"সূফী ধর্ম কতিপয় কথা"

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৪:০৪ দুপুর

হিন্দু, পারসিক ও গ্রীক দর্শনের কু-প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে মা‘রেফাতের নামে সূফীবাদের সূচনা হয়।

সূফী আরবী ‘ছুফ’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ পশম। সূফীরা তাদের বৈরাগ্যের নিদর্শনস্বরূপ পশমের কাপড় পরতো বলেই সম্ভবত এই নামে পরিচিত হয়েছেন। সর্বপ্রথম ইরাকের ‘বসরা’ নগরীতে যুহ্দ বা দুনিয়া ত্যাগের প্রেরণা থেকে এটা শুরু হয়। প্রবল আল্লাহভীতি ও দুনিয়া ত্যাগের বাড়াবাড়ি, সার্বক্ষণিক জীকির, আযাবের আয়াত পাঠে বা শুনে অজ্ঞান হওয়া বা মৃত্যু বরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে সূফীবাদের যাত্রা শুরু হয়। সূফীবাদের পরিভাষায় এই অবস্থাকে ‘হাল’ বলে।

রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ‘সূফী’ শব্দের সাথে কেউ পরিচিত ছিলেন না। বরং রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে এযামের তিনটি স্বর্ণযুগের পরে (তৃতীয় শতাব্দী হিজরীতে) এই প্রথা চালু হয়। যখন অতি পরহেযগারীর নামে এগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে , তখন সাহাবী ও তাবেঈগণ এসবের তীব্র প্রতিবাদ করেন [ইবনু তায়মিয়াহ, ‘মাজমূ ফাতাওয়া’ ১১/৬]।

পরবর্তীতে এই সূফীবাদী ধ্যান-ধারণা বিজাতীয় নানা মরমীবাদী দর্শনের সংস্পর্শে এসে বিবিধ শিরকী আক্বীদা ও বিদআতীরীতি-নীতির নোংরা গরলে নিমজ্জিত হয় এবং ইসলামের মৌলিক আক্বীদা-আমল থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। তাদের আক্বীদাকে তিনটি মাযহাবে ভাগ করা যায়।

১। প্রাচ্য দর্শন ভিত্তিক মাযহাবঃ যা দক্ষিণ এশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধদের নিকট থেকে এসেছে। এই মাযহাবের অনুসারী সূফীরা মা‘রেফাত হাসিল করার জন্য দেহকে চরমভাবে কষ্ট দিয়ে স্বীয় ক্বলবকে তাদের ধারণা মতে জ্যোতির্ময় করার চেষ্টা করে থাকে। প্রায় সকল সূফীই এরূপ প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে।

২। খ্রিষ্টানদের নিকট থেকে আগত মাযহাবঃ যা ‘হুলূল’ ও ‘ইত্তেহাদ’ দু’ভাগে বিভক্ত। হুলূল অর্থ ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনুপ্রবেশ’। হিন্দু মতে ‘নররূপী নারায়ণ’। ইরানের আবু ইয়াযীদ বিস্তামী (মৃত্যূ ২৬১ হিজরী) ওরফে বায়েযীদ বুস্তামী ছিলেন এই মতের হোতা। এই মাযহাবের অন্যতম নেতা হুসাইন বিন মনসূর হাল্লাজ (মৃত্যূ ৩০৯ হিজরী) নিজেকে সরাসরি আল্লাহ (আনাল হক্ব) বলে দাবী করায় মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।

৩। ইত্তেহাদ বা ওয়াহদাতুল উজূদ বা অদ্বৈতবাদী দর্শনঃ যা ‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হিসাবে রূপ লাভ করে। এর অর্থ হল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এই আক্বীদার অনুসারী সূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আঃ) -এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছূতে বিরাজমান। অতএব, মানুষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মুর্তিপুজা করে বা পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পুজা করে, সে মূলতঃ আল্লাহকেই পুজা করে। সবকিছুর মধ্যে মুমিন আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা কাফের এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আঃ)-কেই প্রভূ বলেছে। যদি তারা সকল সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহলে তারা কাফের হত না। বলা বাহুল্য এটাই হল হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব কূফরী আক্বীদার সূফী সম্রাট হলেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী (মৃত্যূ ৬৩৮ হিজরী)। বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী সূফীদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হল এই যে, ‘প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হতে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে।

সর্বোপরি ইসলামী আক্বীদার সাথে মা‘রেফাতের নামে প্রচলিত সূফীবাদী আক্বীদার কোন সম্পর্ক নেই। ‘ইসলাম’ ও ‘সূফী’ দর্শন সরাসরি সংঘর্ষশীল।

সূফীবাদের ভিত্তি হল আউলিয়াদের কাশ্ফ, স্বপ্ন, মুর্শিদের ধ্যান ও ফয়েয ইত্যাদীর উপরে। পক্ষান্তরে ইসলামের ভিত্তি হল আল্লাহর প্রেরিত ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপরে।

সূফীদের আবিস্কৃত তরীকা সমূহ তাদের কল্পনায় কল্পিত। এর সাথে কুরআন, হাদীস, ইজমায়ে সাহাবা, ক্বিয়াসে সহীহ কোন কিছুরই দূরতম সম্পর্ক নেই।

সূফীদের ইমারত খৃষ্টানদের বৈরাগ্যবাদ-এর উপরে দন্ডায়মান। ইসলাম যাকে প্রথমেই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।

[(হাদীদ ২৭), দ্রঃ দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন, ২য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯]

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

২৩৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File