলিকে এমন সেন্টার এ পরিনিত করা জরুরি।
১৯ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৯:২০
303795
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাঝাকাল্লাহু খাইরান। আপনার শরীর কেমন এখন? আপনি টুডে ব্লগের প্রেরণা। সবাইকে লেখার জন্য উৎসাহ দেন।
375369
২৭ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অল্প বিড়ম্বনায় সুন্দর ভ্রমণ। কত সালের ঘটনা এটা? আমার শ্বশুড়বাড়ি যাওয়ার পথে একবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
৩০ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৯
311371
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি ভাই সামান্য বিরম্বন। এটা সম্ভবত ২০০৭ সালের ঘটনা। তখন একটা সার্ভে কাজে গিয়েছিলাম। ইনশা আল্লাহ দেখে আসবেন একবার। খুব সুন্দর মসজিদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File