বেড়াইলাম বাহিরেও এরপর ভেতরেও!
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:৪৮:০৮ বিকাল
সাল টা সঠিক ঠিক মনে নাই(হতে পারে ২০০৪ সাল)। তবে এটা ক্লিয়ার মনে আছে যে, তখন ছিল বিএনপি সরকার! কারণ ঘটনা ভোলার মতো নয়। মনে থাকবে হয়তো মৃত্যু পর্যন্ত! আল্লাহ ভাল জানেন।
মূল ঘটনায় আসি।
তখন আমি ছাত্র। উদাস-ভবঘুরে টাইপের মন। থাকি ঢাকায় মেসে । বিশাল স্বাধীনত!।ঘুরে বেড়াই ইচ্ছেমতো! কেউ বাঁধা দেবার নাই! যখন যেখানে মন চায় চলে যাই! তো একদিন বিকেল বেলা হঠাৎ মনে হল ঢাকার বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। যেমন ভাবা তেমন কাজ! ব্যাগে শার্ট-প্যান্ট ঢুকিয়ে চলে গেলাম এয়ারপোর্ট রেল ষ্টেশন। কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ভাই চট্টগ্রামের টিকেট আছে?
না নাই।
বললাম- খুলনার আছে?
বলে- না নাই!
সিলেটের আছে?
বলে, না নাই!
পাশ থেকে এক লোক বলে ভাই আপনি যাইবেন কই?!?
আমি বললাম ঘুরতে যাব। যেখানকার টিকেট পাব সেখানে যাব!
শুনে উনি বললেন- আমি শ্রীমঙ্গলের দুইটা টিকেট কেটেছিলাম। কিন্তু আমার সাথের জন যাবে না। আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন। একটা টিকেটের দাম দিতে হবে।
আমি রাজী হয়ে গেলাম।
যথারীতি ট্রেন এল আমরা উঠে বসলাম। ঝকঝকিয়ে ট্রেন এক সময় পৌছে গেল শ্রীমঙ্গল! রাত তখন হতে পারে ১২টা বা ১টা। সাথের লোকটা সরকারী চাকুরীজীবি। তার জন্য গাড়ী এসেছে ষ্টেশনে। উনি আমাকে সেই গাড়ীতে করে একটা হোটেলে পৌছে দিলেন। হোটেলে গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে দিলাম ঘুম। এক ঘুমে সকাল।
সকাল বেলা গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে, হোটেল থেকে এক ছোট বাচ্চা মতো ছেলেকে নিয়ে রিক্সায় করে চলে গেলাম চা বাগান দেখতে।
সোবহান আল্লাহ! জীবনে প্রথম চা বাগান দর্শন! যেন বিশাল সবুজ একটা কার্পেট মোহনী ভঙ্গিমায় বিছিয়ে রেখেছে উচু-নিচু ঢালু বেয়ে। মাঝে মাঝে পায়ে চলার পথ। অসাধারণ! অপরূপা! মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য! ভাষার বর্ণনানীত!
ছোট-বড় মিলিয়ে এই উপজেলায় চা-বাগান আছে ৩৮টি।চা-বাগানের ভেতর আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে কিছুক্ষণ হাটলেই আপনার শরীর-মন জুড়িয়ে যাবে।তবে বাগানে প্রবেশের আগে কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।চা-শ্রমিকদের পাতা সংগ্রহের দৃশ্য মনে থাকার মত।সাধারণত গাছের উপরের দিকের কুঁড়িসহ দুটি পাতা সংগ্রহ করা হয়।চা চাষের দেড়শ বছর পার হওয়া ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গলের টি-রিসোর্টে স্বল্প পরিসরে টি-বোর্ডের উদ্যেগে গড়ে তোলা হয়েছে চা জাদুঘর।এখানে আসলে দেখতে পাবেন ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিশেষ কয়েন, রাজনগর চা বাগানের নিজস্ব কয়েন, বাগান লাগোয়া ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাবপত্র, ব্রিটিশ আমলের ফিল্টার, চা গাছের মোড়া-টেবিল, প্রোনিং দা, প্লান্টিং হো, রিং কোদাল ইত্যাদি।
শ্রীমঙ্গলে ভ্রমনের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি স্থান হচ্ছে শতবছর পুরানো ডিনস্টন সিমেট্রি যা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে রাজঘাট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত খেজুরীছড়ায় ফিনলে টি কোম্পানির চা বাগান অবস্থিত।
মোটামুটি সারাদিন ঘুরেফিরে দেখে বিকেল বেলা হোটেলে ফিরে হাকলা নাস্তা করে কিছু সময় রুমে রেষ্ট নিয়ে। বের হলাম ছোট্ট এই শহরটা দেখেতে। দেখা শেষ করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে একেবারে চেক আউট।
রেলষ্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা। পূর্বেই টিকেট করে রেখেছিলাম। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়লাম। এভাবে আধো ঘুম আধো জাগা করে সকালবেলা ঢাকা এয়ারপোর্ট রেলষ্টেশন।
ট্রেন থেকে নামার পর আমার জন্য যে চমক অপেক্ষা করছিল! সেটা স্বপ্নেও কখনও কল্পনা করিনি! ষ্টেশন হতে বের হওয়ার পর দেখি বেশকিছু পুলিশ ষ্টেশনে! আমার মতো অনেক যুবক ছেলেকে আটকে রেখেছে এক জায়গায়! যাদের সাথে মহিলা আছে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে যারা একা তাদের আটকে রাখছে! যথারীতি আমাকেও ডেকে বাপের নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা লিখে একটা জায়গায় অপেক্ষা করতে বলল। কিছু সময় পর একটা পুলিশের গাড়িতে করে সোজা এয়ারপোর্ট থানায়!
সেখানে গিয়ে আবার বাপের নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা লিখে সোজা শিকের ভিতরে! পুলিশকে জিগাইলাম, ভাই আমাদের অপরাধ কি?
তিনি বললেন, অপরাধ বুঝব আদালত। আমরা অপরাধের কি জানি!
ব্যাস আর কোন কথা নাই!
ছোট্ট একটা হাজতে একের একের পর এক টিম আসতে থাকল। এক সময় পুরো ভরে গেল আর বসার জায়গা নাই। এবার সবাই দাড়িয়ে থাকা। এর পর যাদের আনা হল শুরু হল হাজতের বাহিরে বসিয়ে রাখা!
আমার স্মৃতিবিজরিত এয়ারপোর্ট থানা!
পরে জানতে পারলাম মূল রহস্য! আওয়ামীলীগ এর মহাসচিব আব্দুল জলিল সাহেব কোন একটা ট্রাম কার্ডের কথা বলেছিলেন! তিনি ঢাকা শহর অচল করে দিবেন। এর লাইগা ঢাকা শহরের সকল থানায় টার্গেট দেওয়া হয়েছে কেউ যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে!
আর প্রতি থানায় টার্গেট মিনিমাম ৫০০ জন করে গ্রেফতার করতেই হবে! এই টাইপের একটা টার্গেট। শুনেছি এটা ছিল তারেক সাহেব এর করা রুলস(আল্লাহ ভাল জানেন)! সারা রাত অনেকেই কান্নাকাটি করেছে। তারেক সাহেবকে অভিশাপ দিয়েছে। আল্লাহ যেন তার বিচার দুনিয়াতেই করে। তাকেও যেন এক সময় পুলিশে ধরে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তখন সেটা ছিল অলীক কল্পনা, স্বপ্ন। তার মতো ক্ষমতাশালীকে কখনও পুলিশে ধরবে এটা ঐ সময় আমরা কেউ ভাবিনি!
যাই হোক এক সময় একটা পুলিশকে অনেক অনুরোধ করে ১০০ টাকা দিয়ে আমার বোনের বাসায় একটা ফোন করালাম। আমার ব্যাগ হতে একটা বই চেয়ে নিয়ে পড়ে সারারাত কাটালাম। সকাল বেলা একজন কাস্টমস অফিসার এসে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলেন!
ব্যাপক একটা অভিজ্ঞতা হল এক রাতে! সেই সাথে আমার বেড়ানো হল ভেতর-বাহির দুইটাই!!!
(ছবিগুলো সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
১৪০৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাজত এর অভিজ্ঞতা আশা করি উপকার হয়েছে!! তবে সুযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ দের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার উচিত হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন