মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেয়ার বিধান

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০১ মার্চ, ২০১৪, ১০:৪১:৫৮ সকাল



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় আল্লাহর তারীফ করতেন, দরুদ পড়তেন, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করতেন এবং কিছু ওয়াজ-নছীহত ও করতেন।

নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ “আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” (সূরা ইবরাহীম: ৪)

রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবী ছিল এবং ছাহাবীদেরও ভাষা আরবী ছিল, তাই তিনি আরবীতেই তাদেরকে নছীহত করতেন। এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়াটা শরীয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।

• এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: প্রত্যেক খতীবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। (তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪)

• আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবী জানলেও ফারসী ভাষায় ও চলবে। (হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭)

• আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী (রহ) বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেয়া জায়েজ। (মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫)

• হানাফী ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ফারসী ভাষাতে জুমার খুতবা দেয়া জায়েজ।

• হানাফী ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া শর্ত নয়।

• হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে। (কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) (আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা১/৯৮-৯৯)

খুতবারা আগে বয়ান একটি বিদআত: নিজ ভাষায় খুতবা না দেয়ার কারণে যেহেতু তা মানুষের বোধগম্য হয় না এজন্যই এই খুতবার আগে খতীবগণ বয়ানের ব্যবস্থা রেখেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম বিদআত।

কারণ খুতবা দানের পূর্বে বয়ান দেয়া এবং ইহাকে এভাবে স্থায়ী রূপ দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আদৌ প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার পূর্বে কখনো এ ধরণের বয়ান দেন নি। দিতে বলেছেন বলে ও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এজন্যই এ সঊদী আরবের বরেণ্য মুফতী শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহHappy কে মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান সম্পর্কে সওয়াল করা হলে তিনি তা সরাসরি জায়েজ বলে মন্তব্য করেন এবং একথা স্পষ্ট ভাবে বলেন যে, খতীবকে নিজ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। (দেখুন: শাইখ ইবনে উসাইমীনের ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম)

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু জামে মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়া হয়ে থাকে। বস্তুত: এটাই সুন্নত। এর বিপরীত সুন্নত বিরোধী কাজ যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক ইলম দান করুন এবং যাবতীয় বিদআত পরিত্যাগ করার তাওফীক দিন (আমীন)

লেখক: শাইখ আখতারুল আমান বিস আব্দুস সালাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

বিষয়: বিবিধ

২০১৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

184883
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৫১
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : আমাদের দেশের ইমামরা খুৎবার মুল বিষয়সমুহ খুৎবার আগেই বলে দেন। তারপরেও বাংলায় যদি খুৎবা দেয়া যায়। এই ব্যপারে আলেমদের মতামত নিয়ে সরকারী ভাবে ঘোষনা দেয়া যেতে পারে।
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩২
136817
নেহায়েৎ লিখেছেন : খুতবারা আগে বয়ান একটি বিদআত: নিজ ভাষায় খুতবা না দেয়ার কারণে যেহেতু তা মানুষের বোধগম্য হয় না এজন্যই এই খুতবার আগে খতীবগণ বয়ানের ব্যবস্থা রেখেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম বিদআত।
184887
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:২৩
আয়নাশাহ লিখেছেন : খোতবা শব্দটার অর্থ হলো বক্তৃতা।
তো যে বক্ত্বতা মানুষ বুঝলো না ষে বক্ত্বতা দেয়ার কোনো অর্থ হলো?
রাসুল (সঃ)এর সময় তার সামনে যারা থাকতেন সবাই আরবী বুঝতেন, তাদের ভাষা ছিল আরবী। এজন্য খোতবা ছহিল আরবী। যদি রাসুল (সঃ) এর শ্রোতা ভিন্ন ভাষাভাষি হতেন তিনি নিশ্চয়ই সেই ভাষায় তাদেরকে বুঝাতেন।
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
136821
নেহায়েৎ লিখেছেন : সহমত। সুন্দর কথা বলেছেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
184892
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
বিন হারুন লিখেছেন : আমার জিজ্ঞাসা। রাসূল স. এবং তাঁর সাহাবাদের জামানায় কি শুধু আরবীভাষীরাই ঈমান এনেছিল? যদি অন্যভাষীরা ঈমান এনে খাকে তাঁরা কি অন্য ভাষায় খুৎবা প্রদান করেছিলেন?
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
136822
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনার উত্তরতো একথায় দেয়া যাবেনা বিশাল উত্তর আপনি নিচের লিংকে যান। ইনশা আল্লাহ আপনার সব উত্তর এখানে পেয়ে যাবেন।
https://www.facebook.com/notes/rajveer-hossain/জুমআর-ছালাত-صلاة-الجمعة/601971436543968/?refid=18&_ft_
184897
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
ইকুইকবাল লিখেছেন : নিয়মিত আপনার লেখা চাই জনাব
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
136823
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান। ইনশা আল্লাহ। চেষ্টা করি ভাই। এত লেখার সময় পাই। দু'আ করেন যেন সামনে লিখতে পারি।
184921
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : খুতবার আগের বয়ান বিদয়াত কিনা সে বিষয়ে ভিন্নমত আছে। বায়তুল মুকাররম এবং শাহি জামে মসজিদ এর দুই মরহুম খতিব উবায়দুল হক এবং সৈয়দ আবদুল আহাদ আল মাদানী কিন্তু খুতবার পূর্বে বক্তব্য রাখতেন। এটা বিতর্ক এড়িয়ে মানুষকে হেদায়াত দেয়ার জন্য ও হতে পারে। তবে খুতবার প্রথম অংশ মাতৃভাষায় দেয়া সম্ভব ও উচিত বলেই বেশিরভাগ আলিম এর মতামত। যদিও আমাদের দেশে তা অনুসরন করা হয়না।
184925
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০৮
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : খুতবা দেয়া ওয়াজিব শুনাও ওয়াজিব
কিছু ফরজ কিংবা ওয়াজিব পরিবর্তন করা আদৌ ঠিক নয়, মহানবী দ যেহেতু আরবীতেই দিয়েছেন সেহেতু আমাদেরো আরবীতে ভাষন দেয়া আবশ্যিক, যেভাবে আমরা নামাজ পড়ি, কেরাত পড়ি আরবীতেই ,
আমরা আরবী ভাষী নয় সেহেতু ইমামগন খুতবার আগে তার সঠিক তাত্পর্য তুলে ধরে ব্যক্ষা করে থাকেন
এটা কোন কালেই বিদাত ছিলনা,
মহানবী দ এমনকি খোলাফায়ে রাশেদীন রাও খুতবা দেওয়ার আগে কিছু ব্যাক্ষা বিশ্লেষন করে দিতেন ,
মোট কথা যা কিছু সহজ আর শিক্ষনীয় তা গ্রহনীয়,
এখানে ফ্যাসাদের কোন আশংকা নেই,
184936
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:২৩
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : গতকালও একজন প্রবাসী ব্লগারকে সাথে নিয়ে আন্দকিল্লা শাহী জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছি।
ঐ মসজিদে সেই দুই যুগেরও বেশী সময় থেকে দেখে আসছি খুৎবার পুরো অনুবাদ প্রিন্ট করে মুসল্লিদেরকে আগে হাতে হাতে দিয়ে দেয়া হয় । পরে উহা আবার পাঠ করে শুনানো হয় । আমার খুব ভাল লাগে সিস্টেমটি ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩৩
136858
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : শুধু কি আন্দরকিল্লাহয় সব মসজিদেই উক্ত নিয়ম চালু রয়েছে তবে কাগজ দিয়ে দেয়া খুব ভাল, কারন এত গুলো মানুষের মধ্যে বুঝতে না পারলেও ঘরে গিয়ে মন দিয়ে বুঝতে পারবে, এটা সুন্দর নিয়ম, তবে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের ইমাম খুদবাটা দৈনিজ আজাদীতেই পাঠক সমাজে বিষদভাবে ব্যাক্ষা করে দেন যাতে সারা বাংলাদেশের মানুষ পড়বে পারে,
একেকটা মসজিদে একেক নিয়ম, এটা হচ্ছে ইসলামের সাংস্কৃতিকের একটা অঙ্গ।
এখানে বিদাত বলে নিষদ্ধ করার মানে নেই
184951
০১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:১২
ফারুক হোসেন লিখেছেন : রসূল তার জীবদ্দশায় বহু খুৎবা দিয়েছেন মনে হয়। সেই সকল খুৎবা বা খুৎবায় দেয়া ওয়াজ নসিহতগুলো কোথায় পাওয়া যায়? খোজ দিলে খুশি হব।
185102
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৬
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
১০
196240
২২ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৭
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আসাদুল ইসলাম লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File