আত্নীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক, সামার ক্যাম্প ২০১৭
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ২২ জুলাই, ২০১৭, ০৮:৪৭:৩৮ রাত
এবার সামার ক্যাম্পের থিম ছিলো
"Improve connectivity with family and community"
খুব বেশি লেকচার ছিলো না। তবে যে দু- একটি ছিলো তার মধ্যে ছিলো অনেক শিক্ষনীয় কিছু। মাহবুবুল আলম ভাইয়ের লেকচার ছিলো "Lesson from muhammad (sm) on connecting with family and society"
এখানে তিনি সুন্দরভাবে পরিবার ও কম্যুনিটির সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে সেটি কুরআন এবং হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিছু উদাহরন কিছু কথা ছিলো সত্যিই অনেক সুন্দর।
আমরা জানি শেষ বিচারের দিন আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের সামনে আমাদের সব কাজের হিসেব দেয়া লাগবে। উনি হবেন বিচারক। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু বিষয় আগেই ফয়সালা করে দিয়েছেন। তো মাহবুব ভাই একটি সুন্দর হাদিস বলেছিলেন
"রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তা´য়ালা যখন সমস্ত সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করলেন, তখন ´রেহেম (আত্নীয়তা)` উঠে দাড়িয়ে আল্লাহর কোমড় ধরল। আল্লাহ তা´য়ালা বললেন তুমি কি চাও? সে বলল, এটি হলো আত্নীয়তার ছিন্নকারী হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার স্থান! তিনি বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবো। যে তোমাকে ছিন্ন করবে, আমিও তাকে ছিন্ন করব।? রেহেম বললো জ্বী, হ্যা প্রভু! তিনি বললেন এটি তো তোমারই জন্য।
রাসুল (সাঃ) আরো বললেন, "আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমিই রহমান (দয়ালু), আমার নাম (রহমান) থেকেই `রাহেম` (আত্নীয়তার বন্ধন)- এর নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সাথে বজায় রাখব এবং যে তা ছিন্ন করবে আমি আমা হতে তাকে ছিন্ন করব। " আল- আদাবুল মুফরাদ, হাদীস/৫৩
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন পাকে বলেছেন, "ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন। " সূরা মুহাম্মাদঃ ২২
কাল কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ বিচার নেয়া শুরু করলে কেউই রেহাই পাবেনা । যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কিছু থাকবে না, সেদিন যদি আল্লাহ কাউকে লানত দেয় তাহলে তার কোন রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।
অপর এক হাদিসে আছে কোন এক সাহাবা রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকি এবং যদি সেই আত্নীয় আমার প্রতি খারাপ আচরন করে তাহলে, তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, তুমি যদি তার প্রতি ভালো আচরন করো এবং সে তোমার প্রতি খারাপ আচরন করে তাহলে এটি এমন যে, তুমি তার মূখে ছাই নিক্ষেপ করছো।
অর্থাৎ সে নিজে বেঁচে যাবে কিন্তু ঐ ব্যাক্তির উপর আল্লাহর লানত পড়বে।
মাহবুব ভাই খুব সুন্দর একটি উদাহরন দিয়েছিলেন।
কিয়ামতের সময় আসলে কি ঘটবে? পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে সব উলট পালট হয়ে যাবে। নক্ষত্র গুলো স্থানচ্যুত হয়ে ছুটোছুটি করবে। পাহাড় গুলো তুলার মত উড়বে।
উনি প্রশ্ন করেছিলেন, আত্নীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এতো কঠোর নির্দেশ কেন দিলেন? বা সম্পর্ক জিনিসটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ্যালাক্সিতে গ্রহ, তারকারাজী এবং নানা পদার্থের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সুন্দর সম্পর্কের কারনে যে যার কক্ষপথে একটি সুনির্দিষ্ট গতিতে আবর্তিত হচ্ছে। কাল কিয়ামতের দিনে আল্লাহ শুধু এদের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান সেটি নষ্ট করে দিবেন ফলে সম্পর্কহীন হয়ে ছন্দ হারিয়ে ছুটো-ছুটি শুরু করে দিবে। একে অপরের সাথে সংঘর্ষে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। কিয়ামত সংঘটিত হবে।
আত্নীয় এবং প্রতিবেশিদের সাথে সম্পর্ক গুলো ও এমন। যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেখানে শান্তি থাকেনা। যদি সম্পর্ক খুব বেশি খারাপ হয়ে যায় তাহলে সেই জায়গায় ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সব কিছু তছনচ হয়ে যায়। এজন্য আত্নীয়তার সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার যেখানে একটি ইউনিট সেখানে পরিবার দূর্বল হলে সেই সমাজই দূর্বল হয়ে পড়ে। শক্তিশালী শান্তিময় পরিবার গঠন ইসলামের অন্যতম মূল বিষয়। পরিবার শক্তিশালী হলে, সেই পরিবার নিয়ে গঠিত সমাজ তথা রাস্ট্র ও শক্তিশালী হয় ও শান্তিময় হয়। ইসলাম যেখানে শান্তির বানী শোনায় সেখানে পরিবার শান্তিময় হলে গোটা দুনিয়ায় তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য।
রাসুল (সাঃ) তার মৃত্যু শয্যায় উম্মতকে সাবধান করে বলেছেন, "তোমাদের আত্নীয় স্বজন, তোমার আত্নীয়-স্বজন (সম্পর্কে সাবধান হও)" ছহীহ জামে´ হা/৮৯৪, সনদ সহীহ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আত্নীয়-স্বজনের সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। (আমীন)
বিষয়: বিবিধ
৯৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন