মনগড়া মাসিক নামায ও তার খেয়ালী সওয়াব
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৫ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৫২:৫৪ সকাল
মহ্ররম মাসের খেয়ালী নামায :
মহ্রম মাসের প্রথম তারীখের রাতে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১১ বার।
এই রাতে আরো ৬ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১০ বার। এতে বেহেশ্তে ২০০০ মহল লাভ হবে; প্রত্যেক মহলে ইয়াকূতের ১০০০ দরজা এবং প্রত্যেক দরজায় সবুজ রঙের তখতার উপর হুর বসে থাকবে। ৬০০০ বালা দূর হবে এবং ৬০০০ সওয়াব লাভ হবে!
এই তারীখে দিনে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৩ বার। এতে দু জন ফিরিশ্তা বডিগাডG পাওয়া যায় এবং সারা বছর শয়তান থেকে নিরাপত্তা লাভ।
আশুরার রাতে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৩ বার। এতে কিয়ামত পর্যন্ত রেশন থাকবে।
এই রাতে আরো ৪ রাকআত। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫০ বার। এতে ৫০ বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়!
আশুরার দিনে ৪ রাকআত নামায; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫০ বার। এতে ৫০ বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়! বেহেশ্তে ১০০০ নূরের মহল তৈরী হয়। এই দিনে রয়েছে আরো ৪ রাকআত খেয়ালী নামায।
অথবা যোহ্র ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসী ১০ বার, সূরা ইখলাস ১১ বার এবং নাস ও ফালাক্ব ৫ বার। নামায শেষে ইস্তিগফার ৭০ বার। এ নামাযও বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪০-৩৪১পৃ
এই মাসের ১ থেকে ১০ তারীখ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন যোহরের পর ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১৫ বার। এ নামায হযরতহাসান-হোসেনের রুহের উপর বখশে দিলে কিয়ামতে তাঁদের সুপারিশ (!) লাভ হবে।
সফর মাসের খেয়ালী নামায :
প্রথম তারীখের রাতে এশার পর ৪ রাকআত; প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরুন ১৫ বার। দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস ১৫ বার। তৃতীয় রাকআতে সূরা ফালাক্ব ১৫ বার এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা নাস ১৫ বার। এতে সমস্ত বালা থেকে রেহাই পাওয়া যায় এবং খুব বেশী সওয়াব লাভ হয়।
এই মাসের শেষ বুধবার বা আখেরী চাহার শোম্বার চাশতের সময় ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১১ বার।
এ মাসের ১ম স প্তা হের জুমআর রাতে এশার পরে ৪ রাকআত নফল এবং তার খেয়ালী সওয়াবের কথার উল্লেখ রয়েছে অনেক কিতাবে।
রবিউল আওয়াল মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের প্রথম হতে ১২ তারীখ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন ২০ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২১ বার। এই নামায নবী (সাঃ)-এর নামে বখশে দিলে তিনি নামাযীকে বেহেশ্তের সুসংবাদ দেবেন!
অনেকের মতে এ মাসে নিয়মিত দরুদ পড়লে ধনী হওয়া যায়।
রবিউস-সানী মাসের বিদআতী নামায :
এই মাসের ১, ১৫ ও ২৯ তারীখে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫ বার। এতে ১০০০ সওয়াব লাভ, ১০০০ পাপ মাফ এবং ৪টি হুর লাভ হবে।
অনেকের খেয়াল মতে এ মাসের ১৫ তারীখে মাগরেবের পর ৪ রাকআত নামায পড়লে উভয়কালে কামিয়াবী লাভ হয়। এ মাসের শেষ রাতে ৪ রাকআত নামায পড়লে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জুমাদাল আওয়াল মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের প্রথম তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১১ বার। এতে ৯০,০০০ বছরের নেকী লাভ হবে এবং ৯০,০০০ বছরের গুনাহ মোচন হয়ে যাবে!
কারো খেয়াল মতে এ মাসের প্রথম তারীখে ২০ রাকআত নামায পড়তে হয়।
জুমাদাস সানী মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের প্রথম তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১৩ বার। এতে ১ লাখ নেকী লাভ হবে এবং ১ লাখ গুনাহ মোচন হবে!
এ রাতে ১২ রাকআত নামাযের কথাও বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
রজব মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসে ১, ১৫, ও শেষ তারীখে গোসল করলে (গঙ্গাজলে স্নান করার মত) প্রথম দিনকার শিশুর মত নিষ্পাপ হওয়া যায়! এই মাসে ৩০ রাকআত নামায এবং তার ৫টি রাত ইবাদত করার খেয়ালী ফযীলত বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
কারো মতে এ মাসের ১৫ তারীখে এশার পরে ৭০ রাকআত নামায পড়লে পৃথিবীর বৃক্ষরাজি পরিমাণ সওয়াব লাভ হয়। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১পৃ: দ্র
স্বালাতুর রাগায়েব :
এই মাসে জুমআর রাতে এশার পরে ১২ রাকআত নামায পড়া হয়ে থাকে। ৬ সালামে প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ক্বাদর ৩ বার এবং সূরা ইখলাস ১২ বার পড়তে হয়। নামায শেষে ৭০ বার দরুদ শরীফ এবং আরো অন্যান্য দুআ ও সিজদাহ। এ সবই বিদআত। (বিশেষ দ্র: তাবয়ীনুল আজাব, বিমা অরাদা ফী ফাযলি রাজাব, মাজমূউফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ্ ২/২, মু’জামুল বিদা’ ৩৩৮-৩৩৯, ৩৪২পৃ
শবেমি’রাজের নামায :
এই মাসের ২৭ তারীখে এশা ও বিতরের মাঝে ৬ সালামে ১২ রাকআত নামায। আর নামাযের পর ১০০ বার কলেমায়ে তামজীদ (?) এবং নির্দিষ্ট দুআ পাঠ। এই দিন দান করতে হয়। ঐ দিনের রোযা এবং ঐ রাতের ইবাদত ১০০ বছর রোযা এবং ১০০ রাত ইবাদত করার সমান! (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১ ও ৩৪৫পৃ
শা’বান মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১৫ বার। এতে বেশুমার সওয়াব লাভ হয়।
এই মাসে যে কোন রাতে ১ সালামে ৮ রাকআত নামায পড়ে হযরত ফাতেমার নামে বখশে দিলে তিনি ঐ নামাযীর জন্য শাফাআত না করে বেহেশ্তে এক পা-ও দিবেন না!
শবেবরাতের নামায :
শবেবরাত আসলে শবেকদরের ভ্রান্ত রুপ। শবেকদরের আসল ছেড়ে শবেবরাতের নকল ইবাদত নিয়ে মাতামাতি করে ভাল বরাত বা ভাগ্য লাভের জন্য লোকে ১০০ রাকআত নামায পড়ে থাকে। আর প্রত্যেক রাকআতে ১০ বার সূরা ইখলাস পড়ে থাকে। এ নামাযও মনগড়া বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১-৩৪২পৃ শবেবরাতের নামায পড়লে নাকি ২০টি হজ্জের এবং ২০ বছর একটানা ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়! আর ১৫ তারীখে রোযা রাখলে নাকি অগ্র-পশ্চাৎ ২ বছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
এ রাতে নামায আদায়ের পূর্বে নাকি গোসলও করতে হয়। আর সে গোসলের সওয়াবও রয়েছে নাকি খেয়ালী; এ গোসলের প্রতি ফোঁটার পানির বিনিময়ে ৭০০ রাকআত নফল নামায আদায়ের সওয়াব আমল-নামায় লিখা হয়ে থাকে!!!
এ রাতে বালা দূর করা, আয়ু বৃদ্ধি করা এবং অভাবমুক্ত হওয়ার নিয়তে ৬ রাকআত নামায পড়া হয়। পড়া হয় সূরা ইয়াসীন সহ্ আরো মনগড়া দুআ। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪২পৃ ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় দীপাবলী। বানানো হয় নানা রকম খাবার। আর এ সবের পশ্চাতে এক একটি মাহাত্ম বর্ণনা করা হয়।
এ ছাড়া আরো কত শত খেয়ালী ইবাদত ও সওয়াবের কথা পাওয়া যায় একাধিক বাজারী বই-পুস্তকে; যার সবগুলোই বিদআত এবং সে সবের একটিও সহীহ দলীল নেই।
রমযান মাসের খেয়ালী শবেকদরের নামায :
শবেকদরের সারা রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করতে হয়, নামায পড়তে হয়। কিন্তু কেবল ২৭ তারীখের রাতে তারাবীহ্র পর খাস শবেকদরের নামায পড়ে বিদআতীরা। তাতে তারা প্রত্যেক রাকআতে সূরা ক্বাদর এত এত বার এবং সূরা ইখলাস এত এত বার পড়ে থাকে। যার কোন দলীল ও ভিত্তি নেই। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪৫পৃ
শওয়াল মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে অথবা ঈদের নামাযের পর ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২১ বার। এতে বেহেশ্তের ৮টি দরজা খোলা এবং দোযখের ৭টি দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মরার পূর্বে বেহেশ্তে নিজের স্থান দেখা যায়।
এ ছাড়া দিনে অথবা রাতে আরো ৮ রাকআত নামাযের কথা বলা হয়।
যুলক্বা’দাহ্ মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২৩ বার। এতে বেহেশ্তে ৪০০০ লাল ইয়াকূতের ঘর তৈরী হয়! প্রত্যেক ঘরে জওহারের সিংহাসন থাকবে!! প্রত্যেক সিংহাসনে হুর বসা থাকবে; তাদের কপাল সূর্য অপেক্ষা বেশী উজ্জ্বল হবে!!!
এ ছাড়া এই মাসের প্রত্যেক রাতে ২ রাকআত নামায পড়লে ১ জন শহীদ ও ১ হজ্জের সওয়াব লাভ হবে! আর এই মাসের প্রত্যেক শুক্রবার ৪ রাকআত নামায পড়লে ১টি হজ্জ ও ১টি উমরার সওয়াব হবে!!
যুলহজ্জ মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২৫ বার। এতে বেশুমার সওয়াব লাভ হয়।
এ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিতরের নামাযের পর ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা কাওসার ৩ বার এবং সূরা ইখলাস ৩ বার পড়লে ‘মাকামে ইল্লীন’ (?) লাভ হবে, প্রত্যেক কেশের বদলে ১০০০ নেকী এবং ১০০০ দীনার সদকা করার সওয়াব লাভ হবে!
এ ছাড়া আরো কত মনগড়া নামাযের কথা রয়েছে অনেক বই-পুস্তকে। আসলে সওয়াব তাদের নিজের পকেট থেকে বলেই এত এত সওয়াব অর্জনের ব্যাপারে আশ্চর্য ও অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। প্রাত্যহিক ও মাসিক ঐ শ্রেণীর নির্দিষ্ট নামায যে বিদআত, সে প্রসঙ্গে উলামাদের স্পষ্ট উক্তি রয়েছে। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪২পৃ: দ্র
সূত্র-http://www.hadithbd.com/qaext.php?qa=3014
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নফল নামাজের কথা বলা আছে , বলা আছে যে শোয়া , বসা ও দাঁড়ানো অবস্থাতেও আল্লাহর প্রশংসা সূচক জিকির করা । এসব নামাজ ৫ ওয়াক্ত নামাজের যে নিয়ম সে নিয়মের মতই পড়তে হয় । তাহাজ্জুদ এর নামাজ অতিরিক্ত হিসেবে পড়তে বলা আছে.
আবার চাশত , ইশরাক ও আওয়াবিনের নামাজও কেউ কেউ পড়ে । এগুলো অন্যান্য ফরয ৫ ওয়াক্তের মত ফরজ নয়. অথচ তাহাজ্জুদের জামাজ পড়াটাকে বড় মাপের ঈমানদার বুঝাতে প্রকাশ করা হয় ।
আমাদের মুসলমান সমাজে খৃস্টান ও ইহুদীদের মত সপ্তাহে একবার উপাসনালয়ে যাবার মত করে শুক্রবার জুম্মার নামাজই পড়তে যায় তথাকথিত মুসলিমরা । সপ্তাহের বাকি ৩৪ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি না পড়ে তার কোন খবর নেই , তবে জুম্মার নামাজে মান্জা মেরে যাওয়া চাই এবং খুতবার সময় বন্ধুবান্ধব সহ এমনভাবে আলাপ করে যেন মনে হয় ১০ বছর পর দেখা । অথচ প্রতি বেলাতেই কথা হয় তাদের।
শবে বরাত নামেও শবে ক্বদরের মত একটা রাতের প্রচলন করানো হয়েছে যেখানে উঠতি বয়সী পোলাপানদের মাজ্জা মারা , ভাব দেখানো এবং পটকাবাজিই বেশী দেখা + শোনা যায়।
শরিয়তে এর তো কোন নির্দেশ নেই আবার এইসব পটকাবাজি তো পরিত্যাজ্য সবসময়ই।
শবে ক্বদরে নফল ইবাদতের কথা বলা হয়েছে যার মর্যাদা ১০০০ মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশী ।
আমাদের এই সময়ে ক্বুরআন তেলাওয়াত করতে হবে , আল্লাহর প্রশংসা সূচক জিকির করতে হবে ,নফল নামাজ পড়তে হবে অন্যান্য ফরজ নামাজের পর পর এবং আল্লাহর কাছে মাফ , ক্ষমা ও সাহায্য চাইতে হবে বেশী বেশী করে।
(আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুন , উনি সর্বজ্ঞানী)
(কমেন্টের সময় ভু-কম্পন অনুভূত হচ্ছিল)
ধর্ম যাহার নিতিনিতি এই ধরার সকল হিসাব লয়।
মত্ত করিয়া রাখ ইহাদের উপাসনা আর জপের মাঝে,
থানকা মেজাজ দৃঢ়তর কর,উদাসিন রাখ সকল কাজে!
বারো চান্দের বই নামে একটা বই আছে যেটা আমি প্রায় সব বাসায় দেখি, এটাকে কোরানের চাইতেও বেশি সন্মান দিয়ে অনুসরন করা হয়!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন