সেই সময় অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও ছিল কত রকম ঈদ!!!

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৭ জুলাই, ২০১৫, ১০:৪২:৪৯ সকাল



আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম। তখন প্রতি বছর ঈদে নতুন কাপড় কেনা হতো না। আগের বছরের কাপড় ধুয়ে ছুটকেস এ তুলে রাখতাম। পরের বছর বের করে ঈদ করতাম। তখন গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের পাড়ায় ছিল একটা কয়লার আয়রন। জ্যঠাদের আয়রন। সেটা বছরে দু'বার বের করা হতো। শুধুমাত্র দুই ঈদে। ঈদের দুই'একদিন আগে মাচার উপর হতে আয়রন বের করে দেখা যেত সেটাতে মরিচা পড়ে মোটা আছে। সেই মরিচা ঘসে তোলার দায়িত্ব ছিল আমাদের মতো ছোটদের!

-

কয়লার সেই আয়রন খেলনা ঠেলা গাড়ির মতো করে সারা উঠানময় ঠেলে নিয়ে মাটিতে ঘসে ঘসে তলা ঝকঝকে করতাম। সেটা আমাদের জন্য এক ঈদ!!!

-

ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে পাড়ার বিভিন্ন বাড়ি চূলা হতে কয়লা সংগ্রহ করা হতো। সেই কয়লা সংগ্রহ করাটাও ছিল একটা অনাবিল ঈদ!!!

-

ঈদের আগের দিন সকাল বেলা আমার জেঠাত ভাই দুদু আয়রন পরীক্ষা করে দেখত ঠিক মতো পরিস্কার হয়েছে কি-না। তারপর শুরু হতো আয়রনের ফাইনাল প্রস্তুতি পর্ব। সেটাও ছিল ছিল এক বিশেষ ঈদ!!!

-

দুপুরের পর হতে জ্যাঠাদের উঠানে জলচৌকি পেতে আয়রনের কাপড় আসর বসত। পাড়ার ছোটরা বিভিন্ন বাড়ির কাপড় নিয়ে এসে জলচৌকির উপর জমা করতাম। সেটা ছিল একটা অসাধারণ ঈদ!!!

-

দুদুভাই পিড়ি নিয়ে বসে আয়রনের ঢাকনা খুলে তাতে কয়লা ভরে পাটখড়ি দিয়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করত। এবং ঢাকনা আটকে দিয়ে পাশ থেকে হাত পাখার বাতাস দিত। আমরা পাশে বসে উপভোগ করতাম অন্যরকম এক ঈদ!!!

-

কাপড় আয়রন করার পর কাপড় হতে এক ধরণের ঘ্রাণ বের হতো। বাপড় নিয়ে সেই ঘ্রাণ নিতে নিতে যখন বাড়ি ফিরতাম সেটা ছিল এক আবেশ জড়ানো ঈদ!!!

-

কোন কৃত্রিমতা ছিল সেই আনন্দের মাঝে। পাড়ায় কখনও কখনও বাড়ির সীমানা নিয়ে, জমি নিয়ে প্রতিবেশিদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ হতো। কিন্তু ঈদের সময় সবাই যেন সব ভূলে যেত! সেই অনুভূতিটাও ছিল একটা ব্যাপক ঈদ!!!

-

কিন্তু এখন ডিজিটাল সময় মানুষের মাঝে যেন হিংসা হানাহানি বেশি! গ্রামের এখন আগের সেই ঈদ আর নাই!!!

বিষয়: বিবিধ

১৪০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330358
১৭ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
হতভাগা লিখেছেন : এখন সব কিছুতে শহরায়নের ছোঁয়া লেগেছে ।

মানুষের মনে আগের মত সেই আন্তরিকতা ও উদারতা নেই । মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে এবং তাদের আচরনও হয়ে গেছে কৃত্রিম ।

আগে গ্রাম বা মফস্বলে পাড়া প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়ানো হত , কত বাসায় খেয়েছি , কি কি রেঁধেছে এবং খেতে দিয়েছে সেটার একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা ছিল । ঈদের নামাজ পড়েই বন্ধু বান্ধবসহ দল বেঁধে বিভিন্ন বাসায় বাসায় দাওয়াত খাওয়া এবং দল ধেঁধে নদীর ধারে বেড়াতে যাওয়া - খুব মনে পড়ে ।

শহরের বদ্ধ পরিবেশে এসব এখন চিন্তাও করা যায় না ।
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৩২
273146
নেহায়েৎ লিখেছেন : ডিজিটাল সময় আমাদের সব বন্ধন করে নিচ্ছে। মানুষ হয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক।
330374
১৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:০৩
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : সত্যিই ছোটবেলার সেই ঈদ উপভোগ করার মতই ছিল। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৩২
273147
নেহায়েৎ লিখেছেন : ঈদ আসলেই মনে পড়ে ভুলতে পারি না।
330401
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:১৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
ঈদ এর সেই আনন্দ কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাই করা উচিত আমাদের।
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৩২
273148
নেহায়েৎ লিখেছেন : কিভাবে আনবেন ভাই? ডিজিটাল সময় আমাদের সব বন্ধন করে নিচ্ছে। মানুষ হয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File