দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আজকের ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:২২:০৭ সকাল
যে বিভেদ দ্বন্দ্ব তৈরী হলো বা তৈরী করা হলো, এটি আর থাম্বার নয়, হয়তো শুরু হলো। দীর্ঘ সময়ে মানুষের মনে জমে থাকা বিভেদ আজ কেবল প্রকাশ পাওয়া শুরু করেছে।
১৯৪৭ সালে যখন ভারত থেকে পাকিস্তান আলাদা হয় তখন মূলত ধর্মীয় পরিচয়ের উপর ভিত্তি করেই দুটি দেশের তৈরী হয়েছিলো। কিছুটা পেছনে ফিরে তাকানো যাক, ১২০৪ সালের দিকে বখতিয়ার খিলজির যখন বাংলা জয় করে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করেন তখন থেকে মূলত বাংলা বিভিন্নভাবে মুসলিমদের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিলো।
তবে বাংলাদেশে মুসলিমদের আগমন ঘটে ১৩ শতকের প্রথম দিকে। ১২০৩ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলা জয়ের মাধ্যমে এদেশে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করেন। তখন থেকেই মূলত বাংলাদেশে বিভিন্ন মুসলিম ধর্ম প্রচারকদের আগমন ঘটে। প্রখ্যাত মসলিম ধর্ম প্রচারক হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর আগমন ঘটে ১৩০৩ সালে সিলেটে। বৌদ্ধ-হিন্দু সংষ্কৃতি অধ্যুষিত বাংলাদেশ ইসলামের সৌন্দর্যে দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। কয়েক শ বছরের মধ্যে একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিনত হয়। তবে এত কিছুর পরও বাংলাদেশ ছিলো ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরন হিসেবে। পার্শ্ববর্তী ভারতে যত ধরনের ধর্মীয় দাঙ্গা হয়েছে সেরকম কোন উদাহরন বাংলাদেশে নেই। এর থেকে এটি প্রমানিত যে, মুসলিমরা দাঙ্গায় বিশ্বাস করেনা। যদি তাই করত বাংলাদেশে হয়ত কোন হিন্দু বাস করতে পারতো না।
কিন্তু কথা হলো এরকম একটি শান্তিময় দেশে াহঠাৎ ইসলামি দল নিষিদ্ধ কিংবা সেক্যুলার দেশ করার প্রচারনা কেন শুরু হলো। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ইসলাম কতটুকু বাধা হয়ে দাড়িয়েছে?? কই পাকিস্তানের মত তো কেউ এখানে বোম্ব মারেনা। সেরকম উল্লেখ করার মত ধর্মীয় দাঙ্গা সেটাও নেই। তাহলে আজ হঠাৎ এরকম আওয়াজ বা কেন??
বাংলাদেশে সরকার যখন চরমভাবে ব্যর্থ ঠিক তখনই এরকম একটি ইস্যু সামনে নিয়ে আসা হলো যাতে করে সাধারন মানুষের মাথা নষ্ট করে দেয়া যায়। বিশ্ব রাজনীতিতে যখন সন্ত্রাসবাদের পক্ষে বিপক্ষের নামে সকল মুসলিম দেশে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন চলছে, তখন সবদিক থেকে ব্যর্থ একটি সরকার সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে একটি পরিস্থিত তৈরী করে তার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। একদিকে যুদ্ধাপরাধের কথা বলে ডিজিটাল প্রজন্মকে ডিজিটালের থাবায় হিপনোটাইজ করে রেখেছে অপরদিকে ইসলাম কে চরম পন্থা হিসেবে তুলে ধরার এক ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু করেছে। যদি কোনভাবে দেশের ইসলামকে, মুসলিম সমাজকে জঙ্গীরুপে তুলে ধরা যায় বিশ্বমোড়লদের কাছে , তাহলে সেই মুসলিমদের রক্তের উপরে যদি অত্যাচারিতের বালা খানা তৈরী হয় তবু দেখার কেউ থাকবে না। আওয়ামী-বাম সরকার পরিকল্পিতভাবে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে।
এরূপ অবস্থায় বাংলার মুসলিম সমাজের উচিৎ একটি টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া। চারদিকে ভারত বেষ্টিত, একটি হিন্দু সংষ্কৃতির বলয়ে অবস্থান করে, প্রথাগতভাবে হয়ত আন্দোলন করে আর এগুনো যাবেনা। প্রয়োজন নীতির পরিবর্তন। যে দেশের মানুষ ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে সচেতন নয় সেখানে হয়ত শরীয়া ভিত্তিক সমাজ গঠনের যে আন্দোলন তা টেকসই না। বাংলাদেশে মুষ্টিমেয় লোক ছাড়া ইসলামি আইন ও বিধিবিধান নিয়ে সচেতন লোক পাওয়া দুষ্কর। আর তাই গ্রামে গেলে দেখবেন ইসলাম বলতে শুধু আবেগটাই আছে, আর কিছু ই নাই। ইসলামী শরিয়তের বিধান নিয়ে মোটেও মাথা ব্যাথা নেই এসব মানুষদের। তবে একটি জায়গায় এরা খুব আবেগী আর তা হলো তাদের নবী এবং তাদের ধর্ম কেউ কটুক্তি করতে পারবেনা। কিন্তু তারা যে প্রতিনিয়ত তাদের নবীজীর আদেশের অবমাননা করে চলেছে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করার সময় নেই। আর তাই এই রকম একটি জনগোষ্ঠি নিয়ে শরীয়া ভিত্তিক সমাজ গঠনের চিন্তা নিতান্তই বোকামী।
তবে আপাততো সংকট থেকে উত্তরনের জন্য সকল ইসলামী দলগুলোকে এক হয়ে কাজ করে যেতে হবে। সরকার জেনে বুঝে উস্কানী দিচ্ছে যে মুসলিম রা টুপি পরে রাস্তায় নামুক তাহলে এদের জঙ্গী প্রমান করে বিশ্বমোড়লদের নজরকারা যাবে।
পরামর্শঃ
১) সংকটকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা।
২) সবগুলো ইসলামী দল মিলে একটি জোট গঠন করা। (ইসলামি কোয়ালিশন ফ্রন্ট অথবা ইসলামী ব্রাদারহুড এরকম কিছু নাম দেয়া) যেহেতু সবার প্রথম উদ্দেশ্য একই রকম সেহেতু আপাতত একটি উদ্দেশ্য একতাবদ্ধ হওয়া। বড় দল হিসেবে জামায়াতের কিছু ছাড় দেয়া।
৩) যদি জোট গঠন করা সম্ভব না হয়, বড় ইসলামি দলগুলোর পলিসী ও নাম পরিবর্তন করে, ইসলাম ও ন্যাশনালিজমের মিশ্রনে একটি দল গঠন করা।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন