শিরকের ভয়াবহতা

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২২ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:১৪:৫১ সন্ধ্যা

শিরকের পরিণাম ভয়াবহ। এটি মানুষের চুড়ান্ত ধ্বংস ডেকে আনে। আল কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে এর ভয়াবহতার স্বরূপ তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্। শিরক্ সবচেয়ে বড় অপরাধ-বড় গুনাহ।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ

“আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলম।” (সূরা, লুকমান ৩১:১৩)

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন এক ব্যক্তি বলল, “হে আল্লাহর রাসুল সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি?” রাসুল(সঃ) বললেন, “আল্লাহর সাথে শরীক করা, অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)

শিরক্ এর অপরাধ/ গুনাহ আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না-

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এটি ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং কেহ আল্লাহর শরীক্ করলে সে এক মহাপাপ আরোপ করে।” (সুরা, নিসা-৪:৪৮)

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শরীক্ করা ক্ষমা করেন না। এটি ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং কেহ আল্লাহর শরীক্ করলে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।” (সুরা, নিসা-৪:১১৬)

জাবির বিন আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত, নবী (সঃ) বলেছেন- “বান্দার জন্য সর্বদাই ক্ষমা রয়েছে যতক্ষন পর্যন্ত হিযাব বা পর্দা পতিত না হয়।” বলা হলো, “হে আল্লাহর রাসুল! হিযাব বা পর্দা কি?” তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে শরীক্ করা।” (মুসনাদে আহমদ, ইবনু কাছীর ১ম খন্ড ৬৭৮পৃঃ)

শিরক্ করলে জান্নাত হারাম এবং জাহান্নাম অবধারিত- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ

“হে বনী ইসরাইল! তোমরা আমার রব এবং তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর। কেউ আল্লাহর শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম।” (সূরা, মায়েদা-৫:৭২)

রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক্ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে।” (মুসলিম)

শিরক্ করলে সব আমল বাতিল হয়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ

“তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই এই ওহী হয়েছে তুমি আল্লাহর সাথে শরীক্ করলে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” (সূরা যুমার, ৩৯:৬৫)

সূরা আনফালের ৮৩-৮৭ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়লা ১৮ জন নবীর নাম নিয়ে তাদের ব্যাপারে বলেছেন-

“এটি আল্লাহর হেদায়েত, নিজ বান্দাহদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি এটি দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। তারা যদি শিরক্ করতো তবে তাদের কৃতকর্ম নিস্ফল হত।” (সূরা, আন‘আম-৬:৮৮)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়লা আরও বলেনঃ “আমি তাদের আমলের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিণত করে দেব।” (সূরা, ফোরক্বান-২৫:২৩)

শিরককারী ধ্বংসে এবং বিপর্যয়ে পতিত হয়- আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “যে কেউ আল্লাহর শরীক করে সে যেন আকাশ থেকে পড়ল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।” (সূরা, হাজ্জ ২২:৩১)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা আরও বলেনঃ

“যারা আল্লাহর সাথে অপর ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে, সুতরাং শীঘ্রই ওরা (মুশরিকরা) এর পরিনতি জানতে পারবে।” (সূরা, হিজর ১৫ঃ৯৬)

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সঃ) বলেন- “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে বেঁচে থাকবে।” সাহাবাগণ বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল সেগুলো কি?” রাসুল (সঃ) বলেলেন, ‘‘আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং যাদু———-।” (বুখারী ও মুসলিম)

শিরককারী মুশরিক অপবিত্র-তার জন্য দোয়া করা যাবে না, এরা সৃষ্টির অধম-

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ

“নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র।” (সূরা, তাওবাহ-৯:২৮)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ

“আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মু‘মিনদের সংগত নয়, এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।” (সূরা, তাওবাহ ৯:১১৩)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা আরও বলেনঃ

“আহলে কিতাব ও মুশরিক কাফেররা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।” (সূরা, বাইয়্যেনাহ ৯৮:৬)

শিরক্ করলে কাফের-মুশরিকে পরিণত হয়ে যায়-

ঈমান আনার পরেও কেউ যদি আল্লাহর সাথে শিরক্ করে তবে সে কাফের এবং মুশরিক হয়ে যায়। ইসলামী শরী‘য়া অনুযায়ী তাকে ‘মুর্তাদ’ বলা হয়। তার হুদুদ (শাস্তি) মৃত্যুদন্ড। রাসুল (সঃ) বললেন- “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক ও সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক।’’ অত:পর শিরকের কথা বললেন। অত:পর বললেন- যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনকে পরিবর্তন করে(অর্থাৎ ইসলামকে ত্যাগ করে) তাকে হত্যা কর।” (বুখারী, আহমাদ, কবীরা গুনাহ-বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার পৃঃ৭)

আল্লাহ সুবতানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ

“যদি তোমরা তাদের (মুশরিকদের) কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হবে।” (সূরা, আন‘আম ৬ঃ১২১)

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবতানাহু ওয়াতা‘য়ালা মুসলিমদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন যদি তারা মুশরিকদের আক্বীদা-বিশ্বাস, কাজ-কর্মে আনুগত্য করে তাহলে তারা মুশরিক হয়ে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

337572
২২ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিরক এর মধ্যেই এখন ডুবে যাচ্ছি আমরা।
আল্লাহর ভয় থেকে পুলিশের ভয় বেশি।
২৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৪
279346
নেহায়েৎ লিখেছেন : আল্লাহর কাছে সর্বদা শিরক পানাহ চাইতে হবে।আল্লাহ আমাদের এই ভয়াবহ শিরক হতে হেফাজত করুন।
337580
২২ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : শির্ক বলতে আমরা সাধারণতঃ আল্লাহর সাথে ইবাদতে শরিক করাই বুঝি অথচ আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী না স্বীকার করাও শির্ক৷ ডলার দীনার টাকাকে আল্লাহর চাইতে প্রাধান্য দেওয়াও শির্ক৷ ধন্যবাদ৷ আরও বিস্তারিত লিখুন৷
২৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৫
279347
নেহায়েৎ লিখেছেন : জি ঠিক। জাঝাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
337634
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:৫৬
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : শির্ক হল আল্লাহকে অস্বীকার করা। একটি উদারহরন দিলে বুঝা যাবে,

শির্ক যুক্ত এবাদত সেভাবেই কবুল হবেনা, যেভাবে স্বামী আপন স্ত্রীর অনেক গুন, মর্যাদা বর্তমান থাকা সত্বেও, ব্যভীচার করার অপরাধে তাকে মুর্হতে ঘর থেকে বিতাড়ণ করে। বুঝার জন্য কথাটি,

মানুষ যেভাবে স্ত্রীর এই অসদাচারণ গ্রহন করেনা, অনেক গুন থাকা সত্বেও।

আল্লাহ শির্ক যুক্ত এবাদত গ্রহন করেনা, যদিও তিনি দৃশ্যত বড় ধররেন আবেদ।
২৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৬
279348
নেহায়েৎ লিখেছেন : পারফেক্ট উদাহরণ। জাঝাকাল্লাহু খাইরান ফিদদুনিয়া ওয়াল আখিরাহ। আল্লাহ আমাদের সব ধরণের শিরক-বিদাত-রিয়া হতে হেফাজত করুন।
337680
২৩ আগস্ট ২০১৫ রাত ০১:৫০
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। আল্লাহুআকবর। মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শির্ক হয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে....! কারন মাজার আর পীর ভক্তি!!

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, আমিন।
২৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৮
279349
নেহায়েৎ লিখেছেন : ওয়াআলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহহি ওয়া বারাকাতুহ। জাঝাকাল্লাহু খাইরাহন ফিদদুনিয়া ওয়াল আখিরাহ। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File