মুরগী কেনার কড়চা!

লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:১৬:৫২ দুপুর

'welcome,welcome...'সেই কখন থেকে ডোর বেলটা বেজে চলছে,কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না!দিশা বেশ কয়েকবার রান্না ঘর থেকে উঁকি দিয়েছে কিন্তু শাওনের দেখা পায়নি,ব্যালকনিতে আছে না বাথরুমে কে জানে!!ওদিকে বেল বেজেই চলছে,আর এদিকে চূলায় রুটি!!দিশা একবার রান্না ঘরের দরজায় আসে তো একবার দৌড়ে চূলার কাছে যায়... এমন সময় শাওনের গুন গুন শুনতে পায়,দিশা চেঁচিয়ে বলে,

--এই যে বাংলাদেশি আইডল,দরজায় কেউ কলিংবেল বাজাচ্ছে,কানে যায়??!!

শাওন কিছু না বলে সেই একইভাবে গুন গুন করতে করতে দরজা খুলে,কিন্তু দরজাটা খুলার পরেই বেচারার গুন গুন বন্ধ হয়ে যায়!

--কি ব্যাপার ভাই?আপনি কে?

--স্যার,আফা বাসায় নাই?

--আছে?কেন?

--না ঐ দেশি মুরগী আনছিলাম বড় দেইখা!গেছে সপ্তায় আফা কইছেলে বড় দেশি মুরগী পাইলে আনতে,মুরগাও আছে লগে!!

শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

--ভাই আপনের মুরগী আনার কি টাইম ছিল না আর?এখনো সকালের নাশতাই করিনাই আমরা!

মুরগীওয়ালা হেসে বলল,

--সমেস্যা নাই,স্যার,ছুডির দিনতো তাই বেলা দশটায় ও অনেক সকাল মনে হয়,তয় আমগো কি আর ছুডির দিন আছে কন?আফারে একটু আইতে কন,হেয় কোনডা কোনডা নিবো দেহায় দিক,আমি কাইট্টা দিয়া যাই...

শাওন চোখ বড় বড় করে বলল,

--আপনি মুরগী কেটে-ছেটেও দিয়ে যান নাকি?বাহ...নতুন স্টাইল দেখছি!! যাইহোক, এই,শুনছো...এদিকে এসো একটু...

দিশা রান্নাঘর থেকেই ওদের কথোপকথোন শুনেছে,তাই সেও দ্রুত নাশতা টেবিলে সাজিয়ে,প্রিপারেড হয়ে দরজার দিকে এগুলো,ওকে আসতে দেখে শাওন নাশতার টেবিলে যেয়ে বসল। টেবিলে নাশতা দেখে মনে হয় তার পেটের ক্ষুধা দ্বিগুন হয়ে গেছে!!কিন্তু দিশা যেহেতু এখনো বসেনি তাই সে একটা পরোটা ছিড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেতে লাগল,আর নিউজ পেপারে চোখ বুলাতে লাগল। তবে দিশা আর মুরগীওয়ালার কথপোকথন সে ঠিকই শুনছিলো,

--বেশি লাগবে না চারটা হলেই হবে,আর তোমাকে বলছিলাম বড় সাইজের পেলে আনতে,এটা কি সাইজের আনছো?

--আফা,এর চেয়ে বড় সাইজ আর নাই বাজারে!মুরগীর যে কি আকাল আফা আর কি কমু!!আপনের লাইগা যে এই সাইজের দেশি মুরগী আনতে পারছি এইয়াইতো বেশি!!

--হুম,চারটার দাম কতো?

--আফনে আমার পুরান কাস্টোমার,আফনের লগে দামা-দামি চলেনা,চাইরটা একদাম ১২০০টাকা...আফা,এক্কেবারে কেনা দাম!

দিশা কিছু বলার আগেই শাওন দৌড়ে এলো,

--কি?!!!!এই পিচ্চি সাইজের চারটা মুরগীর দাম ১২০০টাকা!!! ওই মিয়া?কি ডাকাতের মতো কথা বলো?!!

--স্যার,কি কন?আফায় জানে আমারে?আমি হের কাছতে বেশি দাম রাহি না,একদম কেনা দামে দেই,দেই না আফা কন?

--হুম,তাতো দেখতেই পাচ্ছি!বাজারের চেয়ে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছো,আর বলো কেনা দামে!!দিশা,মুরগী কেনা লাগবে না রাখো...

দিশা চুপ করে এতোক্ষন,মুরগী গুলো হাতে নিয়ে বেছে বেছে দেখছিলো,চারটা মুরগী বাছাই করে মুরগীওয়ালার সামনে ধরে বলল,

--শোন,এই চারটা নিবো আমি,১৫০ করে চারটার দাম ৬০০ আসে,কাটা-ছাটা সহ,৬৫০ আমি সব মিলিয়ে তোমাকে ৭০০দিবো,হলে দাও,না হলে যাও। ঠিক আছে?

--হায় মোর খোদা...!!আফা এইয়া আপনে কি দাম কইলেন!!!এই দামে তো কিনতেও পারিনাই মুই!!

দিশা মুচকি হেসে বলল,

--তাহলে আর কি করা?!আজকে আর মুরগী কিনবো না,আরেকদিন এসো,এই তুমি যাও টেবিলে বসো...

--আফা,এইডা কি কন?সকালে বেলা দুয়ারে আইসা ফিরা যায় কেউ?আইচ্ছা আফনে ১০০০টাকা দিয়েন,কাটার মুজুরী বাদ।

শাওন কিছু বলতে যাচ্ছিলো,দিশা হাত চেপে ধরে বলল,

--শোন,শেষ দাম বলো,আর একটা কথাও না,তুমি আমাকে সব সময় দাও,সেই হিসেব রেখে বলবে

মুরগীওয়ালা কিছুক্ষন ভেবে বলল,

--আইচ্ছা,তাইলে ৮০০ দিয়েন,এর কম আফা পারুমই না!

--ঠিক আছে,তুমি মুরগী গুলো নিয়ে বাথরুমে যাও,আমি জিনিসপত্র দিচ্ছি।

দিশা দ্রুত কিচেনে এসে মুরগী রাখার জিনিস গুলো বের করতে লাগল,পেছনে পেছনে শাওন এসে বলল,

--এইটা তুমি কি করলে?তুমি তো আমাকে মুরগী কিনে ফকির বানিয়ে ফেলবা?!!!এইরকম পিচ্চি সাইজের চারটা মুরগীর দাম ৮০০টাকা!!!

দিশা কার্টুন হাসি দিয়ে বলল,

--জনাব,ওগুলো দেশি মুরগী! আর ওখানে দুইটা মোরগ-দুইটা মুরগী আছে ওকে?

--তো?!!

--এতো তো তো করছো কেন?বাজারে যেতে বললে তো তোমার পা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়,আমি বাসা থেকে কিনছি তাতেও সমস্যা?স্যার,আপনার যদি এতোই সমস্যা থাকে তাহলে কষ্ট করে বাজারে যেয়ে নিজেই দাম করে কিনে নিয়ে এসো... আমার কানের কাছে বক বক করবে না,ওকে?

--আজব মানুষের পাল্লায় পড়লাম তো?!!!তাই বলে এতো দাম দিয়ে মুরগী কিনবে?সরি,মোরগ আর মুরগী!!

--হুম,হয়েছে,এই নাও ছুড়ি,যাও আল্লাহর নাম নিয়ে মুরগী গুলো জবাই করে দিয়ে আসো।

--আজব মেয়ে মানুষ গো আল্লাহ!!!

দিশা মুখে ভেংচি কেটে শাওনের হাতে ছুড়ি আর বড় একটা ডিশ ধরিয়ে দিয়ে কিচেন থেকে বেড়িয়ে গেল। শাওন কতোক্ষন নাক কুঁচকে দাঁড়িয়ে থেকে বের হয়ে গেলো।

মুরগীওয়ালার কাছে যেয়ে বলল,

--মিয়া,বুঝছি,আমারেও মুরগীর ব্যাবসা শুরু করতে হবে!

মুরগী ওয়ালা হেসে বলল,

--ক্যান স্যার?

বলেই বেড রুমের দিকে মুখটা এগিয়ে একটু উঁচু গলায় বলল,

--মানুষ যেই ভাবে টাকা উড়িয়ে মুরগী কিনছে,তাতে করে ভবিষতে মুরগীর ব্যাবসা করেই আমাকে বড় লোক হতে হবে!!হুম...!

--নাগো স্যার,জিনিসপত্রের যেই দাম...লাভের মুখ আর দেখবেন কেমনে!!

ওদিকে বেড রুমে দিশা কিছু না বলে বিছানা গোছাতে গোছাতে একাই হাসল...! আর একটু পরে হয়তো তরকারী ওয়ালা আসবে,তখন যে আরো কি কি নাটক হবে কে জানে!!হাহাহা

[লেখাটা লেখার সময় অনেকদিন আগে দেখা ইত্যাদির একটা জোকসের কথা মনে পড়ে গেল,এক মহিলা মুরগী ওয়ালাকে ডাকছিলো,'এই মুরগী,এই মুরগী' মুরগী ওয়ালা অনেকক্ষন পর মুরগীগুলোকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,''এই বেয়াদ্দপ মুরগী,তোরে আম্মায় ডাকে শুনছ না?''!!! হাহাহা]

বিষয়: সাহিত্য

১৪০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File