নেকড়ে বাঘ, মেষ শাবক আর ইয়াকুব মেননের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ৩০ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৩৮:০৯ দুপুর
ঝরণার ধারে পানি খাচ্ছিল এক নেকড়ে বাঘ। হঠাৎ কোথা থেকে এক মেষ শাবক ছুটে এসে সেই ঝরণার ভাটিতে গিয়ে পানি খাওয়া শুরু করে। নাদুস-নুদুস মেষ শাবককে দেখে নেকড়ের জিহ্বায় পানি আসে। সে বাচ্চাটাকে খাওয়ার ফন্দি বের করতে থাকে।
নেকড়েটা মেষ শাবককে বলে-
এই বেটা হারামজাদা আমার পানি ঘোলা করছিস কেন? দেখছিস না আমি পানি খাচ্ছি!
মেষ শাবক বলে- হুজুর আমি কিভাবে আপনার পানি ঘোলা করলাম?!? আমি তো আপনার ভাটিতে পানি খাচ্ছি! আর আপনি পানি খাচ্ছেন আমার উজানে!
নেকড়ে বলে- বেটা আমি কি এবারের কথা বলছি?! তুই গত বছর যে আমার পানি ঘোলা করেছিলি সেই কথা বলছি!
মেষ শাবক বলে- হুজুর গত বছরতো আমার জন্মই হয়নি! গত বছর কিভাবে আমি আপনার পানি ঘোলা করলাম?!?!
নেকড়ে বলে- ও তাহলে তোর বাপ মনে হয় ঘোলা করেছিল। এই অপরাধে আমি এখন তোকে খাব!!!
ইয়াকুব মেনন একজন মেধাবী দক্ষ চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। সে মুম্বাই বোমা হামলায় অভিযুক্ত আসামী টাইগার মেননের ভাই। অতি সাধারণ জীবন যাপনকারী একজন মানুষ ইয়াকুব মেনন। কিন্তু মুম্বাই হামলায় তার ভাই টাইগার মেনন জড়িত থাকায় ইন্ডিয়ান আদালত সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আজ সকাল ৭টা ১ মিনিটে টাইগার মেননের পরিবর্তে তার ভাই ইয়াকুব মেননের ফাঁসি কার্যকর করে।আজ ছিল ইয়াকুব মেননের জন্মদিন!
ঠিক যেন এটা ঐ নেকড়ে বাঘ ও মেষ শাবকের গল্পের মতোই!!!
ইয়াকুব মেননের এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ করে টুইট করেছিলেন বলিউড অভিনেতা সালমান খান।সালমান আদালাতের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, টাইগারের পরিবর্তে কেন তার ভাইকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হল। এটা কোন ধরণের বিচার। একজনের অপরাধে অন্যজন কেন সাজা ভোগ করবে, এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন সালমান। সালমান তার টুইটারে লিখেন, টাইগারকে ধরে শাস্তি দাও, ইয়াকুবকে নয়। অন্য একটি টুইটে সালমান বলেন, একজন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলা মানে মানবতাকেই কুলুষিত করা।আর যায় কোথায়!ইন্ডিয়ান উগ্রপন্থীরা চেঁচামেচি শুরু করে সালমান খানের বিরুদ্ধে।তার বিরুদ্ধে শুরু হয় বিক্ষোভ!বেচারা সালমান খান বাধ্য হয়ে পড়ে টুইট ডিলিট করে দেন।
ইন্ডিয়ার কি ন্যায় বিচার দেখুন--
স্বামী অসীমানন্দ জঙ্গি সংগঠন আরএসএস এর একজন সক্রিয় সদস্য।২০০৭ সালের ১৮ মে জুমার নামাজের সময় হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণে অসীমানন্দ জড়িত।হায়দ্রাবাদ বিস্ফোরণে ৯ জন মুসল্লী নিহত হয়েছিল।একই বছর ১১ অক্টোবর আজমীর শরীফে মইনুদ্দিন চিশতীর মাজারে বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়।এই ঘটনায়ও অসীমানন্দ জড়িত ছিল।২৯ শে সেপ্টেম্বর ২০০৮ এবং ৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ মালেগাঁও মসজিদে সিরিজ বোমা হামলায় মারা গিয়েছিল প্রায় ৫০ জন মুসল্লি।এই ঘটনারও মূল নায়ক অসীমানন্দ। স্বামী অসীমানন্দ ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের বোমা হামলা করে প্রায় ৬০ জনকে হত্যা করে।
এতগুলি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় স্বামী অসীমানন্দ হামলার দায় স্বীকার করলেও সে এখনও বহাত তবিয়তেই আছে আর নিরপরাধ ইয়াকুব মেননকে বিনা কারণে ঝুলতে হল ফাঁসির দড়িতে!কিন্তু কেন!ইয়াকুব মেননের দুই ধরণের অন্যায় হতে পারে।প্রথমত সে টাইগার মেননের ভাই আর স্বামী অসীমানন্দ উগ্রপন্থী আরএসএস এর একজন সক্রিয় সদস্য।দ্বিতীয়ত ইয়াকুব মেনন মুসলিম আর স্বামী অসীমানন্দ হিন্দু ধর্মের অনুসারী।উল্লেখ্য, এর আগেও কাশ্মীরের প্রখ্যাত আলেম,ও ইসলামী ব্যক্তিত্ত আফজাল গুরুকে অভিযোগ প্রমান করতে না পেরেও এক প্রহসনের বিচার মঞ্চস্থ করে ফাঁসি দেয় ইন্ডিয়ান সরকার।একই কায়দায় মকবুল বাটকেও তারা হত্যা করে।
(তথ্য সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
২৪৭৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন