ত্বাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি মুসলিম জীবনের সর্বোত্তম পাথেয়
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:১১:১৩ সকাল
ত্বাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলঃ রক্ষা করা, সাবধানতা অবলম্বন করা।
শরয়ী পরিভাষায় ত্বাকওয়া বলা হয়ঃ আল্লাহর শাস্তি ও অসন্তষ্টির কার্যকারণসমূহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা। সহজভাবে বললে বলা যায়, সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করার নাম ত্বাকওয়া। সকল মুসলিমকেই ত্বাকওয়া অবলম্বন করতে হয়। ঈমানের পরেই একজন মুমিনকে সর্বক্ষেত্রে যে নীতি অবলম্বন করতে হয় তার নাম ত্বাকওয়া। আমরা ইবাদত-বন্দেগিসহ যেসব ভাল কাজ করি তা কিন্তু ত্বাকওয়ার ভিত্তিতেই সম্পাদন করি। ভাবি, আমি যা করছি তা আল্লাহ দেখছেন। তাই তা সুন্দর করে আদায় করতে হবে।
এমনিভাবে আমরা যখন পাপাচার থেকে বিরত থাকছি তখনও কিন্তু ত্বাকওয়ার নীতি অবলম্বন করেই বিরত থাকছি। পাপ কাজ করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন, শাস্তি দেবেন তাই পাপাচারে লিপ্ত হওয়া যাবে না। এমন একটি ভাবনা নিয়ে আমরা পথ চলে থাকি। কাজেই ত্বাকওয়া এমন একটি নীতি, একজন মুমিন ব্যক্তি একটি মুহূর্তও এ নীতির বাইরে কাটাতে পারে না।
তাকওয়া অবলম্বন সম্পর্কে আল্লাহর বাণীসমূহঃ
( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ )
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০২)
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা আত তাগাবুন, আয়াত ১৬)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ-কে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (সূরা আল আহযাব, আয়াত ৭০)
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“যে আল্লাহ-কে ভয় করবে তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিয্ক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” (সূরা আত তালাক, আয়াত ২-৩)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيم
“হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।” (সূরা আনফাল, আয়াত ২৯)
ত্বাকওয়া অবলম্বন সম্পর্কে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ
عَنْ أبي هُرَيْرَةَ رضي اللَّهُ عنه قال : قِيلَ : يا رسولَ اللَّهِ مَن أَكْرَمُ النَّاسِ؟ قال : أَتْقَاهُمْ فقَالُوا : لَيْسَ عَنْ هَذا نَسْأَلُكَ ، قَالَ : فيُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ ابن نَبِيِّ اللَّهِ ابن نَبيِّ اللَّهِ ابنِ خَلِيلِ اللَّهِ . قَالُوا : لَيْسَ عن هَذَا نَسْأَلُكَ ، قال : فعَنْ مَعَادِنِ الْعَرَب تسْأَلُونِي ؟ خِيَارُهُمْ في الْجاهِليَّةِ خِيَارُهُمْ في الإِسلامِ إذَا فَقُهُوا متفقٌ عليه .
হাদীস – ১. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, “যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ত্বাকওয়া অবলম্বনকারী।” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা এ সম্পর্কে প্রশ্ন করছি না। তিনি বললেন, “তাহলে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন আল্লাহর নবী ইউসুফ, যার পিতা নবী (ইয়াকুব) যার দাদা নবী (ইসহাক) যার পরদাদা হলেন নবী ইবরাহীম খলীলুল্লাহ।” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করছি না। তিনি বললেন, “তবে কি তোমরা আরবের বিভিন্ন বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? জাহেলিয়াতের যুগে যারা উত্তম ছিল ইসলামেও তারা উত্তম। যদি তারা শিক্ষা লাভ করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
عَنْ أبي سَعيدٍ الْخُدْرِيِّ رضي اللَّه عنه عن النبيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : (إنَّ الدُّنْيا حُلْوَةٌ خضِرَةٌ ، وإنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا . فينْظُر كَيْفَ تَعْمَلُونَ . فَاتَّقوا الدُّنْيَا واتَّقُوا النِّسَاءِ. فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنةِ بَنِي إسْرَائيلَ كَانَتْ في النسَاء) رواه مسلم.
হাদীস – ২. আবু সায়িদ খুদরি রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “পৃথিবী অবশ্যই মিষ্টি সুন্দর-সুবজ শ্যামল। আর আল্লাহ তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি দেখবেন তোমরা কেমন আমল কর। অতএব তোমরা দুনিয়া সম্পর্কে সাবধান থাকবে এবং নারীদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে। কারণ বনী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথম ফিতনা (বিশৃংখলা) সৃষ্টি হয়েছিল নারীদের ব্যাপারে।” (সহীহ মুসলিম)
عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ رضي اللَّه عنه أَنَّ النَّبِيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم كَانَ يَقُولُ : (اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعفافَ والْغِنَى) رواه مسلم
হাদীস – ৩. ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি হিদায়াত, ত্বাকওয়া, পবিত্রতা, মুখাপেক্ষিহীনতা ও স্বচ্ছলতা।” (মুসলিম)
عَنْ أبي طَريفٍ عدِيِّ بْنِ حاتمٍ الطائِيِّ رضي اللَّه عنه قال : سمعت رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقُولُ : (مَنْ حَلَفَ عَلَى يمِين ثُمَّ رَأَى أتقَى للَّهِ مِنْها فَلْيَأْتِ التَّقْوَى) رواه مسلم .
হাদীস – ৪. আবু তারীফ আদী ইবনু হাতেম তাঈ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি শপথ করল। অতঃপর সেই শপথ রক্ষার চেয়ে অধিকতর ত্বাকওয়ার অন্য কোন আমল দেখতে পেল, তখন তার জন্য ত্বাকওয়ার সে কাজটিই করা উচিত।”(মুসলিম)
عنْ أبي أُمَامَةَ صُدَيَّ بْنِ عَجْلانَ الْباهِلِيِّ رضي اللَّهُ عنه قال: سَمِعْتُ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ في حَجَّةِ الْودَاع فَقَالَ) : اتَّقُوا اللَّه ، وصَلُّوا خَمْسكُمْ ، وصُومُوا شَهْرَكمْ ، وأَدُّوا زكَاةَ أَمْوَالِكُمْ ، وَأَطِيعُوا أُمَرَاءَكُمْ ، تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ ( رواه التِّرْمذيُّ
হাদীস – ৫. আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান আল-বাহিলি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দিতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর। রমজানে সিয়াম পালন কর। নিজেদের সম্পদের যাকাত আদায় কর এবং নিজেদের শাসকবর্গের আনুগত্য কর। তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি)
(মূল- আহমাদ মূসা)
বিষয়: বিবিধ
১৬৯০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক শুকরিয়া নেহায়েৎ [আব্দুল মাজেদ] ভাইয়া।
++++++++++
আপনাকে কেমন রেখেছেন আল্লাহ?
যাজাকাল্লাহু খাইরান
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন