‘মা তুমি দেখে নিও তোমাকে সবাই ইঞ্জিনিয়ারের মা বলে ডাকবে’ : আবদুল্লাহর প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নিল পুলিশের বুলেট, দৈনিক আমারদেশ থেকে নেওয়া।
লিখেছেন লিখেছেন এখলাস মাহেমাদ িসকদার ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩৪:৩২ বিকাল
বগুড়া থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ছেলে মোবাইল ফোনে আমাকে পায়েস রাঁধতে বলেছিল সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে খাবে। পায়েস রান্নাও হয়েছে, কিন্তু তা খাওয়াতে পারলাম না তাকে। এ আফসোস রাখব কোথায়। ছেলে বলত, ‘মা তুমি দেখে নিও সংসারে আমাদের অভাব বেশি দিন থাকবে না। বাবাকেও আর কষ্ট করতে হবে না বেশি দিন। একদিন আমি বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো। তখন তোমাকে সবাই ইঞ্জিনিয়ারের মা বলে ডাকবে। গর্বে ভরে যাবে তোমার বুক। তুমি দেখে নিও, সে দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন আমি অনেক টাকা উপার্জন করব। আমার ছোট ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ যোগাব, তাদের মানুষের মতো মানুষ করে তুলব, পূরণ করব তাদের সব রকমের চাহিদা। আমাদের ঘরে রবে শুধু সুখ আর সুখ। কথাগুলো শুনে দু’চোখ আমার স্বপ্নে ভরে উঠত। গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে জামায়াতের হরতাল চলাকালে বগুড়ায় পুলিশ ও শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আবদুল্লম্নাহর মা অলেদা বেগম বুক চাপড়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন।
সরেজমিন নিহত আবদুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, নিহত আবদুল্লাহ জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। বাবা মো. আখের আলী সরদার কালাই পৌর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী। অভাবের সংসার তাদের। তিন সন্তানের মধ্যে আবদুল্লাহ সবার বড়। সে শান্তিনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ-৪.৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে বগুড়ায় সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাওয়ার ট্রেডে ভর্তি করে দেন। ছেলের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বড় প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু পুলিশের বুলেট কেড়ে নিয়েছে সে স্বপ্ন। পরিবারের দাবি—তাদের ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এলাকাবাসীও বিশ্বাস করেন না আবদুল্লাহর মতো ভদ্র ও বিনয়ী ছেলে শিবিরের মতো একটি উগ্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আবদুল্লাহর এ অকাল মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বগুড়া থেকে গতকাল শুক্রবার জুমা নামাজের পরপরই নিহত আবদুল্লাহর লাশ এসে কালাইয়ে পৌঁছে। আবদুল্লাহকে একনজর দেখতে তার বাড়িতে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। বাদ আসর যানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
আদর্শপাড়া মহল্লার প্রতিবেশী মোকলেছুর রহমান বলেন, আবদুল্লাহ সবাইকে সম্মান ও সমীহ করে চলত। কখনও কারও সঙ্গে তাকে দ্বন্দ্ব-কলহে জড়াতে দেখিনি। পড়ালেখার অবসরে মহল্লার সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করেই সময় কাটত তার। কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তাকে দেখা যায়নি।
কালাই উপজেলার শান্তিনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন বলেন, ‘আবদুল্লাহ আমার স্কুল থেকে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ-৪.৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। শত অভাবের মাঝেও প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখত সে। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করতাম। কিন্তু আবদুল্লহার সে স্বপ্ন যে অঙ্কুরেই ঝরে যাবে তা ভাবতে পারিনি।’
বিষয়: বিবিধ
১১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন