বিশ্ব হিজাব দিবস..দূর হোক সমস্ত বিভ্রান্তি,সৃষ্টি হোক সঠিক বিশ্বাস।
লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৩৫:১৩ সন্ধ্যা
১১বছর বয়সে পিতা-মাতার সাথে বাংলাদেশ ছেড়ে উন্নত জীবন যাপনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সুদূর আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নাজমা খান। নিউইয়র্ক সিটির ব্রুনেক্সে বেড়ে উঠেন তিনি। মূলত প্রবাস জীবনের শুরু থেকেই হিজাব পরিধানের কারণে নানা রকম বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে তাকে,৯/১১ এর পর তাকে আরো বেশি বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে,তার ভাষ্যমতে,
''৯/১১ ঘটনার পর আমি কলেজে উত্তীর্ণ হই। তখন আমার সহাপাঠীরা আমাকে ওসামা বিন লাদেন অথবা সন্ত্রাসী বলে ডাকতো, যা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। এই বৈষম্য রোধে একমাত্র উপায় হিসেবে আমি যে বিষয়টি চিন্তা করলাম তা হলো যদি আমি আমাদের সহকর্মী বোনদের হিজাব পরিধান করতে আহবান জানাই তাহলে কেমন হয়।''
মূলত সেই সময়টাতেই সিদ্ধান্ত হয়,ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে পালন কর্মসূচির। এই খবরটি খুব দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে,এবং অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে দেয়। নাজমা খানের বক্তব্যটি ২২টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এরপর খান যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ প্রায ডজন খানেক দেশের জনগণের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। এবং এই প্রচারণাটিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাকে দ্রুত গতি দিয়েছেন। নাজমা খান অমুসলিম নারীদেরকেও হিজাব পরিধানের জন্য উৎসাহিত করেন। ধর্মীয় পোশাক হিসেবে হিজাব সম্পর্কে চারদিকে যে ভুল ধারণা তা পাল্টে দিতে এবং উন্নত পারস্পরিক সমঝোতা গড়ে তোলার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে এই আয়োজনটিকে সাজানো হয়।
ইসলামে মেয়েদের জন্য হিজাব একটি বাধ্যতামূলক ড্রেস কোড। অপরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এটি কোন ধর্মীয় প্রতীক নয়,এটি কোন নির্দিষ্ট শ্রেনীর মুসলিমদের জন্য নয়। সুতরাং হিজাব কখনোই উগ্র ধর্মীবোধ কিংবা কোন অন্যায় যুক্তির প্রচার করে না।
আরবি ‘হিজাব’ শব্দের অর্থ পর্দা, গোপনীয়তা, স্বাতন্ত্র্য প্রভৃতি। হিজাব নির্দিষ্ট কোনো পোশাক নয়; বরং এটি নৈতিক পবিত্রতা রক্ষার জন্য একটি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার নাম। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য হিজাব ফরজ করে আল্লাহ বলেন,''আর মুমিন নারীদেরও বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে এবং স্বীয় সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, শুধু ওই সৌন্দর্য ব্যতীত যা সত্যিই প্রকাশিত হয়ে পড়ে।'' (সূরা নূরঃ ৩১)। হিজাব মানে মাথা টা এক টুকরো কাপড় দিয়ে ঢাকাকে বুঝায় না,হিজাব মানে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত দেহকে এমন একটি আবরণে ঢাকা কে বুঝায়,যা হবে ঢিলে-ঢালা। যার দ্বারা দেহের গঠন স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাবে না,সম্পূর্ণ শালীন এবং পবিত্র একটি পোষাক হচ্ছে হিজাব।
মূলত সারা বিশ্বের সব ধর্মের,সব ধরনের মানুষদের কাছে 'হিজাব' সম্পর্কে স্পষ্ট এবং সঠিক ধারনা সৃষ্টি করাটাই হচ্ছে,
'ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে'এর মূল উদ্দ্যেশ্য। নাজমা খান ফেইসবুক পেইজে এই সম্পর্কে বলেছেন,
আমাদের লক্ষ্য,১লা ফেব্রুয়ারী হবে,ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে,যা সারা বিশ্বে আমাদের এই একত্রিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সবার পৌছে দিতে পারবে 'হিজাব'সম্পর্কে আমাদের ম্যাসেজ,যা হচ্ছে :
"সচেতনতা,সঠিক ভাবে বুঝার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব তৈরী . "
আমাদের লক্ষ্য হল হিজাব সচেতনতা মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সহনশীলতা লালন-পালন করা.
আপনার বন্ধু / পরিবার ( মুসলিম / অমুসলিম ) সকলকে অবহিত করুন.
হিজাব মানে মাথা টা এক টুকরো কাপড় দিয়ে ঢাকাকে বুঝায় না,হিজাব মানে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত দেহকে এমন একটি আবরণে ঢাকা কে বুঝায়,যা হবে ঢিলে-ঢালা।''
এই ব্যাপারে বিখ্যাত স্কলার মুফতি ইসমাঈল মেংক বলেছেন,
'হিজাব ডে পালন করা মানে এই নয় যে,আপনি কোন ধর্মীয় অনুশাসন পালন করছেন,বরং এর মানে হচ্ছে,সারা বিশ্বব্যাপি 'হিজাব' সম্পর্কে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে,যেভাবে একে আক্রান্ত করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে একটি কার্যকর পদক্ষেপে অংশগ্রহন করা।'
ইতিমধ্যে গত বছর এই দিনটি সারা বিশ্বে বেশ সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে,এবং বিভিন্ন দেশের নারীরা মুসলিম-অমুসলিম ধর্ম নির্বিশেষে হিজাব পরিধানের মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করেছে।
যুক্তরাজ্যের নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেস রোডেস (২১) বলেন, তোমরা যেটিকে হিজাব বলো, যেহেতু তা পরিধানের ব্যাপারে আমি খুব দক্ষ নই, তবে আমি আবিষ্কার করেছি যে, এই সুযোগটি সীমাহীন। এছাড়াও এখানে সব ধরনের পছন্দই রয়েছে। জেস রোডেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকের মাধ্যমে এই কার্যক্রম সম্পর্কে তার বন্ধুর কাছ থেকে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তার বন্ধুটি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন এবং তার নাম উদাইয়ান আল উবুদায়।
রোডেস আরো বলেন, সে আমাকে নিশ্চিত করেছিল যে, এর জন্য আমাকে মুসলিম হতে হবে না। এটি একটি শালীনতার ব্যাপার। যদিও বিষয়টি ইসলাম সম্পর্কিত। সুতরাং আমি চিন্তা করে দেখলাম এতে অংশ নেয়া যেতেই পারে। আমার পিতা-মাতার স্বাভাবিক আচরণ ছিল এই যে, যদি এটি একটি ভালো উপায় হয় তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। তবে আমার ওপর রাস্তায় হামলা হতে পারে বিধায় তারা চিন্তিত। কেননা এখানে সহনশীলতার অভাব রয়েছে। রোডেস নিজেও এসব প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আমি সত্যিই ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে পারছি না। তবে লোকজন সত্যিই অনেক উপকারী ছিল, বিশেষ করে শপিং মলগুলোতে।মুসলিম পছন্দ হিসেবে হিজাব সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করার একটি প্রচেষ্টায় ছিল এই অভিযানের মূল লক্ষ্য। প্রাত্যহিক জীবনের চর্চা হিসেবে এই বিশ্বাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা মোরমোন ও ডালি। রোডেস বলেন, হেড স্কার্ফকে ঘিরে চারদিকে যেসব কলঙ্ক রয়েছে সে বিষয়ে তিনি অবহিত এবং আশা করছেন যে, এটি একটি সুযোগ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করার। ডালি বলেন, কারো ওপর ভিত্তি করে যা মুসলিমরা পরিধান করছে সে ব্যাপারে আপনি সঠিক মতামত দিতে পারেন না তাই জনগণকে শিক্ষা দেয়ার এটি একটি ভালো সুযোগ। রোডেস বলেন, নারীরা স্বাধীনভাবে হিজাব গ্রহণ পছন্দ করতে পারে। এটি একান্তই নিজস্ব পছন্দের ব্যাপার। তিনি তার হিজাব সম্পর্কে বলেন, আমি সময়ে সময়ে এটি পরিধান করবো। আমি বিশ্বকে বলতে চাই, আমার সৌন্দর্য আমার পরিবার ও আমার সঙ্গিনীর জন্য। যে কোন নারীই হিজাব পরিধান করতে পারে।
আশা করা যাচ্ছে এই বছরেও বিশ্ব হিজাব দিবসে এই কর্মসূচি অধিকতর ধর্মীয় সহনশীলতা, পারস্পরিক সমঝোতা ও একটি মুসলিম বাছাই হিসেবে হিজাবের গুরুত্বকে বিশ্বের নিকট তুলে ধরবে।
তথ্যসূত্রঃ http://worldhijabday.com/worldwidesupport/।
http://www.youtube.com/watch?v=_fgohZYqbmE
বিষয়: বিবিধ
২৪৫১ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Modesty of a women is... as if... a pearl within its shell...!!! সুন্দর, তথ্যবহুল এবং সময়োপযোগী পোস্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে... হিজাব দিবসে পুরুষদের জন্যও শিক্ষা এবং অনুশীলনের কিছু দিক থাকতে পারে! জনগুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি অবিলম্বে স্টিকি করার জন্য মডুদের কাছে চাপযুক্ত বিনীত অনুরোধ রাখছি!
সত্যের জন্যই কুল মখলুক
একদিন সত্যের জয় হবে আর
উজ্জল হবে সত্যের মুখ
আল্লার সন্তুষ্টি কাম্য।
তাই নতুন করে হিজাব ডে পালনকরার দরকার আছে বলে মনে হয় না।
আপনাকে ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন