সময় টা কে তৈরী করি, আমি-আমার-আমাদের জন্য।
লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ২৬ জুলাই, ২০১৪, ১০:৩৬:৩০ রাত
হে নবী! #প্রজ্ঞা ও #বুদ্ধিমত্তা এবং #সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে #বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে। *[সূরা আন্ নাহলঃ ১২৫]*
ছোট্ট একটা উদাহরন দেই,ধরুন আপনি একটা বাসায় গেছেন,যে বাসায় একজন মুরুব্বি মারা গেছেন,শোকার্ত পরিবেশ,কারো মুখে কারো বা মনে কিন্তু সবাই মোটামুটি শোকাহত। আপনি যেয়ে দেখলেন,কেউ খাচ্ছে আর কেউ বসে কোরআন পড়ছে আর কেউ স্মৃতিচারণ করছে। এমন অবস্থায়,আপনি মৃতের আত্নীয়দের বলা শুরু করলেন,
'হ্যাঁ,তোমরা তো বেঁচে থাকতে মানুষটার কদর করনি,সেবা করোনাই আর এখন একটু শোক করবা,তাও ঠিক মতো করো না,তোমাদের দিয়ে আসলে কিচ্ছু হবে না,তোমাদের ছেলে-মেয়েরাও তোমাদের জন্য কিছু করবে না... তবে যদি তোমরা এখন থেকে সঠিক ভাবে নিজেদের কে সংশোধন করো,তাহলে হয়তো তোমাদের উপর আল্লাহ রহম করবেন,যা যা ভুল হয়েছে তা মাফ করবেন।'
তাহলে বলুন তো,উপরের ঐ কোরআনের আয়াতে আল্লাহ যে ভাবে দাওয়াত দিতে বলেছেন,আপনি কি সেভাবে দাওয়াত দিলেন?বা আপনার দাওয়াত টা,সদুপদেশ গুলো কি #গ্রহনযোগ্য হবে? অথচ আপনি কিন্তু বলেছেন,সুন্দর নিয়ত নিয়ে,নিজের কাজের বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি মানুষ গুলোকেও সঠিক ভাবে চলার জন্যে। কিন্তু মানুষ কি সেটাকে আন্তরিক ভাবে গ্রহন করতে পারবে?
বরং এখানে কি হবে?এক শ্রেণি সুবিধা নিবে এই বলে,' যে ঐ দেখো,আসছে ভালো কথা বলতে!এভাবে মানুষের মুখের উপর দোষ বলে আবার ভালো কথা বলে কেউ?' আরেক শ্রেনী বলবে,' অবস্থা বুঝে আসছে ফায়দা নিতে,সবার সামনে ওদের দোষও বলল আবার নিজে ভালো সেটাও বুঝায় দিলো,নিজে যে কি তা কি মানুষ জানে না?!
মোট কথা দেখা যাবে,৩ভাগের ২ভাগ লোকই আপনার বক্তব্যের নেগেটিভ অর্থ বের করবে,এবং যার ফলে বাকী ১ভাগ যদি ভালোভাবে গ্রহন ও করতে চায় তাহলে তারাও কনফিউসড হয়ে যাবে।
কোরআনে আল্লাহ স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন, প্রজ্ঞা,বুদ্ধিমত্তা,সদুপদেশ এই ৩টি উপাদানের সংমিশ্রনেই আপনি মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহবান জানাবেন,আপনার কথায় এই তিনটা বিষয়ের উপস্থিতি অবশ্যই থাকবে। আপনি যা বলবেন,তাতে জ্ঞান থাকবে,সরাসরি নয় তবে কৌশলে আপনি তাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন এবং সে গুলো সংশোধনের জন্য উত্তম উপদেশ দিবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন,'ইক্বরা' কথাটা কেন বলেছিলেন?যখন তিনি জানতেন,এই জাতি যা জানে তা মানে না,আর যা জানে না তা জানার চেষ্টাও করে না!এর কারণ হিসেবে আমরা সূরা ইমরানে এবং উপরে সূরা নাহলে পড়েছি,আল্লাহ তো চেয়েছেন,এমন একটা দল তার প্রতিনিধিত্ব করবে,যাদের কথায় প্রজ্ঞার পরিচয় থাকবে,তারা যতটুকুই বলবে সঠিক কথা বলবে,যা লোকেরা আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করবে। কারণ,আপনি যা দেখছেন তা ই সম্পূর্ণ বা সত্যি না,আপনার রব আপনার চাইতে অনেক গুণ বেশি ভালো জানেন।আর এই জন্যই নুহ (আ) সাড়ে ৯০০বছর তার জাতি কে দাওয়াত দিয়েছিলেন,কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন,আল্লাহ তার চাইতে তার জাতিকে অনেক বেশি ভালো জানেন,সুতরাং তার জন্য হাল ছেড়ে দিয়ে,রাগ হয়ে তাদের দোষ ধরে ক্ষোভ দেখানোর সময় তার জন্য আসেনি। সুতরাং পরিস্থিতি যেমনই হোক,আপনি আপনার সুন্দর নিয়াত কে বাস্তবায়নের জন্য সু-কৌশলের সাথে সুন্দর,প্রোডাক্টিভ অনুভূতি তৈরী করার বদলে লোকদের মাঝে বিরক্তি,দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারেন না।
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এমন একটা জায়গা,যেটাকে আমরা উন্মুক্ত মাঠ বলতে পারি,যেখানে সম্ভব বিপ্লব বা পরিবর্তনের জোয়ার তৈরী করা,সত্য-সুন্দরের পথে সময়ের সাথে যুগান্তকারী পদক্ষেপ তৈরী করতে খোরাক ছড়িয়ে দেয়া। আপনি এটাকে নিছক টাইম পাস এর ক্ষেত্র হিসেবে নিলেও এটা আগামী দিনের জাতি তৈরীতে মহামূল্যবান ভূমিকা রাখে।এটা এমন একটা জায়গা,গ্লোবাল ভিলেজের প্রকৃত রূপ,যেখানে আপনি আওয়াজ তুললে,সারা দুনিয়া আপনার সাথে কন্ঠ মেলাবে,জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আপনার সাথে,আপনার প্রয়োজনে আপনার পাশে দাড়াতে পারে। আপনি হয়তো এখানে আসনে,কিছু সময় রিফ্রেশ থাকার জন্যে,অবসরের ক্লান্তি দূর করার জন্য কিন্তু এই জায়গাটা আপনার কাছে যতটা না হালকা,তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অসৎ এবং অন্যায় শক্তিদের জন্য। আর তাই আপনার এই #টাইমপাস' মনোভাবের এই সুযোগটাই অসৎ উদ্দ্যেশ্যে অমানুষরা ব্যাবহার করছে তাদের স্বার্থউদ্ধারের জন্য।
আজ ইসরাঈল তাদের লোকবল জোরে-সোরে লাগিয়েছে শুধু মাত্র এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট গুলোতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য,আমরা দেখেছি মিশরে,তুরস্কে 'আরব বসন্ত' অর্থাৎ পেশির জোরে নয় সত্যিকারের জনগনের বিপ্লবের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো,এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যেমে। কিন্তু কেন?তাদের তো মিডিয়া,অস্ত্র,নিজদের লোকের অভাব নেই!তারপরেও তারা কেন সারা দুনিয়া কে মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের সাথে রাখে? কারণ,সময় বদলে গেছে,প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মানুষকে আজ একই বৃত্তে এনে দাড় করিয়েছে। সুতরাং সময় এসেছে,প্রশ্ন তৈরী হবার,
'এই অংগনে আপনার ভূমিকাটা কি এবং কেমন?'
সময় এসেছে এই অঙ্গন টা কে আপনার এবং আপনার দেশ-জাতির জন্য আপনার কাজের হাতিয়ার বানাবার। রাসূল (স) এর একটা হাদীস আছে,'সমগ্র মুসলিম জাতি হচ্ছে একটি দেহের ন্যায়,তার এক অংশে যদি ব্যাথা হয় তবে তা সারা দেহ অনুভব করতে পারে।' (তিরমিযি)
জ্বি হ্যাঁ,আমরা আসলেই একই দেহ। আর তাই আজ ফিলিস্তিন যখন কাঁদছে,আমরা এখানে অস্থির হয়ে আছি।যে সময়টায় আপনি বসে আড্ডা দিতে পারতেন,তখন আপনি সোশ্যাল সাইট গুলতে হন্য হয়ে খুঁজছেন,আপনার ফিলিস্তিনি ভাই-বোনেরা কেমন আছে তা জানার জন্য,তাদের জন্য বড় বড় মিডিয়াদের দৃষ্টি আকর্ষন করে টুইট-স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন,নিজের প্রোপিক-কাভারপিক বদলাচ্ছেন। আজ যখন আমি কোন টুইট লিখছি ফিলিস্তিন কে নিয়ে সাথে সাথে সেটা দুনিয়ার ঐ প্রান্তের কোন আরব ভাই-বোন রিটুইট করে দিচ্ছে,আমার অনুভূতির সাথে একমত প্রকাশ করছে। ঠিক তেমনি ভাবে আমরা যখন আমাদের সমস্যা গুলো নিয়ে সোশ্যাল সাইটে গিয়েছে,সেখানেও দেখেছি দুনিয়ার কোণায় কোণায় ছড়িয়ে থাকা নাম না জানা হাজারো মানুষ আমাদের সাথে কন্ঠ মিলিয়েছে। আমাদের সমস্যা কে আমাদের ইস্যুকে ট্রেন্ড লিস্টের শীর্ষে উঠিয়েছে,তাদের নিউজ সাইটের হেডলাইন করেছে।
না,এই সব গুলোকে আপনি নিছক লোক দেখানো আবেগ বলতে পারেন না,কোন ভাবেই না। যদি ঢালাও ভাবে এটা আপনি মনে করেন,তাহলে ধরে নিন,আপনিও এই লোক দেখানো মানুষদের একজন! আফসোস করুন,যে আপনি নিজেও ঐসব সুবিধাবাদীদের দলেই পড়লেন!
বাচ্চার ঘুম কড়া বলে আপনি তাকে গরম পানি ঢেলে জাগাতে পারেন না,বরং তার ভেতরের অনুভূতি কে আপনি নাড়া দিতে পারেন,তাকে সময় মতো সবাই জেগে উঠার পরিবেশ দিতে পারেন, যাতে সে এক ডাকেই ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করতে পারে। ঠিক তেমনি,ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার কু-প্রভাবে সমগ্র মিডিয়া হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে আপনি আপনার অবস্থান টা ওদের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে পারেন না।
একটা সময় ছিলো,যখন আমরা মোবাইল কে নিছক বিলাসিতা বলে ভাবতাম,এখন তা প্রয়োজন। একটা সময় ছিলো,সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমরা স্রেফ,ছবি শেয়ার,পরিচিত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার মাধ্যম আর নিজের অনুভূতি শেয়ার করার জন্য কমনপ্লেস বলে জানতাম,বাট এখন তা সব রকমের ইফেক্টিভ প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে,বিজনেস,এডুকেশন থেকে শুরু করে রিভ্যুলেশন পর্যন্ত। সময় অনেক বদলে গেছে,এবং সামনের দিন গুলোতে আরো বদলাবে। তাই ঘুরে ফিরে প্রশ্ন আসবে,
এই সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ভূমিকা কি?কেমন হওয়া উচিত?
প্রশ্ন করুন নিজের বিবেক কে,যা আপনি করতে চান,যা আপনার বিবেক করার জন্য সায় দেয় সে উদ্দ্যেশ্য পূরণের জন্য এই সাইট গুলো কি কোন ভূমিকা রাখে?যদি রাখে তাহলে আপনি কি করে এখানে সময় অপচয় করতে পারেন?নিছক বিনোদনের জন্য এটা কে আপনি কি করে ভাবতে পারেন? আসলে সব সময় আমাদের জন্যই ছিলো,আছে শুধু আমরাই সময়টা কে অন্যের ভেবেছি আর তাই আজো সময় খুঁজে ফিরছি,অথচ সময় এখনো আমাদের অপেক্ষাতেই আছে।
আপনি যে জায়গাটা কে তুচ্ছ ভাবছেন সময় স্বাক্ষী,সেটাই এখন অনেক দামী। আপনি পারেন,এখানে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি তৈরী করতে,নতুন সূর্যের আলোর ছটা এখানেও তৈরী করতে।
আর সে জন্যই,এখানে আপনাকে হতে হবে ঠিক তেমন চিন্তার অধিকারী,যেভাবে আপনি পারেন বাস্তবতা কে বদলাতে।
এখানেও আপনার কথায় থাকতে হবে সেই রকম গুণাবলি,তেমন চিন্তার প্রতিচ্ছবি যেমনটা পারে বদলে দিতে আজকের আগামী। তিক্ততা,স্বার্থান্বেষি মনোভাব,হতাশা নয় বরং ধৈর্য্যের সাথে সঠিক প্রচেষ্টা।
''এখন সময় জেগে উঠবার,জাগাতে ঘুমের পাড়া
এখন সময় তৈরী হবার,আগামী দিচ্ছে সাড়া
সময় এখন নতুন করে নিজেকে গড়ে নেবার
সময় এখন নতুন করে আগামীকে গড়বার।''
ছোট্ট এই জীবনে একটা জিনিস আমাদের কে ভাবতে হয় সব সময়,আর তা হলো যে সময়টাই পার করি না কেন,কিছু না কিছু হোক তা সামান্য তবু কাজ করে যেতে হবে। কোন সময়ই যেনো সম্পূর্ণ বৃথা না যায়,ছটাক পরিমান হলেও যেনো সেখানে উত্তম প্রতিদান পাবার মতো কাজ থাকে। তাই যেই সময় টা 'হোয়াট'স আপ ফ্রেন্ডস' হিসেবে কাটাতে এখানে আসা হয়,তার মাঝেই একটু সময় বদলে নেবার এবং দেবার চেষ্টায় কাজে লাগানো সম্ভব।
চেষ্টা করুন,নিয়্যাত কে বদলাবার এবং পরিশুদ্ধ-আত্নবিশ্বাসি করার। চেষ্টা করুন,সুন্দর-সত্যের সুবাতাস বইতে মনের জানালা খুলে দেবার,নিজের চিন্তা গুলোকে আরো অনেক বেশি উন্নত করার। মুখোশের আড়ালে থাকা নিজের কালো অধ্যায়টা কে চিরতরে দূর করে দেবার। সময় কখনো আপনার মতো করে আসবে না,বরং সময় আপনাকেই তৈরী করে নিতে হবে,তৈরী করে নিতে হবে আপনার জন্য,আমাদের জন্য। আজ এখানে যে আমি কে দেখতে পাবো,কাল সেখানেই তৈরী হবে আমার অনেক কিছু,আর সেই আমার থেকেই তৈরী হবে আমাদের সবার কাংখিত সময় গুলো। আর তাই নতুন করে ভাবতে শুরু করুন,আজ-এই মুহুর্ত থেকেই,তৈরী হোক চিন্তার নতুন অধ্যায়,তৈরী হোক স্বর্নজ্জ্বল অধ্যায়। এবং,
জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের কথা এবং কাজের মাঝে তৈরী হোক, #প্রজ্ঞা_বুদ্ধিমত্তা_সদুপদেশ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৩ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুলা ভাই ভালো?
( অ .ট .) পথ ভোলা এক পথিক শুকনো পাতাকে ব্লগে উঁকি দেবার জন্য অসংখ্য শুকরিয়া !
ভালো লাগ্লো...
এক প্রশ্নেই তো আটকে গেলাম-
জীবনের বাকি হিসাবের কী হবে??
শুকনো পাতা জাযাক আল্লাহ খায়ের ।
আর একটা ব্যাপার নূহ(আঃ) ৯৫০ বছর দাওয়াতী কাজ করেন নাই মনে হয় – এটা তার পুরো জীবনকাল - এর মধ্যে হয়তো একটা অংশ এমনি কেটেছে, একটা অংশ দাওয়াতে, একটা অংশ নৌকায়, আরেকটা অংশ প্লাবন-পরবর্তী জীবনে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন