পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় আনন্দময় নৌ-ভ্রমণ
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:০৯:০৫ দুপুর
ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের আয়োজনে এবার আমরা গিয়েছিলাম পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় নৌ-ভ্রমণে। আমাদের ভ্রমণ শুরু হয় সকাল ৭.২০টায় সদরঘাট থেকে। যদিও আমি সকাল সাড়ে ছয়টার মধ্যে সদরঘাট পৌছে যাই।এখানে-সেখানে ঘুরাঘুরি করে টুকটাক কিছু কেনা-কাটা সারি। সকাল ঠিক সাতটা বিশ মিনিটে সোনারতরী লঞ্চটি আমাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে বুড়িগঙ্গার ঘনকালো দূর্গন্ধযুক্ত জল কেটে।
সোনারতরী লঞ্চ।
ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে আমরা এগিয়ে চলি, দুপাশে আবছা দেখা যায় নদীর তীরের ঘরবাড়ী দালানকোঠ। আমাদের সাথে গাইড হিসেবে ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের সম্মনিত প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজ ভাই। অমায়িক ভদ্রলোক তিনি।
লংস্লিভ টি-শার্ট পরিহিত ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।
কিছু সময় পর তিনি আমাদের দেখালেন বিশাল উঁচু সরু মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর ব্রীজ। নিচ থেকে উপরে দেখতেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে! কেমন যেন সত্যিই বিস্ময়কর!
মোক্তারপুর ব্রীজ।
সকালের নাস্তা দিতে দেরী করায় আমার খিদেয় পেট চো চো করছিল! এসময় সাথে আনা চকলেট আর ওয়েফার সাবার করছিলাম আমি।অফিসের কারণে আমার সকাল সাতটায় নাস্তা করার অভ্যাস।সুতরাং আমার পূর্ব প্রস্তুতি কিছু রাখতে হয়। এটা আমার বউয়ের পরামর্শ। সকাল নয়টার পর আমাদের নির্ধারিত কেবিনে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়।
সকালে নাস্তা।
নাস্তার পর হালকা কৌতুক পরিবেশন করেন এস এস মিডিয়া ভিশন এর সিইও শরিফুল ইসলাম ভাই।মারাত্বক এক মজার মানুষ শরিফুল ইসলাম ভাই। পুরো ভ্রমণ তিনি সবাইকে মাতিয়ে রাখেন মজার মজার কৌতুক আর গানে।নাস্তার পর সবাই যার যার মতো লঞ্চে ঘুরে দেখার সুযোগ পান। আর এই ফাঁকে যদি কিছুটা সময় নির্জনে নিরিবিলি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় মন্দ কাটে না সময়টা!
সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ভাবি মহান আল্লাহ তা'আলা কি সৃষ্টি করে রেখেছেন! কি অসীম সুন্দর তার সৃষ্টি। তার অপার মহীমা বুঝার সাধ্য কার!
বেলা ১১টার দিকে আমরা পৌছে যাই চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। সেখানে আগে থেকেই আমাদের জন্য ভাড়া করা দুইটা ট্রলার অপেক্ষা করছিল। আমরা দুই দলে ভাগ হয়ে দুই ট্রলারে উঠে পরি।
লঞ্চ থেকে ট্রলারে করে আমরা পূণরায় যাত্রা শুরু করি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থান পদ্মা-মেঘনার মোহনায় নলখাগড়ার দ্বীপ।
ঐ দূরে দেখা যায় আমাদের গন্তব্য নলখাগড়ার দ্বীপ!
দ্বীপে যাওয়ার পথে আমরা দেখি জেলেদের ইঁলিশ শিকার। জীবনে প্রথম একেবারে কাছ থেকে জ্যান্ত ইলিশ ধরা দেখলাম। আমার কাছে অসাধারণ লাগল সেই দৃশ্য।
সুবহান আল্লাহ! আমাদের দেশটা এত সুন্দর ক্যারে!!!
কিছু সময় ইলিশ শিকার দেখে আমরা আমদের দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। যে দ্বীপে আমাদের নামার কথা সেখানে ট্রলারের মাঝি আমাদের নামতে দিলেন না! বললেন এই দ্বীপে অনেক সাপ আছে। কয়েকদিন আগে একজন পুলিশকে সাপে কেটেছে! তাই এত সুন্দর দ্বীপে না নেমে আমরা আরো এগিয়ে গিয়ে অন্য একটি দ্বীপে নামলাম।
সেই নলখাগড়ার দ্বীপ।
এরপর বালুচরে যার যার মতো করে ইচ্ছা স্বাধীন ঘুরে বেড়াও, উপভোগ করো, দেখ আল্লাহর সৃষ্টি কতো সুন্দর! কতো অসাধারণ!
একলা দুকলা যেভাবে ছিলা সেভাবেই ঘুরে বেড়িয়েছে!
বেড়াও আর দেখ!
অন্যরকম এক অনুভূতি!
ফসলের ক্ষতি না করিয়া কালিজিরার ক্ষেতে।
সেই দ্বীপচরে আছে পাইকারী ইলিশের ঘাট।
যার যার ইচ্ছা হয়েছে মনের আনন্দে গোসল করেছে পদ্মার পানিতে!
পানিতে ঝাপাঝাপি, দাপাপির এক পর্যায়ে আমার খিদে পেয়ে যায়। কিন্তু দুপুরের খাবার সেই ২.৩০ সময়! এত সময় কি আর ধৈর্য্য ধারণ করে পেট! দ্বীপের ছোট অস্থায়ী টং দোকন থেকে বিস্কুট কিনে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলেন হাসান ভাই!
সময় বড় দ্রুত শেষ হয়ে যায়! সময় হয়ে গেল জোহরের সালাতের, আমরা পদ্মার পানিতে অজু করে জোহরের সালাত আদায় করে, ট্রলারে উঠে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ভয়ংকর ডাকাতিয়া নদীর মোহনা! যেখানে সাম্প্রতিক নাসরিন লঞ্চ সহ প্রায় পাঁচটি লঞ্চ এ পর্যন্ত ডুবে গেছে।
ডাকাতিয়ার মোহনা যেখানে নাসরিন লঞ্চ ডুবেছিল।
মোটামুটি আমাদের এবারের ভ্রমণ শেষ হল। এবার ক্ষুধা নিবারণ আর ফেরার পালা।
সোজা লঞ্চে পৌছে দুপুরের খাবার সেরে লঞ্চ ছেড়ে দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে বিকেল ৩.৪০মিনিটে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা সদরঘাট পৌছে গেলাম।বলে রাখি এটাই শেষ নয় ইনশা আল্লাহ।
সন্ধ্যার সদরঘাট।
ইনশা আল্লাহ আবার আছে এই পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায় সেই দ্বীপ চরে ক্যাম্পিং। তাবু টেনে রাত্রি যাপন।তাজা ইলিশের বারবিকিউ হবে। আল্লাহ চাইলে সাথে যেতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
২০২০ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আগামীতে ইনশাআল্লাহ।
আবার গেলে কিন্তু খবর দিবেন অবশ্যই। নাস্তায় আন্ডার সাথে কি খাচ্ছেন বুঝলাম না।ইলিশ নিশ্চয়ই আনছেন। পদ্মার ঢেউরে, মোর শুন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা...
https://www.facebook.com/groups/dhakatouristclub
একটা অনুরোধ করব৷ গত বারে ইসহাক খান সাহেবকে আমার অনুবাদের পেনড্রাইভ ও বেশ কিছু নগদ টাকা দিয়ে ছিলাম ওটা ছাপানোর জন্য৷ প্রথম দিকে যোগা যোগে কিছু আশ্বাস দিলেও এখন ই মেইলের জবাব দেননা৷ ফোনের রাং হয়,উনি কোন সময় ধরেন না৷ শো রুম হতে দ্বিতীয় নম্বরে ফোন দিয়েও সাড়া পাইনা৷ তাই যদি মেহেরবানী করে আপনি একটু উনার সাথে যোগাযোগ করে আমার হয়ে একটু অনুরোধ করতেন তবে উপকৃত হতাম৷ ধন্যবাদ৷
প্রথমেই নিজ অক্ষমতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
অনিচ্ছাকৃত নানান ঝামেলার কারণে আপনার বইটি প্রকাশে অনেক দেরী হচ্ছে।
আরো অনেক গুলো পান্ডুলিপিও থমকে আছে।
কখনো দেশে কখনো বিদেশে মিলিয়ে সময়টিও একটু জটিল যাচ্ছিলো যার কারণে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি। আপনার কাজটি সময় মতো করতে না পারার কারণে লজ্জায় আপনার মেইলের রিপ্লাই কি দিবো তা নিয়ে আন্তরিক কষ্টে আছি। কাজটি না করে ফেরত দিবো কি না তাও ভেবেছি কয়েকবার।
অবশ্য এখন অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। জ্যাম লেগে যাওয়া অনেক গুলো কাজের কিছু শেষ করতে পেরেছি। বাকি গুলোও পর্যায়ে আছে।
আগামী ২ মাসের মধ্যে আপনার কাজটি যদি করতে না পারি তাহলে আপনার টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।
অনাকাঙ্খিতভাবে আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত।
ভালো থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ
http://dhakatouristclub.com/2016/02/পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার-মো/
http://dhakatouristclub.com/2016/02/tent/
পরবর্তিতে সুযোগ হলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলাম, ইনশাআল্লাহ, . . . !!
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন