শাহবাগের দেশপ্রেম এবং আমার কিছু প্রত্যাশা।
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৩৪:১৮ রাত
মানুষ লড়াই করে শান্তির জন্য, লড়াই করে বিভেদকে প্রশমিত করার জন্য। আজব এক জাতি আমরা, নোংরা রাজনৈতিকদের দ্বারা আমারাও কলুষিত করছি, আমাদের নিজেদের ভ্রাতৃত্ববোধকে। দেশপ্রেমের নামে আমরা নিজেদের সুসম্পর্ক বিনষ্ট করছি। এটা তো স্বাধীনতার লড়াই না? আমরা কেউ ই দেশকে কম ভালোবাসিনা।
দেশপ্রেমের নামে নিজেদের মধ্যে হিংসা আর হানাহানি হয়ত দেশপ্রেমকেই কলংকিত করে। এক দেশে বাস করে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দার জন্য যারা বিভেদ তৈরী করে তারা মূলত দেশপ্রেমের নামে মানুষের আবেগকে কাজি লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের মত ঘৃণ্য ষঢ়যন্ত্র করে তারা মূলত জাতির দুষমন। যারা দেশপ্রেমের নামে দেশের প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে , তারা আর যাই হোক দেশপ্রেমিক হতে পারেনা। দেশপ্রেমের সংজ্ঞায় হয়ত এটি পড়েনা। যারা দেশপ্রেমের নামে গনমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে সেটি দেশপ্রেম হয় কি করে?? একটি দলের কুকর্ম লিখলে যদি দেশপ্রেমের বিরোধী হয়, তাহলে বলতে হবে আমরা আজব এক জগতে বাস করছি। হয়ত এসবের নাম ই হলো ফ্যাসিবাদ। দেশের শিক্ষিত এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক মানুষের উচিত এসবের বিরোধিতা করা।
আমি, আমরা সবাই চাই, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হোক, কিন্তু বিচারের নামে প্রহসন আমরাও চাই না। দেখুন বিচার করছে সরকার , ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ। যদি বিচারে কোন সমস্যা হয়, সেটি করছে আওয়ামীলীগ। কিন্তু এখানে ইসলামি ব্যাংক ই বা আসলে কেন? আর রেটিনা কোচিং আসলো কেমনে?? একটু কি আপনাদের চিন্তা হয় না, এসব কেন করছেন?? পারলে আওয়ামীলীগের আস্তানায় আগুন দিন্? এসব ভাবুন। গনতান্ত্রিক দেশে সব মত, পথ থাকনে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে হানাহানি কেন?? আপনারা সরকারের কাছে দাবি জানান, সেখানে অন্য রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা কেন আর ইসলামি রাজনীতির বিরোধীতা কেন?? অন্য দলের বিরোধীতা করলে আপনারা নিরপেক্ষ হলেন কিভাবে?? আপনারা যেমন নিরপেক্ষতা হারাচ্ছেন, ধীরে ধীরে আপনাদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী সরকার ফ্যাসিবাদকে উষ্কে দিচ্ছে, আপনাদের অজান্তে। আর সেটি হলে আমাদের সবার জন্য খারাপ বৈকি ভালো কিছু হবে না। সময় সকল অন্যায়ের বিচার করে। আজ যেমন আপনারা একটি দলের ছত্রছায়ায় করছেন, নিজেরাও বুঝতে চাচ্ছেন না। আগামীতে হয়ত আপনারাই দেশদ্রোহী হবেন, সময়ই আপনাদের বিচার করবে এটাই স্বাভাবিক, এটাই জগতের নিয়ম। তাই পারতপক্ষে উচিত সুযোগের অপব্যবহার না করা। কারন সুযোগের অপব্যবহার ই মানুষকে অন্যায় পথে ঠেলে দেয়। আর সময় তা লিখে রাখে তার আপন ডায়রীতে। কে জানে, হয়ত আপনি, নয়ত আপনার ছেলে মেয়েরা আপনার দেশপ্রেমের বিচার দেখবে দেশদ্রোহী হিসেবে। যাদের আপনি শাহবাগের গল্প শোনাবেন, সময় ই হয়ত আপনাকে একজন আবেগী, চরমপন্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে, সেদিন হয়ত আপনার ও কিছু করার থাকবেনা।
মানুষের ধর্ষন করে মূলত আবেগের কারনে, যৌন আকাঙ্খার কারনে। আর সে যৌন আকাঙ্খা মানুষের সব সময় থাকেনা। যখন মানুষ যৌন আকাঙ্খায় ব্যাকুল হয়ে যায়, প্রয়োজন পড়ে শারিরিক চাহিদা মেটানোর। আর যদি মানষের বিবেক সে কাজ না করে তখন কোন বিচার ই করতে পারেনা, হেরে যায় আবগের কাছে, চাহিদার কাছে। তখন সে নিজের আপন মেয়েকে ও ধর্ষন করতে দ্বিধাবোধ করেনা। সমাজে পরিচিত হয় ধর্ষকরুপে। হয়ত সে নিজেও উত্তেজনা থেকে গেলে বুঝতে পারে যে সে কত বড় ভূল করে ফেলেছে, কিন্তু তখন কিছু করার থাকেনা। সে নতুন পরিচয় পায়, আর সে পরিচয় সমাজে আর সব বাবাদের লজ্জিত করে। এই উত্তেজনা বা আবেগ নামক জিনিসকে যে যত বেশি নিয়ন্ত্রন করতে পারে, সেই বেশি ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তার চারিত্রিক দৃঢ়তা সবার কাছে হয় প্রশংসিত। আবেগ যেমন মানুষকে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে পরিচয় দান করে, লেখা হয় কাব্য গ্রন্থ, তাজমহলের মত সৌধ নির্মানে মানুষকে অনুপ্রেরনা সাহস দান করে, আবার সেই আবেগেই মানুষকে সমাজে নীচ-হীন পশুরুপে পরিচিত করে তোলে। এটি এমন এক অস্ত্র সঠিক সময়ে এর সঠিক ব্যবহার মানুষকে করে তুলে অনুসরনীয়। সময় তার ডায়রীতে লিখে রাখে তাদের নাম। কিন্তু যদি এই আবেগ হিংসা কিংবা ক্রোধ হয়ে প্রকাশ লাভ করে তাহলে সেটি মানুষকে ভালো কিছু এনে দেয় না। এনে দেয় ধ্বংস। সমাজে সে ইতর হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এবং সময় ই তার বিচার করে তার আইনে।
দেশপ্রেমিক মূলত তারাই যারা নিজের দেশের নামকে স্মরনীয় করে রাখতে পেরেছে আমন মহিমায়। সময় ই তাদের মনে রেখেছে। তারা হয়ত দেশপ্রেম বলে স্লোগান দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। তারা দেশপ্রেমকে নিজেদের মধ্যে ধারন করতে পেরেছিলো। এটি মূলত বুকে ধারন করতে হয়, প্রমান করতে হয় কাজে।
দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪০ বছর হয়ে গেলো। এখন দেশপ্রেম বলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ করলে হয়ত সংঘাত ই বাড়বে, দেশের কোন উন্নতি হবেনা। বরং এখন নিজেদের মেধাশ্রম দিয়ে দেশের নামকে উজ্জ্বল করার সময়। দেশকে ভালো কিছু এনে দিতে পারলে সেটি ই হবে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন। সুশিক্ষিত ও যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষদের অনুপস্থিতির কারনে, রাজনীতিতে কলুষিত ব্যাক্তিদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারনে স্বাভাবিক বিবেকবোধ তথা মানবতাবোধের অবনতি ক্রমশঃ লক্ষনীয়। ফলে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে রাজনীতির পালাবদল হয়ে পড়েছে অসম্ভব এক বস্তু। ফলে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে সংকট আর সে সংকটের বলি হচ্ছি আমি ও আপনি। কেউ মরছি, কেউ মারছি। কেউ উপভোগ করছি চেয়ে। মানুষের মধ্যে তখন ই স্বাভাবিক চিন্তাবোধ লোপ পায় যখন মানুষ অন্যায়ে বসবাস করে। আমরা অন্যায় বেষ্টিত সমাজে বসবাস করতে করতে স্বাভাবিক ও সুস্থ চিন্তা থেকে অনকে দুরে চলে এসছি । এখন আমরা মারতে ও মরতে কোন বোধ ই অনুভব করতে পারিনা।
সে যাই হোক, পরিশেষে বলবো। ইতিহাসের আবর্তন ঘটে। ধনী গরিব হয়, গরিব হয় ধনী। রাজা চাকর হয়, চাকর হয় রাজা। দিল্লির মুঘল বলেন, বা বাংলার সিরাজের বংশধর বলেন, বা ঢাকার নবাব বলেন, খোজ নিয়ে দেখেন অনেকেই হয়ত আর সেই জৌলুসের মধ্যে নেই। আবার খোজ নিয়ে দেখেন সেই সময়ের নবাবের চাকর আজ আলিশান প্রাসাদের বাস করছে। আবার হয়ত এসব চাকর রাজা হবে কোন একদিন। হিটলার অনেক প্রতাপশালী ছিলো সেই হিটলারকেও মরতে হয়েছে। আজকে যেভাবে আমরা অন্য একটি মতাদর্শের মানুষদের যেভাবে অত্যাচার করছি, যেভাবে হত্যা করছি, যেভাবে হেয়প্রতিপন্ন করছি, সময় হয়ত একদিন আপনাকে, আমাকে তার বিচারের কাঠগরায় দাড় করিয়ে দিবে। হয়ত আপনি, আমি নতুবা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম হবে এর শিকার। ভালোবাসা পূর্ণ আচরন ও পরিবেশ ই পারে কেবল ভালোবাসা দিতে, পারে শান্তি বয়ে আনতে। আর আমরা আমাদের পরিবেশকে কিভাবে তৈরী করছি বা রেখে যাচ্ছি সটি হয়ত সময় ই বিচার করবে।
এসব উপলব্দি করেই হয়ত কবি বলতে চেয়েছেন।
"নতুন প্রজন্মের কাছে বাসযোগ্য করে যাবো পৃথিবী এ মোর দৃঢ় অঙ্গিকার"
আশাকরি আমি, আপনি আমরা সবাই এই অঙ্গিকার কে মনেরেখে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কাছে মনোনিবেশ করব। এটাই হোক আমাদের আগামীর প্রত্যাশা।
বিষয়: বিবিধ
১১০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন