যাকাত
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৬ জুলাই, ২০১৫, ১০:১৫:০১ সকাল
যাকাত ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমাতিক্রমকারী সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) অংশ বছর শেষে বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয। উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার উপর 'যাকাত' নামক ফরয বর্তায়; অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরয। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।
যাকাতের শর্তসমূহঃ-
স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন:
১. সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা-
সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা। যেসকল সম্পদের মালিকানা সুসস্পষ্ট নয়, সেসকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন: সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়ক্ফকৃত সম্পদের উপরেও যাকাত ধার্য হবে না। তবে ওয়াক্ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।
২. সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া-
যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে, অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন: গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল বর্ধনশীল।[১] অর্থাৎ যেসকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সেসবের উপর যাকাত ধার্য হবে না, যেমন: ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি।
৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ-
যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়। পশুর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বিভিন্ন (বিস্তারিত: 'যাকাত প্রদানের নিয়ম' দ্রষ্টব্য)।
৪. মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা-
সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এপ্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে:
লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদের [স.] নিকট) জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।[২]
মুহাম্মদের [স.] সহচর ইবনে আব্বাস [রা.] বলেছেন-
অতিরিক্ত বলতে পরিবারের ব্যয় বহনের পর যা অতিরিক্ত বা অবশিষ্ট থাকে তাকে বুঝায়।[৩] ”
জনাব ইউসুফ আল কারযাভী'র মতে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, ও পিতামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ভরণ-পোষণও মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।[৪]
৫. ঋণমুক্ততা-
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতটি হলো: যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেত্রে যেবছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেবছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর উপর যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।
৬. সম্পদ এক বছর আয়ত্বাধীন থাকা-
নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়ত্বাধীন থাকাই যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত।[৫] তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বর্তপত্রে (Balance Sheet) বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
বিশেষ ক্ষেত্রে যাকাতঃ-
অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগলের যাকাত: সম্পদের মালিক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা পাগল হলে, তার যাকাত তার আইনানুগ অভিভাবককে আদায় করতে হবে।
যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তির যাকাত:- কোনো সম্পদে যৌথ মালিকানা থাকলে সম্পদের প্রত্যেক অংশীদার তাঁর স্ব স্ব অংশের উপরে যাকাত দিবেন, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় বা তার অতিরিক্ত হয়। অর্থাৎ সম্পদের স্বীয় অংশের মূল্য অন্যান্য সম্পদের সাথে যোগ করে হিসাব করে যদি দেখা যায় তা নিসাব পরিমাণ হয়েছে বা অতিক্রম করেছে, তবে যাকাত দিতে হবে।
নির্ধারিত যাকাত:- যাকাত নির্ধারিত হওয়াসত্ত্বেয় পরিশোধের আগেই সম্পদের মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারগণ অথবা তার তত্ত্বাবধায়ক তার সম্পত্তি থেকে প্রথমে যাকাত বাবদ পাওনা ও কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করবেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হবে।
তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ন্যস্ত সম্পদের যাকাত: মালিকের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত আইনানুগ তত্ত্বাবধায়কের কাছে সম্পত্তি ন্যস্ত থাকলে মালিকের পক্ষে উক্ত তত্ত্বাবধায়ক সে যাকাত পরিশোধ করবেন।
বিদেশস্থ সম্পদের যাকাত:- যাকাত ওয়াজিব হবার জন্য সম্পত্তি নিজ দেশে থাকা শর্ত নয়। বরং সম্পত্তি অন্য দেশে থাকলেও তার উপর যাকাত দিতে হবে। তবে উক্ত দেশ ইসলামী রাষ্ট্র হলে এবং দেশের সরকার যাবতীয় সম্পদের উপর যাকাত দিলে তা আর আলাদা করে দিতে হবে না।
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহঃ-
যাকাত বন্টনের কিছু নির্দিষ্ট খাত আছে। এই খাতগুলো সরাসরি ক্বোরআন দ্বারা নির্দ্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ'র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বন্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।[৬][ক]
মুসলমান ফকির (যার কিছুই নেই)
মুসলমান মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)
(অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য
ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)
ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী
(স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি
মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)
হাদিসমতে, এগুলো ফরয সাদকাহের খাত, এবং নফল সাদকাহ এই আট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরো প্রশস্ত।[৭] উল্লেখিত খাতসমূহে যাকাত বন্টন করতে সঠিক পন্থায়। অনেকে যাকাতের অর্থে শাড়ি ক্রয় করে তা বন্টন করে থাকেন। এভাবেও যাকাত আদায় হয়ে গেলেও এভাবে আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই যাকাত বন্টনের উত্তম পন্থা হলো: যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদের একজনকেই বা একটি পরিবারকেই যাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া।
যাকাত গণনার নিয়মঃ-
ধর্মীয়ভাবে প্রতিজন মুসলমানকে তাঁর যাবতীয় আয়-ব্যয়-সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ভিত্তি একটি মৌলিক ধারণা। অর্থাৎ বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন থেকে পরবর্তি বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যাবতীয় আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখতে হয়। এই 'দিন' বাছাই করার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, কোন মাসে দিন নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত কেউ কেউ হিসাব সংরক্ষণের সুবিধার্থে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের কোনো দিন কিংবা অধিক পূণ্যের আশায় রমজান মাসের কোনো দিন বাছাই করে থাকেন। এই হিসাব সংরক্ষণ হতে হবে যথেষ্ট সূক্ষ্মতার সাথে। সংরক্ষিত হিসাবের প্রেক্ষিতে ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে তবেই উক্ত ব্যক্তির উপর যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক (ফরয) হয়, অন্যথায় যাকাত দিতে হয় না।
যাকাত প্রদানের নিয়মঃ-
যাকাতের 'নিসাব পরিমাণ' বিভিন্ন দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। নিচে এসংক্রান্ত বিস্তারিত দেয়া হলো[৮]:
নগদ অর্থ, ব্যাংক জমা এবং ব্যবসায়িক পণ্য ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%
স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা সোনা-রূপার অলংকার সোনা ৭.৫ তোলা এবং রূপা ৫২.৫ তোলা সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%
কৃষিজাত দ্রব্য আবু হানিফার মতে, যেকোনো পরিমাণ;
অন্যান্যদের মতে, ৫ ওয়াসাক বা ২৬ মণ ১০ সের;
ইসলামিক ইকোলজিক্যাল রিসার্চ ব্যুরো'র মতে, ১৫৬৮ কেজি --বৃষ্টিতে উৎপাদিত দ্রব্যের ১০%।
খনিজ দ্রব্য যেকোনো পরিমাণ দ্রব্যের ২০%
ভেড়া-ছাগলঃ-
৪০-১২০টি- ১টি ভেড়া বা ছাগল
১২১-২০০টি- ২টি ভেড়া বা ছাগল
২০১-৪০০টি- ৩টি ভেড়া বা ছাগল
৪০০-৪৯৯টি- ৪টি ভেড়া বা ছাগল
৫০০ বা ততোধিক- ৫টি ভেড়া বা প্রতি শ'তে ১টি
গরু-মহিষঃ-
৩০-৩৯টি- ১টি এক বছরের বাছুর
৪০-৪৯টি- ১টি দুই বছরের বাছুর
৫০-৫৯টি- ২টি দুই বছরের বাছুর
৬০-৬৯টি- ১টি তিন বছরের এবং ১টি দুই বছরের বাছুর
৭০-৭৯টি- ২টি তিন বছরের বাছুর
৮০-৮৯টি- ৩টি দুই বছরের বাছুর
৯০-৯৯টি- ১টি তিন বছরের এবং ২টি দুই বছরের বাছুর
১০০-১১৯টি- দুই বছরের বাছুর -এভাবে উর্ধ্বে হিসাব হবে
উটঃ-
৫-৯টি- ১টি তিন বছরের খাশি অথবা ১টি এক বছরের বকরি
১০-১৪টি- ২টি এক বছরের বকরি
১৫-১৯টি- ৩টি এক বছরের বকরি
২০-২৪টি- ৪টি এক বছরের বকরি
২৫-৩৫টি- ৪টি এক বছরের মাদী উট
৩৬-৪৫টি- ২টি তিন বছরের মাদী উট
৪৬-৬০টি- ২টি চার বছরের মাদী উট
৬১-৭৫টি- ১টি পাঁচ বছরের মাদী উট
৭৯-৯০টি- ২টি তিন বছরের মাদী উট
৯১-১২০টি- ২টি চার বছরের মাদী উট
১২১-১২৯টি- ২টি চার বছরের মাদী উট এবং ১টি ছাগল
১৩০-১৩৪টি- ২টি চার বছরের মাদী উট এবং ২টি ছাগল
১৩৫-১৩৯টি- ২টি চার বছরের মাদী উট এবং ৩টি ছাগল
১৪০-১৪৪টি- ২টি চার বছরের মাদী উট এবং ৪টি ছাগল
১৪৫-১৪৯টি- ২টি চার বছরের মাদী উট এবং ১টি দুই বছরের উট
১৫০ এবং তদুর্ধ্ব- ৩টি ৪ বছরের মাদী উট এবং প্রতি ৫টিতে ১টি ছাগল।
ঘোড়াঃ-এক্ষেত্রে তিনটি মত পাওয়া যায়- যাকাত নেই
কিংবা সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%
কিংবা প্রতিটি ঘোড়ার জন্য ১ দিনার পরিমাণ অর্থ।
শেয়ার, ব্যাংক নোট, স্টকঃ- ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%, তবে কোম্পানী যাকাত দিলে ব্যক্তিগতভাবে যাকাত দিতে হবে না।
অংশীদারী কারবার ও মুদারাবাঃ- ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান প্রথমে সম্পত্তির যাকাত দিতে হবে, মূলধনের নয়; এরপর লাভ বন্টিত হবে। যাকাত ব্যক্তিগতভাবে লাভের উপর হবে, একভাগ (২.৫%) দিবে মূলধন সরবরাহকারী এবং একভাগ (২.৫%) দিবে শ্রমদানকারী।
যাকাতমুক্ত সম্পদঃ-
যাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের বাণীবাহক মুহাম্মদ [স.] বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাঁচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই।[৯] যদিও হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজে নিজে উৎপন্ন দ্রব্যাদি, যথা বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশব্যতীত অন্য সমস্ত শস্যাদি, তরিতরকারি ও ফলসমূহের যাকাত দিতে হয়। হাদিসের আলোকে যেসকল সম্পদসমূহকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো: জমি ও বাড়িঘর; মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউজ বা গুদাম ইত্যাদি; দোকান; এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু; ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক; বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী; গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প; অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি; গৃহপালিত সকলপ্রকার মুরগী ও পাখি; কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী; চলাচলের যন্তু ও গাড়ি; যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম; ক্ষণস্থায়ী বা পঁচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য; বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ; যাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সেবছরই ব্যয়িত সম্পদ; দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত; সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ।[৩] যে ঋণ, ফেরত পাবার আশা নেই (স্থায়ী কুঋণ), তার উপর যাকাত ধার্য হবে না।
পাদটীকাঃ- ১. "যাকাত হল কেবল ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্তদের জন্যে, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে- এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।" —সূরা ত্বাওবাহ, আয়াত: ৬০[৭]
তথ্যসূত্রঃ-
১. "ইসলামী অর্থনীতি: তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ড. এম. এ. মান্নান; ইসলামিক ইকনোমিক্স রিসার্চ ব্যুরো, ঢাকা; ১৯৮৩ খ্রি., পৃষ্ঠা ২১৩২।
২."সূরা বাক্বারা" (২ নং সূরা), আয়াত ২১৯।
৩. "যাকাত কী ও কেন", অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফ হুসাইন; ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ।
৪. "ইসলামে যাকাতের বিধান", ড. ইউসুফ আল-কারযাভী, অনুবাদক: মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম; আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা; ১৯৯৫ খ্রি., পৃষ্ঠা ৯০।
৫. "যাকাত দর্পণ", মাওলানা মুনতাছির আহমদ রহমানী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা; ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ; পৃষ্ঠা ১৯।
৬. আয়াত: ৬০, সূরা: ৯ (আল-কুরআন)।
৭.ক্বোরআন শরীফ: তাফসীরে মা'আরেফুল ক্বোরআন, মূল অনুবাদ: মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী' (রহ.); বঙ্গানুবাদ: মাওলানা মহিউদ্দীন খান। সৌদি বাদশাহ ফাহদ-এর ক্বোরআন মুদ্রণ প্রকল্প থেকে প্রকাশিত। প্রকাশ ১৪১৩ হিজরী। পৃষ্ঠা নম্বর ৫৭৪; ব্যাখ্যাঃ ৫৭৬-৫৭৯।
৮."যাকাত:ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনের অন্যতম উপাদান", মো: আবূ সিনা, খোন্দকার জিয়াউল হক; দি ইউনিভার্সিটি স্টাডিজ, কুষ্টিয়া, ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ সংস্করণ; খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৩৪-১৩৫।
৯.বুখারি শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ, কিতাব আল-যাকাত
(উইকিপিডিয়া হতে)
বিষয়: বিবিধ
১০৫১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অমুসলিম দের নাকি নও মুসলিমদের হবে। আর শুধু জিহাদে রত ব্যাক্তি নাকি জিহাদ ও কিতাল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খরচ করা যাবে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন