প্রেম একবার এসেছিল নীরবে...

লিখেছেন লিখেছেন এস ইসলাম ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৫৫:৪৭ সন্ধ্যা



“একটি বেদনা-ভরা প্রেমের কাব্য”

–অধ্যাপক কৃপাল নারায়ণ চৌধুরী।


কবি শফিকুল ইসলামের ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’ একটি মহৎ প্রেমের কাব্য। বইটি এবারের বইমেলায় প্রকাশ করছে আগামী প্রকাশনী। এই কাব্যের প্রতিটি কবিতায় কবির প্রেমিক হৃদয়ের গভীর অনুভুতির সার্থক প্রকাশ ঘটেছে। কবিতাগুলোর মধ্যে হৃদয়ের হাহাকার স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়। তিনি বইটির উৎসর্গ পত্রে লিখেছেনঃ–

“….যাকে ভালবেসে

একদিন এই জীবনকে

বড় বেশী ভালবেসেছিলাম,

যাকে হারিয়ে আজ এই জীবনের চেয়ে

মৃত্যুই বেশী সুমধুর বলে মনে হয়,

যার বিচ্ছেদ-যাতনায় তিক্ত গরল ও আজ

অমৃতের অধিক অমৃতময় বলে মনে হয়।”

কাব্যলক্ষ্মী সুলতাকে কবি একদিন হৃদয় থেকে ভালবেসেছিলেন। কিন্তু সেই সুলতা কবিকে কিছু না বলে হারিয়ে গেল। কবির ভাষায়ঃ–

“শহরের গলি-ঘুঁজিতে তোমাকে খুজি

কোথায় হারিয়ে গেলে বলত কিছু না বলে!

কোথায় আমার সেই চেনা কন্ঠ ?

সমস্ত শহর আজ আশ্রয় কেন্দ্র

ঘোষিত হলেও কেন আমি নিজেকে আজ

আশ্রয়হীন অসহায় ভাবি?

কোথায় সেই ভালবাসা-ঝরা মায়া-ভরা দৃষ্টি

যার নীচে একদিন আমি নিজের বিবাগী মনের

অতলান্ত আশ্রয় খুজে পেয়েছিলাম।”

(সুলতা এই শহরের)

কবির সবগুলো কাব্যেই প্রকৃতি নানাভাবে উপমায় স্থান লাভ করেছে। “শ্রাবন দিনের কাব্যে” প্রকৃতির প্রভাব আরো বেশী বাস্তবতা নিয়ে ধরা দিয়েছে। মেঘ বৃষ্টি কান্না যেন একসূত্রে গাথা। সবার কাছে বসন্ত ঋতু প্রিয় হলে ও কবির কাছে প্রিয় ঋতু হলো বর্ষা। কবির ভাষায়ঃ–

“সবার কাছে বসন্ত ঋতু

একান্ত প্রার্থীত একটি ঋতু

আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।

বর্ষা বাদলের সাথে তবেই

আমি আমার হৃদয়ের কান্না

মিশিয়ে নিতে পারি,

মিলিয়ে নিতে পারি

বাদলের রিমঝিম সুরের সাথে

আমার মনের অব্যক্ত কান্নার সুর।

আজ আমার জীবন জুড়ে বর্ষা

আজ আমার ভুবন জুড়ে বর্ষা।

আমি চাই আজ আমার প্রকৃতি জুড়ে

সারাক্ষণ বর্ষা নেমে আসুক”

(সবার কাছে বসন্ত ঋতু)

কবি সুলতাকে গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন বলেই তার বিচেছদ বেদনায় কবি কাতর হয়েছেন। সুলতার সান্নিধ্য কবির জীবনে অপরিহার্য ছিল। কবি বলেনঃ–

“তোমার স্নেহ-ঝরা আচলে সস্নেহে

ললাটের ঘাম কতবার

তুমি মুছিয়ে দিয়েছ,

আমাদের রোগজীর্ণ ললাটে

যখনই তুমি সস্নেহ হাত রেখেছ

মুহুর্তে আরোগ্য হয়ে গেছে

আমাদের দুরারোগ্য ব্যাধি…”

(সুলতা-সু এভাবে ঝড়ের বেগে)

তাই কবি সুলতাকে না যাওয়ার জন্য অনুনয় করেছেন। একই কবিতায় তার অপরিহার্যতার কথা বলতে গিয়ে কবি বলেছেনঃ–

“তুমি চলে গোটা পৃথিবীটা

আমাদের অসুস্থ হয়ে পড়বে

তোমার শুশ্রুষাবিহীন।

ঝড়ে বিধ্বস্ত সাজানো বাগানের মত

সবকিছু আমাদের এলোমেলো

তছনছ হয়ে যাবে।”

(সুলতা-সু এভাবে ঝড়ের বেগে)

কবি তার প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে ঐ কবিতায় আরো বলেছেনঃ–

“তুমি আমাদের চৈত্রের খরতাপে

শান্তিদায়িনী স্নেহশীতল ছায়াবৃক্ষ,

তুমি আমাদের অনৈক্যের সংসারে

সংহতির একটি বিশাল বৃক্ষ।”

(সুলতা-সু এভাবে ঝড়ের বেগে)

কবি সুলতাকে স্মৃতি থেকে মুছতে পারছেন না কিছুতেই। ঘরের সমস্ত আসবাবপত্রে প্রিয়ার স্পর্শ অনুভব করেন কবি। তাই তিনি প্রিয়াকে বলেছেনঃ

“তুমি ছিলে তুমি আছো

এই ঘর এই আঙিনায়

একথাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ধরা দেয়

এই মনে বারবার”

(আমার ঘরের বিছানায় আর)

সুলতাকে হারানোর বেদনায় কবির হৃদয় ভেঙে গেছে। তাই এই কাব্যের প্রতিটি কবিতাতেই প্রিয়া হারানোর অব্যক্ত কান্না গুমরে মরেছে। সেই কান্না বর্ষার অবিশ্রান্ত ধারার মত। তাই কবি হৃদয়ের কান্নার সাথে বর্ষার কান্না একাকার হয়েছে বলেই কবির প্রিয় ঋতু বর্ষা। ‘সুলতা সবার প্রিয় ঋতু’ কবিতায় কবি বলেছেনঃ–

“সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত

জানো আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা…

বর্ষার ধারাজলের সাথে

আমার কান্না একাকার হয়ে

প্রকাশের পূর্ণতা খুজে পায়”

(সুলতা সবার প্রিয় ঋতু)

কবি যখন একাকী থাকেন ,যখন কোন অবসরে থাকেন,তখন কবি প্রিয়াকে সমস্ত সত্তায় অনুভব করেন। ‘সুলতা আজ অবসরে’ কবিতায়ঃ–

“সুলতা তুমি মিশে আছো

আমার সত্তায়,অস্তিত্বের ভাজে ভাজে,

আমার শিরা উপশিরায়, প্রতিটি রক্ত কণিকায়

অবিচেছদ্যভাবে,

আমার প্রতিটি নিশ্বাসে তুমি আছো।”

(‘সুলতা আজ অবসরে’)

তাই কবির সুলতাকে আবার দেখতে ভীষণ ইচছা করে। ‘সুলতা কতদিন তোমাকে দেখিনা’ কবিতায়ঃ–

“সুলতা কতদিন তোমার

মায়াভরা মুখখানা দেখিনা,

জীবনের অন্ধকার আকাশে

মূর্ত একখানি আশার মত

কতদিন তোমার চাদমুখ ভাসে না।”

(‘সুলতা কতদিন তোমাকে দেখিনা’)

কবি শুধু তার প্রিয়াকে নয়,প্রিয়ার নামের সাথে ও একাত্ম হয়ে গেছেন। ‘সুলতা তুমি শুধু’ কবিতায়ঃ–

“সুলতা ঐ নামের উচ্চারণে

আমার উষ্ণ হৃদয়ে বয়ে যায়

মুহুর্তে এক ঝলক সুবাতাস…

সুলতা আমার ইষ্টনাম,

যে নামের উচ্চারণ মাত্রে

সঞ্জিবনী মন্ত্রের মত মুহুর্তে

মৃত্যুপথযাত্রী আমাকে

ফিরিয়ে আনে জীবনের দিকে।”

(‘সুলতা তুমি শুধু’)

‘সুলতা যেদিন আমি থাকবনা’ কবিতায় কবি বলেছেন, যেদিন তিনি পৃথিবীতে থাকবেন না, প্রকৃতির সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন। কবির না পাওয়ার বেদনা অনুরণিত হবে নিঃশব্দে ঝরে যাওয়া ফুলের মাঝে,ঝরে যাওয়া শিশিরের মাঝে,হঠাৎ ছুটে আসা দমকা হাওয়ার মাঝে।

কবি একদিন স্বপ্নের চারাগাছ রোপন করেছিলেন। কবির সেই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় এই পৃথিবী তার কাছে অর্থহীন মনে হয়েছে। ‘আজ মনে হয়‍‘ কবিতায়ঃ–

“এই বিশাল ভূপৃষ্ঠে আমি

একদিন স্বপ্নহীন ভূমিহীন

মানুষে পরিণত হব।

মাথার উপরে আচছাদনহীন আমি

খোলা আকাশের নীচে দাড়িয়ে

দেখবো একদিন

তিলে তিলে নিজস্ব চেতনার জমিতে

যে বসতি আমি গড়ে তুলেছিলাম

তার সবই আজ নিশ্চিহ্ন।”

(‘আজ মনে হয়‍‘)

সুলতা কবির জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে তা বুঝা যায়, ‘সুলতা তুমি আমার’ কবিতায়ঃ–

“সুলতা তুমি আমার

বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত

তাজা গোলাপ দেখার অনুভূতি,

সুলতা তুমি

সদ্য ঘুমভাঙা চোখে রোদে-উজ্জল

প্রথম সকাল দেখার অনুভব,

নতুন দিনের আমন্ত্রণ।”

(‘সুলতা তুমি আমার’)

কবি শফিকুল ইসলামের ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’ গ্রন্থটি একটি উন্নতমানের প্রেমের কাব্য। এই কাব্যের প্রতিটি কবিতায় কবি-প্রিয়া সুলতার প্রতি গভীর ভালবাসার প্রকাশ ঘটেছে। কবি প্রিয়াকে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছেন। এই হারানোর বেদনায় কবি-হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তাই কবির বস্তুজগত এবং কবি হৃদয়ের কান্না একাকার হয়েছে। প্রিয়া-বিচেছদ কবি সইতে পারছেন না। তাই তার কাছে এ জীবন অর্থহীন মনে হয়। তাই তিনি একান্তভাবে মৃত্যুকে কামনা করেছেন।

‘শ্র্রাবণ দিনের কাব্য’ গ্রন্থখানা একটি বিরহী হৃদয়ের প্রতিচছবি। কবির এই কাব্যখানা পড়লে যে কোন পাঠকের কাছেই মনে হবে কাব্যটি একটি বেদনা-ভরা প্রেমের কাব্য।



কাব্যগ্রন্থটি পড়তে ভিজিট করুনঃ–

http://www.somewhereinblog.net/blog/sfk505

বিষয়: সাহিত্য

১১৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File