পিঠাপুলির জেফত দিলাম মজা কইরা খাইতে!
লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ২২ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৩:১৪ দুপুর
''পিঠাপুলির ধুম পড়েছে বাইতে
আঙ্গ বাইত আইয় পিঠা খাইতে
ব্লগের সবাই আইয় কিন্তু আমার গাঁয়ের বাইতে
পিঠাপুলির জেফত দিলাম মজা কইরা খাইতে।''
আমাদের ক্ষুদে ব্লগার সুমাইয়ার এই কবিতাটার কথা কি মনে আছে? আমার কিন্তু মনে আছে,যেহেতু আমার গ্রামের বাড়ি বলতে,এই শহরের বাড়িটাই,আর তাই সেখান থেকেই,ছড়ার সাথে সাথে সবার জন্য পিঠা-পুলি নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম
বর্তমানে শহর-গ্রামে হেমন্তের হিম হিম হাওয়াকে ছাঁপিয়ে শীত আসার জন্য একেবারে উঠে-পড়ে লেগেছে যেনো! রোদের তাপ যেমনই হোক,কুয়াশা আর রাতের ঠান্ডা আবহাওয়া খুব ভালো ভাবেই জানিয়ে দিচ্ছি,শীতের বুড়ি এবার বেশ দাপটের সাথেই আসছে! তবে সে যেভাবেই আসুক,আমাদের জন্য তো শীতের কাঁপুনির সাথে পিঠা খাওয়ার সুখ আছেই...
শীতের সময় আম্মু-খালামণিদের ব্যস্ততা দেখলে মনে হয়,তাদের জন্য বোধহয় গরমের সময়টাই ভালো!! শীত মানেই তো হরেক রকমের পিঠে তৈরী ধুম প্রায় দিন থাকবেই!
তবে শীত যেহেতু আসা শুরু হয়েই গেছে,তো চলেন আজকের ছুটির দিনে পিঠা খাওয়া শুরু করেই দেই! নবান্ন উৎসব বলেন কি পৌষের আমন্ত্রণ আয়োজন সব গুলো হয়ে যাক একসাথে...
প্রথমে শুরু করুন ভাপা পিঠা দিয়ে। আমাদের দেশে শীত মানেই ভাপা পিঠে,বলতে গেলে শীতের সময় সব পিঠার প্রধান হচ্ছে এই পিঠা। এই পিঠা কয়েক ভাবে তৈরী করা যায়,এবং সেগুলোর আলাদা নামও হয়।
যেমন,ভাপা পিঠা,খেজুরের রসের ভাপা পিঠা,শাহী ভাপা পিঠা ইত্যাদি। প্রতিটাতেই নানান উপকরণ দিয়ে তৈরী করা হয়,যার স্বাদ কিছুটা আলাদা হলেও অসাধারন।
এবার খেতে পারেন মজাদার চিতুই পিঠা ভাপা পিঠার মতোই আমাদের চিতুই পিঠাও অনেক ভাবেই তৈরী হয় এবং সেগুলোর নামও হয় আলাদা। এই যেমন,দুধ চিতুই,খোলা চিতুই,রসের চিতুই,ডিম চিতুই ইত্যাদি। আমাদের দেশে খোলা চিতুই আর ডিম চিতুই টা বলতে গেলে সারা বছরই পাওয়া যায়,তবে শীতের আমেজ অবশ্যই আলাদা। নানান রকমের ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে শীতের সকালে কিংবা বিকেলে চিতুই পিঠা খেতে খেতে আড্ডা দেবার মজাই আলাদা,কি বলেন?
শীতের সময় রসের চিতুই আর দুধ চিতুই বেশি তৈরী করা হয়,কারণ সংরক্ষন করতে সুবিধা হয়,নষ্ট হবার ভয় কম থাকে,যেহেতু গ্রামে ফ্রিজের প্রচলন কম,শহরেও অনেকেই ফ্রিজে এই পিঠে রাখতে চান না,স্বাদ কমে যাওয়ার ভয়ে।
হা হা হা...এসে গেছে আমার অসম্ভব প্রিয় কুলি পিঠা কুলি পিঠা যে কতো রকমের হতে পারে,এটা আসলে পিঠা উৎসবে না গেলে আমি জানতামই না!!প্রবীন লেখকরা ঠিকই বলতেন 'বঙ্গ নারীর পরিচয়ের একটা ধারক হচ্ছে তাদের রান্না,তাদের রান্নাতেই খুঁজে পাওয়া যায়,তাদের অসাধারন মেধা-গুণের অপূর্ব সমন্বয়'
আমি এই পর্যন্ত তিন রকমের কুলি পিঠা খেয়েছি,কিন্তু গতবার পিঠা উৎসবে যেয়ে জানলাম,কুলি পিঠা অনেক রকমের হতে পারে। এই যেমন, সিদ্ধ কুলি পিঠা,ভাজা কুলি পিঠা,ঝাল কুলি,তিলের কুলি,দুধের কুলি ইত্যাদি। তবে যতো রকমেরই হোক,স্বাদের দিক থেকে সব গুলোই সেরা।
আম্মু প্রায়ই বলেন,আমাকে যদি কোনদিন আমার চরম শক্রু কেউ দাওয়াত দিয়ে বলে,তোমাকে পাটি সাপটা পিঠা খাওয়াবো,আমি মনে হয় সব ভুলে রাজী হয়ে যাবো!! :P তো নিন,আপনাদের জন্যেও রাখলাম চরম মজার পাটি সাপটা পিঠা
আমাদের নানী-দাদী,মা-খালারা যে কতো বড় জিনিয়াস ছিলো,তা আসলে উনাদের রন্ধন শিল্প জ্ঞান দেখলেই বুঝা যায়। ঐতিহ্য ধরে রাখাই বলেন কি সুস্বাদু খাবার তৈরী সব কিছুকেই তারা ধরে রেখেছেন যত্নের সাথে। কতো যত্ন নিয়ে না তারা,মাথা খাটিয়ে যুগ যুগ ধরে তৈরী করে আসছে,এমন হরেক রকমের পিঠা।তার ফলে, এই পাটি সাপটা পিঠাও কয়েক রকমের হয়ে থাকে,যেমন, ক্ষীরে ভরা পাটি সাপটা,গাজরের পাটি সাপটা,চিংড়ি মাছের নোনতা পাটি সাপটা ইত্যাদি।
এবার নিতে পারেন, পাকান পিঠা । এটা পাকাইতে যদিও আমার কাছে কষ্টকর মনে হয়,তবে এর স্বাদ...কি বলবো,মুখে দিলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়!
আমাদের জিনিয়াস নারীদের কল্যাণে,এই পিঠেও অনেক রকমের হয়ে থাকে। যেমন, তেলে ভাজা পাকান পিঠা,সুন্দরী পাকান পিঠা,গোলাপ পাকান পিঠা ইত্যাদি।
এবার নিন, নকশী পিঠা । চিনি বা গুড়ের সিরায় ডুবিয়ে হাত-মুখ ভরিয়ে নকশি পিঠা খাবার মজাই আলাদা!! ডিজাইন যেমন ইচ্ছে তেমনই করা যায়,গ্রামে অনেক সময় বিয়ে-শাদীতে বর-কণের নাম লিখে এই পিঠা তৈরী করে থাকে।
এবার একটু ঝাল কিছু খাওয়া যাক। তো নিতে পারেন, বাদাম-নারিকেল ঝাল পিঠা। বাদাম-নারিকেল দুটোই মিষ্টি উপাদান হলেও,এখানে গোল মরিচ দেয়া হয়,আর তাই হয়েছে নাম ঝাল পিঠা! তবে খেতে কিন্তু ভীষন মজা।
কি?আর কতো খাবেন? কত্ত গুলো পিঠা খাওয়ালাম!! :D এবার পিঠা খাওয়া শেষ তবে নতুন চালের তৈরী পায়েস কিন্তু খাওয়ানো হয়নি...তাই না? নো চিন্তা...এই নিন,
পায়েস পছন্দ করে না,এমন মানুষ থাকাই উচিত না! আমাদের দেশে যে,কতো রকমের আর কতো স্বাদের পায়েস তৈরী হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। যেমন ধরুন, গুড়ের পায়েস,ফুলকপির পায়েস,গাঁজরের পায়েস,খেজুরের রসের পায়েস,বাঁধাকপির পায়েস ইত্যাদি।
কবি সার্থক বলেছে,'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি' কতো সমস্যা,কতো অভাব তারপরেও আমাদের অপার্থিব আনন্দ-সুখের শেষ নেই।আমাদের দেশে ছয়টি ঋতু আছে,প্রতিটা ঋতুই অসাধারন বৈশিষ্ট্য-ঐতিহ্য নিয়ে আসে,সমস্যার সাথে সাথে আনন্দও নিয়ে আসে। মহান আল্লাহ সত্যিই আমাদেরকে অনেক দিয়েছেন,আর যা দিয়েছেন তার খানিকটা সঠিক ব্যবহার করেই আমরা অনেক সুখে থাকতে।
হুমম... খুব তো খাওয়া হলো! এবার? এবার রিজিক দাতা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন,আর শুকনোপাতার জন্য কল্যাণ কামনা করে দোয়া করেন।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন