না চাহিলেও তারে পাওয়া যায়..

লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫৯:১২ বিকাল



''সূর্যটা এখন অস্ত যাচ্ছে...একটু একটু করে সে ছোট হচ্ছে...একটা সময় একটা বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাবে,আর আঁধার? টুপ করেই নামবে!''এতটুকু ভেবেই মুচকি হাসল আলভি!বেশ কিছুক্ষন আপন মনে হাসার পর আস্তে আস্তে ঠোট থেকে মিলিয়ে গেলো হাসিটা,একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুকচিরে...মাথাটা উঁচু করে আরেকবার চারপাশে তাকালো,যেদিকে দু'চোখ যায়,বাড়ি আর বাড়ি... আরেকটু উপরে তাকালো,আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবারো নিঃশ্বাস ফেলল,দিন শেষে আকাশও রংহীন হয়ে আছে যেনো। আযানের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো,রেলিং থেকে নেমে পাশের খেলায় মগ্ন ভাতিজা নিহালকে ডাকলো,

-নিহাল,নিচে চলো,আযান হয়ে গেছে।

বলে সিঁড়ির দরজার দিকে হাঁটা শুরু করলো,পেছনে পেছনে নিহাল ও নেমে আসল।

রাতে পিসিতে কাজ করছিলো একমনে,এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো,কাজ করতে করতেই কল রিসিভ করলো,

--আসসালামু আলাইকুম,কে?

--কিরে?কে ফোন করেছে না দেখেই রিসিভ করিস নাকি?

--ও!হাসিব...দোস্ত,কেমন আছিস?

--ভালোই আল্লাহর রহমতে,তোর কি খবর?

--এই তো,আল্লাহ রেখেছেন

--আছিস কোথায়?বনস্রী না বাসাবো?

--বনস্রী!'' কথাটা বলে আলভি নিজেই যেনো চমকে উঠলো একবার!

--ওহ!শোন,শুক্রুবার আমার বাসায় দুপুরে খাবি,সবাই আসছে

আলভি কিছু না বলে চুপ করে রইল। হাসিব বুঝতে পেরে বলল,

--সবার সাথে তোর অনেকদিন দেখা নেই,আয়,ভালো লাগবে

আলভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

--চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

হাসিব আর জোর করলো না,বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে দিলো। আলভি কিছুক্ষন কাজে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করলো,কিন্তু মন বসাতে পারল না আর... বিরক্ত হয়ে উঠে গেল। রাতে খাবারের সময় এখনো হয়নি,ভাইয়াও ফেরেনি,কেন যে এতো দেরি করে ভাইয়া!! কথাটা মনে করে আরেকবার চমকে উঠলো!

ওমন দেরি করে তো সেও বাড়ি ফিরতো,স্পেশালি বৃহস্পতিবার! বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে যখন বাসায় ফিরতো ঘড়ির কাঁটা ততোক্ষনে ১১টার ঘর পাড় করে ফেলেছে! দুরু দুরু বুকে কলিংবেল চাপা মাত্রই দরজা খুলে যেতো,যেনো দরজার ওপাশে এতোক্ষন দাড়িয়েই ছিলো!

--আসসালামু আলাইকুম!ওয়েলকাম হোম...!

লাবন্যের এমন নাটকীয় ভঙ্গি দেখলে আলভির ভয় আরো বেড়ে যেতো!সালামের জবাব নিয়ে হেসে বলতো,

-সরি,একটু দেরি হয়ে গেলো!

লাবন্য একইভাবে হেসে বলতো,

--না না,সরি হবার কিছু নেই!আপনি পুরুষ মানুষ,দেরি করে আসাটাই স্বাভাবিক,তাড়াতাড়ি আসাটা আপনার শোভা পায় না!

-না আসলে,রাস্তায় ও জ্যাম ছিলো!

-হুম,আজকে তো কারফিউ ছিলো!হাসিব ভাইয়ের বউ এর মতো যদি এখন বাইরে আধা ঘন্টা দাড় করিয়ে রাখতে পারতাম,তাহলে বুঝা যেতো!...

আলভি কিছু না বলে হাসতো!সে জানে আগামী ৩০ থেকে ৪০মিনিট লাবন্য এভাবেই তার উপর রাগ ঝাড়বে,সে কিছু বললে রাগ আরো বেড়ে যাবে,তাই কিছু না বলে চুপ করে থাকতো। লাবন্য একাই বক বক করতে করতে এক সময় স্বাভাবিক হয়ে যেতো।

'লাবন্য' ...যতোবার এই নামটা মনে হয়,যতো বার এই মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে আলভি মনের ভেতর অসম্ভব এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করে। অজান্তেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠে,এমন একজন মানুষকে ওর জীবন সঙ্গী হিসেবে দেয়ার জন্য।

আলভি কিছুটা একাকী,অনেকটা কনজারভেটিভ টাইপের মানুষ হিসেবেই বড় হয়েছে। আত্ননির্ভরশীলতার পাশাপাশি,নিজের মতো করে সবকিছুকে ভাবতেই সে খুব পছন্দ করতো। পড়াশুনার পাট চুকিয়ে মোটামোটি ধরনের একটা জবে ঢুকার পরপরই বড় ভাই-বোনেরা বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন,আলভির পছন্দের বা ডিমান্ডের লিষ্ট বেশ লম্বা ছিলো বলে মেয়ে খুঁজতে সবাইকে যথেষ্ট ঝামেলায় পড়তে হয়েছে বলা চলে!অনেক খুঁজেও মনের মতো মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিলো না,শেষে সবাই মিলে অনেকটা ধরেই লাবন্যের ব্যাপারে রাজি করিয়েছিলো!

লাবন্যকে যেদিন প্রথম দেখতে যায়,সেদিনটার কথা এখনো মনে আছে আলভির। যথেষ্ট গম্ভীর মেয়ে মনে হয়েছিলো লাবন্যকে!খুব মেপে মেপে কথা বলছিলো,হাসিও যেনো অনেক ভেবে চিন্তে হাসছিলো! আলভি বাসায় এসে ভেবে দেখলো,এই মেয়েই ভালো হবে!গম্ভীর মানুষ,থাকবে নিজের মতো,যথেষ্ট ম্যাচিউরড ও হবে!আর পড়াশোনাও শেষের দিকে

কিন্তু বিয়ের পরে আলভি টের পেয়েছি,গম্ভীরতা কাকে বলে,আর ম্যাচিউরিটি কাকে বলে!! সারাক্ষন পাখির মতো ছুটাছুটি,ননস্টপ বক বক,আর বাচ্চাদের মতো জেদ-আবদার!এসব দেখে আলভি কনফিউসড হয়ে গিয়েছিলো যে এই মেয়েকেই কি সে দেখে এসেছিলো!নাকি এর জমজ বোনকে!

প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও চারপাঁচ মাস পর আলভি বুঝতে পেরেছিলো,ওর জীবনটা আসলে এতোদিন অনেক ধূসর ছিল! লাবন্য সেটাকে পুরোপুরি রঙ্গিন করে দিয়েছে। ছোট ছোট হাসি-আনন্দ,খুঁনসুঁটি দিয়ে জীবনে আনন্দের এতোদিনের সংগাটাই যেনো পাল্টে দিয়েছে। দিনে দিনে লাবন্যকে অবাক হয়ে নতুন করে আবিস্কার করতো!প্রচুর বই পড়ে মেয়েটা,সব ধরনের বই। আলভি নিজেও বই পড়তে ভালোবাসতো,কিন্তু লাবন্য যখন বলতো,তখন এতো গুছিয়ে,তথ্য-লজিক দিয়ে বলতো,তা দেখে আলভি আরো বেশী মুগ্ধ হতো। আলভী ভাবতো ওর নিজের বোধহয় অনেক রাগ!কিন্তু লাবন্যের সাথে থেকে বুঝেছে ওর আসলে ওতো রাগ না!রাগ থাকলে লাবন্যের এতোসব পাগলামো দেখে সে হাসতে পারতো না,আনন্দ ও পেতো না। বিয়ের পরে সবার আগে লাবন্য নিজেও ওকে অনেক ধৈর্য্যশীল মানুষ! উপাধি দিয়েছিলো,যা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়েছে বলা যায়!

প্রায় দিন আলভি অফিস থেকে বের হবার পর লাবন্য ফোন করে বলতো,'বাসার কাছাকাছি এসে ফোন করো,কিছু জিনিস আনতে হবে,জরুরী' আলভি কথা মতো ফোন করতো,ও তখন খুব ব্যাস্ত ভাব নিয়ে বলতো,

--শোন,মোড়ের দোকান থেকে দু'টো রিং চিপস নিয়ে এসো!

--রিং চিপস????

--হুম,বোম্বের রিং চিপস,হলুদ রঙের প্যাকেট

--তুমি আমাকে রিং চিপস আনার জন্য এতো জরুরী ভাবে ফোন করতে বলেছো?!!!স্ট্রেঞ্জ!

লাবন্য একইভাবে বলতো,

--এরকম ভাবে বলছো যেনো চিপস না,ঘোড়ার ডিম কিনে আনতে বলেছি!আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছে,প্লিজ নিয়ে এসো! এরকম আরো হয়েছে,কোন দিন চকলেট,কখনো ঝালমুড়ি!

একবার সে দোকানে চিপস কিনতে গেছে,এমন সময় পাশে এক ভদ্রলোক এসে দাড়ালেন,তিনিও কিছু কিনবেন। ওকে চিপস কিনতে দেখে বললেন,

--কি ভাই,বাচ্চাদের জন্য নিচ্ছেন?!আমার বাচ্চারাও এই চিপস খুব পছন্দ করে!কিন্তু এগুলো যে ক্ষতিকর বুঝেই না!

আলভি আর কি বলবে!মনে মনে বলল,''ঠিকই বলছেন ভাই,মানুষের বিয়ের পর বাচ্চা-কাচ্চা হয়,আর আমি বিয়েই করেছি এক বাচ্চাকে!!!কি যে আছে কপালে আল্লাহই জানে!''

'চাচ্চু,আম্মু খেতে ডাকছে'' নিহালের ডাক শুনে আলভি বাস্তবে ফিরে আসে। জানালার গ্লাসটা টেনে দিয়ে ডাইনিং এর দিকে পা বাড়ায়। খাবার টেবিলে ওদেরকে খেতে দিয়ে ভাবি দ্রুত উঠে চলে গেলেন,তা দেখে আলভি ভাতিজাকে জিজ্ঞেস করলো,

--কিরে?ভাবি চলে গেলো কেনো?

--কেন আবার?আম্মুর সিরিয়ালে মহাএপিসোড আছে আজকে,ওটা দেখবে তাই!

আলভি কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগল। সেদিনের ঘটনাটাও এই সিরিয়াল নিয়েই শুরু হয়েছিলো!

লাবন্য কখনো সাজগোজ করে বের হতে পছন্দ করতো না,ও সাজলে সব সময় বাসায়ই সাজতো,এমনকি ওর চঞ্চলতাও বাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো,আলভি প্রায়দিনই ওকে খঁচা মেরে বলতো ''টিভি সিরিয়াল দেখে দেখে অলওয়েজ এমন করো না?বাসার মধ্যে সাজগোজ করে থাকা,বাইরে শান্ত মেয়ে সাজা!বুঝি,বুঝি! '' লাবন্য কখনো হেসে জবাব দিতো তো কখনো কিছুই বলতো না।কিন্তু একদিন হঠাত করেই রাতের খাবার টেবিলে প্রচন্ড ভাবে কথাটার রিএক্ট করলো!

--''তুমি আমাকে কি মনে করো বলতো?আমার সব কিছুই তোমার কাছে টিভি সিরিয়ালের এক্টিং মনে হয়?এর মধ্যে কি কোন বাস্তবতা খুঁজে পাওনা?এই গত দুই বছরে আমার সব রকমের হাসি-আনন্দ,কাজ-কর্ম সব কিছুই তোমার কাছে সিরিয়ালের গল্প মনে হয়?আমি কি এতোই ইম্যাচিউরড যে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ কিছুই বুঝি না!''

--তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেন?তুমি দেখো তাই বললাম!

--তুমি কোনদিন আমাকে বাসায় এসে দেখেছো,টিভিতে কোন সিরিয়াল দেখতে?কখনো বলতে শুনেছো,ওমুক সিরিয়ালের নায়িকার শাড়ি-গহনার মতো আমার লাগবে?আমি তো কখনোই এমন ভাবি না,বাট তুমি কেন অলওয়েজ এমন ভাবো?আমার গল্প তুমি,তোমার বন্ধুরা কেমন করে করো সে খবরও কিন্তু আমি জানি! এই যুগের মেয়ে আমি,মুভি-সিরিয়ালের পোঁকা,বাস্তবতা জ্ঞান কম,তাই সারাক্ষন ছেলে মানুষি করি!তাই না? গতো দুই বছরেও তোমার আমার সম্পর্কে ধারনা বদলাতে পারিনি...আফসোস! আলভি,মানুষ টিভি দেখে এন্টারটেইনমেন্টের জন্য,কিন্তু তোমার ধারনা এতোটাই সীমাবদ্ধ যে,বাস্তবে একটা মানুষ কিভাবে হাসতে পারে,আনন্দে থাকতে পারে,একটা সম্পর্কের সুখ কিভাবে প্রকাশ হয় এ সম্পর্কে তোমার কোন ধারনাই নেই! আমি হাজার চেষ্টা করেও পারলাম না!!সত্যি,আফসোস লাগছে!

বলতে বলতে খাবার অর্ধেক রেখেই টেবিল থেকে উঠে চলে যায় লাবন্য! আলভি হতবুদ্ধের মতো বসে ছিলো,কিছুই বলতে পারেনি! সে রাতে লাবন্য খায়ওনি,এবং ঘুমায়ওনি।

'চাচ্চু,তুমি ঘুমাবে না?' আলভি কিছু না বলে,রুমের লাইটটা অফ করে দেয়। বিছানায় এই মুহুর্তে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই,বই পড়া যেতো,কিন্তু লাইট অন থাকলে নিহালর ঘুমে ডিস্টার্ব হবে। অগ্যত কি আর করা,বারান্দায় এসে বসে।

সে রাতের পর থেকে আলভি-লাবন্যের জীবনে সময় গুলো খুব দ্রুতই যেনো বদলে যেতে শুরু করে! আলভি আবিস্কার করে লাবন্য অনেকটা তার মতো অভিমানি আর চাপা স্বভাবেরই মানুষ! যেটা এতো দিন সে বুঝেনি... মুখে কাউকে সে কিছুই বলছে না,কিন্তু ভেতরে ভেতরে যথেষ্ট কষ্ট পাচ্ছে,আর দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট্ট একটা 'সরি', বলতে দু'জনেরই যথেষ্ট সমস্যা যেনো। সব কিছুই চলছে,তার অফিস,লাবন্যের ক্লাস,সংসার কিন্তু দু'জনের মধ্যে আর সেই উচ্ছ্বলতা নেই! আলভি চেষ্টা করেছে বন্ধুদের কারো সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করতে,কিন্তু ঠিক এই সময়টাতেই যেনো সবাই ব্যাস্ত ছিলো। আলভিরও অফিসে যথেষ্ট কাজের চাপ। এরই মধ্যে একদিন ফোন আসে লাবন্যের বোনের বাসা থেকে,লাবন্যের নানী খুবই অসুস্থ,তিনি সিলেটে থাকেন,লাবন্যের আপুরা সবাই তাকে দেখতে যাচ্ছে,আলভি আর লাবন্যকেও নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু অফিসে এমন অবস্থা,ছুটি নেবার কোন চান্স নেই,তাই আলভি যাবেনা বলে দেয়। বাসায় ফিরে আলভি একটু অবাক হয়! কাল লাবন্য সিলেটে যাবে কিন্তু ওর কোন গোছগাছের লক্ষন দেখছে না,জড়তা ঝেড়ে আলভি জিজ্ঞেস করে,

-কাল কখন রওনা হচ্ছো তুমি?

আলভির কথা শুনে লাবন্য কিছুটা চমকে উঠলো মনে হয়!

--কাল সকালের দিকে,আপুরা গাড়ি নিয়ে আসবে

আলভি কিছু না বলে ওয়াশ রুমে চলে যায়। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে শুনে লাবন্য ফোনে বলছে,

-না আপু,ও যেতে পারবে না,তোমাদের সাথেই আমাকে যেতে হবে

-আমি ভেবেছিলাম ও যাবে,তাই তোমাদের না করেছিলাম,মনে হয় অফিসে কাজ আছে!

আলভি বেশ অবাক হয়!ও তো একবার জিজ্ঞেস করতে পারতো! এতদ্রুত সব কিছু বদলে যায় কিভাবে...!

সকালে আলভি রেডি হতে হতে খেয়াল করে লাবন্যের যথেষ্ট মন খারাপ,চোখে না ঘুমানোর ক্লান্তি! আলভি ঠিক বুঝতে পারছে না,এই মুহুর্তে ওর কি করা উচিত,কি বলা উচিত! একবার ভাবে লাবন্যকে যেতে না করবে,কিন্তু সবাই আশা করে আছে!

-তুমি ক'টায় বের হবে?

লাবন্য ওর দিকে না তাকিয়ে আস্তে করে বলে,

-আপু বলেছে,৯.৩০টার দিকে ওরা গাড়ি নিয়ে মেইনরোডে এসে দাড়াবে,আমি বের হবো।

আলভি কিছুক্ষন ভেবে বলে,

-আমি যদি তোমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেই,সমস্যা হবে?

লাবন্য অবাক হয়ে ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে!

-তোমার অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাবে না?

-একদিন এদিক-ওদিক হলে কিছু হয় না!

-ওকে,অনেক থ্যাংকস...

আলভির মনে হলো,আজ অনেকদিন পাড় হয়ে গেছে সে লাবন্যের মুখে এই হাসিটা দেখে না! নিজের প্রতি একটু রাগ ও লাগল!এতোদিন পর তার হুঁশ হয়েছে যেনো!

রাস্তায় কুকুরের আওয়াজে আলভির খেয়াল হয়,অনেক রাত হয়ে গেছে!ঘুমাতে যাওয়া দরকার। গত পরশু লাবন্য সিলেট যাবার পর থেকে তার রুটিন একেবারেই পাল্টে গেছে বলা যায়!দু'দিনকে মনে হচ্ছে দু'বছর যেনো!লাবন্য যাওয়ার আগে ফোন করে ভাইয়া-ভাবিকে বলে গেছে,যে কয়দিন সে সিলেটে থাকবে তিনি যেনো আলভিকে তার বাসায় রাখেন,না হলে একা একা খাওয়া দাওয়ার অনেক কষ্ট হবে! সে জন্যই আলভি ভাইয়ের বাসায় এসে রয়েছে। লাবন্য ওখানে যাবার পর আত্নীয়-স্বজনদের মাঝে এতোই বিজি হয়ে পড়েছে যে ওর সাথে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না!শুধু অপেক্ষায় আছে,কবে সপ্তাহটা শেষ হবে,আলভি সিলেটে আসবে ওকে নিতে... আলভি রুমে এসে দেখল,মোবাইলে ম্যাসেজ এসেছে অনেকক্ষন আগে,

''রাত জেগে থাকার কি দরকার পড়েছে শুনি?কার কথা ভাবো?!সকালে নামায-অফিসের কথা মনে আছে?দ্রুত ঘুমাও...''

আলভি ম্যাসেজের উত্তর টাইপ করে একা একা অনেকক্ষন হাসল! মজা পেয়ে না,অপার্থিব এক আনন্দে...কেউ এই আনন্দটাকে চেয়েও পায় না,কেউ পেয়েও বুঝেনা আর কেউ...না চাইতেই পায়! Happy <3

[বিয়ে হয়ে গেলে বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু কমন খোঁচা শুনতে হয়,'তোর 'ওকে' পেয়ে তো দেখি আমাদেরকে ভুলেই গেছিস!' যারা এই পর্যন্ত আমার কাছ থেকে এই খোঁচাটা প্রচন্ড ব্যাথাসহ শুনেছেন,লেখাটা তাদেরকে উৎসর্গ করলাম]

বিষয়: সাহিত্য

১০৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File