'স্বামী পরিত্যক্তা' একটি উপাধী!
লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ১১ জুন, ২০১৫, ০৩:১৭:১৯ দুপুর
বাংলায় একটা শব্দ আছে ‘স্বামী পরিত্যক্তা’ খুব সাবলীল ভাষায় এর মানে হচ্ছে,যে মহিলা কে তার মহান স্বামী নামক ইনসান তার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা জানিয়ে,সন্তানদের প্রতি কোন রকম দায়িত্ব পালন কে অস্বীকার করে অন্য কোন নারীর সাথেই আবার দিব্য সুখে বিভোর হন,তাকে আমাদের সমাজ ‘স্বামী পরিত্যক্তা’ বলে উপাধি দেয়!
আচ্ছা,’স্ত্রী পরিত্যক্ত’ বলে কি কোন শব্দ আছে ডিকশনারীতে?! !
‘স্বামী পরিত্যক্তা’ শব্দটা শুনলে কেন জানিনা,মেজাজটা লাফ দিয়ে উঠে!কি বুঝায় এই শব্দটা দিয়ে?একটা মানুষের অসহায়ত্ব নাকি তার দুর্ভাগ্য?নাকী এটা নিছকই ‘উপাধী’?
বাস্তবতা হচ্ছে, এই শব্দটা দিয়ে বেশির ভাগ সময় একজন নারীর দিকে সমাজ খুব তাচ্ছিল্যের সাথে আঙ্গুল তোলে! এই তাচ্ছিল্যের প্রকাশ ভঙ্গিটা আবার নানান রঙ্গে রাঙ্গা! যেমন ভদ্র সমাজ এক ভাবে প্রকাশ করে,আর অশিক্ষিত সমাজ এক ভাবে!
অশিক্ষিত সমাজ একদম সোজা ভাষায় বলে,
-তুই যদি ভালা হইতি তাইলি আর তোর জামাই তোরে থুইয়া যাইতো?
-জামাইর ঘর ছাইড়া আইছোস ক্যা?মারুক-কাডুক যাই করুক মরলে জামাইর ঘরেই মরতি!এহহ কি দেমাগরে?আইয়া পড়ছে সংসার থুইয়া!
আর শিক্ষিত সমাজ? এই কথা গুলোই প্রকাশ করবে নানান রকম ভঙ্গিতে! মেয়ের ডিভোর্স হয়েছে মানে,সে আর সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে না!
-আল্লাহ ছি! কেমন করে সবার সামনে যাবে?সবাই যখন জিজ্ঞেস করবে,বাচ্চার বাবা কোথায়?তখন কি আর মুখ থাকবে?
- এক মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছে সে কথা লোকে জানলে বাকী ছেলে-মেয়েদের কি ভালো বিয়ে হবে?না না মেয়েকে কিছুতেই সবার সামনে আনা যাবে না!কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো ‘বেড়াতে এসেছে’!
তার কাজ হবে নিজেকে একটা ঘরে বা নির্দিষ্ট একটা গন্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলা,দিন-রাত তার যাবে রঙহীন,কোন রকমে কাটবে সময় আর তাকে বাঁচতে হবে এই অপরাধ বোধের সাথে যে,সে একজন স্বামী পরিত্যক্তা!
যখন ডিভোর্স কেন হয়েছে এই খবর ব্রেকিং নিউজ আকারে ঘরে ঘরে যাবে তখন সব জানা-দেখা সত্ত্বেও লোকের মন্তব্য হবে,
- আরে ভাই শোনেন,সংসার করতে হলে মেয়ে মানুষ কে হতে হয় গন্ডারের চামড়ার! যত্ত রকম ঝড় আসুক ঘর ছাড়া যাবে না,দরকার হলে জামাই চলে যাবে তবুও বউ থাকতে হবে ঘরেই! স্বামী ছাড়া মেয়ে মানুষের কি কোন দাম আছে??
-ঝামেলা আমাদের ও থাকে গো ভাবি,আমাদের জামাইরা কি ধোঁয়া তুলসী পাতা? তো কি হয়েছে?আমরা করছি না সংসার! বুঝলেন ভাবী,সংসারে মেয়ে মানুষ কে হতে হয় জোঁকের মতোন! বুক ফাঁটবে কিন্তু মুখ খুলবে না!
যে স্বামী তার স্ত্রী-সন্তানের প্রতি কোন রকম দায়িত্ব পালন করতে পারে না,তার প্রতি কোন সূস্থ মানুষের মতো আচরন করতে পারে না,অন্য নারী দেখলে নিজের চরিত্রকে ঠিক রাখতে পারে না সেই অমানুষ যদি জীবন থেকে চলে যায় তাহলে কেন ঐ যে সে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য ‘স্বামী পরিত্যক্তা’ উপাধী নিয়ে বাঁচতে হবে? কেন জীবনের এই অবস্থান আসলেই চারপাশ তার পথ চলায় ফুল স্টপ দিয়ে দিবে?
সংসার টিকিয়ে রাখার দায় কি কেবল একজন নারীর? সন্তানদের ভবিষত কি হবে তা নিয়ে চিন্তা করার দায় কি কেবল মায়ের? অন্যের হস্তক্ষেপ থেকে কি করে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মজবুত রাখতে হয় তার দায় কি সব সময়ই একজন স্ত্রীর?
এইসব প্রশ্নের উত্তর সবার কাছেই আছে কিন্তু দৈনন্দিন আচরনের ক্ষেত্রে আমরা বেমালুম ভুলে যাই,আমার আচরন গুলো দিয়ে ঐ মেয়েটা কতো কষ্ট পাচ্ছে! স্বামী থেকেও নেই,বাচ্চাদের ‘বাবা কোথায়?’ প্রশ্নের কোন জবাব নেই,তাদের ভরণ-পোষন কি করে হচ্ছে,হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই,একটা সুন্দর সংসার থাকার কথা থাকলেও নেই এইরকম কষ্ট গুলো প্রতিনিয়ত মেয়েটা কে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়,চোখের ভাষায় সারাটা ক্ষন একাকীত্ব আর দুশ্চিন্তারা বোবা কান্নায় ভাসে,এই সবই আমরা দেখি বুঝি কিন্তু আচরনের বেলায়?
ঐ অশিক্ষিত সমাজ আর আমরা শিক্ষিতদের মাঝে কোনওওও পার্থক্য নেই!
অথচ সবার না হলেও শিক্ষিত সমাজের মাঝে একটু হলেও কিন্তু ভয় থাকা উচিত,অসহায়দের দোয়া,তাদের মনের কষ্ট আল্লাহ শোনেন এবং তাদের অন্তরের আকুতিতে আল্লাহ দ্রুত সাড়া দেন! তাই তাদের সাথে বেইনসাফ করার দায়ে নিজেকে দোষীর কাঠগড়ায় দাড় করালে কি ভয়ংকর হতে পারে জীবনটা?? চিন্তা গুলোকে আচরণে প্রকাশ করতে হয়,না হলে অন্তর আর মুখের দ্বৈততার জন্য জবাবদিহিটাও কঠিন ই হবে!
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৪ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পাতা চোখে ভাসে আর এর উপর দিয়ে হাটলে ঝুনঝুন শব্দ হয় তাই ঝুনঝুনপাতাপিপি
হেড অব দ্যা ফেমিলি। আর মেয়ে মানুষ হলো,
হেড অব দ্যা হাউজ। স্বামী যেহেতু সংসারের জন্য মেজর অবদান রাখে, তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। দুজনের আলোচনার ভিত্তিতে সংসার এগিয়ে যাবে। সেটা হতে হবে
কোরান ও সূন্নার ভিত্তিতে।
আচ্ছা,’স্ত্রী পরিত্যক্ত’ বলে কি কোন শব্দ আছে ডিকশনারীতে?! !
একদম নেই তবে স্ত্রীরাতো স্বামী ছাড়েনা তাই মনেহয় এটি ডিকশনারিতে যায়গা পায়নি।
স্বামী ছাড়া মেয়ে মানুষের কি কোন দাম আছে??
নাহ্ একদম নেই
আর হ্যাঁ পৃথিবীতে ঐ নারীই সবচেয়ে হতভাগা যার স্বামী নেই।
সকলের মাঝে মানবতার উদয় হোক, অনেক শুকরিয়া। ধন্যবাদ
গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
আমাদের সমাজটা পুরুষশাষিত মনোভাবের কারনেই হয়তো পুরুষতান্ত্রিক বা পুরুষের কৃতিত্ব তান্ত্রিক উপাধি বা শিরোনাম গুলো বেশি ইউজ করতে দেখা যায়!
সমাজের বৈষম্যমূলক এ ধরনের আচরনগুলোর নির্মূল হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা!
মাঝে মাঝে কদাচিৎ এই পাড়ায় উঁকি দেয়ার জন্য শুকরিয়া ! প্রায় প্রায় তোমাকে দেখতে চাই
মন্তব্য করতে লগইন করুন