" টু বি অ্যা মুসলিম" অনুবাদ প্রথম ভাগ-০১

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৫:৪৬ রাত

১.১.৩. রিসালাত

১) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার নবী ও রাসুলদের আসমানী কিতাব দিয়ে প্রেরন করেছেন যাতে করে সকল মুসলিম আল্লাহ, এই পৃথিবীতে তাদের উদ্দেশ্য, এবং তাদের শেষ গন্তব্য সম্বন্ধে জানতে পারে।

আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসুলের মধ্যে রাসুল (সাঃ) হলেন সর্বশেষ নবী। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন নামক চিরস্থায়ী মু´যেজা দিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন এবং শক্তিশালী করেছেন।

২) আইন তৈরীর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। কেউই আল্লাহর আইন বা শা´রিয়া কে অগ্রাহ্য করতে পারেনা। ইজতিহাদ কিংবা শা´রিয়া হতে আইন তৈরীর ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের ক্ষমতা সীমিত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে সোপর্দ। ইনিই আল্লাহ আমার পালনকর্তা আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী হই।" সূরা আশ-শুরাঃ ১০

৩) তায়্বিল (কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা) এর ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী প্রজন্মের মুসলিমদের ঐতিহ্য এবং মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী প্রজন্মের মুসলিম আলেমদের দ্বারা কুরআন এবং হাদিসের ব্যাখ্যা ঐতিহ্যবাদী এবং সংষ্কারবাদী কিংবা আধুনিকতাবাদীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা উচিত না ।

১.১.৪. যাকাত/দানশীলতা

মানুষকে এমনভাবে আল্লাহকে ভালোবাসা উচিত যাতে করে তার হৃদয় সর্বদা আল্লাহর খোজে ব্যস্ত থাকে। আল্লাহর প্রতি এই ভালোবাসা একজন মানুষকে ভালো কাজ, ত্যাগ, এবং আল্লাহর জন্য সংগ্রাম করতে এত বেশি উদ্বুদ্ধ করবে যে, এই ক্ষনস্থা্যী পৃথিবীর প্রতি তার ভালোবাসা, এবং তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা তাকে ভালো কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।" সূরা আত-তওবাঃ ২৪

যদি কেউ ঈমানের স্বাদ পেতে পছন্দ করে তাহলে আল্লাহর জন্য তার ত্যাগ স্বীকার করা উচিত।

রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

"যাদের কাছে তিনটি জিনিস আছে তারা ঈমানের স্বাদ গ্রহন করবে, সেগুলো হলো, অন্যকিছুর চেয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা, শুধু আল্লাহর জন্যই অন্যের প্রতি ভালোবাসা, এবং দোযখের আগুনের প্রতি নিক্ষেপ হওয়ার মত কুফরির দিকে প্রত্যাবর্তিত হওয়াকে ঘৃণা করা। (বুখারী)"

১.১.৫. ইবাদত

১) একজন মানুষের উচিত আল্লাহর উপাসনা করা এবং তার সাথে শরীক না করা বা তার প্রতিদ্বন্দী কাউকে স্বীকার না করা। একজন মুসলিম আল্লাহর ইবাদত করে কারন আল্লাহর রাব্বুল আলামিন তার নবী রাসুলের এর মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।" সূরা আন-নাহলঃ ৩৬

২) প্রত্যেক মুসলিমের উচিত আল্লাহর গুনবাচক নামসমূহ জানা এবং বুঝা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

"আল্লাহর ৯৯ টি নাম আছে, ১০০ থেকে একটি কম; তোমাদের মধ্যে যারা সেগুলো মুখস্ত করবে তাদের স্থান হবে জান্নাতে। আল্লাহ হলেন বিজোড় এবং আল্লাহ বিজোড় জিনিস পছন্দ করেন। (বুখারী)"

৩) আল্লাহর নাম গুলো পড়ার মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরন করা উচিত। মানুষের হৃদয়ের আরোগ্য লাভের আল্লাহর এরকম স্মরন বা জিকির ই হলো উত্তম ঔষুধ। দুনিয়ার সমস্যাগুলোর সাথে সংগ্রামের জন্যও এটি একটি কার্যকরী অস্ত্র।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার নবী (সাঃ) কে বলেছেনঃ

"যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।" সূরা আর-র´দঃ ২৮

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী।" সূরা আয-যুখরুফঃ ৩৬

৪) আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে মানুষের চিন্তা করা উচিত।, তবে আল্লাহর নিজস্বতা নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়।

নবী (সাঃ) একটি হাদীসে বলেছেনঃ

"আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা কর তবে আল্লাহর স্বত্তা নিয়ে নয় কারন তোমরা তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে না।"

এই হাদীসটি আবু নুঈয়াম কর্তৃক আল-হিলায়াহ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, এবং আল-আসফিহানি কর্তৃক তারঘিব উইয়া-তারহিব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।)

৫) একজন মানুষকে শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করা উচিত। আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা এবং তার থেকে পৃথক হওয়ার ভয় মানুষকে সকল প্রকার নিষিদ্ধ জিনিস হতে বিরত থাকতে শক্তি যোগায়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।" সূরা আল-মূলকঃ ১২

৬) একজন মানুষকে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করা উচিত এবং তায়াক্বুল অবলম্বন করা উচিত (আল্লাহর উপর আস্থা)। এটি তার মধ্যে এমন ধরনের দায়িত্ববোধ তৈরী করে যে, সে যা কিছু করে সব কিছুতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।" সূরা আত-তালাক্বঃ ৩

নবী (সাঃ) বলেছেনঃ

"আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হও, এবং আল্লাহ তোমাদের রক্ষা করবেন। আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হও, তাহলে তোমরা তোমাদের সামনে তাকে দেখতে পাবে। যদি তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে আল্লাহকেই জিজ্ঞেস কর; যদি তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন পরে, তাহলে আল্লাহর কাছে ই সাহায্য চাও। জেনে রাখ যদি সমগ্র জাতি তোমাদের উপকার করতে চায়, তাহলে তারা ততটুকু উপকারই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমাদের জন্য বরাদ্ধ রেখেছেন, তারা তোমাদের ততটুকু ক্ষতিই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তিরমিজি)

৭) আল্লাহ করুনা এবং সীমাহীন নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিত। শুকরিয়া আদায় ধর্মের একটি অংশ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর।" সূরা আন-নাহলঃ ৭৮

"তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী। যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?" সূরা ইয়াসীনঃ ৩৩-৩৫

যারা আল্লাহকে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে তাদের জন্য দয়া-করুনা বাড়িয়ে দিতে আল্লাহ প্রতিশ্রতি দিয়েছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।" সূরা ইব্রাহিমঃ ৭

৮) আল্লাহর কাছে অনুশোচনা এবং ইসতিগফার করা উচিত। এই ধরনের অনুশোচনা মানুষের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করে এবং তার হৃদয়ের মধ্যে ধীরে ধীরে স্থিরতা এবং প্রশান্তি প্রদান করে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ

"যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।" সূরা আন-নিসাঃ ১১০

"তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না। তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।" সূরা আল-ইমরানঃ১৩৫-১৩৬

বিঃদ্রঃ "To be a muslim-Fathi Yakan" বইটি অনুবাদের চেষ্টা করছি। কোথাও ভূল হলে সংশোধন করে দিলে উপকৃত হবো।

সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

বিষয়: বিবিধ

১০০৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262813
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৩৩
শুভ্র আহমেদ লিখেছেন : thanks
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৩৪
206542
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : welcome.
262841
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:২৫
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ পিলাচ
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৪৬
206555
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File