ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক পানাম নগর।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:১৬:৩৬ সকাল
পানাম নগর।
আলহামদুলিল্লাহ।ব্যাচেলর লাইফে অনেক ঘুরেছি দেশের আনাচে-কানাচে। আর আমার বউ বিয়ের আগে ঢাকার বাইরে কোথাও যায়নি! এখন তার সাথে অলিখিত একটা চুক্তি হয়েছে। প্রতি বছর কমপক্ষে দুই/তিনটি জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে ঢাকার বাইরে। প্রথমবার(২০১৪সালে) নিয়ে গিয়েছিলাম বান্দরবান। গত বছর ঢাকার আশ-পাশে তিনটি জায়গায়। তার মধ্যে একটা হল ঈশা খাঁর রাজধানী খ্যাত সোঁনার গায়ের পানাম নগর।
আমার মোবাইলে তোলা ছবি।
যান্ত্রিক জীবনের নানান ব্যস্ততার মাঝে একটুখানি ফুরসৎ পেলেই এসব স্থান থেকে বেড়িয়ে আসা যায় সহজেই।হাজারো সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য বহন করে যুগের পর যুগ ধরে রাজধানীর পাশেই রয়েছে পানাম সিটি যা অনেকের কাছে সোনারগাঁ নামে পরিচিত। একদিনের ছুটিতেই আপনি বেড়িয়ে আসতে পারেন পরিবার নিয়ে। দেখবেন সবকিছু পরিবারের সবাই চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।
পানাম সিটির পূর্বদিক।
গত শীতে ঘুরে এলাম সোনার গাঁ। নিধারিত দিনে ফজরের সালাত আদয় করে বাসা থেকে বের হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, এই শীতেই শুরু হল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতে রিক্সা নিয়ে বাসষ্ট্যান্ড যাইতে যাইতে কর্ম কাবার। কাক ভেজা হয়ে বাসে উঠে। সোজা গুলিস্থান। সেখান থেকে দোয়েল পরিবহনে করে। সোনার গাঁ মোগড়া পাড়া বাসষ্ট্যান্ড। সেখানে নেমেই দেখি আমার সেজ ভাই ছাতা নিয়ে অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য। কাঁদাপনি মারিয়ে তার বাসায় গিয়ে সকালের নাস্তা! প্লান এরকমই ছিল। একটু রেষ্ট নিয়ে রিক্সায় করে সোজা জাদুঘর।
আমার কম দামের নোকিয়া মোবাইলে তোলা ছবি।
নতুন কেউ গেলে প্রথম দেখায়ই চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে! মনে হবে ভুল কোনো শতাব্দীতে ঢুকে পড়েছি। এ যে চোখের সামনে পঞ্চদশ শতকের এক হারানো রাজ্য, চারশো বছরের পুরোনো পানামনগরী।
প্রথমে জাদুঘরে না ঢুকে ভাবলাম আগে পানাম নগর দেখে আসি তারপর জাদুঘরে। ওখানে গিয়ে বেকুব বনে গেলাম! এইটুকু পানাম নগর দেখতে ২০টাকা টিকেট! আগে যতবার এসেছি কখনও টিকেট লাগে নাই। জিজ্ঞেস করে জানলাম গতমাস থেকে টিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি চিন্তা করলাম দেখি কি করা যায় পুরাটাইতো বাহির হতে দেখা যাচ্ছে, আর মাত্র তিন/চার হাত দেখার জন্য কেন টিকেট করব! এটা আমার কাছে প্রতারণা মনে হল। বাহিরে গেটে ডাব দেখে ভাবলাম আগে ডাব খাই তারপর একটা বুদ্ধি বের হবে ইনশা আল্লাহ।
ডাব খেয়ে মজা করে ডাবের শ্বাশ খেলাম! আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহর রহমতে ডাব খেয়ে বুদ্ধি বের হল। আমরা আশ-পাশ ঘুরে দেখতে লাগলাম। বাহিরে রাস্তার বামদিকে সুন্দর সুন্দর একটা ঈশা খার আমলের ব্রীজ দেখতে পেলাম।
ব্রীজটা দেখে সোজা পূর্বদিকে পানাম বাজারের দিকে গেলাম। যেতে পথের আশ-পাশ তাকালে কিছু পুরাতন আমলের সুন্দর বাড়ি মন্দির দেখা যায়। বাজারের পুর্বপাশ দিয়ে ছোট একটা সেতু পার হয়ে আমরা পানাম নগরে প্রবেশ করলাম। ওদিকে টিকেট এদিকে পুরা ফাঁকা!! কেউ নাই! আমরা পুরোটা দেখে আবার সেদিক দিয়েই বের হয়ে আসলাম!
ব্যবসায়ী আর জমিদারদের বসবাসের এই নগরীর প্রতিটি দালান অপূর্ব কারুকার্যমণ্ডিত। নগরীকে চিরে দুই ভাগ করে চলে যাওয়া পাঁচ মিটার প্রশস্ত ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দুই পাশে একতলা, দোতলা ও তিনতলা মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৫২টি ভবন। সড়কের উত্তর পাশে আছে ৩১টি ভবন এবং দক্ষিণ পাশে আছে ২১টি ভবন। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানামনগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় স্থান দেয়।
সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে এই পানামনগর, ঈশা খাঁর নগর। একসময় ছিল তাঁত ব্যবসায়ীদের আবাসস্থল, বাংলার মসলিন ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু। ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এই নগরী তৎকালীন কাছেপিঠের অন্য সব নগর থেকে ছিল বেশি আকর্ষণীয়। এখানে শুধু যে দালানকোঠা আছে, তা কিন্তু নয়। মসজিদ, মন্দির, কূপ, সরাইখানা, পঞ্চপীরের মাজার এমন আরো অনেক কিছু চোখে পড়বে পানামে এলে।
এই নগরীর পুরোটাই খাল দিয়ে বেষ্টিত যার নাম পঙ্খীরাজ খাল। এই পথেই বিলেত থেকে আসত বিলাতি থানকাপড় আর দেশ থেকে যেত মসলিন।
এবার রিক্সা একটা রিজার্ভ নিয়ে আশ-পাশের গ্রামগুলো দেখতে থাকলাম। আশ-পাশে মাঝে মাঝে পুরোনো আমলের বাড়ি দেখতে পাবেন সোনার গাঁয়ে।
বেশকিছু সময় ভেতরে গ্রাম-বাড়িঘর দেখে পুণরায় ফিরে আসলাম জাদুঘরে। এবার টিকেট কেটে জাদুঘরে ঢুকে দেখি প্রচন্ড ভিড়! সেদিন ছুটির দিন হওয়ার কারণেই এমন ভীড়।
দেশি-বিদেশী হাজারও পর্যটক, পিননিক পার্টির ভীড়ে খুব একটা খারাপ লাগে নাই।
আমার ফহিন্নি মোবাইলে তোলা ছবি।
পরাণ ভইরা দেখে, বেড়িয়ে, খেয়ে আবার রিক্সা নিয়ে সোজা সেজ ভাইয়ের বাসা মোগড়া পাড়া। জুম্মার সালাত আদায় করে বাসায় গিয়ে গোসল সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসায় আড্ডা-গল্প করে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যা। রাতটা কাটিয়ে পরদিন সকালে ঢাকায় ফেরা এবং আল্লাহ চাইলে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক দেখার প্লান করা!!!
কিভাবে যাবেন-
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে করে যেতে পারেন। দোয়েল, বোরাক আর স্বদেশের বাস ছাড়ে সেখান থেকে। ভাড়া বাসভেদে ২৫-৪৫ টাকা। নামবেন সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড। ওখান থেকে রিকশায় ১৫-২০ টাকা।
বিষয়: বিবিধ
১৯২০ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলে শিক্ষা থেকে দূর্ভোগই বেশি হয়েছিল, একে তো দীর্ঘ পথ আবার প্রায় শতখানিক বনি আদম। ছাদে দুপরের জন্য পাক করা বিরিয়ানী।
বড়দের জন্য ভালই কাটলো, কিন্তু ছোটদের জন্য অনেকটা কষ্ট হয়ে গেল। তবুও নতুন নতুন কিছু দেখাতে অনেক প্রফুল্ল ছিল।
বিকেলে গেলাম বাংলার তাজমহল দেখতে, তখন ৫০টাকা টিকেট ছিল। এতগুলো বাচ্চা নিয়ে ৫০টাকা করে টিকিট অনেকটা বেশি মনে হল।
তাই বড় ছাত্রছাত্রীদের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাকীদের বাইরে অপেক্ষা করা আর কি!
কিছুক্ষণ পর ওখানের সুপারভাইজার ব্যপারটা বুঝতে পেরে বাকি সবাইকে বিনে টিকিটে প্রবেশের ব্যবস্থা করলো।
অনেকটা ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিলাম।
হি হি হি
ভাই, দেখি স্টিকির বন্যা বসাইয়া দিলেন
কু - নজর পরছে
সাবধানে থাইকেন
একেই বলে দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া-----৷ মানুষ আগে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া দেখতে যায় অথচ বাড়ির কাছে কতকি দেখার রয়েছে৷ পর বর্তী স্পট কোথায়? সুন্দবন বা ষাট গম্বুজ যেতে চাইলে এখন না গিয়ে অপেক্ষা করতে অনুরোধ রইল৷ বাকীটা-------৷ ধন্যবাদ৷
আলোচিত কুখ্যাত ব্যক্তি এরশাদ শিকদারের স্বর্ণকমল ও টুটপাড়ার কবর ও দেখে এলাম।
রায়েন্দা স্বরণখোলার রাজাপুর দিয়ে সুন্দর বন দেখে এলাম। এটি ঘুর্ণঝড়ের পরবর্তী সময়ে, সম্ভবত ২০০৮ সাল হবে। ধন্যবাদ
ফহিন্নি মোবাইলকে মোবারকবাদ
আসলেই আমাদের সবারই উচিৎ একটু সময় বের করে প্রিয়জনদের নিয়ে অপরূপ সুন্দর এই দেশের এমনসব ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে আসা।
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন