আল্লামা শফিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং আমার কিছু উপলব্ধি।
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ১৪ মার্চ, ২০১৩, ০২:৫৬:২৩ রাত
আজ আমাদের বড় ই বিপদ। আমরা সবার সাহয্য প্রার্থনা করছি। আল্লামা শফিকে অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছি। কিন্তু কথা হলো আল্লামা শফিদের বিপদের সময়ে আমরা তাদের পাশে দাড়াতে পারব কি?? বিপদে আমরা মুসলিম ঐক্যর জন্য স্লোগান দেই। বিপদ শেষ হলে ভূলে যাই সব কিছু। ভাবি আমাদের চেয়ে স্মার্ট মুসলিম আর কেউ নেই। আমাদের কারোর ই দরকার নেই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিমদের কিছু শিক্ষা দিচ্ছেন বর্তমান সব ঘটনার মধ্যদিয়ে।
১) মুসলিমরা নৈতিকভাবে অনেক বিচ্যুত। আল্লাহর সাহয্য সন্তুষ্টির চেয়ে পার্থিব শক্তি ও প্রতিপত্তিকে সফলতা বেশি প্রাধান্য দান। তাই আল্লার পক্ষ থেকে যে বিজয় সেটি পেতে বিলম্ব। তাই যতদিন না নৈতিকতায় খাটি একটি দল হচ্ছে ততদিন এভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হবে। আর তাই রাজপথের রাজনীতির চেয়ে সংকটউত্তর কালে নৈতিকতা ও তাক্বওয়া পূর্ণ কর্মী তথা মুসলিম তৈরীর কাজে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।
২) মুসলিমদের ভ্রাতৃত্ববোধভূলে গিয়ে ব্যক্তি ও পার্থিব স্বার্থের কারনে নিজেদের মধ্যে অনৈক্যর সৃষ্টি। মুসলিম দলগুলো মনে করে একাই বিজয় ছিনিয়ে এনে নিজেদের কৃতিত্ব দাবী করবে যে তারাই সবচেয়ে খাটি মুসলিম। কিন্তু সব খাটি ও ভেজাল থাকায় কারো একার পক্ষে সফলতা আসছেনা। সুতরাং বিজয়ের জন্য সব মুসলিমদের ঐক্য ইসলামের শিক্ষার দাবী।
৩) মানুষ ইসলামের পার্থিব বিজয়কে নিজেদের বিজয় হিসেবে চিন্তা করছে, যেটি হয়ত আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় না। কারন মানুষ ইসলামের পার্থিব বিজয়কে প্রাধাণ্য দিতে গিয়ে, নৈতিকতা ও তাক্বওয়ার পূর্ণ মুসলিমের মান বজায় রাখতে পারছেনা। ফলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য হতে মানুষ যেমন বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে সাধারন মানুষ ও অন্যধর্মের মানুষ ইসলাম সম্বন্ধে ভূল বার্তা পাচ্ছে। এভাবে আমাদের নিজেদের কারনে মানুষের মধ্যে ইসলাম পালনে অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে।
ইসলামের প্রাথমিক কালে, যদিও মুসলিমদের উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে কিন্তু শুধু মাত্র হয়েছে একমাত্র আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়ার কারনে। কিন্তু সেই সময়ের সাহাবীদের উপরে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলতে কেউ ই সাহস করতে পারেনি। মক্কার মুশরিক রা চরম শত্রুকেই চরিত্র ও নৈতিকতার দিক থেকে উত্তম বলে স্বীকৃতি দিতে কখনই কার্পন্য করেনি। কারন তখন তাক্বওয়ার প্রশিক্ষন হত অনেক বেশি। ইসলামের বিজয় তাদের মূল লক্ষ্য ছিলোনা, তাদের লক্ষ্য ছিলো আল্লাহ কোন কাজে অসন্তুষ্ট হলো কিনা, সর্বদা এই ভয় তাদের ব্যস্ত রাখতো। আর এই কারনে সেই সময়ে চরম শাস্তির কথা জানার পরেও অপরাধ করে নিজেরা স্বীকার করে নিজেদের কে শাস্তির জন্য সপে দিতো যাতে করে কিয়ামতের দিন কোন শাস্তি পেতে না হয়। লোক লজ্জা কিংবা পার্থিব সন্মান কারোর ই আকাংখা ছিলোনা।
বর্তমান বিভেদপূর্ণ সমাজে আমরা ঈমান ও তাক্বুোয়ার সাথে আপোষ করে নিয়ে মাঠে নেমেছি ইসলাম কে বিজয় করতে। কিন্তু যখন আমাদের নিজেদের মধ্যে ঈমান ও তাক্বওয়ার কমতি লক্ষনী্য তখন দ্বীন ইসলাম কায়েমের জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমরা অনেক অন্যায় করে ফেলি, যা সাধারন মানুষ এবং যারা ইসলাম বিষয়ে অজ্ঞ তাদেরকেই ইসলাম নিয়ে সন্দিহান করে তোলে। যার দায় দায়িত্ব হয়ত আমাদের বহন করতে হবে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজে আমরা নিজেরা কিছু করার আবেগ নিয়ে নেমে পড়েছি দ্বীন কায়েমের জন্য। আমরা ছুটছি আবেগ নিয়ে, কিন্তু কথা হলো যখন আবেগ বেশি কাজ করে তখন বিবেক লোপ পায়। আর আল্লাহ কখনই চান না যে কেউ বিবেকলুপ্ত হয়ে দ্বীনের কাজ করুন। আর তাই দেখা যায়, যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে মৃত্যে যন্ত্রনায় অসহ্য হয়ে ভূল করে, তখন সে জাহান্নামী হয়ে যায়। আল্লাহ এমন ই সব ঈমানদারদের জন্য জান্নাত তৈরী করেছেন যারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে মহান আল্লাহর আইনের বিরোধী কিছু করে না। আমরা হয়ত একটু তুলনা করলে দেখব আমাদের স্থান কোথায়।
আমরা অনেক ছোট মানুষ, না কোন নেতা, না বড় পদে আসীন কোন ব্যক্তি। হয়তা আমাদের কথায় কোন পরিবর্তন আসবেনা। কিন্তু একা ব্যক্তিমানুষের উপলব্ধিগুলো যখন সামাজিক উপলব্ধিতে পরিনত হবে তখন ই পরিবর্তন আসবে। আর ব্যক্তিমানুষের উপলব্ধিবোধ অপর ব্যক্তি মানুষের মানবিক সত্তাকে জাগিয়ে তোলে। একজন সৎ ও দৃঢ়চেতা মানুষ সমাজের জন্য হতে পারে অনুকরনীয়। আসুন না আমরা সবাই নিজেদের মানবিকবোধ কে জাগিয়ে তুলি। নিজেদের রাঙ্গিয়ে তুলি ইসলামী রং এ।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন