পশ্চিমা বিশ্বে ইহুদিবিদ্বেষ
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০১ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:১২:২৭ দুপুর
ইহুদিদের প্রতি মানুষের মনোভাব কেমন তা বোঝার জন্য ব্রিটেনের ইহুদি সাংবাদিক জোনাথান কামুস ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে মাথায় ইহুদি টুপি ‘কিপা’ পরে হেটেছেন। হাটা শুরুর এক মিনিটের মাথায় তিনি আক্রমনের শিকার হন। ২৫ মিনিটের মাথায় তার প্রতি থুতু মারতে শুরু করে তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া লোকজন। এছাড়া ইংরেজিতে চার অক্ষরের প্রকাশ অযোগ্য একটি অশ্লীল গালির আক্রমন শুনতে থাকেন অনবরত। ‘ইউ লিটল জিউ’ ‘মার শালা ইহুদি’ ‘কুকুর তোমাকে খাবেনা’ প্রভৃতি গালির শিকার হতে থাকেন অনরবত। তবে মুসলিম অধ্যুষিত যেসব এলাকায় জোনাথান হেটেছেন সেখানে তিনি কোন ধরনের অপ্রীতিকার আক্রমনের শিকার হননি কারো কাছ থেকে। কোন গালি তাকে কেউ দেয়নি। বরং অনেকে তাকে হিব্রু ভাষায় ‘শালোম’ বলে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। শালোম মানে হল শান্তি। জোনাথান হাটার সময় নিজের শরীরে একটি গোপন ক্যামেরা বেধে রাখেন । তাকে উদ্দেশ্য করে কে কি বলেছেন, কে কিভাবে তাকিয়েছে সবই ভিডিও রেকর্ড হয়েছে।
লন্ডনের রাস্তায় জোনাথন
জোনাথান যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, ব্রাডফোর্ড, ইতালির রোম, জার্মানির বার্লিন, সুইডেনের স্টকহোম এবং কোপেনহেগেন শহরে হেটেছেন। এছাড়া ইসরাইলের ইহুদি সাংবাদিক জাভিকা প্যারিসের বিভিন্ন রাস্তায় ১০ ঘন্টা হাটার দৃশ্য রেকর্ড করেছেন
সাংবাদিক জোনাথান সবচেয়ে বেশি আক্রমনের শিকার হন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার এবং ব্রাডফোর্ড শহরে। আর কোন আক্রমনের শিকার হননি বার্লিন এবং স্টকহোমে। রোম এবং কোপেনহেগেনও তিনি বেশ আক্রমনের শিকার হন। আর সাংবাদিক জাভিবকা প্যারিসেও তীব্র ইহুদিবিদ্বেষ আক্রমনের শিকার হন। গত সপ্তাহে ব্রিটেনের ডেইলিমেইল অনলাইনে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জোনাথান ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার শহরে হাটা শুরুর এক মিনিটের মাথায় ইহুদি বিদ্বেষজনিত আক্রমনের শিকার হন। সেখানে তার প্রতি থুতু মারা হয়। এমনকি বাবার সাথে হাটতে থাকা ছোট এক শিশু তাকে ইঙ্গিত করে উচ্চারন করল ‘জিউ’। জোনাথান বলেন, ম্যানচেস্টারে হাটা শুরুর আড়াই মিনিটের মাথায় একটি বালক আমার ওপর প্রায় সাইকেল উঠিয়ে দিয়ে মুখের কাছে মুখ এনে বলল ‘তুমি ইহুদি’।
ব্রাডফোর্ডে হাটা শুরুর ১৩ মিনিটের মাথায় তিনি আক্রমনের শিকার হন। ব্রাডফোর্ডে এক লোক ৫ মিনিট পর্যন্ত তার পেছনে লেগে থাকে এবং তার ছবি তোলে। এখানে সিটি পার্ক এলাকায় একজন তাকে দেখে বলে ওঠে ‘তুমি ইহুদি’। আরেকজন বলে, ‘মার শালা ইহুদিকে’। একটু পরে তিনজন যুবক একসাথে চেচিয়ে বলতে থাকে ‘তুমি ইহুদি, মুসলমান নও, দৌড়া ইহুদি। ’
জোনাথান জানান, তবে ব্রাডফোর্ডে এ ধরনের তীব্র আক্রমনের মুখে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটল। যেইমাত্র আমি সিটি পার্কে প্রবশে করলাম একজন মুসলিম আমার দিকে তাকালেন। তিনি কিছু একটা পান করছিলেন। তার মুখে কালো দাড়ি, প্রচলিত ইসলামিক পোশাক পরিহিত। আমাকে দেখে তিনি পান করা ছেড়ে আমার দিকে বিস্ময়ে তাকালেন। এরপর বললেন ‘শালোম শালোম’। হিব্রু ভাষায় শালোম মানে হল শান্তি। পরষ্পরকে অভ্যর্থনা করার জন্য শালোম বলা হয়।
ব্রাডফোর্ডে বিভিন্ন দেশের অভিবাসিদের বসবাস। এটি ব্রিটেনের আলোচিত রাজনীতিবিদ এমপি জর্জ গ্যালওয়ের এলাকা। শেষবার গাজায় ইহুদি আক্রমনের পর এখানে ৫ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে রাস্তায়। জর্জ গ্যালওয়ে ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের উদ্দেশে এখানে বলেছেন, তোমরা একা নও। জোনাথান জানান, সে কারনে ব্রাডফের্ডকে বেছে নেয়া হয়েছে ইহুদিবিদ্বেষ পরীক্ষার জন্য।
জোনাথান কোপেনহেগেন শহরে দুই ধরনের আচরন পান। এ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় হাটার সময় এক মহিলা তাকে আলিঙ্গন করে এবং আরেক লোক তার সাথে হাটার প্রস্তাব দেয় তার নিরাপত্তার জন্য। আরেক লোক তাকে গালি দেয় “(উচ্চারনযোগ্য নয়).... ইউ লিটল জিউ” বলে।
ইতালির কলোসিয়াম এলাকায় বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক আনাগোনা করছে। সেখান দিয়ে হাটার সময় কেউ কেউ বলল, ‘শাবাত শালোম’। মানে শুভ শনিবার। জোনাথান জানান, এখানে ভিগনা ক্লারায় লোকজনের মধ্যে বিদ্বেষের বদলে বিস্ময়বোধটা বেশি কাজ করছে রাস্তায় একজন ইহুদিকে টুপি পরে হাটতে দেখে।
রোমের পিগনোটো এলাকাটি মুসলিম অধ্যূষিত। সেখানে হাটার সময় অনেকে বলেছেন “শালোম”। মানে শান্তি। অনেকে এখানে ভাল সম্বোধন করেছে তাকে। এখানে সান মার্টিনো ডি মন্টিতে ইউরোপ ফুটবল লিগ ম্যাচ উপলক্ষে অনেকে জড়ো হয়েছে। সেখানে তাকে দেখে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলে “গে ফা....(উচ্চারনযোগ্য নয়)”।
ইতালির টারমিনির কেন্দ্রেীয় রেলস্টেশনের এক রেস্টুরেন্টে যাওয়া মাত্র একজন ওয়েটার তার কিপা টুপি দেখামাত্র তার এক সহকর্মীকে দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষমুলক ইঙ্গিত করে। এখানে আরেকটি পিজা দোকানের কাছে কয়েকজন লোক খুবই বিদ্বেষমূলকভাবে তার প্রতি অঙ্গভঙ্গি করে এবং আরেকজন তার কাঁধে থুতু দেয়।
বার্লিনের মার্জান এবং লিচেনবার্গে উগ্র বস্তিবাসী এবং ডানপন্থী নব্য নাজিবাদী ইহুদিবিদ্বেষীদের চারনভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এখানে হাটার সময় কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায়নি বলে জানান জোনাথান।
বার্লিনে মুসলিম অধ্যুষিত হারমানপ্লাজ দিয়ে হাটার সময় অনেক হিজাব পরিহিত এবং দাড়িওয়ালা লোকজনকে হাটতে এবং কর্মরত দেখা গেছে। কিন্তু অপ্রীতিকর কোন কিছু বলেনি কেউ।
বার্লিনের অন্য কোন কোন রাস্তায় হাটার সময় তরুনরা কেউ কেউ মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়েছে মাত্র। কিন্তু খারাপ কিছু বলেনি।
প্রযুক্তির শহর স্টকহোমের আরেকট পরিচয় হল এখানে প্রচুর মুসলমানের বসবাস। এখানে কিপা টুপি পরিহিত কোন ইহুদিকে রাস্তায় দেখতে পাওয়া খুব কঠিন। কারণ নিরাপত্তার অভাব।
জোনাথান বলেন, সকাল আটটায় স্টকহোমের খুবই ব্যস্ত সাবওয়ে স্টেশনে দাড়িয়ে আছি ইহুদি কিপা টুপি পরে। একজন নিকাব পরিহিত মুসলিম আসে আমার কাছাকাছি। কিন্তু সে আমার কিপা টুপি দেখতে পায়নি বলে মনে হল। এরপর আরেকজন আরব লোক আসে। সে আমার পাশ দিয়ে হেটে গেল কিন্তু কিছু বললনা। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহরের অনেক রাস্তায় এভাবে হাটলাম। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোন আক্রমনের শিকার হয়নি।
চার ঘন্টা হাটলেও স্টকহোম শহরে কোনো আক্রমনের শিকার হয়নি জোনাথন। শেষে ছোট ছোট শিশু আছে এমন একটি স্কুলের মাঠে যাই কিন্তু কেউ কিছু বলেনি। এভাবে ছয়, সাত, আট ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কারো কাছ থেকে বিদ্বেষমূলক কিছুই শুনিনি। অবশেষে একটি প্লাটফর্মের কাছে অনুমান ১০ বছর বয়সী এক শিশু আমাকে দেখে তার আরেক বন্ধুকে বলল, দেখ একজন ইহুদি যাচ্ছে। তবে তার এ বলার মধ্যে কোন ঘৃনা বা বিদ্বেষ ছিলনা।
কিছুদিন আগে প্যারিসে ইসরাইলের একজন ইহুদি সাংবাদিক আক্রমনের শিকার হন এবং সে আক্রমনের ঘটনা নিজেই ভিডিও করেন। ইহুদিবিদ্বেষ বোঝার জন্য তিনি প্যারিসের রাস্তায় দশ ঘন্টা হাটেন এবং ভিডিও করেন। তার অনুসরনের ব্রিটেনের ইহুদি সাংবাদিক জোনাথান সম্প্রতি ইহুদি টুপি কিপা পরে রাস্তায় হাটেন এবং গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করেন তার প্রতি মানুষের আচরন।
ডেইলিমেলের প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৪ সাল ছিল ব্রিটেনের অন্যতম ইহুদিবিদ্বেষের বছর। ১১৬৮টি ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে। ফ্রান্সের তুলনায় এ সংখ্যা ৩৭ ভাগ বেশি। ২০১৪ সালে ব্রিটেনে ২০১৩ সালের তুলনায় দ্বিগুন ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে এবং দিন দিন এ বিদ্বেষ বাড়ছে।
(বিস্তারিত)
http://www.onnodiganta.com/article/detail/3867
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আশ্চর্য হিটলারের দেশেই কোন আক্রমণের স্বীকার হলেন না!
মুসলমানরাই আজ ইয়াহুদীদের সবচেয়ে বড় শ্ত্রু, খৃষ্টানদের সাথে গলায় গলায় ভাব, অথচ তাদের হাতেই সবচাইতে বেশি নির্যাতিত হয়েছে ইয়াহুদীরা! থুতু মারুক আর যাই করুক, বিশ্বব্যাপী তাদের দোর্দণদ প্রতাপ কিন্তু একই রয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন