হাতে সময় থাকলে মাঝে মাঝে ভ্রমণ করা ভাল।
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:৫৭:০০ দুপুর
ধুমপান নিষেধ! কিন্তু চলে গাঁজার আসর!
অফিসের কাজে গিয়েছিলাম কুষ্টিয়া। কাজ শেষ করে ভাবলাম ছেউড়িয়ায় লালনের মাজারটা একটু দর্শন করে যাই। অন্য কোন উদ্দেশ্য নয় শুধুমাত্র কৌতুহল।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। ফজরের সালাত আদায় করে, গোসল নাস্তা সেরে রেডি হয়ে বসে আছি। অফিসের গাড়ী এল নয়টার দিকে। অফিস মাইক্রো নিয়ে আরেক ম্যনেজার অপূর্ব দেবনাথ কে নিয়ে বেইলিরোড হতে তুলে নিয়ে, গাবতলী হয়ে সোজা পাটুরিয়া ঘাট।
পাটুরিয়া ঘাট।
আল্লাহর রহমতে কোন সিরিয়াল নাই।ডাইরেক্ট ফেরীতে উঠে গেলাম। নদী পার হয়ে রাজবাড়ী, সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে পূণরায় যাত্রা এবার কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে অফিসিয়াল কিছু কাজ সেরে।চৌরহাস মোড় হয়ে কুষ্টিয়া শহরে।
সেদিন হাতে কিছু সময় থাকায় চান্সে কুষ্টিয়ার সুগার মিলটা একটু দেখে নিলাম।
কুষ্টিয়ার সুগার মিল।
এরপর শহরে প্রবেশ করে একটা হোটেল রুম উঠে ফ্রেশ হয়ে ।বিকেল বেলা শহরটা একটু ঘুরে-ফিরে দেখলাম।
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ।
পরদিন জুম্মাবার। আমাদের কাজ ছিল পুরো শহরটা দেখে তার একটা ধারণা নিয়ে অফিসের জন্য একটা বাড়ী ঠিক করা।সকালে নাস্তা সেরে কয়েকটি বাড়ী দেখে সেই কাজ আমরা সেরে ফেললাম সকাল দশটার মধ্যেই। তারপর গেলাম ছেউড়িয়া লালনের আখড়া দেখার জন্য।
লালনের মাজারে প্রবেশ পথ।
রাস্তার দুইপাশে বিশাল জায়গা নিয়ে লালনের আখড়া। একপাশে মাজার, অন্যপাশে মেলার জায়গা, আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছে গাঁজার আসর। বিশেষ করে ছোট নদীটার পাশে স্কুলের ছাত্ররা দেখলাম ভক্তদের সাথে বসে আয়েশ করে গাঁজা টানছে! আমরা ছবি তুলে গেলে দুইজন তেড়ে এলেন! গাঁজা টানার ছবি তোলা যাবে না!
এখানে অল্প বয়সী ছাত্ররা খুব সুন্দর করে নিপূন হাতে গাঁজার কল্কী সাজাতে পারে!
এপারে গাছকে কেন্দ্র করে গাঁজার আড্ডা আর ওপারে মাজারকে কেন্দ্র করে শিরকের আড্ডা।একটি রাস্তা যদিও উভয়কে বিভক্ত করেছে, কিন্তু উভয়ের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান!
লালনের মাজারে যারা আসেন বিশেষ করে সাধারণ দর্শনার্থী ছাড়া সবাই এদিকে আসেন বেশি কারণ এই জিনিসটা এই পাশে বেশি পাওয়া যায়। আর এখানে কল্কি টানা মামূলী ব্যাপার!
লালন ভক্ত।
হতে পারে এদের ধারণা কল্কি না টানলে লালন ভক্ত হওয়া যায় না। যাই হোক এ পাশটা দেখা শেষ করে আমরা গেলাম মূল মাজারে রাস্তার বিপরীত পাশে।
লালনের মূল মাজার।
এখানে এক আজব রাজ্য! আজব ব্যাপার! আজব সব মানুষ! আজব সব কান্ড! একজনকে দেখলাম সব সময় শুধু বাঁধানো কবরগুলো পরিস্কার করছে! মূল মাজারের ভিতরে লালনের পালক মা আর লালনের কবর পাশাপাশি।এখানে ছবি তোলা নিষেধ। আর বাহিরে কয়েকজন লালনভক্তের মাজার। তারাও ছিলেন বিখ্যাত বাউল।
বিখ্যাত বাউলদের মাজার!
মাজারের একপাশে একাডেমিক ভবন। তার পাশেই লালন যাদুঘর। লালনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র এখানে রাখা আছে।
একাডেমিক ভবন।
এর আশপাশেও কিছু ভক্ত-আশেকান জটলা করে বসে আছে। তারাও দেখতে এক একজন জ্ঞানী দার্শনিকের মতো।
তবে এরা এমন সাধক যে এখানে নারী-পুরুষ কোন ভেদাভেদ নাই।আসলে সাধকদের ব্যাপার-স্যাপার আলাদা। তারা থাকে ভাবের জগতে! কে নারী আর কে পুরুষ তা নিয়ে তাদের কোন অনুভূতি নাই!
মূল ব্যাপারটা এখনও বলা হয়নি। লালনের মাজারটা হল একটা শিরকে বিশাল আস্তানা।তাদের সাধনার মূলে রয়েছে শিরক।
লালন ভক্ত।
এখানে আরো আছে লালন লোক সাহিত্য কেন্দ্র। আছে লালনের পাথরচিত্র।
লোক সাহিত্য কেন্দ্র।
লালনের ছবি বানানো।
খুব সুন্দর করে সাজানো মাজরে প্রবেশ পথ।
অপরূপা সুন্দর কুষ্টিয়!
এসব দেখা শেষ করে সোজা রওয়ানা করলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে। কুষ্টিয়া এসে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেখে যাব না তা কি হয়! সেখানে আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড আছেন শিক্ষক হিসেবে। তার সাথে দেখা করে। আমাদের পরবতী গন্তব্য পাবনার উদ্দেশ্যে পথ ধরলাম!
বিষয়: বিবিধ
২৯২৪ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লালনের কথা শুনলে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে - লালন সাধক হতে গেলে নাকি প্রেমভাজা খেতে হয় ? এটা কি জিনিস ?
লালনের কথা শুনলে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে - লালন সাধক হতে গেলে নাকি প্রেমভাজা খেতে হয় ? এটা কি জিনিস ?
শির্কের থেকে ৫০০০ হাজার গজ পালাই ভাইইইইয়া পোস্টটি খুউউউউব সুন্দর ও শিক্ষনীয় হয়েছে
লালনের জীবন কেটেছে গাঁজা খেয়ে, ভক্তরা তা অনুসরণ না করলে পাপ হবে।
খুব খুব ভালো লেগেছে পোস্টটি। তবে আমাকে সাথে নিয়ে গেলে আরো খুশি হতাম।
এনাদের বর্তমানে অনেক কদর৷ এ গাঁজার চালানটাও হয়ত সরকারী মানে আমাদের পয়সা থেকেই হয়ে থাকে৷ তালে বুঝুন আমাও এর অংশীদার৷
জী মাঝে মাজে বেড়ানো ভাল তাতে শরীর ও মন ভাল থাকে ।
অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন