শিক্ষক এবং শিক্ষাদান

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ২৬ মে, ২০১৫, ০৪:৩২:৫১ রাত

বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে অনেকেরই ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। কিন্তু শিক্ষক সে কি জন্য হবে বা শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের কি দিবে এটা হয়ত অনেকেই ভাবে না। নলেজ জানলেই যে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় এটি বেশির ভাগ সময়ই ঠিক না। নলেজ আহরন আর নলেজের ট্রান্সমিশন এক জিনিস না। অনেকে হয়ত অনেক নলেজ আহরন করতে পারে কিন্তু ছাত্রদের মাঝে সেটার ট্রান্সমিশের সঠিক ধারনা না থাকায় শিক্ষাদান অনেক সময় হয়ে উঠে বিরক্তির কারন। আবার শিক্ষাদানের চেয়ে টাকা পয়সা অর্জন বা সমাজে সন্মান অর্জনে বেশি নজর থাকায় শিক্ষাদানকে এফেকটিভ করতে কোন চেষ্টাই করা হয় না। এমন হওয়ার কারন হলো সমাজের প্রতি আমাদের দর্শন আমাদের দৃষ্টিভংগি। আমরা যদি সব পেশাকেই সন্মান করতে পারতাম তাহলে যে যে পেশাকে ভালোবাসে সে সে পেশাকে বেছে নিতে পারত। ফলে সবাই সবার সামর্থ্যর সবটুকু দিয়ে সমাজের সব ক্ষেত্রে সঠিক এবং যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারতো।

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র তখন আমাদের এক স্যার ক্লাশে ঢুকেই বলত এই সাবজেক্ট পরে কি করবা, অথচ উনার উচিত ছিলো ছাত্রদের কে তৈরী করে দেয়া, লড়াই করার মানসিকতা তৈরী করে দেয়া , একজন ছাত্র যাতে তার মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করা চেষ্টা করা। অথচ এমনটি হয়নি কারন উনি যে শিক্ষক হয়েছেন এটি হয়ত ও নিজেও এনজয় করতে পারেন না, সমাজের অন্যান্য পেশাতে সন্মান না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পেশাকে বেচে নিয়ে নিজের সন্মান বাচিয়ে রেখে অনেক ছাত্রের জীবনের স্বপ্নকেই হয়ত চুরমার করে দিচ্ছেন সেদিকে হয়ত ভ্রুক্ষেপ করারও অবকাশ নেই।

বিদেশে ছাত্র শিক্ষকের ইভাল্যুয়েশন করে, প্রতিটি কোর্সে শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ইভাল্যুয়েশন ফর্ম থাকে যেটি ছাত্রদের দিয়ে পুরন করিয়ে নিয়ে নিজের শিক্ষাদানের লেভেল যাচাইয়ের একটি ক্ষেত্র রাখা হয় যাতে করে শিক্ষাদানকে আরো ভালো করা যায় এবং যাতে করে ছাত্ররা শিক্ষাকে আনন্দের সাথে গ্রহন করতে পারে। আমাদের দেশে এসবের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষাদান কিছুটা বা অনেক সময় ছাত্রদের জন্য এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের স্বরূপ হিসেবে দেখা যায়। শিক্ষকদের মাঝে এসবের চর্চা তৈরী করে শিক্ষাদানকে আরো আধুনিক এবং ছাত্রদের জন্য উপভোগ্য হিসেবে তৈরী করা যেতে পারে।

আবার বিদেশে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যেমনঃ ক্যাথিড্রাল লেকচার, প্রব্লেম বেইস লার্নিং। শিক্ষাকে আনন্দময় করতে নানা রকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে ছাত্রের একই ধরনের লেকচারের প্রতি অরুচী দুর করা হয়। প্রতিটি কোর্সকে ক্যাথিড্রাল লেকচার, ছাত্রদের সেমিনার, গ্রুপ ল্যাবে ভাগ করে উপভোগ্য করে তোলা হয় তেমনি শিক্ষরাও নানাভাবে ছাত্রদের মেধার স্বাভাবিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। ছাত্রদের উতসাহদান একটি অন্যতম বিষয়। আমাদের দেশে ছাত্র শিক্ষকদের চেয়ে বেশি জানা পাপ। যদি এমন কোন প্রশ্ন করে যেটা শিক্ষকের জানা নেই তাহলে শিক্ষক প্রায়ই ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয় পাছে না তার দূর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে সহপাঠীর মত আচরন বিরাজ করে ফলে সহজ পরিবেশে ছাত্ররা যেমন নিজেদের জানার আগ্রহ সহজেই প্রকাশ করতে পারে তেমনি শিক্ষকও ছাত্রদের বিষয়ে জেনে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে।

প্রি-স্কুল বা প্রাইমারী স্কুল গুলোতে বিভিন্ন জিনিস শিক্ষাদানের পাশাপাশি ছাত্রদেরকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করা হয়। যাতে করে তাদের মধ্যে মনের বিকাশ হয় স্বাভাবিকভাবে। আমারা যেমন বইয়ে পড়ি রাস্তা পার হতে জেব্রা ক্রোসিংয়ের মাধ্যমে পার হতে হয় সেখানে উন্নত বিশ্বে ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোকে দলবেধে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে শেখানো হয় কিভাবে রাস্তা পার হতে হবে, কিভাবে সিগন্যাল বুঝে দাড়াতে হবে। এখানে ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোকে সব কিছুই হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে ছোট বেলা থেকে তাদের মধ্যে আত্নসন্মানবোধ তৈরী করে দেয়া হয়। আমাদের দেশের মায়েরা যেসব বাচ্চার টয়লেট করার পর পরিষ্কার করে দনে ঐরকম বাচ্চারা এখানে নিজের কাজ নিজেই করা শেখে কারন স্কুলেই ওদের সব শিক্ষা দেয়া হয় হাতে কলমে ফলে একটি সুস্থ্য এবং আত্ননির্ভরশীল শ্রেনী তৈরী হয় এভাবে একটি আন্তনির্ভরশীল জাতি তৈরী হয়। আমাদের দেশে বার বার রাস্তার সিগনাল বাতির পরিবর্তন করা হয় কিন্তু ছোট ছোটো বাচ্চাগুলোকে যদি শিক্ষাদান শুরু করে দেয়া হয় তাহলে একটি সময় পর সমাজে একটি সচেতন শ্রেনী তৈরী হবে যারা কিনা দেশটাকে পরিবর্তন করতে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারবে।

সমাজ ও দেশকে পরিবর্তন করতে চাইলে শিক্ষা ও শিক্ষাদানের পদ্ধতির পরিবর্তন আবশ্যক। কারন শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বাস্তব জ্ঞানের প্রসার না ঘঠাতে পারলে জাতির বাস্তব কোন পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়।

দেশের শিক্ষার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে থেকে জেলা পর্যায়ে সেরা শিক্ষক এবং ছাত্র নির্বাচন করে ছাত্র ও শিক্ষকদের গ্রুপ তৈরী করে সেসব ছাত্র-শিক্ষকদের দেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উন্নত বিশ্বে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এতে করে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় ঘটবে ফলে সেই প্রতিনিধি দেশের বিদ্যমান সমাজের মধ্যে তার শেয়ারের মাধ্যমে কিছু শিখতে পারবে।

একদল ভালো শিক্ষক যেমন একদল ভালো ছাত্র তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি একদল ভালো ছাত্র একটি জাতি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। আর তাই শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে আরো বেশি যত্নশীল হওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি শিক্ষক সমাজকে সময়োপযোগী করে তোলার জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকাও আবশ্যক।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

322591
২৬ মে ২০১৫ সকাল ০৯:২৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ
০১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৩
265364
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই
322656
২৬ মে ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
হতভাগা লিখেছেন : সাবজেক্ট কোন ব্যাপার না । ব্যাপার হচ্ছে সেই সাবজেক্টে অনার্স কমপ্লিট করে একটা চাকরি বাগানো । বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কোন সাবজেক্ট নেই যে এই ফ্যাকাল্টিতে পয়সা দিয়ে পড়তে হবে তবে কোন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না যা কর্মক্ষেত্রে লাগবে না । শুধুই জ্ঞান অর্জনের জন্য কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে নি ।

জ্ঞান অর্জনের চেয়ে সার্টিফিকেট অর্জনই মুখ্য । কারণ কষ্ট করে বাবা মা লেখা পড়া করায় সন্তান পাশ করে চাকরি করে তাদেরকে ভরণ পোষন করবে বলে। জ্ঞানের বিশাল জাহাজ হয়ে বসে বসে খাবার দিন এখন শেষ ।

বসে বসে কথাবাজি করার চেয়ে একজন কর্মঠ লোক পরিবার তথা সমাজের জন্য বেশী কার্যকরী।
২৬ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:২৭
263815
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত বলেই হয়ত এমন একটা কমেন্ট করতে পেরেছেন। লিখাটার উদ্দেশ্যই বুঝতে পারেন নি। ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য।
২৭ মে ২০১৫ সকাল ১১:০৭
264011
হতভাগা লিখেছেন : বিশাল বিশাল জ্ঞান বিতড়নকারীর পেছনে বড় ফাইনান্সিয়াল ব্যাক আপ খুব কম বাংলাদেশীর আছে ।

বিদেশেও যতই আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হোক না কেন শিক্ষার আলটিমেট লক্ষ্য কিন্তু অর্থ উপার্জন , যারা জ্ঞান বিতড়নকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়/গবেষনার কাজে নামে তাদেরকে আগে থেকেই ফাইনান্সিয়াল চাপমুক্ত করে রাখার ব্যবস্থা করা হয় । বাংলাদেশে সে রকম লাক্সারী করার সুযোগ নেই।

তবে .... উত্তরাধিকার সূত্রে যাদের অগাধ টাকার প্রবাহ তাদের পক্ষেই সম্ভব কোন কিছু না করে মানুষকে জ্ঞান বিতড়ণ করার মত নেই কাজ তো খৈ ভাজের মত কাজ করা। কারণ বাংলাদেশে এই একটা জিনিস ফ্রি পাওয়া যায় - কাউকে উপদেশ/জ্ঞান দান করা ।

আপনি কি লেখাপড়া করেছেন ? করে কি সার্টিফিকেট পেয়েছেন ? এ সার্টিফিকেট কি কোন চাকরিতে ইন্টারভিউয়ের সময় শো করেছেন ?

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র তখন আমাদের এক স্যার ক্লাশে ঢুকেই বলত এই সাবজেক্ট পরে কি করবা, অথচ উনার উচিত ছিলো ছাত্রদের কে তৈরী করে দেয়া, লড়াই করার মানসিকতা তৈরী করে দেয়া , একজন ছাত্র যাতে তার মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করা চেষ্টা করা। অথচ এমনটি হয়নি কারন উনি যে শিক্ষক হয়েছেন এটি হয়ত ও নিজেও এনজয় করতে পারেন না, সমাজের অন্যান্য পেশাতে সন্মান না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পেশাকে বেচে নিয়ে নিজের সন্মান বাচিয়ে রেখে অনেক ছাত্রের জীবনের স্বপ্নকেই হয়ত চুরমার করে দিচ্ছেন সেদিকে হয়ত ভ্রুক্ষেপ করারও অবকাশ নেই।


০ আপনার এই প্যারাটার প্রেক্ষিতেই আমার এই মন্তব্য । আপনি নিজেও মনে হয় কি লিখেছেন লেখার পর চেক করে দেখেন না । (আপনার শিক্ষক বাস্তব কথাই বলেছিলেন )।

এই প্যারাটা সরিয়ে ফেলেন এবং আমার মন্তব্যগুলোও সরিয়ে ফেলেন ।
২৭ মে ২০১৫ দুপুর ০১:২৪
264022
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : দুঃখিত আপনার সাথে তর্ক করার কোন কারন খুজে পেলাম না। তর্ক সবার সাথে করা বোকামী, অযথা সময় নষ্ট। ভালো থাকবেন। আপনার সীমায় আপনি হয়ত ঠিকই বলেছেন। Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File