এই আবেগ সস্তা নয়..

লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ০৪ মার্চ, ২০১৩, ১০:৩৪:১২ সকাল



ঢাকার বাইরে গ্রামের এই মানুষ গুলোর আবেগ দেখে সত্যি অবাক হয়েছি!আমরা শহুরে মানুষদের কাছে এ আবেগ অনেক সস্তা,মামুলি!!কিন্তু ঐ খেটে খাওয়া,অল্প শিক্ষিত মানুষ গুলোর কাছে এখনো কোরআনের দাম,কোরআনের প্রচারকের দাম অনেক বেশি,জীবনের চেয়েও... আমরা কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ করতে যেয়েও অনেকবার হিসেব করেছি,কোন দলের হয়ে যাচ্ছি না তো?!প্রতিবাদ কে বা কারা করছে?!হাজারো যুক্তি,সত্যি-মিথ্যার ছড়াছড়ি!কিন্তু সিঙ্গাইরের ঐ মানুষ গুলো অতো হিসেব করেননি,রাজশাহীর সেই মাদ্রাসার শিক্ষক অতো দল দেখে রাস্তায় নামেননি,তারা চোখ বন্ধ করে,শ্লোগান তুলেছেন অবমাননাকারীদের শাস্তি চেয়ে,জীবন দিয়ে দিয়েছেন সব হিসেব-নিকেষ ভুলে! ভাবা যায়?আল্লাহর প্রতি,তার রাসূলের প্রতি,কতোটা ভালোবাসা তাদের!



তারা আমদের শহুরেদের মতো ওতো শিক্ষিত,সুবিধা প্রাপ্ত না!তারপরেও ইসলামের প্রতি,আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি তাদের ভালোবাসা আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদেরকে ছাড়িয়ে গেছে।

শুনেছি,প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন মারা যান,এদেশের মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলো,তার জানাযায় লাখ লাখ মানুষ শরীক হয়েছিলো,এবং এখনো শুধু দেশেই না বিদেশেও মানুষ শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করে...আজ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর জন্য মানুষের আবেগ দেখছি!আমার পাশের বাসার দোকানদার চাচারা তিন পুরুষ ধরে ক্ষমতাসীন দলের সাপোর্টার,যেদিন সাঈদীর রায় হলো,তাকে সবাই দেখেছে ক্যাসেটে সাঈদীর ওয়াজ শুনছেন,আর অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি!বলছিলেন,'আল্লাহ এতো পাপী বান্দাহ থাকতে এমন একজন আলেমকে আপনে কেন ফাঁসির রায় দিতে দিলেন!ওদের কি বুক কাঁপলো না একবারো!'...এমন অনেককেই আমি দেখেছি অঝোরে কাঁদতে,হাত তুলে আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করতে...তাদের আবেগ যে কতোটা প্রবল তার আরেক রুপ দেখছি 'চাঁদে সাঈদীকে দেখেছি'গুজবটা শুনে! গ্রামের অল্প শিক্ষিত মানুষ গুলো হলুদ সাংবাদিকতা বুঝে না,তারা আমাদের মতো এফবি,ব্লগে বসে সমালোচনা-তদন্ত করে না,তারা ফটোশপের চক্রান্ত অতো বুঝে না,তারা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে নিয়েছে,যে সত্যিই সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে!কারন আবেগের বশে তারাও সাঈদীকে চাঁদে কল্পনা করে,তার ওয়াজ শুনে চোখের পানি ফেলে,ঢাকায় থাকা মানুষদের কাছে প্রতিদিন ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন তাদের সাঈদী কেমন আছেন!তাকে কবে ছাঁড়বে!সাঈদির জন্য তারা নামায মানত করছে,রোযা মানত করছে,শেষ রাতে তাহাযযুদ নামাযে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করছে। তারা সাঈদিকে জামাতের নেতা হিসেবে চেনেন না,সাঈদী রাজাকার ছিলো,মানুষ মেরেছে এ কথা স্বপ্নেও তারা বিশ্বাস করে না,তারা সাঈদীকে কোরআনের প্রচারক হিসেবে চিনেন,তাফসীর মাহফিলে কোরআনের দাওয়াত দানকারী হিসেবে চিনেন,হাজারো অমুসলিমকে তার হাতে হাত রেখে মুসলিম হতে তারা দেখেছেন, তাই তার ফাঁসি শুনে মহিলারা পর্যন্ত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিবাদ জানাতে দ্বিধা বোধ করেননি...পুলিশের গুলির আঘাত সহ্য করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। কতোটা আবেগ তাদের ভাবা যায়?!!

আমরা শহুরে মানুষরা এসব বুঝবো না,আমাদের বুঝ জ্ঞানের বাইরে এসব,আমরা বুঝি,এইসব আবেগকে পুঁজি করে, কাউকে হেয় করে,নিজেদের স্বার্থউদ্ধার করতে!বড় বড় সমালোচনার বুলি আওড়ে নিজেদের সচেতন মুসলিম সাজাতে!আমাদের কাজ দোষ ধরা...!সত্যকে মিথ্যের সাথে মেশানো...

চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা,ঐ সাধারন,মামুলি মানুষ গুলোর গুলিবিদ্ধ লাশ দেখে!হায়েনাদের গুলিতে মৃত নিষ্পাপ শিশুদের লাশ দেখে... মাঝে মাঝে মনে হয়,আল্লাহ কি আমাদের চোখে দেখেন না?!আমাদের প্রাণের কি দাম?বিলাসিতা,সমালোচনা আর মনের দাসত্ব করেই তো দিন পাড় করি,ওদের প্রাণের বিনিময়ে কি আমাদের প্রাণ আল্লাহ নিতে পারেন না?!...

এখন কোন কিছু নিয়ে,ইসলামী দল নিয়ে সমালোচনা করতে অনেক লজ্জা লাগে! অনেক ছোট মনে হয় নিজের কাছে নিজেকে! কি করি আমরা আর কি করে ঐ মানুষ গুলো..

প্রাণ ভরে দোয়া করি,আল্লাহ যেনো আমাদের কৃত্রিম ভালোবাসাকে না দেখেন, আমাদের লোক দেখানো আবেগকে না দেখেন,আর কিছু না হোক তিনি যেনো ঐসব সাধারন মানুষদের আবেগ,দোয়া শুনেন,ঐ মায়েদের কান্না শুনেন,তাদের ডাকে যেন সাড়া দেন...যারা চলে গেছেন তাদের রক্ত যেনো জান্নাতের সুবাস দিয়ে ঢেকে দেন...তাদেরকে যেনো জান্নাতে উত্তম সংবোর্ধনা দেন.. আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১১৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File