দুই বিঘা জমি

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০২:৫৯:০৮ দুপুর

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে ।

বাবু বলিলেন , ‘ বুঝেছ উপেন , এ জমি লইব কিনে । '

কহিলাম আমি , ‘ তুমি ভূস্বামী , ভূমির অন্ত নাই ।

চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো - জোর মরিবার মতো ঠাঁই ।

শুনি রাজা কহে , ‘ বাপু , জানো তো হে , করেছি বাগানখানা,

পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা —

ওটা দিতে হবে । ' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি

সজল চক্ষে , ‘ করুণ রক্ষে গরিবের ভিটেখানি ।

সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া ,

দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া !

আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে ,

কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে , ‘ আচ্ছা , সে দেখা যাবে ।

পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে —

করিল ডিক্রি , সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে ।

এ জগতে , হায় , সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি —

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি ।

মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে ,

তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে ।

সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য

কত হেরিলাম মনোহর ধাম , কত মনোরম দৃশ্য !

ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি

তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি ।

হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো - ষোলো —

একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হল ।

নমোনমো নম সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি !

গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর , জীবন জুড়ালে তুমি ।

অবারিত মাঠ , গগনললাট চুমে তব পদধূলি ,

ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি ।

পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ ,

স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল — নিশীথশীতল স্নেহ ।

বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে —

মা বলিতে প্রাণ করে আনচান , চোখে আসে জল ভরে ।

দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে —

কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রথতলা করি বামে ,

রাখি হাটখোলা , নন্দীর গোলা , মন্দির করি পাছে

তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে ।

ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে , শতধিক্‌ তোরে , নিলাজ কুলটা ভূমি !

যখনি যাহার তখনি তাহার , এই কি জননী তুমি !

সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা

আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফল ফুল শাক পাতা !

আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ —

পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা , পুষ্পে খচিত কেশ !

আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন —

তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী , হাসিয়া কাটাস দিন !

ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন

কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন !

কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি , ক্ষুধাহরা সুধারাশি !

যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী , হলে দাসী ।

বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি —

প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে , সেই আমগাছ একি !

বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা ,

একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক - কালের কথা ।

সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম ,

অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম ।

সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর , পাঠশালা - পলায়ন —

ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন !

সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে ,

দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে ।

ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা ,

স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা ।

হেনকালে হায় যমদূত - প্রায় কোথা হতে এল মালী ,

ঝুঁটি - বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি ।

কহিলাম তবে , ‘ আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব —

দুটি ফল তার করি অধিকার , এত তারি কলরব ! '

চিনিল না মোরে , নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ —

বাবু ছিপ হাতে পারিষদ - সাথে ধরিতেছিলেন মাছ ।

শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন , ‘ মারিয়া করিব খুন ! '

বাবু যত বলে পারিষদ - দলে বলে তার শতগুণ ।

আমি কহিলাম , ‘ শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয় ! '

বাবু কহে হেসে , ‘ বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয় । '

আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি , এই ছিল মোর ঘটে —

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ , আমি আজ চোর বটে !

উপরেরটা রবীন্দ্রনাথের - আর এটা হলো বর্তমানের বাস্তব কবিতা---

http://www.monitor-bd.net/newsdetail/detail/200/143120শ

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

332445
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:১২
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার একটি। অনেক ধন্যবাদ
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:২৯
274741
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমারও খুব প্রিয় এটা ভাই। তবে বর্তমানেরটা কি পড়েছেন?
332458
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৬
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
অনেক দিন পর পুরো কবিতাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে......।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
274887
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ঐ কবিতার সাথে বর্তমানের এই কবিতাটাও পড়তে দিয়েছিলাম।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
274888
নেহায়েৎ লিখেছেন : http://www.monitor-bd.net/newsdetail/detail/200/143120শ
332462
২৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:০১
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ভাই,যত কিছুই করি মরতে হবে নিশ্চিত!

মরনের সময় সাদা মালাইকা আসবে নাকি কালো মালাইকা? কি করলে সাদা মালাইকা আসবে? সাদা মালাইকা আসলে কি লাভ? কালো আসলে কি ক্ষতি?

একটু বিস্তারিত জানাবেন কি?
332466
২৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:২৫
উদাস পথিক লিখেছেন : সেলাম। পুরো কবিতাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল। এখান থেকে কপি করে আমার ফেসবুকে সেঁটে দিলুম। গোস্তাকী মাফ করিবেক।
332468
২৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : সুন্দর একটু কাব্য! ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
332472
২৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৬
ফখরুল লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ, এই কবিতাটি পড়লেই চোখে পানি এসে জায়
332494
২৯ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই আকুতি তো ভাই এখন সবার!!
332526
২৯ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৭
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগলো।
332564
২৯ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:৩৯
মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন : ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় এক হিন্দু ইংলিশ টিচারে এই কবিতাটি আবৃতি করে শুনিয়েছে।

১০
332587
৩০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:০৮
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File