মাতৃভাষায় খুৎবা দান-০২

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৪:০২:০৯ বিকাল

খুৎবা মাতৃভাষায় এবং অধিকাংশ মুছল্লীদের বোধগম্য ভাষায় হওয়া যরূরী। কেননা খুৎবা অর্থ ভাষণ, যা শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় হওয়াই স্বাভাবিক।

আল্লাহ বলেন,

‘আমরা সকল রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষা-ভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর দ্বীন) ব্যাখ্যা করে দেন’ (ইবরাহীম ১৪/৪)।

অতঃপর আমাদের রাসূল (ছাঃ)-কে খাছ করে বলা হচ্ছে, ‘আর আমরা আপনার নিকটে ‘যিকর’ (কুরআন) নাযিল করেছি, যাতে আপনি লোকদের নিকট ঐসব বিষয়ে ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহল ১৬/৪৪)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সময়ের চাহিদা অনুযায়ী খুৎবা দিতেন। নবী আর আসবেন না। তাই রাসূলের ‘ওয়ারিছ’ হিসাবে[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়-২।] প্রত্যেক আলেম ও খত্বীবের উচিত মুছল্লীদের নিজস্ব ভাষায় কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান সমূহ খুৎবায় ব্যাখ্যা করে শুনানো। নইলে খুৎবার উদ্দেশ্য বিনষ্ট হবে।

জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে, খুৎবার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দু’চোখ উত্তেজনায় লাল হয়ে যেত। গলার স্বর উঁচু হ’ত ও ক্রোধ ভীষণ হ’ত। যেন তিনি কোন সৈন্যদলকে হুঁশিয়ার করছেন’।[মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৭; মির‘আত ২/৩০৯; ঐ, ৪/৪৯৬-৯৭।]

ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘অবস্থা অনুযায়ী এবং মুছল্লীদের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা দেওয়ার ব্যাপারে জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীছটিই হ’ল প্রথম দলীল’।[মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫; মির‘আত হা/১৪১৮-এর আলোচনা দ্রঃ, ৪/৪৯৪-৯৫।]

মনে রাখা আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাতৃভাষায় খুৎবা দিতেন। তাঁর ও তাঁর ছাহাবীগণের মাতৃভাষা ছিল আরবী। তিনি ছিলেন বিশ্বনবী। তাই বিশ্বের সকল ভাষাভাষী তাঁর উম্মতকে স্ব স্ব মাতৃভাষায় খুৎবা দানের মাধ্যমে কুরআন ও হাদীছ ব্যাখ্যা করে দিতে হবে, যা অবশ্য পালনীয়।

যদি বলা হয় যে, রাসূল (ছাঃ) আরবী ভাষায় খুৎবা দিতেন, অতএব আমাদেরও কেবল আরবীতে খুৎবা দিতে হবে, তাহ’লে তো বলা হবে যে, তিনি যেহেতু সর্বক্ষণ আরবী ভাষায় কথা বলতেন, অতএব আমাদেরকেও মাতৃভাষা ছেড়ে সর্বক্ষণ আরবীতে কথা বলতে হবে। আরবী ব্যতীত অন্য ভাষা বলা যদি নিষিদ্ধ হয়, তাহ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যায়েদ বিন ছাবিত (রাঃ)-কে ইহুদীদের হিব্রু ভাষা শিখতে বললেন কেন? যা তিনি ১৫ দিনেই শিখে ফেলেন ও উক্ত ভাষায় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে পত্র পঠন, লিখন ও দোভাষীর কাজ করেন। [তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫৯ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।]

বিভিন্ন মসজিদে স্রেফ আরবী খুৎবা পাঠের যে প্রচলন রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে খুৎবার উদ্দেশ্য বিরোধী। এটা বুঝতে পেরে বর্তমানে মূল খুৎবার পূর্বে মিম্বরে বসে মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখার মাধ্যমে যে তৃতীয় আরেকটি খুৎবা চালু করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। কেননা জুম‘আর জন্য নির্ধারিত খুৎবা হ’ল দু’টি, তিনটি নয়। তাছাড়া মূল খুৎবার পূর্বের সময়টি মুছল্লীদের নফল ছালাতের সময়। তাদের ছালাতের সুযোগ নষ্ট করে বক্তৃতা করার অধিকার ইসলাম কোন খত্বীব ছাহেবকে দেয়নি। অতএব সুন্নাতের উপরে আমল করতে চাইলে মূল খুৎবায় দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে তাদের বোধগম্য ভাষায় নছীহত করতে হবে। খুৎবার সময় কথা বলা নিষেধ। এমনকি অন্যকে ‘চুপ কর’ একথাও বলা চলবে না।

[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৮৫ ‘পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন’ অনুচ্ছেদ-৪৪।]

বিষয়: বিবিধ

১১৭৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

189406
০৯ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
ইমরান ভাই লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়রান ভাইজান। আমাদের মসজিদ গুলোতে এভাবেই মাতৃভাষায় খৎবা দেয়া শুরু করা উচিৎ।

আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।
১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:১৯
140890
নেহায়েৎ লিখেছেন : বারাকাল্লাহুমা ফি। আল্লাহর রহমতে কিছু কিছু মসজিদে শুরু হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।
189414
০৯ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০৪
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : নিরব কেন কবি? কবিতা লেখা ছেড়ে দিলেন নাকি? অনেক দিন পরে আসলেন মনে হয়।
আপনার সাথে একমত "যদি বলা হয় যে, রাসূল (ছাঃ) আরবী ভাষায় খুৎবা দিতেন, অতএব আমাদেরও কেবল আরবীতে খুৎবা দিতে হবে, তাহ’লে তো বলা হবে যে, তিনি যেহেতু সর্বক্ষণ আরবী ভাষায় কথা বলতেন, অতএব আমাদেরকেও মাতৃভাষা ছেড়ে সর্বক্ষণ আরবীতে কথা বলতে হবে। "

যাজ্জাকল্লাহ খায়ের



১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২২
140892
নেহায়েৎ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম স্যার। কেমন আছেন? ফাগুন এসেছে ধরায় নীরব কেন কবি!!! মাঝে মাঝে উকি মারি ব্লগে নিয়মিত আসা হয়না। আর কবিতা তাকে আপাতত ছুটি দিয়েছি। সহমত পোষণ করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।
189418
০৯ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২২
140893
নেহায়েৎ লিখেছেন : ভাল লাগায় আল্লাহ আ্পনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।
189456
০৯ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
140894
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান। আপনাকেও আমার খুব ভাল লাগে ভাইজান।
189611
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : খুতবা সকলের বোধগম্য ভাষাতেই দেয়া উচিত। তবে এখন সাধারনত খুতবার আগে এর বিষয় বাংলায় আলোচনা করাতে বিশেষ দোষ নাই বলে মনে হয়।
১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
140896
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
189859
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহু খাইরান।
১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
140897
নেহায়েৎ লিখেছেন : বারাকাল্লাহুমা ফি।
190520
১১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:০৬
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
১২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
142063
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান। আপ্নাকেও খুব ভাল লাগ্লো।
196243
২২ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আসাদুল ইসলাম লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File