বাংলাদেশ ভ্রমনঃ কিছু কথা এবং কিছু ব্যাথা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ৩১ জুলাই, ২০১৫, ০৮:৩৪:৩৯ রাত
দেশে গিয়েছিলাম আমার ক্যামেরাটা সাথে নিয়ে, ইচ্ছে ছিলো দেশে গিয়ে বর্ষার কিছু রং এর ছবি তুলবো, ঘাস ফড়িং, প্রজাপতি আর দেশিয় পাখিদের বন্দী করে রাখবো ডিজিটাল ফ্রেমে। ইচ্ছে ছিলো গতবারের মত গ্রামের গিয়ে প্রকৃতির মাঝে অস্তগামী সূর্য্যের লাল ছবি তুলবো, গ্রামের দুরন্ত বালকের নির্মল হাসির ছবি তুলবো। ইচ্ছে ঈদটিকে উদযাপন করবো সবার সাথে সেটিও হয়নি।
ইচ্ছে ছিলো অনেক কিছুর। তবে ইচ্ছেগুলো খুব বেশি দামী ছিলো না। কিন্তু কোথায় যেন বদলে গেছে আমার ফেলে আসা সময়গুলো, বদলে গেছে আমার সেই গ্রামের মানুষগুলো, হয়ত বদলে গেছে প্রকৃতি, হয়ত পরিবেশ প্রকৃতি আমাদের আর আপন ভাবতে পারছেনা। কোথায় যেন অসামন্জস্যতা, কোথায় যেন অমিল।
তবে বাসার বেডে শুয়ে জানালায় উকি দেয়া আকাশ দেখেছিলাম, মনে হয়েছিলো আকাশের রংটা ঠিকই আছে, দেখেছিলাম বাসার আংগিনায় শালিক পাখির মুখ থেকে আহার গুলো নেয়ার জন্য দৃশ্য, বাচ্চা গুলোর আদুরে চিতকার। ছবি তুলতে গিয়ে পারিনি তারা এসেছিলো ক্ষনিকের জন্য।
ফিরে আসার শেষ কয়দিন আকাশটা কেমনজানি আপন মনে হয়েছিলো। আকাশের নীল রংটা কাছে ডাকছিলো সাথে গাছের সবুজ।
তবে মানুষগুলোর রং বদলে গেছে। আগের সাদা মানুষগুলো জীবনের জটিল হিসেবে কুটিল হয়ে উঠেছে। মানুষ নামী প্রানীগুলো এখন আর সেই সাদা মনের মানুষ নেই সবাই কেমন জানি মানুষের মুখোশে বন্য হায়েনার মত হয়ে উঠছে, কিসের জেন নেশা, মনে হয়েছে পুরো দেশটা একটি জংগল হয়ে উঠেছে যেখানে প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের তীর্র আকাংখা হয়ে উঠেছে মূখ্য। বিত্তহীন মানুষগুলোর চিত্ত কেমন জানি কলুষিত হয়ে উঠেছে, মানুষগুলো বিত্তের তীব্র মোহে কেমন জানি বদলে গেছে, সেখানে চেষ্টা করে বড় হওয়ার চেয়ে মানুষকে ঠকিয়ে বড় হওয়ার আকাংখাই মনেহয় মূখ্য হয়ে উঠেছে, সততা আর ন্যায়ের জায়গায় এখন অসততাই সমাজের নীতি হয়ে দাড়িয়েছে। সেখানে কেউ নীরব থেকে অন্যায়ের জয়গান গাইছে আর কেউ ঘটনায় জড়িয়ে ক্ষনিকের আদিম উল্লাসে মেতে উঠছে।
দেশে গিয়ে দেখলাম শুধুমাত্র মতাদর্শের পার্থক্যের কারনে একজন মানুষকে কিভাবে বার বার জেলে যেতে হয়। দেখলাম স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে কিভাবে মানুষকে নিজের বাড়ি ছেড়ে রাতের পর রাত পালিয়ে থাকতে হয়। দেখলাম কিভাবে মানুষের মুখোশধারী সমাজপতিরা তথাকথিত ভালো মানুষগুলো সেগুলোকে উতসাহ দিয়ে নিজেদের পশুত্বের প্রকাশ করছে, দেখলাম কিভাবে মানুষ ন্যায়কে সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।
আমার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন, প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক। জীবনে অর্থের লোভ কখনো মনে স্থান পায়নি। পরিবার এবং স্কুল কলেজ থেকে একটা শিক্ষাই নেওয়ার চেষ্টা করেছি একজন ভালো মানুষ হওয়া, একজন ভালো ছেলে হিসেবে নিজের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করা। যে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছি, যে এলাকায় বড় হয়েছি কোনদিন কারো সাথে রাগ করেও হয়ত কথা বলিনি। কিন্তু সামান্য রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে যখন দেখি মানুষ মিথ্যার আশ্রয় নেয়, যখন দেখি আশেপাশের ভালোমানুষ গুলোর রংয়ের মধ্যে ভেজাল তখন অবাক হয়ে যাই। হয়ত যে শিক্ষক আমাকে হাতে কলমে বড় করিয়েছে তিনিও রাজনৈতিক রং এ রন্জিত হয়ে নিজের স্বত্তাকেও হার মানিয়েছে সমাজের সেই নোংরা খেলায়। জীবনে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়া যেমন সহজ সেটি হতে পারা হয়ত সহজ না। মানুষকে মানুষের মত করে ভালোবাসতে শেখাটা আমরা আর শিখতে পারছিনা।
সৈয়দপুরের হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম ভাই, যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন থেকে মানুষটাকে জানি। কখনোই কারো সাথে ঝগড়া বা রাগ করে কথা বলেছে শুনিনি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে বেচারা নিরিহ মানুষটাকে কয়েকবার ধরে নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা খেলছে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা। ধরে নিয়ে মাইর, টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া, রাজনীতি যাতে না করে সেজন্য শারীরিক অত্যাচার করা বেশি টাকা পাইলে ছেড়ে দেয়া, এসবের মধ্যে বেচারার জীবন চলছে। আসার আগে কথা হলো বললেন আবার অন্য এলাকার একটা মামলা দিয়েছে, হয়ত আবার কোনদিন পুলিশ ধরবে, মারবে। আমরা সমাজের ভালোমানুষ গুলো মনের বিকৃত আনন্দে পুলকিত হবো, প্রতিপক্ষের একজন মাইর খাচ্ছে শুনে আমরা আদিম বিকৃত আনন্দে উল্লাস করবো।
এভাবে আর কতদিন?? আমরা কি পারি না মানুষ হতে?? মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে?? আমরা কি পারিনা মানুষকে ভালোবাসতে??
হয়ত অনেকেই বলবে দেশে এমন অবস্থা নেই, তাদের প্রতি অনুরোধ একবার নিজেকে মানুষ ভেবে চারপাশে তাকান দেখবেন আমরা মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করছি, আমরা সমাজের অপরাজনীতির ফাদে বন্দী হয়ে মানবতার অপমান করছি, দেখবেন সমাজের ভালো ছেলেটি এখন পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়, চোর-বদমাশ-গুন্ডা-নেশাখোর রা এখন নিশ্চিন্তে ঘুমায়। আর সেই ঘুমের ব্যবস্থা আমরাই করে দিয়েছি। কারন আমরা অপরাজনীতির গড়া সমাজনীতির কাছে নিজেদের স্বত্তাকে বিক্রি করে দিয়েছি নিছক নোংরা রাজনৈতিক স্বার্থে।
প্রত্যাশা একটাই, সবাই সবাইকে ভালোবাসুক, নিজ ভূমে সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারুক, বাংলাদেশের মানুষগুলোর মধ্যে আগের সেই শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসুক। পুলিশগুলো সমাজের ভালো মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিখুক।
"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম
হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম
জারি গান, বাউল গান
আনন্দের তুফান
গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম
বর্ষা যখন হইত,
গাজির গান আইত,
রংগে ঢংগে গাইত
আনন্দ পাইতাম ।।
কে হবে মেম্বার,
কে বা গ্রাম সরকার
আমরা কি তার খবরও লইতাম ।।
হায়রে আমরা কি তার খবরও লইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ।।
বিবাদ ঘটিলে
পঞ্চায়েতের বলে
গরীব কাংগালে
বিচার পাইতাম ।।
মানুষ ছিল সরল
ছিল ধর্ম বল ।।
এখন সবাই পাগল
বড়লোক হইতাম ।।
আগে কি………
করি ভাবনা
সেই দিন আর পাব নাহ
ছিল বাসনা সুখি হইতাম ।।
দিন হতে দিন
আসে যে কঠিন
করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…."
সবাই ভালো থাকুক!
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার একটা লিখা পড়লাম। মাশাআল্লাহ্।
প্রথম কমেন্ট এ ভাই নাবিক, মনের ক্ষোভ হতে বলুক কিংবা ভীতশ্রদ্ধ হয়ে বলুক - আমার মতে যথার্থই বলেছেন - আমরা আসলেই আলামত চাক্ষুষ করছি।
আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করে কোরান দিলেন এবং সেসাথে গাইড হিসাবে মোহাম্মদ সঃ কে পাঠালেন। আমরা এমন নালায়েক ও অবুঝ বান্দাহ যে, কষ্ট করে আজকের একবিংশ শতাব্দীর এই স্ট্রেইন্জ দেশ, বিদেশ ও বিশ্বের ইন্টারএ্যাকশান, মানুষজনের আচার আচরনকে বোঝার জন্য ওনার সেই কোরান ও রাসুলের শিক্ষাকে সামনে এনে একটু বিচার বিশ্লেষন করার চেষ্টা করছি না। ব্রিলিয়ান্ট ভাই ও বোনেরা এখন পিএইচডি, টাকা-পয়সা, ক্যারিয়ার ইত্যাদির পেছনে দিনের বেশীর ভাগ সময় দিয়ে এতটাই ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন যে - কোরান ও হাদীসের দিকে নিজে না গিয়ে, শর্টকার্টে অন্যের চোখে, অন্যের কানে ও অন্যের বলায় ও লিখায় বুঝতে চান আজকের দেশ ও বিশ্ব ও এর মানুষদের। স্বভাবতঃই সে চিন্তা ভাবনায় কোরান হতে গতানুগতিক শিক্ষা থাকলেও নতুন কোন উদ্ভুত প্রয়োজনীয় জ্ঞান নেই। স্বভাবতঃই আমরা ও আমাদের আলেমরা - কোরান হাদীসের উপর পূর্বোক্ত গবেষনার ভিত্তিতে জাবর কাটছি কিন্তু এর মধ্যেস্থিত ট্রু যে শিক্ষা আজকের সময়ের জন্য আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল মজুদ করে রেখেছেন - তা বুঝতে পারছিনা।
০ আপনারা কি ক্বুরবানীর গোস্ত খাবার জন্য হিন্দুদের নিমন্ত্রন দিতেন ? তারা আসতো ?
গান ব্যতিত উপরের কথাগুলোর সাথে সহমত। কারন গানটিতে অনেক অতিরিক্ত কথা রয়েছে, যা প্রত্যাক্ষান যোগ্য। ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন