আনুগত্য মানেই কি নেতার সামনে কাচুমাচু করে কথা বলা?
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:২৭:৫০ রাত
গত সপ্তাহে ইক্বমাতে দ্বীন বইয়ের উপর আলোচনা হচ্ছিলো সে আলোচনাতে আনুগত্যকে একটু অন্যভাবে বলা যায় ধরাবাধা আলোচনার বাইরে গিয়ে একটু গভীর আলোচনা করা হয়। আমার কাছে আনুগত্যের সেই ধরনটিই আসল আনুগত্য মনে হয়েছিলো।
আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
১) আনুগত্য হতে হবে বাইডিরেক্শনাল
আমীর/লিডার যেমন কর্মীর আনুগত্য কামনা করবে ঠিক তেমনি লিডারকেও কর্মীর ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে, কর্মীর খোজ খবর নেয়া, ভালো-মন্দের খবর নেয়াও আমীর/লিডারের দায়িত্ব। আমীর/লিডার বা দ্বায়িত্বশীলকে সব সময় মনে রাখতে হবে তিনি শুধুমাত্র আল্লাহর বিধানকে সমুন্নত রাখতেই নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।
২) আমীর/লিডার এর আনুগত্যের মান আর রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্যের মানের সমান নয়।
প্রথমটির ক্ষেত্রে কর্মীরা কোন সমস্যা দেখলে আমীরকে প্রশ্ন করতে পারে বা এখানে আনুগত্যের ব্যাপারে আমীর/লিডার প্রশ্নের উর্ধে নয় কিন্তু রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্যের হলো আবশ্যক এবং নিঃশর্ত সেখানে প্রশ্নের কোন সুযোগ নেই কারন তিনি সরাসরি আল্লাহ থেকে ওহী প্রাপ্ত।
উদাহরন হিসেবে বলা যায়, হযরত উমর (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন তিনি ভরা মজলিসে অন্য সাহাবা (রাঃ) এর দ্বারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
৩) আনুগত্য করতে গিয়ে কর্মীদের স্বতন্ত্র স্বত্তাকে বিকিয়ে দেয়া যাবেনা বা নষ্ট করা যাবেনা।
অনেক সময় দেখা যায় আনুগত্য করতে গিয়ে জ্বি-হুজুর মার্কা আনুগত্য শুরু হয়ে যায়। দ্বায়িত্বশীল কি ভাববেন মনে করে অনেক সময় ইসলামের অনেক বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়, এমন কিছু করা যাবে না। ন্যায় কথা বলার সময় ও নাকি কাচুমাচু করতে হবে এমন একটি ধারনা চর্চা করা হয়। কর্মীদের দ্বায়িত্ব হলো আনুগত্যের জন্য সব সময় আল্লাহর উদ্দেশ্য কথাটি মনে রাখা এবং নেতাদের ভূল ধরিয়ে দেয়া।
৪) আনুগত্য একটি কনসেপ্ট,
আনুগত্য মানেই এই না যে, নেতাকে দেখলেই কাচুমাচু করে দাড়াতে হবে, আনুগত্য মানে এই না যে নেতা যা বলবে অন্ধভাবে তাই পালন করতে হবে, আনুগত্য মানে এই না যে, নেতার সামনে হক কথা বলতেই লজ্জ্বায় কাচুমাচু করতে হবে। আনুগত্য মানেই হলো আল্লাহকে সন্টুষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর দেয়া কোন বিধান পালনের জন্য নেতার আদেশের আনুগত্য করা।
প্রচলিত সিস্টেমে ইসলামি আনুগত্য র দেশীয় ট্রাডিশনকে মিক্সড করে একটি ভিন্ন রকমের আনুগত্যের চর্চা করা হয়। দেশীয় ট্রাডিশনে গুরুজনের সামনে মাথা উচু করে কথা বলা যাবেনা এমন মনে করা হয়, গুরুজনেরা ভূল বললেও সেটির প্রতিবাদ করা যাবেনা বা গেলেও সেটি না মানলে কিছু বলা যাবেনা। আবার দ্বায়িত্বশীল রা আনুগত্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক সময় সূরা হুজুরাতের কিছু আয়াত তেলওয়াত করে বলে থাকেন যে নেতার চেয়ে গলার স্বর উচু করা যাবেনা। এখানে এটি চিন্তার দাবি রাখে যে সূরায় শুধু রাসুল (সাঃ) এর জন্য বলা হয়েছে নাকি দ্বায়িত্বশীলদের জন্য কারন বর্তমান সময়ে সূরা হুজুরাতের উদাহরন শুধু দায়িত্বশীলদের আনুগত্যের জন্য দেয়া হয়ে থাকে। দ্বায়িত্বশীল রা যদি কোন অন্যায় সিন্ধান্ত নেন এবং কর্মীরা যদি সে বিষয়ে নিজেদের সঠিক অবস্থান জোড়ালোভাবে তুলে ধরেন সেক্ষেত্রে আনুগত্যের বরখেলাপ হয় কিনা বিষয়টি অবশ্যই একটি আলোচনার বিষয় ।
আবার অনেক সময় সংগঠনের ভালো চিন্তার কথা বলে অনেক কিছু চেপে যাওয়ার প্রবনতা দেখা যায় সেগুলো ইসলামী আনুগত্যের মধ্যে পড়ে কিনা ভাবার বিষয়।
দেশীয় ট্রাডিশন এইজন্য বললাম যে, অনেক সময় দেখা যায় গ্রামে দু-বংশের ঝগড়া লাগলে যদি নিজ বংশের কেউ অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান করা হলে সেটি হয়ে যায় বংশের আনুগত্যের বরখেলাপ।
ইক্বামাতের দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নৈতিক উন্নয়নের চেয়ে যখন রাষ্ট্রীয় ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তখন ভংগুর নৈতিক মান নিয়ে কর্মীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম কায়েমের জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে হয় এবং সেটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারনে ব্যক্তির ঈমানী মান এবং আনুগত্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে সব সময় লক্ষ্য দিতে সফল না হওয়ার কারনে সাংগাঠনিক আনুগত্যের কারনে ইসলামী আনুগত্যের বরখেলাপ হয়ে যেতে পারে। রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবা (রাঃ) এর যুগের ঈমান আর আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের মুসলিমদের অবস্থান অনেক অনেক গুন নিচে। এমন অবস্থায় ব্যক্তির মানুষ হিসেবে রাগ-ক্রোধকে সংবরন করার যোগ্যতা অনেক কম থাকে, আবার অন্যের দ্বারা প্রভাবিত বা আবেগ দ্বারা তাড়িত হওয়ার প্রবনতাও বেশি থাকে এমন অবস্থায় রাজনৈতিক বা সাংগাঠনিক আনুগত্যের বিষয়গুলী অনেক গুরুত্ববহন করে কারন এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা দলীয় শক্তি থাকায় ব্যক্তি মানুষের দ্বারা অতি সহজেই অন্যায় সম্পাদিত হতে পারে।
সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের দ্বায়িত্বশীল এবং কর্মীদের জন্য আনুগত্য ও ইক্বামাতে দ্বীনের আলোচনা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আনুগত্য একটি দ্বিমুখি প্রক্রিয়া সেটা এখন আধুনিক ম্যানেজমেন্ট এর একটি মূল কথা।
রাসুল (সঃ) কেও কিছু ক্ষেত্রে সাহাবারা প্রশ্ন করেছিলেন এবং তিনিও সাহাবা এবং তার স্ত্রিদের পরামর্শ নিয়েছিলেন। বদর এর যুদ্ধের সময় হযরত খাব্বাব ইবনে মুনজির (রাঃ) এর পরামর্শ এবং হুদায়বিয়ার সন্ধির পরবর্তি পর্যায় এ এর উদাহরন আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন