বালিয়াটি প্রাসাদ বেড়ায়া আইলাম!

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:৩৪:৪১ দুপুর



বালিয়াটি প্রাসাদ।

গত জানুয়ারী মাসে বন্ধুরা মিলে আলাপ-আলোচনা করলাম ঘুরতে যাব কোথাও। কোথায় যাব সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হল।শেষে আমি প্রস্তাব করলাম বালিয়াটি প্রাসাদ মানিকগঞ্জ। সবাই সমর্থন দিলেন। ব্যাস কাম হয়ে গেল! খান ভাই দায়িত্ব নিয়ে একটা হাইচ মাইক্রোবাস ভাড়া করলেন। ২২ তারিখ সকালে ফজরের সালাত আদায় করে। মেইন রোডে এসে দাড়ালাম। অল্প সময়ের মধ্যে মাইক্রোবাস এসে আমাকে এর পর ইকে পরাগ ভাইকে তুলে নিয়ে গাড়ি ছুটে চলল গাবতলী হয়ে সাভারের উদ্দেশ্যে।



ঝটপট একটা ব্যানার বানিয়ে নিয়ে এলেন মোজাহিদ হোসেন সজিব ভাই।

সাভার স্মৃতি সৌধ পার হয়ে কোন একটা হোটেলে খিচুরী দিয়ে আমরা সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। এর পর একটানে মানিকগঞ্জ। কালামপুর হয়ে সাটুরিয়া। সাটুরিয়া বাজারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আমাদের গাইড ইকে পরাগ ভাইয়ের সহকর্মী। তিনি আমাদের মানিকগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখান। তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে প্রথমে আমরা গেলাম বালিয়াটি জমিদার বাড়ী।



বালিয়াটি প্রাসাদের সামনে।

জনপ্রতি বিশ টাকা টিকেট কেটে আমরা প্রবেশ করলাম প্রসাদ মিউজিয়ামে(বিদেশীদের জন্য টিকেট দুইশ টাকা)। আল্লাহু আকবার! কোথায় সেই প্রতাপশালী জমিদার! কোথায় সেই সৈন্য-সেপাই! প্রাসাদ হয়ে গেছে জরাজীর্ণ। আছে শুধুই স্মৃতি। সব ফেলে চলে যেতে হয়েছে চিরস্থায়ী বাসস্থানে।



প্রাসাদ চত্বরে।

পুরো প্রাসাদ চত্বরে অনেক সুন্দর সাজানো বাগান।জমিদার বাড়ীর পিছন দেয়াল ঘেরা পুকুর সম্ভবত অন্দরবাড়ির মহিলাদের জন্য ছিল।সামনেও আছে বিশাল পুকুর।এখন আছে পর্যটকদের জন্য আধুনিক টয়লেট। তবে ব্যবহার করতে ট্যাকা-পয়সা খরচ হয় না!



পিছনে ঘাট বাঁধানো পুকুর।

পুৃরো প্রাসাদ চত্বর ভিতর-বাহির ঘুরে দেখে। আমরা পাশেই দেখতে গেলাম রামকৃষ্ণ মিশন। তাদের কর্মকান্ড দেখতে। যদিও আমার মনটা কেমন যেন করছিল! তারপরও ভাবলাম দেখতে দোষ কি। যাই দেখে। এটা নিয়ে খান ভাইয়ের সাথে কথাও বললাম। সেখানে তাদের একজন পন্ডিতের সাথে কথা বললাম।ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে আমরা যদি বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সাথে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারতাম। তাদের জন্য ইসলামকে জানা সহজ হতো। যাচাই-বাছাই করে চিন্তা-ভাবনা করে ভুল-সঠিক যাচাই করতে সবাই চিন্তা করতে পারত। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ।

-

ওখান থেকে বের হয়ে সোজা আমরা চলে গেলাম বিথ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় দেখতে। সময় নষ্ট করতে চাই না একটুও। ট্যাকা দিয়ে মাইক্রো ভাড়া করে ঘুরতে বের হইছি! সময় নষ্ট করমু ক্যা! যতগুলো সম্ভব দেখে লই দেশের ঐতিহাসিক স্থানগুলো।



ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়।

এখান থেকে গ্রামের ভিতর দিয়ে চলতে থাকলাম টাঙ্গাইল নাগরপুর জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে। এটা আমাদের তালিকায় ছিল না। কিন্তু আমাদের গাইড ভাই বললেন, কাছেই যেহেতু দেখে যাই।নেট ঘেটে ঘেটে দর্শনীয় স্থানগুলোর আমি একটা লিষ্ট করেছিলাম।



নাগরপুর জমিদারবাড়ী।

নাগরপুর জমিদারবাড়ি দেখে। কঠিন এক অজপাড়া গায়েঁর রাস্তায় চলতে থাকলাম তেওতা জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।মাঝে মাঝে বিভিন্নস্থানে নেমে গাড়ী থেকে নেমে বিপদসংকুল রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছে! আর সেসব স্থানে ট্রাফিক কন্ট্রোল করেছেন আমাদের প্রিয় ইকে পরাগ ভাই।



রাস্তার বেহাল দশা!

রাস্তায় একস্থানে মিষ্টিার দোকান দেখে সবার ইচ্ছে হল মিষ্টি খাবে। ব্যাস পরাগ ভাই বললেন তিনি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবেন। সবাই মিলে ইচ্ছেমতো পেটপুরে মিষ্টি খেলাম। আলহামদুলিল্লাহ। এরপর সোজা যমুনানদীর তীর ধরে তেওতা জমিদার বাড়ি। যেটা কবি কাজী নজরুল ইসলামের শ্বশুরবাড়ী।



কবি নজরুলের স্মৃতি বিজরিত তেওতা জমিদার বাড়ী।



এখানে যে পুকুরঘাটে কবি কবিতা লিখতেন তা আজও তার স্মৃতি বহন করে।



যেখানে আমরা দাড়িয়ে আছি এই পুকুরঘাটে বসে কবি----



জমিদার বাড়ী আমগো পয়ের তলায়!

এই জমিদার বাড়ীর পাশেই আছে তেওতা আনন্দ মঠ।



তেওতা আনন্দমঠ।

তেওতা দর্শন শেষ করে আমরা এবার রওয়ানা করলাম। আরিচা ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে। দুপুর প্রায় গড়িয়ে চলল। পেট ক্ষুধায় খাবারের আহবান জানাচ্ছে। এবার গিয়ে বসলাম একটা হোটেলে। দুপুর শেষের পথে খাবার-দাবার তেমন ভাল কিছু পেলাম না! না পেলেও কারো মন খারাপ নেই। যথেষ্ট বেড়ানো হয়েছে। যা পেলাম তাই পেট ভরে খেয়ে নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ।

খাওয়া শেষ করে এবার আমরা নেমে গেলাম যমুনার চরে। এই নদীর মাঝে কিছু সময় হাঁটাহাটি করে ফের গাড়ীতে করে মনিকগঞ্জ শহরের পথে।



যমুনার চরে লিডার খান ভাই।

সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বিকেলের নাস্তা। খেজুরের গুড়ের পায়েশ! আগেই অর্ডার দিয়ে রেখেছেন ইকে পরাগ ভাই তার বোনের বাসায়।

সেখানেই গিয়ে ধোঁয়া উঠা গরম গরম পায়েশ খেয়ে।মাগরিবের সালাত আদায় করে সিঙ্গাইর হয়ে আমরা সোজা ঢাকার পথে।

সাঙ্গ হল আমাদের বেড়ানো।

বিষয়: বিবিধ

২৪৩০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

363352
২৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ১২:৫১
আফরা লিখেছেন : একেবারে উপরের ছবিটা কোন জায়গার খুব সুন্দর তো !সাভার, ধামরাই , কালামপর ,সাটুরিয়া এ সব আমার পরিচিত নাম যদিও কখনো যাওয়া হয়নি তবু খুব ভাল লাগল ।ছোট বেলায় একবার সাভার স্মৃতি সৌধে গিয়ে ছিলাম অবশ্য ।

আপনাদের ভ্রমন খুব ভাল লাগল অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৪৮
301258
নেহায়েৎ লিখেছেন : উপরের ছবিটা বালিয়াটি জমিদার বাড়ী সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ। আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম কয়েকজনে মিলে। আমার ঘুরতে খুব ভাল লাগে। মাঝে মাঝে বেড়িয়ে পড়ি তাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
363353
২৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : পোষ্টটি মনে হচ্ছে আগেও একবার পড়েছিলাম। ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৫০
301259
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমি প্রথম দিলাম। তবে বেড়িয়ে আসার পর লিংকন ভাই একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন।
363354
২৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : খুবই ভালো লাগলো শীতকালের ফটো দিলেন গরম কালে রাস্থার যে দুরাবস্থা ডিজিটাল দেশ বলে কথা। সকল ভাইদেরকে আন্তরিক মোবারক বাদ। পোস্টির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৫১
301260
নেহায়েৎ লিখেছেন : একটু দেরী হয়ে গেল। আমি আবার একটু অলস প্রকৃতির। মন চাইল তাই আজ এই বেড়ানো নিয়ে একটা পোষ্ট দিলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
363422
২৩ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আগামি বার আমাকে ফেলাই গেলে কিন্তু খবর আছে!!! ভালো লাগলো
২৪ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৯:৩০
301329
নেহায়েৎ লিখেছেন : ইনশা আল্লাহ যাইবেন ভাই। আপনার শরীর এখন কেমন? আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিন।
363434
২৩ মার্চ ২০১৬ রাত ০৯:২০
শেখের পোলা লিখেছেন : "ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে আমরা যদি বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সাথে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারতাম। তাদের জন্য ইসলামকে জানা সহজ হতো। যাচাই-বাছাই করে চিন্তা-ভাবনা করে ভুল-সঠিক যাচাই করতে সবাই চিন্তা করতে পারত। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ।"
অত্যন্ত ফলপ্রসূ কথা এটা৷ এটা আমাদের দায়িত্ব৷ এ কাজ মরহুম আহমেদ দীদাত করেছেন, জাকির নায়েক ও ইমরাণ ভাই নিষ্ঠার সাথে তা করে যাচ্ছেন৷ আপনাদের ভ্রমন বৃত্যান্ত পড়ে ভাল লাগল৷ ছবিগুলোও খুব সুন্দর৷ আপনার ছবি দেখলে অনেক দিনের চেনা বলে মনে হয়৷ খান ভাইরে একটু অন্য রকম লাগল৷ ধন্যবাদ৷
২৪ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৯:৩১
301330
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি যারা এই কাজটা করতে যাবে দেওবন্দীরা তাদের বিরুধীতা করে। বাঁধার কারণে আগানো কঠিন। আল্লাহ তাওফিক দাতা। যারা এই কাজ করছে আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিন। দেশে আসলে দেখা করবেন ইনশা আল্লাহ।
364303
০১ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:০৫
ধ্রুব নীল লিখেছেন : আপনাদের এমন আনন্দ আড্ডা আর ঘোরাঘুরি দেখে খুব ঈর্ষা লাগে। কবে যে আমিও সঙ্গী হতে পারবো!
০২ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:০২
302228
নেহায়েৎ লিখেছেন : নীল আসলে তোমরা সাথেতো এখন তেমন যোগাযোগই হচ্ছে না! অনলাইনে খুব একটা আসোনা কেন? চাইলে আগামীতে আসতে পার।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File