তুরস্কের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন, বাংলাদেশের গত ১০ বছরের অবনতি!
লিখেছেন লিখেছেন নোমান খান ২৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৪:৩৭ রাত
১৫ই জুলাই ২০১৬, তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশ সরকার ও প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য সরকারী টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়, Fatih Sultan Mehmet এবং Bosphorus ব্রিজ এর সকল যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়, ক্ষমতাসীন দলের অফিস দখল করে নেয়া হয়, রাস্তায় ট্যাংঙ্ক নিয়ে টহল দিতে শুরু করে সেনাবাহিনী।
রাত ১টায় এরদোয়ান আইফোনের ফেইস টাইমের মাধ্যমে CNN Türk এ ইন্টারভিউতে সবাইকে মিলিটারী ক্যু এর বিপক্ষে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন: ‘‘"There is no power higher than the power of the people."
এরদোয়ানের ঘোষণায় মধ্যরাতে সাড়া দেশে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। মানুষ তাদের জীবন দিয়ে মিলিটারী ক্যু বিফল করে দেয়। সকল ষড়যন্ত্র শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিনরাত তারা রাস্তায় পরে থাকে।
তার ক্যারেশম্যাটিক লিডারশীপ, সাহসী পদক্ষেপ, ডিপলোম্যাসীতে পারদর্শীতার পাশাপাশি তুরস্ককে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উন্নয়নের ধারায় তুলে আনার কারণে সকলের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয়েছে।
তুরস্কের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। গত ৩ দিনের (২০ অক্টোবর-২৩ অক্টোবর ২০১৭) তুরস্ক সফরে ইস্তাম্বুল ও বুরসা প্রভিন্স এর বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়িয়েছি। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে ইস্তাম্বুল ও বুরসা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি প্রান্তে এরদোয়ান সরকারের গত ১৫-১৬ বছরের উন্নয়ন চোখে পড়েছে।
ইস্তাম্বুলের ইউরোপ অংশের প্রাচীন ও ঐতিহ্য ঠিক রেখে রাস্তাঘাট, মেট্রোরেল, ট্রাম, টানেল এর উন্নয়ন হয়েছে। দর্শনীয় স্থানগুলোতে টুরিষ্টদের জন্য সকল ব্যবস্থা রেখে সাজানো হয়েছে।
অন্যদিকে ইস্তাম্বুলের এশীয় অংশের পুরনো ভেঙ্গেপড়া বিল্ডিং ও স্থাপনা ভেঙ্গে বহুতল-আকাশচুম্বি স্থাপনা করা হয়েছে। বুরসার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে, বিদেশী ইনভেষ্টমেন্ট এর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, পাবলিক প্লেসগুলোকে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। রাস্তাঘাট দিয়ে হাটলে সেই উন্নয়নগুলো চোখে পড়ে।
এরদোয়ানের সরকার গত ১৫ বছরে দেশের জন্য কাজ করেছে, দেশের অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ১৯২৩ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত প্রায় ৮০ বছরে যেখানে মাত্র ৬০০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরী হয়েছে, সেখানে এরদোয়ানের সরকার ১৫ বছরে ১৩৫০০ নতুন রাস্তা তৈরী করেছে। নতুন ২৪টি এয়ারপোর্ট নির্মাণ করেছে মাত্র এক দশকে। ২০০৩ সাল থেকে হাই-স্পিড রেলওয়ে শুরু করে সরকার। সেই থেকে ১০৭৬কিমি রেলওয়ে তৈরী করা হয় হাই স্পিড ট্রেন এর জন্য। নতুন রাস্তা, ব্রিজ, এয়ারপোর্ট, পাবলিক হাউজিং, শপিং মল, পাইপলাইন, hydroelectric পাওয়ার প্ল্যান্ট , হাইরাইজড বিল্ডিং, ফরেন ইনভেষ্টমেন্ট, ট্যুরিজম পুরো দেশকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
১৯৬১ সাল থেকে এরদোয়ান ক্ষমতায় আসা পর্যন্তু তুরস্ক আইএমএফ এর কাছ থেকে ১৯টি লোন নেয়। এরদোয়ান যখন ক্ষমতায় আসে তখন $23.5 বিলিয়ন debt আইএমএফ এর কাছে। গত ১৫ বছরে সরকার সকল debt পরিশোধ করে উল্টো আরো ঘোষণা দেয় যে আইএমএফ চাইলে তুরস্কের কাছ থেকে লোন নিতে পারবে।
এরদোয়ান যখন ক্ষমতায় আসে তখন তুরস্কে বড় ধরণের অর্থনৈতিক ক্রাইসিস চলছিল। এখন সেই দেশটি ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচাইতে ১০টি ধনী দেশের একটি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন মেগাপ্রজেক্টে হাত দিয়েছে এরদোয়ান সরকার।
এবার যদি আমরা বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় আসীন, কিন্তু বাংলাদেশে চোখে পড়ার মত কোন উন্নয়ন করে নাই। পদ্মা সেতুর টাকা চুরি করে সাবাড় করে দিয়েছে, এক ফ্লাইওভার করতে যেয়ে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে আর জনগণকে দিয়েছে শুধু ভোগান্তি। ঢাকাতে কিছুটা সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হলেও অন্যান্য শহরগুলো জীর্ণসীর্ণ রূপ ধারণ করেছে। পুরোটে দেশটাই অচল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি, পোষ্টাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর, কোন বড় Infrastructure এ হাত দেয়া হয়নি, বিদেশী ইনভেষ্টটররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, দ্রব্যমূলের দাম কয়েকগুন বেড়েছে, হাউজিং ক্রাইসিস চোখে পড়ার মত, রাস্তায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েছে।
বিষয়: বিবিধ
২০২২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তুরষ্কের সাথে পাকিস্তানের তুলনা করলে মনে হয় ভাল করবেন । বাংলাদেশ থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান কতটুকু এগুলো সেটার একটা খতিয়ান দেখতে চাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন