ইসলামের দৃষ্টিতে মেলা সংস্কৃতি
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৫২:২৯ সকাল
সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের আয়না। এ আয়নায় হুবহু দেখা যায় কোন নির্দিষ্ট সংস্কৃতির অনুসারীদের জীবনচিত্র, জীবনবোধের নমুনা। বাংলাদেশের স্থানীয় সংস্কৃতির একটি উল্লেখ্যযোগ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে মেলা। বিভিন্ন উপল্েয এ দেশের গ্রামে শহরে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। একজন মুসলিম পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই থাকুক না কেনো সে ঐ স্থানের স্থানীয় সংস্কৃতিকে ইসলামের ছাঁকনিতে ছেঁকে গ্রহণ কিংবা বর্জন করবে, এটাই তার প্রতি ইসলামের নির্দেশ। আমাদের দেশে মেলার ঐতিহ্য বা প্রচলন দীর্ঘদিনের। স্থানীয় সংস্কৃতি চর্চার নাম করে আমরা নামধারী মুসলিমরাও ঐ সব মেলার সাথে নির্দ্বিধায় নিজেদের জড়িয়ে ফেলছি। অথচ একটি বারের জন্যও ভেবে দেখছি না যে, আমি একজন মুসলিম হিসেবে কোন কাজটি করব আর কোনটি করব না, তা কুরআন ও হাদীসের আলোকে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।
তাই ইসলামের দৃষ্টিতে মেলা অনুষ্ঠানের বৈধতা ও অবৈধতা সম্পর্কে মুসলিম ভাই-বোনদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে এই লেখা। ইসলামের আলোকে মেলাকে বিশ্লেষণ করার আগে সাধরণভাবে মেলার সংজ্ঞা, প্রকার, প্রকৃতি, চরিত্র ও কার্যক্রম সম্পর্কে সংপ্তি আলোচনা করা উচিত।
বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে মেলার অর্থ লেখা হয়েছে, বিশেষ কোনো উপলে হাট-বাজার অপো প্রচুরতর পণ্য ক্রয়-বিক্রয় তৎসহ আমোদ-প্রমোদের অস্থায়ী ব্যবস্থা, অস্থায়ী প্রদর্শনী, জনসমাগম, সমাবেশ, সমাজ , সভা (পৃ: ৯৯৭)। সংসদ বাংলা অভিধানে মেলা অর্থ লেখা হয়েছে, উৎসব পার্বন ইত্যাদি আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থাযুক্ত অস্থায়ী হাট। (পৃ: ৭১৭)। মেলার আর একটা সহজ অর্থ মিলে-মিশে একাকার হওয়া। মেলায় যেমন একত্রিত হয়ে দেখা-শোনা, চেনা-জানার আকাংখা আছে, চলাচলের নেশা আছে, সাজগোছ বা বিপননদ্রব্য প্রদর্শনীর বাসনা আছে, তেমনি নর-নারী তরুণ-তরুণী মিলে-মিশে একাকার হওয়ার গোপন স্পৃহাও আছে। (আরিফুল হক, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও প্রতিরোধ, পৃ: ৬১)। বাংলাদেশে প্রচলিত মেলার প্রায় সবগুলোই ছিলো গ্রামকেন্দ্রিক। কিন্তু ইদানিং শহরের ব্যস্ততম জীবনেও বিভিন্ন উৎসব উপলে মেলা উৎসব দেখা যায়। চারিত্র বিচারে মেলাকে মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করা চলে। ১. ধর্মীয় মেলা ২. স্বারক ও সাংস্কৃতিক মেলা, ৩. বাণিজ্যিক প্রদর্শনী মেলা, ৪. রাজনৈতিক মেলা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেলাই ধর্মীয় উপলে প্রবর্তিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা, দূর্গাপূজা, কালীপূজা, জন্মাষ্টমী, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, শিবরাত্রি, সাধু-সন্তের জন্ম-মৃত্যুর স্মারক দিবস ইত্যাদি উপল্েয মেলা বসে। (আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ সম্পাদিত নববর্ষ ও বাংলার লোক-সংস্কৃতি, পৃ: ৪১)।
এ দেশে মেলা অনুষ্ঠানের শুরু হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসবকে কেন্দ্র করে। ঐতিহ্যগত দিক থেকে এ দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলা হলো হিন্দুদের রথের মেলা। তবে সংখ্যার হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যাক মেলা বসে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ও বর্ণাঢ্য ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে, এর সংখ্যা ৭৩। প্রাচীনত্বের দিক থেকে সবচেয়ে প্রাচীন মেলা হলো কালীপূজা উপল্েয কুষ্টিয়ার খোকসার মেলা, যা তিনশো বছরেরও বেশি পুরোনো। এইসব ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ করে, এ দেশে মেলার আবিষ্কারক, উদ্ভাবক হিন্দুরা। তারা তাদের ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানের সহযোগী হিসাবে এসব মেলা চালু করেছিল।
এ দেশের অধিকাংশ অধিবাসী মুসলিম হলেও এ ধর্মের উৎসব কেন্দ্রিক মেলার সংখ্যাও খুব কম আর খুব একটা প্রাচীনও নয়। দুই ঈদ ও মোহাররম, এই তিনটিই হল মুসলমানি উপল্য। তবে এর চাইতে পীর-ফকির-দরবেশের “ওরশ” মেলার আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য উপল্য। মুনশি রহমান আলী তায়েশের “তাওয়ারিখে ঢাকা” গ্রন্থের বরাতে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. মুসতাসির মামুন জানাচ্ছেন, উনিশ শতকের শেষের দিকে ঢাকার ধানমন্ডির ঈদগাহে ঈদের নামাজের পর মেলা আয়োজিত হতো। (প্রাগুক্ত, পৃ: ৪৩)। সে হিসেবে মুসলমানদের ঈদ উৎসব উপলে আয়োজিত মেলার বয়স কমবেশি মাত্র একশো বছর। বলার অপো রাখে না যে, এ দেশের অধিকাংশ মুসলিমই হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাই তারা মুসলিম হওয়ার পরও স্বভাবগত কারণে হিন্দুদের অনেক সংস্কৃতি ছাঁড়তে পারেন নি, তার মধ্যে মেলা অন্যতম। হিন্দুদের পূজাকেন্দ্রিক মেলাকে অনুসরণ করে যেমন তথাকথিত মুসলমানরা ঈদ মেলা আয়োজন করেছে তেমনি হিন্দুদের সাধু-সন্তের স্মৃতিবার্ষিকী কেন্দ্রিক মেলাকে ‘অনুসরণ করে মুসলমানদের দরবেশ পীর-ফকিরের দরগায় “ওরশ” উপল্েয মেলার আয়োজন করছে তাদের মিথ্যা ও ভন্ড অনুসারীরা। যেমন নরোত্তম ঠাকুরের প্রয়াণ উপল্েয রাজশাহীর প্রেমতলীর মেলা, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির হরিঠাকুরের মেলা, নরসিংদীর বাউল ঠাকুরের মেলার মতো ঢাকার নূরুল্লাপুরের সানাল শাহ ফকিরের মেলা, চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারের মেলা, বগুড়ার মহাস্তানগড়ের শাহ সুলতানের মেলা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরী মেলা, ফরিদপুরের সূরেশ্বরের মেলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। হিন্দুদের দূর্গা আর মুসলমানের দর্গা আজ প্রায় কাছাকাছি। তাইতো কবি দুঃখ করে বলেছেন,
তাওহীদের হায় এ চির সেবক, ভুলিয়া গিয়াছি সে তকবীর,
দূর্গা-নামের কাছাকাছি প্রায় দর্গায় গিয়া লুটাই শির,
ওদের যেমন রাম নারায়ন, মোদেরও তেমনি মানিক পীর,
ওদের চাউল ও কলার সঙ্গে, মিশিয়া গিয়াছে মোদের বীর।
বর্তমান কালের মেলাগুলোতে মেলায় আগত দর্শকদের মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা থাকে। নাগরদোলা, ম্যাজিক যাদু, লাঠিখেলা, কুস্তি, পুতুলনাচ, যাত্রা, কবিগান, বাউল-ফকির গান, নীল ছবি, অশ্লীল নাচ, তরুণ-তরুণী, যুবক যুবতীদের খোলামেলা আড্ডা, আজকালকার মেলার অপরিহার্য উপাদান। এতসব উপাদান সমৃদ্ধ মেলায় একজন মুসলিম ব্যক্তির কোন প্রকার অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কিনা এবং এর প্রতি একজন মুসলিমের কর্তব্য কী তা এখন আলোচনা করব।
ইসলামের দৃষ্টিতে মেলা
সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের সাথে মেলার কোন সংঘর্ষ নেই। কারণ মেলার প্রধান উদ্দেশ্য পণ্যের কেনা-বেচা। আর ইসলামে হালাল পণ্যের কেনা-বেচা হালাল-বৈধ। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল বা বৈধ করেছেন”। (সূরা বাক্বারাহ- ২৭৫) তবে ইসলাম ব্যবসাকেন্দ্র তথা বাজারকে ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বলে ঘোষণা দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম স্থান হচ্ছে মসজিদ সমূহ এবং সর্বনিকৃষ্ট স্থান হচ্ছে বাজার সমূহ। (সহীহ আল-জামে আস-সগীর, হা: নং-৩২৭১)
তাই একজন মুসলিম শুধু প্রয়োজন পূরণে বাজার যাবে এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজন সেরে বাজার ত্যাগ করবে। বাজারে হারাম বা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ কোন পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “আল্লাহ যখন কোন কিছু হারাম করেন তখন তার মূল্যও তথা ক্রয় বিক্রয়ও হারাম করেন”। (আবু দাউদ-৩৪৮৮)
ইসলামের দৃষ্টিতে বর্তমান কালের মেলায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা। আজকাল মেলাসমূহে দেখা যায়, মুসলিম তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলা-মেশা করছে। যা ঐ সব যুবক-যুবতীদের চরিত্র নষ্ট করছে এবং সমাজের নৈতিক ও ধর্মীয় পরিবেশকে বিপর্যস্ত করছে। অথচ ইসলাম ধর্মে নারী-পুরুষের পর্দার ব্যাপারে যে নির্দেশনা রয়েছে তা সবারই জানা। যাদেরকে বিয়ে করা বৈধ এমন নারী-পুরুষ একত্র হওয়া, স্পর্শ করা সম্পূর্ণ হারাম। অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরোধের ল্েয নারী জাতিকে তাদের নিজেদের রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য ঢেকে রাখার জন্য হিজাব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরা আল-আহযাব-৫৯, সূরা আন-নূর- ৩০-৩১) নারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন : “তোমরা তোমাদের ঘরের অভ্যন্তরেই ভালভাবে অবস্থান কর এবং পূর্বের জাহিলী যুগের নারীদের মত নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য ও যৌবনদীপ্ত দেহাঙ্গ দেখিয়ে বেড়িওনা। (সূরা আল আহযাব- ৩৩) আয়াতে নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়নি। নিষেধ করা হয়েছে জাহিলী যুগের নারীদের মত নির্লজ্জভাবে উলঙ্গ ও অশালীন চলাফেরা করতে। এই সব মেলা অনুষ্ঠান যেহেতু নারী-পুরষের অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ করে দেয় তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। তাছাড়া অশ্লীল নাচ, নীল ছবি প্রদর্শনতো ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম তা বলার অপো রাখে না।
মেলাসমূহের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ম্যাজিক বা যাদু দেখা ও প্রদর্শন করা। একজন মুসলিম কখনও যাদু দেখতে, দেখাতে, শিখতে, শিখাতে তথা যাদুর সাথে দূরতম স¤পর্কও রাখতে পারে না। কারণ আল-কুরআনে যাদুকে কুফরী (আল্লাহকে অস্বীকার/অবিশ্বাস করা) বলা হয়েছে। (সূরা আল-বাক্বারা ১০২) রাসূলুল্লাহ (সা) মুসলিমদের যে সাতটি ধ্বংসাত্বক জিনিস থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন তাঁর মধ্যে ২নং হচ্ছে যাদু করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ২৭৬৬, ৫৭৬৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং- ৮৯) যাদুকর কাফের এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। (তিরমিযী, হাদীস নং- ১৪৬) উল্লেখ্য যে, মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে ইসলামী রাষ্ট্র, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি নয়)। জুয়া লটারী ছাড়া আজকাল মেলা জমে না। অথচ জুয়া লটারীকে আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, হে মু’মিনগণ মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্র“তা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহ স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চাচ্ছে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না? (সূরা আল মায়িদা- ৯০-৯১)
এছাড়াও পুতুল নাচ, যাত্রা, গান-বাদ্য-বাজনা, ওরশ ইত্যাদিও ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ।
স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেলাকে গ্রহণের সুযোগ থাকলেও ইসলামী সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে বর্তমানে আলোচিত মেলা সমূহে একজন সত্যিকারের মুসলিম কখনও অংশ গ্রহণ করতে পারে না। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, মেলা হিন্দু সংস্কৃতির অংশ। তাই একজন মুসলিম কখনও অন্য ধর্মীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ যে ব্যক্তি যে জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে সে ঐ জাতির সদস্য বলে গণ্য হবে।”। (আবু দাউদ- ৪০৩১) তাছাড়া আলোচিত মেলাসমূহে যেসব কার্যাবলী সংঘঠিত হয় তা ইসলামী দৃষ্টিতে গুনাহ ও আল্লাহর সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ। তাই একজন মুসলিমকে অবশ্যই এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এসব কাজে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “তোমরা সৎ ও তাকওয়ার (আল্লাহ ভীতির) কাজে একে অপরকে সহযোগিতা কর এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অপরকে সহযোগিতা কর না। (সূরা আল মায়িদাহ- ২) শুধু সহযোগিতা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখলেই হবে অপরকে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করাও একজন মুসলিমের কর্তব্য (সূরা আলে ইমরান- ১১০)
মেলা যেহেতু অন্যায়-অশ্লীলতার এবং শরীয়ত বিরোধী কাজের ত্রে তৈরি করে সেহেতু এরকম সকল অন্যায় কে সাধ্যানুযায়ী প্রতিহত, প্রতিরোধ করা, বন্ধ করা একজন মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন ; “তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাঁধা দেয়, যদি হাত দ্বারা না পারে তাহলে মুখ দ্বারা বাঁধা দেয়, যদি তাও না পারে তাহলে অন্তরের দ্বারা বাঁধা দেয়। এটাই ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর : (সহীহ মুসলিম-১৮৬)
এখানে একটি বিষয় লণীয় যে, আমরা সকল মেলাকে অবৈধতার কাতার ফেলছি না। মেলা সহ যে কোন সংস্কৃতি গ্রহণ বা বর্জনের েেত্র সংস্কৃতির উদ্দেশ্য, চরিত্র, কার্যক্রম ইত্যাদি ইসলামের দৃষ্টিতে গভীরভাবে পর্যবেণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, ইসলামে হালাল/বৈধ এবং হারাম/অবৈধ এর মূলনীতি বলে দেয়া আছে। কোন হালাল কাজও হারাম হয়ে যেতে পারে সামান্য হারামের সংমিশ্রণের কারণে। তাই একজন মুসলিমের উচিত তাঁর জীবন চলার পথে সর্বদা হালাল-হারাম সম্পর্কে জানা এবং হালালকে গ্রহণ এবং হারামকে বর্জন করা। উপরোক্ত আলোচনায় যা বলতে চেষ্টা করা হয়েছে তার মূল কথা হলো, সাধারণত যে সব মেলায় ইসলাম বিরোধী কোন উপাদান নেই তা গ্রহণযোগ্য। সংস্কৃতির নামে কোন বিজাতীয় সংস্কৃতি বা অপসংস্কৃতির অনুসরণ করা যাবে না। শুধু মেলার েেত্রই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে সকল েেত্রই “ন্যায়ের সহযোগিতা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ” নীতি গ্রহণ করতে হবে। সর্বপরি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে সার্বিক জীবন পরিচালনায় সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!
লেখক :
শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
দাওরায়ে হাদীস, মাদরাসাতুল হাদীস, ঢাকা।
বি এ অনার্স, (ফার্স্ট কাস সেকেন্ড), এম এ (অধ্যয়নরত)
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিষয়: বিবিধ
৬০৫৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহুখায়রান।
আমাদের কাজ হল মানুষের চিন্তার পরিশুদ্ধি। এট করার একমাত্র উপায় হল সংঘবদ্ধ ভাবে ইসলামের শিক্ষা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া এবং যারা এসব শিক্ষাকে গ্রহণ করবে আতদেরকে সংগঠিত করা। এভাবে সকল মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত এবং তাবলীগ করা।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ, পড়ে ভালো লাগলো।
শিক্ষা বিস্তার
না হলে এইসব
অপকর্ম চলতেই
থাকবে। মেলার
নামে অসামাজিক
কাজ
গুলো যারা করে তাদের
বেশীরভাগই ধর্মীয়
বিষয়গুলো মাথায়
রাখেনা বরং প্রচলিত
ধারনা অনুযায়ী
সেক্যুলার
দৃষ্টিতে এসব দেখে।
আমাদের কাজ হল
মানুষের চিন্তার
পরিশুদ্ধি। এট করার
একমাত্র উপায় হল
সংঘবদ্ধ
ভাবে ইসলামের
শিক্ষা মানুষের
মাঝে ছড়িয়ে দেয়া এবং
যারা এসব
শিক্ষাকে গ্রহণ
করবে আতদেরকে
সংগঠিত করা।
এভাবে সকল মানুষের
কাছে ইসলামের
দাওয়াত এবং তাবলীগ
করা।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন